দামিনীর কোলে সন্তান

অলৌকিক ঘটনায়। মেঘনাদ ভট্টাচার্যের নাটক দেখলেন মনসিজ মজুমদারসায়কের প্রযোজনা ‘দামিনী হে’ (নাটকঃ চন্দন সেন, পরিঃ মেঘনাদ ভট্টাচার্য)। এক জরাগ্রস্ত বংশের কাহিনি, যাতে তিনটি প্রজন্মই জরায় জীর্ণ। শতবর্ষী পিতামহ, পঁচাত্তুরে বাবা আর চল্লিশোর্ধ ছেলে, যার সন্তানহীনা তরুণী ভার্যা দামিনী এই তিনপুরুষের নাটকের প্রাণ। নাটকের প্রথমেই এই জরাগ্রস্ততার অসামান্য দৃশ্যময় প্রতীকী উপস্থাপনা। অতি প্রাচীন ঝুরি-নামা নিস্পত্র বটগাছের তলায়, কোটরে আশ্রিত ওই তিন জরা-প্রতিভূ। নাটকের টানাপড়েন দামিনীকে নিয়ে।

Advertisement
শেষ আপডেট: ৩০ মে ২০১৫ ০০:০৬
Share:

সায়কের প্রযোজনা ‘দামিনী হে’ (নাটকঃ চন্দন সেন, পরিঃ মেঘনাদ ভট্টাচার্য)। এক জরাগ্রস্ত বংশের কাহিনি, যাতে তিনটি প্রজন্মই জরায় জীর্ণ। শতবর্ষী পিতামহ, পঁচাত্তুরে বাবা আর চল্লিশোর্ধ ছেলে, যার সন্তানহীনা তরুণী ভার্যা দামিনী এই তিনপুরুষের নাটকের প্রাণ। নাটকের প্রথমেই এই জরাগ্রস্ততার অসামান্য দৃশ্যময় প্রতীকী উপস্থাপনা। অতি প্রাচীন ঝুরি-নামা নিস্পত্র বটগাছের তলায়, কোটরে আশ্রিত ওই তিন জরা-প্রতিভূ। নাটকের টানাপড়েন দামিনীকে নিয়ে। দামিনীই তিন বৃদ্ধের দেখভাল করে। নানা প্রলোভন সত্ত্বেও আত্মসম্মান অক্ষুণ্ণ রাখে। নতুন বিডিও অফিসের বড়কর্তাকে সেবা করার জন্যে দামিনীকে চাই, ক্ষমতাবান বড়কর্তা দামিনীর ফোটো তুলতে চায় নির্জন বনের আড়ালে। তাকে মদত দেয় গ্রামপ্রধান। বাড়িতে স্বামী দৃশ্যত অক্ষম। পুত্র কামনায় পীড়িত দামিনী, ভরা যৌবন নিয়ে একা গ্রাম চষে বেড়ায়, বিডিও আর বনমালীর ফাঁদে পা দেয় না। সাহস জোগায় প্রধানের রক্ষিতা জাবালি। এক অলৌকিক ঘটনায় দামিনীর কোলে আসে নতুন প্রাণ, মঞ্চ থেকে সরে যায় প্রাচীন বট। জরাগ্রস্তরা চাঙ্গা হয়ে ওঠে।

Advertisement

রূপক নাটক। অভিনয়ে উপস্থাপনায় বাস্তবতার সঙ্গে মিশে গেছে স্বপ্ন, কল্পনা, অলৌকিকতা। কথাকলির প্রাণচঞ্চল দামিনী কল্পনাপ্রবণ কবিপ্রাণ, প্রকৃতি-মুগ্ধ। পাপিয়া রায়ের জাবালি, পোড়-খাওয়া কোমল-হৃদয় নারী, আগলে রাখে দামিনীকে। জরায় পঙ্গু তিন বৃদ্ধের মধ্যে সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য উত্তম দের কার্তিক। সৌমিক পিয়ালীর মঞ্চে বটগাছ প্রযোজনার অন্যতম চরিত্র। মেঘনাদ ভট্টাচার্যের দালাল সমস্ত নাটককে এক সূত্রে গেঁথে রাখে, একটি স্বতন্ত্র স্বয়ম্ভূ চরিত্র হয়ে ওঠে।

Advertisement

লোভের ফল শূন্য

শেখর দাশগুপ্তের ‘অবাস্তবে বাস্তব’ নাটকে

ঋতবাক্ প্রযোজিত নাটক, ‘অবাস্তবে বাস্তব’। একটি পারিবারিক কাহিনি। কিন্তু অবাস্তবের সঙ্গে বাস্তবের মেলবন্ধন ঘটাতে চেয়েছেন নাট্যকার। তবে কিছু ত্রুটি চোখে পড়ে। অম্বরবাবু পরলোকগমন করতেই যত বিপত্তি! সেই থেকে তাঁর সহধর্মিণীকে তিন ছেলে ও বৌমা কিছুটা অবহেলা করতে থাকে। অম্বরবাবু মারা যাওয়ার আগে ব্যাঙ্কের টাকা এবং বাড়ি তিন ছেলের নামে করে যান।

চূড়ান্ত লোভে ছেলে এবং বৌমারা বাড়িটি প্রোমোটারের হাতে তুলে দেবার পরিকল্পনা করেন। শেষমেশ অম্বরবাবুর স্ত্রীকে বৃদ্ধাশ্রমে রেখে আসেন। কিন্তু ছেলে এবং বৌমাদের এই পরিকল্পনায় জল ঢালতে উদ্যত হন অশরীরী অম্বরবাবু! তিনি যেন প্রতিনিয়ত ছবির আড়াল থেকে তাঁর স্ত্রীকে সাবধান করতে থাকেন এবং তাঁর ছেলেদের অসৎ পরিকল্পনা বানচাল করতে থাকেন। এদিকে প্রোমোটারও এইসব ভৌতিক কান্ডকারখানা প্রত্যক্ষ করার পর ভয় পেয়ে পিছিয়ে আসেন।

নাটকের বিষয়বস্তু ভাল হলেও কিছু অস্পষ্টতা রয়ে যায়। চরিত্রগুলি আরও প্রাণবন্ত হলে ভাল হত। অম্বরবাবুর চরিত্রে অনিমেষ তরফদার যথাযথ। ভাল লাগে প্রতিমাদেবীর চরিত্রে সুস্মিতা মিত্রকে। তবে বিজয়ের ভূমিকায় দিব্যেন্দু সাহা এবং শুভার চরিত্রে মৌমিতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের অভিনয়ে আরও সাবলীলতা কাম্য ছিল। ইতি মমতা সাহু যথাযথ।

মঞ্চ পরিকল্পনায় নীলাভ চট্টোপাধ্যায়। নাটক ও নির্দেশনায় শেখর দাশগুপ্ত।

সেরা সাত দিন

সম্প্রতি ‘সল্টলেক থিয়েটার’ আয়োজন করেছিল সাত দিনের নাট্যোৎসব। শুরুতেই সংস্থার সভাপতি হীরকশুভ্র চট্টোপাধ্যায় স্বাগত ভাষণে গ্রুপ থিয়েটারের কঠিন সংগ্রামের কথা উল্লেখ করেন। উৎসবে নাটকগুলির মধ্যে ছিল দেবেশ চট্টোপাধ্যায়ের ‘ব্রেন’। হীরকশুভ্র চট্টোপাধ্যায়ের নির্দেশনায় ‘কাঁটায় কাঁটায়’। কৌশিক সেনের দুটি নাটক- ‘পুনশ্চ’ এবং ‘সেই সুমৌলী’। সৌমিত্র মিত্র নির্দেশিত ‘অ্যান্টনি সৌদামিনী’। এ ছাড়াও নজর কেড়েছে পঞ্চম বৈদিকের ‘দুটো দিন’, নাট্যরঙ্গের ‘ঝড়ের পাখি’। উৎসবের শেষে ছিল নাটক ‘গোরুর গাড়ির হেডলাইট’।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন