সমন্বয়ে ফাঁক, দেদার ঢুকছে মশা ও ম্যালেরিয়া

পোলিও-মুক্ত হয়েছে ভারত। কিন্তু ম্যালেরিয়া ও ডেঙ্গির দাপট কমছে না। সোমবার, বিশ্ব স্বাস্থ্য দিবসে কলকাতার এক আলোচনাসভায় এই নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করা হয়। সেখানেই ওই সব রোগ নির্মূল করতে না-পারার জন্য মূলত দু’টি কারণের কথা বলেন রাজ্য যুগ্ম স্বাস্থ্য অধিকর্তা চিকিৎসক সচ্চিদানন্দ সরকার। তিনি জানান, যথাযথ সমীক্ষা এবং বিভিন্ন স্তরের স্বাস্থ্যকর্মীদের মধ্যে সমন্বয়ের অভাবেই এ রাজ্য থেকে ডেঙ্গি বা ম্যালেরিয়ার মতো মশকবাহিত রোগ পুরোপুরি উৎখাত করা যাচ্ছে না।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

কলকাতা শেষ আপডেট: ০৮ এপ্রিল ২০১৪ ০৩:২৮
Share:

পোলিও-মুক্ত হয়েছে ভারত। কিন্তু ম্যালেরিয়া ও ডেঙ্গির দাপট কমছে না। সোমবার, বিশ্ব স্বাস্থ্য দিবসে কলকাতার এক আলোচনাসভায় এই নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করা হয়। সেখানেই ওই সব রোগ নির্মূল করতে না-পারার জন্য মূলত দু’টি কারণের কথা বলেন রাজ্য যুগ্ম স্বাস্থ্য অধিকর্তা চিকিৎসক সচ্চিদানন্দ সরকার। তিনি জানান, যথাযথ সমীক্ষা এবং বিভিন্ন স্তরের স্বাস্থ্যকর্মীদের মধ্যে সমন্বয়ের অভাবেই এ রাজ্য থেকে ডেঙ্গি বা ম্যালেরিয়ার মতো মশকবাহিত রোগ পুরোপুরি উৎখাত করা যাচ্ছে না।

Advertisement

এ দিন বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (হু) এবং রাজ্যের স্বাস্থ্য দফতরের যৌথ উদ্যোগে ভেক্টরবাহিত রোগ নিয়ে ওই আলোচনাসভার আয়োজন করা হয়েছিল। যুগ্ম স্বাস্থ্য অধিকর্তা ছাড়াও সেই সভায় যোগ দেন রাজ্যের স্বাস্থ্য (শিক্ষা) অধিকর্তা সুশান্ত বন্দ্যোপাধ্যায়, হু-র আঞ্চলিক অধিকর্তা দীপঙ্কর মুখোপাধ্যায় প্রমুখ। মশকবাহিত রোগের বাড়বাড়ন্ত যে তাঁদের চিন্তায় ফেলেছে, স্বাস্থ্য (শিক্ষা) অধিকর্তা তা স্বীকার করে নেন। তিনি বলেন, “রাজ্য সরকারের সহযোগিতায় একটি কমিটি গড়া হয়েছে। কোথায় গলদ লুকিয়ে আছে এবং কী ভাবে তা দূর করা যাবে, ওই কমিটি তা বোঝার চেষ্টা করছে।”

ম্যালেরিয়া, ডেঙ্গির মতো রোগ নিয়ন্ত্রণে ঘাটতির জন্য স্বাস্থ্যকর্তারা এ দিন আত্মসমালোচনায় মুখর হন। ডেঙ্গির দাপটের ব্যাপারে ২০১২ সালের কথা তোলেন সচ্চিদানন্দবাবু। তিনি জানান, ওই বছর যখন খুব বেশি ডেঙ্গি সংক্রমণ হতে শুরু করে, তখন সাধারণ মানুষের মধ্যে সচেতনতার অভাব ছিল। ডেঙ্গির লক্ষণ কী এবং এই রোগে আক্রান্ত হলে কী করা উচিত, অনেকেই তা ভাল ভাবে জানতেন না। যথেষ্ট ডায়াগনস্টিক সেন্টারেরও অভাব ছিল। তাঁর অভিযোগ, এর উপরে স্বাস্থ্য দফতরের কাছে ডেঙ্গি সংক্রমণের প্রথম রিপোর্ট আসতেও অনেক দেরি হয়। ডেঙ্গিতে আক্রান্ত হয়ে প্রথম রোগীটির মৃত্যুর আট দিন পরে স্বাস্থ্য দফতর তা জানতে পারে। ফলে ডেঙ্গি সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে করতে সময় লেগে গিয়েছিল। তিনি বলেন, “সে-বছর ডেঙ্গিতে আক্রান্ত হয়ে মারা যান ১১ জন।”

Advertisement

তার পরেও তো প্রায় দু’বছর কেটে গিয়েছে। পরিস্থিতির তেমন উন্নতি হচ্ছে না কেন? সচ্চিদানন্দবাবু যথাযথ সমীক্ষা ও সমন্বয়ের অভাবের কথা বলেন। আত্মসমালোচনার সুরে তাঁর অভিযোগ, এ রাজ্যে ভাল চিকিৎসক থাকলেও স্বাস্থ্যকর্মী প্রয়োজনের তুলনায় অনেকটাই কম। ফলে বাড়ি বাড়ি গিয়ে মানুষের মধ্যে সচেতনতার প্রসার এবং কিছু ক্ষেত্রে ওষুধ সরবরাহ করার মতো কাজগুলো হয় না বললেই চলে। রাজ্য সরকারকে এই সব বিষয়ে নজর দিতে হবে। ওই সব রোগ ছড়াতে শুরু করলে যাতে তৎক্ষণাৎ স্বাস্থ্য দফতর সেই রিপোর্ট পায়, তার ব্যবস্থা করতে হবে। স্বাস্থ্যকর্মী, ব্লক স্তরের সমীক্ষক এবং সব সরকারি ও বেসরকারি হাসপাতালকে যথাসময়ে এই বিষয়ে অবহিত করানো উচিত।

সচ্চিদানন্দবাবু জানান, পোলিওর মতো ভ্যাকসিনের সাহায্যে ডেঙ্গি এবং ম্যালেরিয়া দূর করা সম্ভব নয়। কারণ, আবহাওয়া পরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে ডেঙ্গি ও ম্যালেরিয়া নিজেদের চরিত্র বদলে ফেলে। তাই এই দু’টি রোগের কোনও ভ্যাকসিনই হয় না। তাঁর মতে, এই দু’টি রোগ নিয়ন্ত্রণের জন্য দ্বিমুখী ব্যবস্থা চাই। প্রথমত, সাধারণ মানুষকে সচেতন হতে হবে। দ্বিতীয়ত, মানুষকে সচেতন করতে হবে সংশ্লিষ্ট স্বাস্থ্যকর্মীদেরই।

হু জানাচ্ছে, মশাবাহিত রোগের মধ্যে ডেঙ্গিই সব থেকে দ্রুত দৌড়য়। অর্থাৎ সংক্রমণের দৌড়ে ডেঙ্গিই এক নম্বর। ওই সংস্থার আঞ্চলিক অধিকর্তা দীপঙ্কর মুখোপাধ্যায় জানান, ভেক্টরবাহিত রোগগুলির মধ্যে ডেঙ্গিই সব থেকে দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে। এশিয়া, ইউরোপ-সহ সারা বিশ্বে প্রায় ১৭ শতাংশ মানুষ ডেঙ্গিতে আক্রান্ত। ভারত এবং তার পড়শি দেশগুলিতে ডেঙ্গির প্রকোপ দিন দিন বেড়েই চলেছে। দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দেশগুলির মধ্যে ডেঙ্গি-মুক্ত হতে পেরেছে শুধু ডেমোক্র্যাটিক পিপলস রিপাবলিক অব কোরিয়া। মলদ্বীপ ১৯৮৪ সাল থেকে নিজেকে ম্যালেরিয়া-মুক্ত রাখতে পেরেছে। ভারত তো বটেই, সেই সঙ্গে বাংলাদেশ, ভুটান, শ্রীলঙ্কা, নেপাল-সহ প্রতিবেশী দেশগুলি ম্যালেরিয়াপ্রবণ বলে চিহ্নিত।

স্বাস্থ্য দফতর সূত্রের খবর, শুধু ডেঙ্গি বা ম্যালেরিয়া নয়, কালাজ্বরও ভয়ানক রূপ নিচ্ছে। ২০১৩ সালে ভারতে কালাজ্বরে আক্রান্তের সংখ্যা ছিল ৫৯৫। চলতি বছরে ইতিমধ্যে শুধু দার্জিলিং ও মালদহে ৪৫ জন এই রোগে আক্রান্ত হয়েছেন। রিপোর্টে হু জানিয়েছে, মশাবাহিত বিভিন্ন রোগের মধ্যে লিম্ফ্যাটিক ফাইলেরিয়াসিসও ভয়াবহ আকার নিচ্ছে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার বিভিন্ন দেশে। ভারত এবং তার বিভিন্ন পড়শি দেশে এই রোগের প্রকোপ বেশি। ভারত ও প্রতিবেশী দেশগুলি মিলিয়ে ৬০ মিলিয়নেরও বেশি মানুষ এই রোগে আক্রান্ত।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন