ডেঙ্গি নিয়ন্ত্রণে স্বাস্থ্য দফতর এবং পুরসভার কাজের মধ্যে সমন্বয় রক্ষা করেন স্বাস্থ্য আধিকারিক। সেই স্বাস্থ্য আধিকারিকের পদ প্রায় ১ মাস ধরে ফাঁকা। এর জেরেই ডেঙ্গি নিয়ন্ত্রণের কাজে সমস্যা হতে পারে বলে আশঙ্কা করছেন অনেকে।
শিলিগুড়ি পুরসভার স্বাস্থ্য বিভাগের আধিকারিক তথা চিকিৎসক সুনীল কুমার দাস অবসর নিয়েছেন গত ২৮ ফেব্রুয়ারি। ওই পদে এখনও কেউ যোগ দেননি। ডেঙ্গি নিয়ন্ত্রণে স্বাস্থ্য দফতর এবং পুরসভার কাজের মধ্যে সমন্বয় রক্ষা করেন ওই আধিকারিকই।
গত বছর ডেঙ্গিতে আক্রান্ত হয়ে শিলিগুড়ি শহর ও লাগোয়া এলাকায় অনেকের মৃত্যু হয়েছিল। ডেঙ্গি নিয়ে আতঙ্ক তৈরি হয়েছিল শহরে। এ বছর তাই ডেঙ্গি নিয়ন্ত্রণের কাজের ব্যাপারে আগাম সতর্ক হতে চান শিলিগুড়ি পুর কর্তৃপক্ষ। অথচ স্বাস্থ্য আধিকারিক না থাকায় সেই কাজ সুষ্ঠুভাবে করার ক্ষেত্রে সমস্যা হবে বলে আশঙ্কা রয়েছে।
বুধবার স্বাস্থ্য আধিকারিক ছাড়াই ডেঙ্গি নিয়ন্ত্রণে কী ব্যবস্থা নেওয়া উচিত তা নিয়ে পুরসভায় বৈঠক হয়। সেখানে সাফাই বিভাগের মেয়র পারিষদ কাজল চন্দ, ৫ টি বরোর আধিকারিকরা, পুর কমিশনার, স্যানিটরি ইন্সপেক্টর, কনজারভেন্সি ইন্সপেক্টররা ছিলেন। কর্তৃপক্ষ জানান, স্বাস্থ্য আধিকারিক নিয়োগের জন্য রাজ্য সরকারকে পুরসভার তরফে চিঠি পাঠানো হয়েছে। ওই পদে কেউ যোগ না দেওয়া পর্যন্ত সমস্যার কথা আঁচ করে ইতিমধ্যেই জেলা স্বাস্থ্য দফতরকে পুর কমিশনারের তরফেও চিঠি পাঠিয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার আবেদন জানানো হয়েছে।
মেয়র গঙ্গোত্রী দত্ত শহরের বাইরে রয়েছেন। তিনি বলেন, ‘‘স্বাস্থ্য আধিকারিকের পদে নতুন নিয়োগের জন্য রাজ্য সরকারকে জানানো হয়েছে।” নতুন নিয়োগ না হওয়া পর্যন্ত সুনীলবাবুকে চুক্তির ভিত্তিতে আরও কিছু দিন রাখার কথাও ভাবা হয়েছে বলে জানান মেয়র। স্বাস্থ্য আধিকারিক অবসর নেবেন তা আগে থেকেই জানা। তাই এ ব্যাপারে পুর কর্তৃপক্ষ কেন আগাম ব্যবস্থা নিতে পারেননি সেই প্রশ্ন উঠেছে। মেয়র পারিষদ সঞ্জয় পাঠক জানান, স্বাস্থ্য আধিকারিক অবসর নেওয়ার কয়েক দিন পরেই নির্বাচন ঘোষণা হয়ে যায়। পুরসভার তরফে এখন ব্যবস্থা করাও সম্ভব নয়। পুর কমিশনার সোনম ওয়াংদি ভুটিয়া এ দিন বলেন, “গত বছর ডেঙ্গির সংক্রমণ যে ভাবে ছড়িয়েছিল সে কারণে এ বার আগাম সতর্কতা নেওয়া হচ্ছে। বরোগুলিতে মশা মারার তেল ১০০ লিটার করে বরাদ্দ করা হয়েছে। এক একটি বরো অধীনে ৮/৯ টি করে ওয়ার্ড রয়েছে। মশা মারার তেলেও অভাব হলে ফের তেল বরাদ্দ করা হবে।” তিনি জানান, পুরসভার স্বাস্থ্য আধিকারিকের অবর্তমানে যাতে সমস্যা না হয় সে জন্য জেলার মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিককে বিষয়টি জানানো হয়েছে। শীঘ্রই পুরসভার স্বাস্থ্য সহায়কদের নিয়েও এ বিষয়ে বৈঠক করা হবে।
মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক সুবীর ভৌমিক জানান, ওই পদে আধিকারিক নিয়োগ পুর কর্তৃপক্ষই করবেন। তা না হওয়া পর্যন্ত যে কর্মীরা রয়েছেন তাঁদেরকেই বিষয়টি দেখতে হবে। গত বছর কাজ করার সুবাদে তাঁদের অভিজ্ঞতাও রয়েছে।
পুরসভা সূত্রে জানা গিয়েছে, গত বছর শিলিগুড়ি শহর, মহকুমার অন্যান্য এলাকা এবং লাগোয়া জলপাইগুড়ি জেলার বিভিন্ন জায়গায় ডেঙ্গিতে আক্রান্ত হয়ে অন্তত ১০ জনের মৃত্যু হয়েছিল। উত্তরবঙ্গ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল এবং শিলিগুড়ি জেলা হাসপাতালে আলাদা ওয়ার্ড চালু করেও জ্বরে আক্রান্ত রোগীদের সকলের চিকিৎসা ব্যবস্থা করা সম্ভব হচ্ছিল না। পুরসভার বিরুদ্ধে ডেঙ্গি নিয়ন্ত্রণের কাজে গড়িমসির অভিযোগ উঠেছিল। তাই এ বার তাঁরা ঝুঁকি নিতে চাইছেন না। বৈঠকে উপস্থিত সাফাই বিভাগের মেয়র পারিষদ কাজল চন্দ বলেন, “ডেঙ্গি নিয়ন্ত্রণে আগাম সতর্কতামূলক ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। বরোগুলিতে ৫ টি করে স্প্রে মেশিন দেওয়া হবে। শহরের মধ্যে দিয়ে বয়ে যাওয়া জোড়াপাড়ি এবং ফুলেশ্বরী নদীখাতের আবর্জনা সাফ করার কাজও শুরু হয়েছে।” তিনি জানান, নির্মাণ কাজের জায়গায় ভাঙা কৌটো বা অপর কোনও পাত্রে যাতে জল জমে না থাকে সে জন্য নির্মাতাদের সতর্ক হতে হবে। উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষার পর মাইকিং করে প্রচার করা হবে। তার পরেও কেউ তা না মানলে কড়া ব্যবস্থা নেবে পুর কর্তৃপক্ষ। দেওয়াল দিয়ে ঘেরা ফাঁকা জায়গায় জঙ্গলে ভরে গেলে মালিকপক্ষকে তা পরিষ্কার করতে হবে। অন্যথায় পুরসভার তরফে তা সাফ করে দেওয়া হবে। সেই খরচ মালিকপক্ষকেই বহন করতে হবে। সংশ্লিষ্ট মালিকপক্ষকে জরিমানা করার বিষয়টিও ভাবা হচ্ছে। তবে স্বাস্থ্য আধিকারিক না-থাকায় ডেঙ্গি নিয়ন্ত্রণের কাজে কিছুটা সমস্যা হতে পারে বলে তাঁরও আশঙ্কা।