জাপানি এনসেফ্যালাইটিসে (জেই) আক্রান্ত এক কিশোরকে স্কুল অফ ট্রপিক্যাল মেডিসিনে ভর্তি করা হয়েছে। স্বাস্থ্য দফতর সূত্রের খবর, সোনু শাহ নামে ওই কিশোরের বাড়ি দক্ষিণ ২৪ পরগনার সোনারপুর থানা এলাকার উচ্ছেপোতা গ্রামে। চিকিৎসকেরা জানিয়েছেন, তার অবস্থা সঙ্কটজনক।
গত চার-পাঁচ দিন ধরে ওই কিশোর সংজ্ঞাহীন রয়েছে। ট্রপিক্যালের অধিকর্তা নন্দিতা বসু জানিয়েছেন, বেলেঘাটা আইডি হাসপাতাল থেকে ট্রপিক্যালে সম্প্রতি একটি ভেন্টিলেটর আনা হয়েছে। সোনুকে সেখানে রাখা হয়েছে। স্বাস্থ্য অধিকর্তা বিশ্বরঞ্জন শতপথীর কথায়, “দিন আটেক আগে জ্বর ও খিঁচুনি নিয়ে সোনুকে দক্ষিণ কলকাতার একটি বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছিল। তার রক্তের নমুনা ট্রপিক্যালেই পরীক্ষা করে জাপানি এনসেফ্যালাইটিস পাওয়া যায়। অবস্থা খারাপ হতে থাকায় শুক্রবার রাতে তাকে ট্রপিক্যালে আনা হয়েছে।”
স্বাস্থ্য দফতরের হিসেব অনুযায়ী, এই মুহূর্তে ট্রপিক্যালে সোনুকে নিয়ে মোট দু’জন জেই আক্রান্ত ভর্তি রয়েছেন। দ্বিতীয় জন হলেন জিতেন্দ্রপ্রসাদ। ১১ অগস্ট তাঁর রক্তের নমুনায় জেই পাওয়া গিয়েছিল। জিতেন্দ্রপ্রসাদ কলকাতা মেডিক্যাল কলেজের চতুর্থ শ্রেণির কর্মীদের আবাসনে বসবাস করলেও তাঁর দেশ বিহারের আরা অঞ্চলে। স্বাস্থ্য দফতরের দাবি, আরাতেই তিনি জেই আক্রান্ত হন। কিন্তু সোনারপুরের উচ্ছেপোতা গ্রামের বাসিন্দা সোনু সম্প্রতি তার গ্রাম ছেড়ে কোথাও যায়নি বলে জানিয়েছে তার পরিবার। ফলে তার উচ্ছেপোতাতেই জেই আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা বেশি।
স্বাস্থ্য অধিকর্তা জানান, সোনুর বাড়ির আশপাশে আর কারও জ্বর, বমি, মাথাঘোরা, আচ্ছন্ন ভাব বা খিঁচুনির মতো উপসর্গ রয়েছে কি না তা দেখতে স্বাস্থ্য দফতরের কয়েক জন প্রতিনিধিকে সেখানে পাঠানো হচ্ছে। যেহেতু সোনারপুর এলাকা কলকাতা থেকে খুব একটা দূরে নয়, তাই সেখান থেকে জেই রোগী আসায় স্বাস্থ্য কর্তাদের কপালে ভাঁজ পড়েছে।
নন্দিতা বসু এ দিন জানান, রোগ সম্পর্কে সাধারণ মানুষের আরও সচেতন হওয়া দরকার। তাঁর কথায়, “জাপানি এনসেফ্যালাইটিসের কী কী উপসর্গ তা নিয়ে লাগাতার প্রচার চলছে। তা সত্ত্বেও অনেক ক্ষেত্রে রোগীর উপসর্গকে প্রাথমিক ভাবে গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে না। তাঁকে হাসপাতালে আনা হচ্ছে শেষ মুহূর্তে।” রোগ মোকাবিলা ও চিহ্নিতকরণের পরিকাঠামো আরও উন্নত করার উপরেও জোর দিয়েছেন তিনি।
স্বাস্থ্য অধিকর্তা জানিয়েছেন, এই মুহূর্তে কলকাতার অন্য কোনও হাসপাতালে আর কোনও জেই আক্রান্তের ভর্তি থাকার খবর নেই। সরকারি হিসেবে ১ জানুয়ারি থেকে ২৩ অগস্ট পর্যন্ত উত্তরবঙ্গে জেই আক্রান্ত হয়ে ৪৪ জন মারা গিয়েছেন। দক্ষিণবঙ্গে মারা গিয়েছেন ২ জন। আর ওই একই সময়সীমায় অ্যাকিউট ইনসেফ্যালাইটিক সিনড্রোমে আক্রান্ত হয়ে উত্তরবঙ্গে মৃত্যু হয়েছে ১৭২ জনের। দক্ষিণবঙ্গে মারা গিয়েছেন ৮৪ জন।