প্রায় দু’দশক ধরে ছোটপর্দার সঙ্গে যুক্ত। অধিকাংশ ধারাবাহিকে অতিথিশিল্পী হিসাবেও উপস্থিত থাকতে দেখা গিয়েছে তাঁকে। কিন্তু সাফল্যের স্বাদ তেমন পাননি ক্রিস্টল ডি’সুজ়া। বরং অর্থপাচার তদন্তে নাম জড়িয়ে পড়ায় ক্ষণিকের জন্য প্রচারে এসেছিলেন। ফের স্তিমিত হয়ে গিয়েছিল তাঁর নাম। বর্তমানে ‘ধুরন্ধর’ ছবির ‘আইটেম সং’-এ অভিনয় করে প্রচারে এসেছেন ক্রিস্টল।
১৯৯০ সালের মার্চ মাসে মহারাষ্ট্রের মুম্বইয়ে জন্ম ক্রিস্টলের। বাবা-মা এবং ভাইয়ের সঙ্গে সেখানেই থাকেন তিনি। মুম্বই থেকেই স্কুল এবং কলেজের পড়াশোনা শেষ করেন তিনি। তবে, কলেজে পড়াশোনা চলাকালীন হিন্দি ধারাবাহিকের জন্য অডিশন দিতে শুরু করেছিলেন ক্রিস্টল।
২০০৭ সালে ‘কহে না কহে’ নামের হিন্দি ধারাবাহিকের মাধ্যমে ছোটপর্দায় কেরিয়ার শুরু করেন ক্রিস্টল। তার পর ‘কস্তুরী’, ‘কিস দেশ মে হ্যায় মেরা দিল’, ‘এক হাজারো মে মেরি বহেনা হ্যায়’, ‘ব্রহ্মরাক্ষস’-এর মতো একাধিক হিন্দি ধারাবাহিকে অভিনয় দেখা যায় তাঁর।
কানাঘুষো শোনা যেতে থাকে যে, ‘এক হাজারো মে মেরি বহেনা হ্যায়’ ধারাবাহিকের শুটিং চলাকালীন ক্রিস্টলের সঙ্গে তাঁর সহ-অভিনেতা কর্ণ টাকরের সম্পর্ক গাঢ় হয়ে পড়ে। দুই তারকা অবশ্য সম্পর্কের কথা অস্বীকার করে নিজেদের ভাল বন্ধু বলে পরিচয় দিয়েছিলেন।
একাংশের দাবি, কর্ণের সঙ্গে ক্রিস্টলের সম্পর্ক থাকলেও পরে তা ভেঙে যায়। দু’জনের চিন্তাধারায় আকাশ-পাতাল বৈসাদৃশ্য ছিল। তার প্রভাব পড়েছিল তাঁদের সম্পর্কেও। সম্পর্ক ভেঙে যাওয়ার পর একই কারণে তাঁদের কথা বলাও বন্ধ হয়ে যায়।
পেশার সূত্রে ক্রিস্টলের সঙ্গে আলাপ হয়েছিল টেলিভিশনের অভিনেতা হৃতিক ধনজানীর। গুঞ্জন শোনা যেত, দুই টেলি তারকা সম্পর্কে রয়েছেন। পরে এক সাক্ষাৎকারে ক্রিস্টল স্পষ্ট করে জানিয়ে দিয়েছিলেন যে, হৃতিক তাঁর খুব কাছের বন্ধু। এমনকি, ক্রিস্টলের বান্ধবীদের যে ‘গ্রুপ’ রয়েছে, সেখানেও হৃতিকের যাতায়াত লেগে থাকে।
টেলিপাড়া সূত্রে খবর, গত তিন বছর ধরে গুলাম গাউস দেওয়ানির সঙ্গে সম্পর্কে ছিলেন ক্রিস্টল। পেশায় রেস্তরাঁর মালিক তিনি। সমাজমাধ্যমের পাতায় প্রায়শই একে অপরের সঙ্গে ছবি পোস্ট করতেন তাঁরা। তবে, চলতি বছরের অক্টোবর মাসে তাঁদের সম্পর্ক ভেঙে যায়। সমাজমাধ্যমের পাতায়ও পরস্পরের সঙ্গে আড়ি করে নিয়েছেন দু’জনে।
হিন্দি ধারাবাহিক জগতের জনপ্রিয় অভিনেত্রী নিয়া শর্মার সঙ্গে ভাল বন্ধুত্ব রয়েছে ক্রিস্টলের। তবে, গত বছর প্রিয় বান্ধবীর পাশাপাশি ক্রিস্টলও নজরে পড়েছিলেন এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেট(ইডি)-এর।
২০২৪ সালের জুলাই মাসে ইডির কাছে ডাক পড়েছিল ক্রিস্টল এবং নিয়ার। অর্থপাচারের তদন্তে নেমে ইডি টেলিপাড়ার দুই নায়িকাকে তলব করেছিল। তবে, ক্রিস্টলের সঙ্গে যে অর্থপাচারের কোনও সম্পর্ক নেই তা স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছিলেন নায়িকা।
ইডির সূত্রে খবর, বৈদেশিক মুদ্রা কেনাবেচার বেআইনি অ্যাপের প্রচার করেছিলেন নিয়া এবং ক্রিস্টল। তাঁদের সমাজমাধ্যমের পাতা থেকে অ্যাপের প্রচারমূলক ভিডিয়ো পোস্টও করেছিলেন তাঁরা। তদন্তে নেমে তাঁদের তলব করেছিল ইডি।
তদন্তে জানা যায়, ক্রিস্টল এবং নিয়া দু’জনেই অ্যাপের বিষয়ে বিশেষ কিছু জানতেন না। ক্রিস্টলের কথায়, ‘‘আমি পেশাদার অভিনেত্রী। আমায় উপযুক্ত পারিশ্রমিকের বিনিময়ে অ্যাপের প্রচার করতে বলা হয়েছিল। আমি সেই পারিশ্রমিক গ্রহণ করে আমার কাজটুকু করেছিলাম। এর বেশি আর কিছুই জানি না।’’
২০০৮ সালে ‘সি কোম্পানি’ নামে একটি হিন্দি ছবিতে অল্প সময়ের জন্য অভিনয় করেছিলেন ক্রিস্টল। ২০২১ সালে প্রেক্ষাগৃহে মুক্তি পায় অমিতাভ বচ্চন এবং ইমরান হাশমি অভিনীত ‘চেহরে’ ছবিটি। এই ছবিতে ইমরানের সঙ্গিনীর চরিত্রে অভিনয় করেন তিনি।
বড়পর্দায় ছোটখাটো চরিত্রে অভিনয় করলেও বলিপাড়ায় তেমন পরিচিতি পাচ্ছিলেন না ক্রিস্টল। চলতি মাসেই পায়ের তলার জমি শক্ত হয় তাঁর। রাতারাতি আলোচনার কেন্দ্রবিন্দু হয়ে ওঠেন তিনি।
চলতি মাসে প্রেক্ষাগৃহে মুক্তি পেয়েছে ‘ধুরন্ধর’। বক্সঅফিস কাঁপানো এই ছবিতে একটি ‘আইটেম সং’-এ অভিনয় করেন ক্রিস্টল। তাঁর সঙ্গে অভিনয় করতে দেখা গিয়েছে আয়েশা খান নামে এক অভিনেত্রীকে।
‘ধুরন্ধর’ মুক্তি পাওয়ার পর সমাজমাধ্যমে অনুরাগীমহল তৈরি হয়েছে ক্রিস্টলের। ইতিমধ্যেই ইনস্টাগ্রামের পাতায় তাঁর অনুগামীর সংখ্যা ৭৬ লক্ষের গণ্ডি পার করে ফেলেছে।