স্বতন্ত্র উপস্থাপনা জুড়ে ছড়িয়ে কৌতূহল

সন্ধ্যাকর কয়াল ও রবীন রায়ের চারটি কাজে ‘দ্য ফ্রেম’-এর চিরাচরিত ঐতিহ্য লক্ষ করা গেল না। কিছু টেরাকোটার কাজও ছিল।

Advertisement

অতনু বসু

শেষ আপডেট: ১০ নভেম্বর ২০১৮ ০০:০০
Share:

উজ্জীবিত: দ্য ফ্রেম-এর প্রদর্শনী। সম্প্রতি আলিপুরে

দেখতে দেখতে পঁচিশ বছর পার করে ফেলা ‘দ্য ফ্রেম’-এর সম্মিলিত প্রদর্শনীটি শেষ হল সম্প্রতি। সাত শিল্পীর ৩৬টি কাজের মধ্য দিয়ে দলটি নিজস্ব একটি ধারাকে প্রতিষ্ঠিত করতে পেরেছে।

Advertisement

অরুণাংশু রায় ক্যানভাসে অনেক জায়গায় হালকা নরম রঙের উপরে ধাতব নিবের অজস্র আঁচড়ে নীচের বর্ণকে উজ্জীবিত করে একটা টেক্সচার এনে বেশ স্টাইলাইজ়েশন করেছেন। চমৎকার। লোকশিল্পের ধারণা থেকে বিচ্যুত না হওয়া এই কৌশল ছবিকে প্রাণ দিয়েছে। কোথাও চাপা রঙের জন্যও ছবিতে তৈরি হয়েছে এক ধরনের নীরবতা, কিন্তু তা বাঙ্ময়। তিন বন্ধুর পৌত্তলিকতায় এক জমাট আবহ ও ভঙ্গি। বিমূর্ত জান্তব শরীরের লেজ বাঁকিয়ে উপরে তুলে সুন্দর এক ভারসাম্য ও মজা এনেছেন। এ ছাড়া অন্য ছবির পাখি ও হাতির নির্মাণে লৌকিক ইমেজ প্রতিফলিত—বেশ ভাল অ্যাক্রিলিকের কাজ।

বিশ্বজিৎ সাহার ড্রয়িং-নির্ভর মিশ্র মাধ্যমে ‘মাস্ক’ বিষয়ক বারোটি কাজ। নরম প্যাস্টেল ও চারকোলে মুখ এঁকেছেন। ড্রয়িংয়ে কাব্যময়তার সঙ্গে বলিষ্ঠতার মনোময় পরিচয় ওঁর নানা কাজে। ড্রয়িংয়ের ধরনে আলঙ্কারিক ফর্ম এবং যান্ত্রিক প্যাটার্নকে প্রাধান্য দিয়েছেন। প্রতিটি সাদা চোখের মাঝে জমাট ছোট নয়নতারা মুখগুলিকে দিয়ে যেন কথা বলাচ্ছে। খুব কম কাজ। কিছু লাইন ও সামান্য টোন থাকলেও পটজোড়া অভিব্যক্তির মাঝেই নৈঃশব্দ্যের আড়ালে একটা ছন্দের অনুরণন ঘটিয়েছেন বিশ্বজিৎ। কিছু মুখে গাঢ় সিরুলিন ব্লু। অন্যান্য ক্ষেত্রে নীল, সবুজ, কালো, হালকা কমলা রেখা ও সামান্য ছায়াতপ দিয়ে আশ্চর্য সমীকরণ করেছেন।

Advertisement

বিভূতি চক্রবর্তীর ড্রয়িং এক ধরনের সচিত্রকরণ বললে অত্যুক্তি হবে না। বরং তার অনন্য রূপটাই ধরা পড়ে। বিভূতি এগুলির মাধ্যমে যে মজার উদ্রেক করেছেন, তাতে কিছু চাহিদা তৈরি করেও নতুনত্বের সন্ধান দিতে ভোলেননি। অজান্তে হলেও সেই বিষয়টি কিন্তু ওঁর কাজে উপস্থিত, তাতে সন্দেহ নেই। কালো রঙের সলিডিটির সঙ্গে সুশৃঙ্খল বা বিশৃঙ্খল রেখার মধ্যেও তৈরি হচ্ছে গদ্য। ওঁর কাজ অনেকটাই যেন ‘কমলাসুন্দরী’ গ্রন্থের শিল্পী সৌরভী শর্মার অনবদ্য সচিত্রকরণের কথা মনে করায়।

‘গ্রে টু ডার্ক’-এর দু’টি কাজে ড্রাই প্যাস্টেলে পটকে বিভাজন করেছেন দেবাশিস সামন্ত। এখানেও পৌত্তলিক রূপের সঙ্গে মানবশরীর। কিছু রেখা-সহ বিভিন্ন শিশুসুলভ অঙ্কনে সুদূর ছেলেবেলার স্মৃতি-উত্থিত মুহূর্তগুলি দানা বাঁধেনি।

পেন্টিং কোয়ালিটির জায়গাটিকে প্রাণগোপাল ঘোষ প্রাণবন্ত করেছেন তাঁর ‘দি ওড্স’ সিরিজ়ে— কাগজের উপরে অ্যাক্রিলিকের পেন্টিংগুলিতে। বোতল বা ভাস-এ স্থিরচিত্রের মুহূর্ত এত অসাধারণ সুন্দর করে দেখানোয় প্রাণগোপালের সহজাত মুনশিয়ানা সহজেই চোখে পড়ে। এখানে রঙের ব্যবহার, বিশেষ করে রং চাপানো ও প্রতিচ্ছায়াসদৃশ এক স্টাইলাইজ়েশন-এর মধ্য দিয়ে জায়গা মতো টুকরো সৌন্দর্যকে ব্যবহার করেছেন। আসলে ওঁর বর্ণ-বিমূর্তায়নের দিকটি এতই দৃষ্টিনন্দন যে, ছবির মধ্যে উল্লম্ব রচনার বাহুল্যকেও তা মনোটোনিতে পরিণত হতে দেয়নি। এখানেই তাঁর কাজের সার্থকতা।

লোকচিত্রের পরিচিত মোটিফ ও ফর্মগুলিকে নিয়ে দীর্ঘকাল একটি নির্দিষ্ট জার্নির মধ্যে নিজেকে চিহ্নিত করেছেন তাঁর লোকশিল্পের আঙ্গিকে করা বিভিন্ন চিত্রকলায়। সৌমিত্র কর এখানেও তেমন কিছু লৌকিক গ্রামীণ রূপকল্পের মধ্যে কালো কলমের লাইনে সেই সব বাছাই রূপবন্ধকে বিন্যস্ত করেছেন। নানা দেবদেবী এবং লোককথা উপকথার উপস্থাপনায় ওঁর উপকরণ ও শৈলী পটকে জমিয়ে দিয়েছে। নবান্ন উপলক্ষে ফসলের জন্ম, এমন ভাবনাতেই তিনি যেন সেই সব গল্পের পরম্পরা সাজিয়ে, লোকশিল্পের আধুনিক প্রয়াসকে আরও একবার উস্‌কে দিলেন।

ঝকঝকে পিতল ও কাঠের নিবিড় সহাবস্থান, গোলাপি পাথরের সঙ্গে লাল বালিপাথর, রঙিন পাথরের সঙ্গে সাদা পাথর বা কালো পাথর— এমন বিচিত্র মাধ্যমে খুব পরীক্ষা-নিরীক্ষা করেছেন সুমিতাভ ঘোষাল তাঁর এই সাম্প্রতিক ভাস্কর্যে। তবে ত্রিনয়ন ও আলঙ্কারিক ড্রয়িংয়ের জন্য কাজটির ইনটেলেকচুয়াল ডিসিপ্লিন নষ্ট হয়েছে নিঃসন্দেহে। কাজ হিসেবে যদিও বেশ অভিনব।

সন্ধ্যাকর কয়াল ও রবীন রায়ের চারটি কাজে ‘দ্য ফ্রেম’-এর চিরাচরিত ঐতিহ্য লক্ষ করা গেল না। কিছু টেরাকোটার কাজও ছিল।

অনুষ্ঠান

বেহালা শরৎ সদনে সম্প্রতি আয়োজিত হল কালারফুল ডান্স ফেস্টিভ্যাল। আয়োজন করেছিল শিল্পাঙ্গন। নৃত্যগুরু আদিত্য মিত্রকে নিবেদন করে অনুষ্ঠানের সূচনা করেছিল শিল্পাঙ্গনের সদস্যরা। পরিচালনা করেছিলেন জয়শ্রী বিশ্বাস। এর পরে একে একে গ্রুপ এবং একক নৃত্য পরিবেশিত হয়। একক নৃত্যে অংশগ্রহণ করেন ইন্দ্রাণী রায়, রিয়া দাস, আয়ুষী বসু, প্রশান্ত কর্মকার প্রমুখ। এ ছাড়াও শুভঙ্কর রায়চৌধুরীর পরিচালনায় ভাইব্রেশন, জয়া দের পরিচালনায় তাঞ্জোর ডান্স স্কুল, ইন্দ্রাণী রায়ের পরিচালনায় নৃত্যজা, দেবার্ঘ্য চৌধুরীর পরিচালনায় নৃত্যাশ্রম, জ্যোতি ভট্টাচার্যের পরিচালনায় অমরাবতী জুনিয়র ও সিনিয়র, স্বাতী ভট্টাচার্যের পরিচালনায় নৃত্যপীঠ এবং সহেলি বন্দ্যোপাধ্যায়ের পরিচালনায় শাইনিং স্টারের শিল্পীরা মঞ্চে নৃত্য পরিবেশন করেন। উপস্থিত ছিলেন অনিতা মল্লিক, সমাপ্তি দাস প্রমুখ।

সম্প্রতি রামকৃষ্ণ মিশন ইনস্টিটিউট অব কালচারের বিবেকানন্দ হলে নিবেদিত হল ‘আনন্দরূপিণী’। উৎসাহ উদ্ভাস আয়োজন করেছিল মাতৃবন্দনা। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের গানে বন্দনায় রাহুল মিত্র এবং সহ-বন্দনায় ছিলেন অম্লান হালদার, গৌতম দত্ত এবং সৌরভ চট্টোপাধ্যায়।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন