শহরের সীমানা জুড়ে শুয়োরের অবাধ বিচরণ

শুয়োর ঘুরে বেড়াচ্ছে। আসে বক জাতীয় পাখিও। এ ছবি কলকাতা পুরসভার দক্ষিণ-সীমানা এলাকার। কিন্তু অভিযোগ, এখনও কোনও ব্যবস্থা নিচ্ছে না কলকাতা পুরসভা। যদিও এই সব অঞ্চলে শুয়োর ধরার কাজ শুরু হয়েছে বলে পুরসভা জানিয়েছে। উত্তরবঙ্গে ছড়িয়ে পড়েছে জাপানি এনসেফ্যালাইটিস।

Advertisement

দেবাশিস দাস

কলকাতা শেষ আপডেট: ০২ অগস্ট ২০১৪ ০২:৩১
Share:

এ ভাবেই ঘোরাফেরা। ছবি: সুদীপ্ত ভৌমিক

শুয়োর ঘুরে বেড়াচ্ছে। আসে বক জাতীয় পাখিও। এ ছবি কলকাতা পুরসভার দক্ষিণ-সীমানা এলাকার। কিন্তু অভিযোগ, এখনও কোনও ব্যবস্থা নিচ্ছে না কলকাতা পুরসভা। যদিও এই সব অঞ্চলে শুয়োর ধরার কাজ শুরু হয়েছে বলে পুরসভা জানিয়েছে।

Advertisement

উত্তরবঙ্গে ছড়িয়ে পড়েছে জাপানি এনসেফ্যালাইটিস। খোদ কলকাতায়ও সংক্রমণের খবর মিলেছে। বিশেষজ্ঞদের আশঙ্কা শহরের সীমানা এলাকা দিয়ে শহরে ছড়িয়ে পড়তে পারে জাপানি এনসেফ্যালাইটিস। তাই রোগ ঠেকাতে এই সব এলাকায় সতর্কতা এবং নজরদারির প্রয়োজন বলে মনে করেন তাঁরা।

পরজীবী বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক অমিতাভ নন্দী জানান, মানব দেহে জাপানি এনসেফ্যালাইটিসের ভাইরাস ঢোকে কিউলেক্স বিশনোই প্রজাতির মশার মাধ্যমে। শুয়োর, বক বা সারস জাতীয় পাখিদের দেহ থেকে মশার দেহে এই ভাইরাস আসে। তাই যে সব অঞ্চলে এই সব প্রাণী আছে সেখানে বাড়তি সর্তকতা দরকার। অমিতাভবাবু বলেন, “গড়িয়া, বেহালার মতো অঞ্চলের সীমানায় এখনও শুয়োর, বক জাতীয় পাখি এবং মানুষ সহাবস্থান করে। তাই সতর্কতা এবং নজরদারির প্রয়োজন রয়েছে।”

Advertisement

গড়িয়ার সর্দারপাড়া কলকাতা পুরসভার সীমানা এলাকা। এই এলাকার মূল রাস্তার এক দিক কলকাতা পুরসভার ১১১ নম্বর ওয়ার্ড এবং অন্য দিক রাজপুর-সোনারপুর পুরসভার ৩৫ নম্বর ওয়ার্ডের মধ্যে পড়ে। স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, সর্দারপাড়া, মালিপাড়া, গীতানগর, রানিয়া, সেকেন্ড ত্রিশফুট এলাকায় রাস্তা, বাড়ির উঠোনে, বাগানে, অবাধে শুয়োর ঘুরে বেড়ায়। অদূরে রানিয়া খাল এবং এলাকার জলাশয়গুলির আশেপাশে প্রচুর বকও আসে। বাসিন্দা রবি রায় বলেন, “এলাকা থেকে শুয়োর সরানো নিয়ে অনেক বার কাউন্সিলরদের বলেছি। কিন্তু কোনও ব্যবস্থা হয়নি।”

১১১ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর সিপিএমের চয়ন ভট্টাচার্য স্বীকার করেন তাঁর ওয়ার্ডে একশোরও বেশি শুয়োর রয়েছে। তাঁর দাবি, এই শুয়োর এলাকা থেকে সরাতে তিনি ২০১১-এ পুর-অধিবেশনে প্রশ্নও তোলেন। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকেও জানান। কিন্তু কোনও লাভ হয়নি। তিনি বলেন, “আমার ওয়ার্ডের স্বাস্থ্যকর্মীরা পরিস্থিতির উপরে নজর রাখছেন। আমিও সতর্ক আছি।”

রাজপুর-সোনারপুর পুরসভার ৩৫ নম্বর ওয়ার্ডের বিদায়ী কাউন্সিলর সিপিএমের বিজলি দাস বলেন, “আমাদের বোর্ড ভেঙে গিয়েছে। এখন ক্ষমতা এসডিওর হাতে। তবু আমি এলাকার পরিস্থিতির দিকে নজর রাখছি।” বিষয়টি নিয়ে কোনও মন্তব্য করতে রাজি হননি বারুইপুরের মহকুমাশাসক পার্থ আচার্য। তিনি শুধু জানান, রাজপুর-সোনারপুর এলাকায় শুয়োর এবং মুরগির খামার শনাক্ত করার কাজ শুরু হয়েছে।

বাসিন্দাদের অভিযোগ, শুয়োরের উপদ্রবে এই এলাকায় টেকা দায়। রয়েছে মশার উপদ্রবও। এলাকার প্রায় প্রতিটি বাড়িতেই জ্বর লেগেই রয়েছে বলে তাঁরা জানান।

কলকাতার স্কুল অফ ট্রপিক্যাল মেডিসিনের প্রাক্তন অধিকর্তা এবং পতঙ্গবিদ্ চিকিৎসক অমিয়কুমার হাটি বলেন, “জাপানি এনসেফ্যালাইটিসের জীবাণু রয়েছে এমন শুয়োরকে কামড়ানোর আট-ন’দিন পরে সেই কিউলেক্স বিশনোই মশা যদি মানুষকে কামড়ায় তা হলে জাপানি এনসেফ্যালাইটিস হবে। শহরের সীমানা এলাকায় এখনও অনেক জায়গায় শুয়োর, বক রয়েছে। রোগের প্রকোপ ঠেকাতে ওই সব এলাকায় আগাম সতর্কতা নিতে হবে।” যদিও কলকাতা পুরসভার মুখ্য পতঙ্গবিদ্ দেবাশিস বিশ্বাস বলেন, “জাপানি এনসেফ্যালাইটিসের জীবাণুর বাহক মশা শহরে নেই। তাই অযথা আতঙ্কিত হওয়ার কোনও কারণ নেই।”

এই সব এলাকার বাসিন্দারা জানান, জাপানি এনসেফ্যালাইটিস নিয়ে সর্বত্র হইচই হওয়ার পরে আমরা শুনেছিলাম পুরসভা না কি শুয়োর ধরার ব্যবস্থা করছে। তাঁদের অভিযোগ, এখন পর্যন্ত এলাকায় শুয়োর ধরার জন্য পুরসভা কোনও ব্যবস্থা নেয়নি। যদিও কলকাতা পুরসভার জঞ্জাল ও বর্জ্য অপসারণ বিভাগের মেয়র পারিষদ দেব্রবত মজুমদার বলেন, “শহর জুড়ে শুয়োর ধরার অভিযান চলছে।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন