খাস কলকাতায় হেমারেজিক ডেঙ্গিতে মৃত্যু হল এক শিশুর। বুধবার ভোরে পার্ক সার্কাসের এক শিশু হাসপাতালে। আড়াই বছরের ওই শিশুর নাম স্মৃতি সাউ। সপ্তাহখানেক ধরে জ্বরে ভুগছিল সে। চিকিৎসকেরা জানান, তার বমির সঙ্গে রক্ত বেরোয়। পেটের ভিতরেও রক্তরক্ষণ হয়েছে। যা হেমারেজিক ডেঙ্গিরই লক্ষণ।
৯১ নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দা স্মৃতিকে গত সোমবার ওই হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। তখন তার প্লেটলেটের পরিমাণ ছিল ৯০ হাজার। মঙ্গলবার ফের রক্ত পরীক্ষায় ধরা পড়ে প্লেটলেট কমে হয়েছে ৪৫ হাজার। অবিলম্বে তাকে প্লেটলেট এবং স্যালাইন দেওয়া শুরু হয়। ওই হাসপাতালের চিকিৎসক মলয় মুখোপাধ্যায় বলেন, “মঙ্গলবার বিকেল থেকে শিশুটির অবস্থার অবনতি হতে শুরু করে। প্রবল শ্বাসকষ্ট শুরু হয়। সঙ্গে রক্তবমি। শিশুটির পেট ক্রমশ ফুলে উঠছিল। তার নাক দিয়ে পেটে পাইপ ঢুকিয়ে পেট ফোলার কারণ অনুসন্ধানের চেষ্টা হয়েছিল। কিন্তু তাতে দেখা যায়, পাইপ থেকে রক্ত উঠে আসছে। অর্থাৎ শিশুটির পেটের ভিতরেও রক্তক্ষরণ হচ্ছিল।”
মঙ্গলবার রাত থেকেই নাড়ির গতি অস্বাভাবিক বেড়ে যায়। প্রায় অচেতন অবস্থায় চলে যায় সে। বুধবার ভোরে মৃত্যু হয়। ডেথ সার্টিফিকেটে ‘সিভিয়র ডেঙ্গি’ লেখা রয়েছে। মলয়বাবু বলেন, “যে ভাবে রক্তক্ষরণ হয়েছে, তাতে এটি হেমারেজিক ডেঙ্গি তো বটেই। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (হু)-র ২০১২ সালের নির্দেশিকা অনুযায়ী, এটিকে সিভিয়র ডেঙ্গি বলেও চিহ্নিত করেছি।”
হাসপাতালের অধিকর্তা অপূর্ব ঘোষ জানান, শিশুটি যখন তাঁদের হাসপাতালে আসে, তখনই তার অবস্থা যথেষ্ট খারাপ। ভর্তি হওয়ার আগেই বাইরের ল্যাবরেটরিতে এলাইজা পদ্ধতিতে তার রক্ত পরীক্ষায় ডেঙ্গি ধরা পড়ে। ৯১ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর দীপঙ্কর দে জানান, ওই এলাকায় বেশ কিছু বাসিন্দা ম্যালেরিয়া ও ডেঙ্গিতে আক্রান্ত। স্মৃতির দাদা বিকাশ সাউও ডেঙ্গিতে আক্রান্ত হয়ে এক হাসপাতালে ভর্তি। দীপঙ্করবাবু বলেন, “এলাকায় মশা মারার কাজ নিয়মিতই চলছে। তবু রোগের প্রকোপ কেন ঠেকানো যাচ্ছে না, বুঝতে পারছি না।” যদিও স্মৃতির পরিবারের লোকেরা অভিযোগ করেছেন, এলাকায় মশা মারার কোনও অভিযান তো নেই-ই, এমনকী নিয়মিত জঞ্জাল পরিষ্কারও হয় না।
বুধবার পুর-স্বাস্থ্য বিভাগের এক কর্তা বলেন, “আজ দুপুর আড়াইটেতে আমাদের অফিস বন্ধ হয়েছে। ততক্ষণে ডেঙ্গিতে মৃত্যুর খবর আসেনি।”