সুগভীর রেখাপাত

সম্প্রতি রবীন্দ্রসদনে অনুষ্ঠিত হল ভবানীপুর বৈকালী অ্যাসোসিয়েশন আয়োজিত ‘ধরণীর বর্ষা অভিষেকে’ শীর্ষক বর্ষা উৎসব।

Advertisement

কাশীনাথ রায়

শেষ আপডেট: ১৩ অক্টোবর ২০১৮ ০১:০০
Share:

প্রতীকী ছবি।

সম্প্রতি রবীন্দ্রসদনে অনুষ্ঠিত হল ভবানীপুর বৈকালী অ্যাসোসিয়েশন আয়োজিত ‘ধরণীর বর্ষা অভিষেকে’ শীর্ষক বর্ষা উৎসব। সমগ্র অনুষ্ঠানেই প্রাচ্য ও পাশ্চাত্য ধারণার মেলবন্ধন ঘটিয়ে বর্ষাকে বন্দনা করা হয়েছে। অনুষ্ঠানের প্রারম্ভে প্রীতি পটেল ও সহশিল্পীরা নৃত্যের মাধ্যমে ‘পর্জণ্য’ উৎসব অর্থাৎ বৃষ্টির দেবতাকে আহ্বান জানান। ঋগ্বেদ থেকে সুরময় কয়েকটি মন্ত্র পরিবেশন করেন প্রমিতা মল্লিক, যার ইংরেজি অনুবাদ পাঠ করেন সুজয়প্রসাদ চট্টোপাধ্যায়। গুরুগম্ভীর বৈদিক মন্ত্রপাঠ, সুন্দর নৃত্য পরিকল্পনা এবং উৎকৃষ্ট মঞ্চসজ্জার গুণে মনোজ্ঞ এই অনুষ্ঠানটি দর্শক-শ্রোতাদের মনে গভীর রেখাপাত করে।

Advertisement

পরবর্তী পর্যায়ে সঞ্জীব মণ্ডলের সুদক্ষ পরিচালনায় কলকাতা সিম্ফনি অর্কেস্ট্রা প্রাচ্য ও পাশ্চাত্যের মনোময় মেলবন্ধন ঘটিয়ে, পশ্চিমি সুরমূর্ছনায় আহ্বান করে বর্ষাকে। সেই সূত্র ধরেই সাশা ঘোষাল দৃপ্ত কণ্ঠে পরিবেশন করেন পাশ্চাত্য মার্গসঙ্গীত। এ দিন কেরলের বন্যাবিধ্বস্তদের উদ্দেশে পরিবেশিত হয় তাঁর শেষ নিবেদন। বর্ষা উৎসবে এর পরবর্তী নিবেদন ছিল পূর্বিতা মল্লিক মুখোপাধ্যায় ও সহশিল্পীদের মণিপুরী নৃত্যের ‘বর্ষাবরণ’। পরিচ্ছন্ন পরিবেশনা।

বিরতির পর ভারতীয় উচ্চাঙ্গসঙ্গীত মূলত বর্ষার রাগ-রাগিণী ‘মিঁয়া কি মল্লার’, ‘রামদাসী মল্লার’ ও ‘শাওন’ গানের মধ্য দিয়ে বর্ষার সৌন্দর্য বর্ণনা করেন অর্জুন রায়, শৌণক চট্টোপাধ্যায় এবং প্রিয়ঙ্কা লাহিড়ি। ওই একই সূত্র ধরে পরিবেশিত হয় প্রথিতযশা তিন গীতিকবির গান। কাজী নজরুল ইসলামের ‘বরষা আসিল ওই’, দ্বিজেন্দ্রলাল রায়ের ‘বরষা আইল ওই’ এবং অতুলপ্রসাদ সেনের ‘নিদ নাহি আঁখিপাতে’। গানগুলি অত্যন্ত সাবলীল ভাবে পরিবেশন করেন সুপর্ণা চট্টোপাধ্যায়, মনীশ দে এবং শ্রুতি নাহা সেন।

Advertisement

সে দিনের সর্বশেষ নিবেদন ছিল রবীন্দ্র-গানের মধ্য দিয়ে বর্ষাবন্দনা। ‘নীল অঞ্জনঘন পুঞ্জছায়ায়’ গানে যার সূচনা। এর পর ক্রমে পরিবেশিত হয় ‘তিমির অবগুণ্ঠনে’, ‘মধুগন্ধে ভরা’, ‘আজ বারি ঝরে’, ‘রিমিকি ঝিমিকি ঝরে’, ‘বৃষ্টি শেষের হাওয়া’, ‘কেন পান্থ এ চঞ্চলতা’ প্রভৃতি গানগুলি। শেষ গান ‘শ্যামল ছায়া নাই বা গেলে’। বৈকালীর প্রায় দুই শতাধিক ছাত্রছাত্রী চারটি দলে ভাগ হয়ে সমবেত কণ্ঠে এই গানগুলি পরিবেশন করেন। নৃত্যে অংশ নেন বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ের পাঠভবনের ছাত্রীরা। প্রতিটি গান ও নাচ ছিল অত্যন্ত উচ্চমানের। এর যন্ত্রানুষঙ্গে সুব্রত মুখোপাধ্যায়, সিদ্ধার্থ ভট্টাচার্য, দেবাশিস হালদার, প্রদ্যোৎ বন্দ্যোপাধ্যায় এবং অমল সরকার ছিলেন যথাযথ। সুধীররঞ্জন মুখোপাধ্যায়ের মঞ্চসজ্জা যথেষ্ট বৈশিষ্ট্যের দাবি রাখে। এমন সর্বাঙ্গসুন্দর একটি অনুষ্ঠানের পরিকল্পনা এবং পরিচালনার জন্য প্রমিতা মল্লিক অবশ্যই শ্রোতা ও দর্শকদের অকুণ্ঠ ধন্যবাদ পাবেন।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন