সুহানা ইয়াসমিন
রাজ্যের সেরা সরকারি হাসপাতালে রক্ত না পেয়ে এক বালিকার মৃত্যুর ঘটনায় ‘দোষী’ ডাক্তারদের অবশেষে চিহ্নিত করা হল। খাস এস এস কে এম হাসপাতালে গত ২৭ নভেম্বর মারা যায় ১২ বছরের সুহানা ইয়াসমিন। অস্ত্রোপচারের ২৪ ঘণ্টা বাদেও তাকে রক্ত দিতে এক জনও ডাক্তার মেলেনি। এই ঘটনার জেরেই চার জন জুনিয়র ডাক্তারকে দোষী সাব্যস্ত করেছেন হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। শনিবার এস এস কে এমের অধ্যক্ষ প্রদীপ মিত্রের কাছে ওই চার জনের বিরুদ্ধে রিপোর্ট জমা পড়েছে। কাল, সোমবার সেই রিপোর্ট রাজ্যের স্বাস্থ্য-শিক্ষা অধিকর্তার দফতর ও স্বাস্থ্য বিশ্ববিদ্যালয়ে পাঠানো হবে বলে প্রদীপবাবু জানান। তিনি বলেন, “ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষই অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে পরবর্তী পদক্ষেপ করবেন।”
গত ২৫ নভেম্বর উত্তর ২৪ পরগনার স্বরূপনগরের বাসিন্দা সুহানা স্কুল থেকে ফেরার পথে রড বোঝাই একটি গাড়ির ধাক্কায় গুরুতর জখম হয়েছিল। বসিরহাট এবং কলকাতার আর জি কর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে উপযুক্ত চিকিৎসা না-মেলায় তাকে এস এস কে এমে নিয়ে যাওয়া হয়। সে-দিন রাতে অস্ত্রোপচারের পর চার বোতল রক্ত লাগবে বলে সুহানার অভিভাবকদের জানিয়েছিলেন চিকিৎসকেরা। পরের দিন (২৬ নভেম্বর) দুপুরের মধ্যে তা জোগাড়ও করে সুহানার পরিবার। কিন্তু ২৪ ঘণ্টার মধ্যে সেই রক্ত সুহানার শরীরে দেওয়ার জন্য কোনও ডাক্তার মেলেনি। রক্ত না-পেয়ে এস এস কে এমের প্লাস্টিক সার্জারি বিভাগে ধুঁকতে ধুঁকতে মারা যায় ওই মেয়েটি।
রাজ্যের এক মাত্র সুপার স্পেশালিটি হাসপাতাল এস এস কে এমে এই ভাবে রোগী মৃত্যুর ঘটনায় প্রশ্ন উঠেছিল নানা মহলে। হাসপাতালের কর্তারা এর সদুত্তর দিতে পারেননি। তবে ঘটনার এক দিনের মধ্যেই তিন সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গড়া হয়। সেই কমিটিই চার জন জুনিয়র ডাক্তারকে এই ঘটনায় দোষী সাব্যস্ত করেছে। হাসপাতাল সূত্রের খবর, সুহানার অস্ত্রোপচার ও মৃত্যুর মধ্যবর্তী সময়ে এই চার জন জুনিয়র ডাক্তারই ডিউটিতে ছিলেন। তদন্ত কমিটির রিপোর্ট অনুযায়ী ওই চার চিকিৎসকের যে কোনও এক জন রক্ত দিলেই সুহানা প্রাণে বাঁচতে পারত। কিন্তু তা করা হয়নি।
দোষী ডাক্তারদের চিহ্নিত করতে এস এস কে এম হাসপাতালের তদন্ত কমিটির তৎপরতা অবশ্য ব্যতিক্রমী ঘটনা হিসেবেই দেখছে প্রশাসনিক মহল। সাধারণত নেতিবাচক কিছু ঘটলে তা ধামাচাপা দেওয়াটাই এ রাজ্যে দস্তুর হয়ে উঠেছে। হাসপাতাল বা স্বাস্থ্য দফতরও এর ব্যতিক্রম নয়। ১৬ নভেম্বর ভোরে এন আর এস মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের হস্টেলে কোরপান শা নামে এক মানসিক ভারসাম্যহীন যুবককে পিটিয়ে মারার ঘটনায় অভিযোগের তির ওঠে হবু ডাক্তারদের দিকে। কিন্তু এন আর এস-এর তদন্ত কমিটি এখনও পর্যন্ত কাউকে দোষী হিসেবে চিহ্নিত করতে পারেনি। কর্তৃপক্ষ পুলিশকেও তদন্তে অসহযোগিতা করেছেন বলে অভিযোগ উঠেছিল।
হাসপাতাল সূত্রের খবর, এন আর এস-এর ঘটনায় দোষীদের যাতে চিহ্নিত না-করা হয়, তার জন্য উপর মহল থেকে চাপ আসে। সুহানার মৃত্যুর ঘটনায় সরকারি হাসপাতালের বেহাল পরিষেবার দিকটা বেরিয়ে আসায় এ ক্ষেত্রেও এস এস কে এমের তদন্ত কমিটির উপরে চাপ তৈরি করা হয় বলে মানছেন কোনও কোনও স্বাস্থ্য কর্তা। তবে এ ক্ষেত্রে এস এস কে এম-কর্তারা নিজেদের সিদ্ধান্তে অনড় ছিলেন। হাসপাতালের অধ্যক্ষ প্রদীপ মিত্র বলেন, “এমন একটি মর্মান্তিক ঘটনাকে আমরা হাল্কা ভাবে দেখিনি। তা হলে ভবিষ্যতে সাধারণ মানুষ চিকিৎসকদের উপরে আস্থা হারাতে পারতেন।”