আমাদের এ বারের অন্দরসজ্জার ঠিকানা তারকা দম্পতি অপরাজিতা ঘোষ ও ঋত্বিক চক্রবর্তীর গাঙ্গুলিবাগানের ফ্ল্যাট। বাড়ির কর্তা সিনেমা নিয়ে আর গিন্নি ডেলিসোপ নিয়ে তো বটেই, সেই সঙ্গে দুষ্টু-মিষ্টি পান্তকে নিয়েও সদাব্যস্ত। তার মধ্যেই আমাদের সময় দিলেন তাঁদের অন্দরমহল ক্যামেরাবন্দি করার জন্য। ঢুকতেই অপরাজিতা রসিকতা করে বললেন, ‘‘আমাদের বাড়ি খুব অর্ডিনারি। বিশেষ জৌলুষ কিন্তু নেই।’’ সাদামাঠা কিছুকে সুন্দর দেখানোটা যে বড় সহজ ব্যাপার নয়! সেটাই বৈশিষ্ট্য তাঁদের হাজার স্ক্যোয়ার ফিটের ছোট সংসারের।
ঢুকতেই ড্রয়িং কাম ডাইনিং রুম। সেখানে ছিমছাম কাঠের সোফা। মেঝেতে কার্পেটের আভিজাত্য নয়, দরির আটপৌরে সাজ। দেওয়ালে সুন্দর করে সাজানো রয়েছে কয়েক রকম কাউবেল, গোটবেল, সুইসবেল... সব জিনিসই তাঁরা যে সব জায়গায় বেড়াতে গিয়েছেন সেখান থেকে আনা বা কেউ উপহার হিসেবে দিয়েছেন। এ সবের সঙ্গে সাবেকি ল্যাম্পপোস্টের আদলে ল্যাম্পশেড, দেওয়ালঘড়ি নজর কাড়ে। বসার ঘরের এক দিকে দেওয়াল জোড়া কাচের স্লাইডিং জানালা, তার ও পাশে শুধুই সবুজ।
ঋত্বিক বললেন, ‘‘আমরা যখন এখানে এসেছিলাম, তখন সামনে শুধুই গাছ। এখন তো অনেক বাড়ি হয়ে গেছে।’’ শহরের মধ্যে নাগরিকতার আঁচমুক্ত থাকতে পারাটা এখন নিতান্তই স্বপ্ন। ড্রয়িং রুমের আর এক দিকে ডাইনিং এরিয়া। কাঠের চেয়ার টেবল ও কাঠের দেওয়াল-আলমারিতে বেশ যেন রাশভারী ভাব। তাকে কিছুটা রঙের ছোঁয়া দিয়েছে কাঠের ফ্রেমে মোড়া কাচের চৌকো টুকরো দিয়ে সাজানো রান্নাঘরের সামনের সুইং ডোরটি। এতে রান্নাঘরের অবিন্যস্ততা চোখে পড়বে না আবার ওপেন কিচেনের ফিলও রইল।
ঋত্বিকের বাড়ির সবচেয়ে ইন্টারেস্টিং জায়গা হল, তাঁদের ব্ল্যাক রুম। ঘন কালো রঙে রাঙানো একটি ঘর! ‘‘এটা ঋত্বিকের আইডিয়া ছিল। একটা ঘরের রং কালো করলে কেমন হয়! সেই সঙ্গে সিনেমা দেখাটাও একটা ব্যাপার ছিল। ও বলতে আমিও নেচে উঠলাম। হ্যাঁ, একটা কালো ঘর হোক। আসলে এটা একটা এক্সপেরিমেন্ট,’’ হাসতে-হাসতে বললেন অপরাজিতা। এ ঘর আসলে অবসর যাপনের জন্য পারফেক্ট। টিভি, মিউজিক এবং বই।
দেওয়ালের লাগোয়া বুক শেল্ফে যেমন রয়েছে স্বামী-স্ত্রীর পছন্দের বই, তেমনই পান্তরও হরেক বই এবং খেলনা। এ বাড়ির খুদে এবং সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ সদস্যটির নানা রকম সফ্ট টয়, গাড়ি, ছোট্ট চেয়ার সে ঘরে নানা জায়গায় রয়েছে, তবে ঠিক যেখানে রাখার কথা, সেখানে। নিশ্চয়ই ছেলের সব জিনিস মা-ই গুছিয়ে রেখেছেন। ভুল ভাঙালেন অপরাজিতা। বললেন, ‘‘ছেলেকে শিখিয়েছি, যেটা ইচ্ছে নিয়ে খেলবে, কিন্তু তার পর প্রত্যেকটা জিনিস জায়গা মতো গুছিয়ে রাখবে। পান্ত খেলার পর সব কিছু গুছিয়ে রাখে। জিনিস জায়গা মতো না থাকলে বিরক্ত লাগে। এমনও হয়েছে শ্যুটের পর এসেও আমি ঘর গুছিয়েছি।’’ তাই বোধহয় এমন নিঁখুত সাজ দিনের ক্লান্তি ভুলিয়ে দেয়।
ভাল লাগে দম্পতির বেডরুমটি। উজ্জ্বল রঙের সমাহার তাঁদের ঘরখানিতে বুলিয়েছে পজিটিভিটির তুলি। নজর কাড়ে সেগুন কাঠের পেল্লায় খাট (না কি পালঙ্ক বলব)! স্থান সঙ্কুলান হয় না বলে এমন খাট তো ইদানীংকার ফ্ল্যাটে বিশেষ চোখে পড়ে না। কারণটা বললেন ঋত্বিক, ‘‘এই খাট আমার দাদুর। ছোট থেকে এই খাটে আমি শুয়েছি।’’ পুরনো সেই ‘স্মৃতি’ তাই তাঁদের ফ্ল্যাটেও সগৌরব রাজত্ব করছে। এত বড় খাট রাখার পরও ঘরটিকে ভারাক্রান্ত মনে হয় না স্পেস অ্যাডজাস্টমেন্টের কারণে।
প্রায় সাত বছর হয়ে গেল তাঁরা এ ফ্ল্যাটে আছেন। এখানকার প্রতিটি আসবাব, রং নির্বাচন, কোথায় কী থাকবে, সব সিদ্ধান্ত দু’জনে মিলে নিয়েছেন। তাই হয়তো সব কিছুর মধ্যে সুন্দর ভারসাম্য আছে। এখানে এলে কিন্তু বলতে হবে, অন্দরসাজ সুন্দর হয় স্বামী-স্ত্রী’র গুণে।
ছবি: আশিস সাহা
পত্রিকা সংক্রান্ত কোনও মতামত থাকলে জানাতে পারেন এই মেল আইডিতে patrika@abp.in