চিরঞ্জিতও পারলেন না কিরীটীকে উদ্ধার করতে

গোয়েন্দা গল্পের শিহরন কোথায়! লিখছেন স্রবন্তী বন্দ্যোপাধ্যায় বছরের শেষটা কি তবে জমিয়ে দিল কিরীটী রায়? তাঁর আবির্ভাব কি একহাত নিল প্রতিযোগী— ফেলু মিত্তির আর ব্যোমকেশ বক্সীকে! চোখ রাখা যাক অনিকেত চট্টোপাধ্যায়ের ‘কিরীটী রায়’-এ। মহিলা মহলে অসম্ভব জনপ্রিয় এই রহস্যভেদীকে কাহিনিকার ডা. নীহাররঞ্জন গুপ্ত এমন একটি গাম্ভীর্য দিয়েছেন, এমন এক পশ্চিমি ধাঁচায় গড়েছেন, তাতেই যেন এক ভিন্ন ধারার সম্মোহনী টান তৈরি হয়।

Advertisement
শেষ আপডেট: ১৪ জানুয়ারি ২০১৭ ০০:০০
Share:

বছরের শেষটা কি তবে জমিয়ে দিল কিরীটী রায়?

Advertisement

তাঁর আবির্ভাব কি একহাত নিল প্রতিযোগী— ফেলু মিত্তির আর ব্যোমকেশ বক্সীকে!

চোখ রাখা যাক অনিকেত চট্টোপাধ্যায়ের ‘কিরীটী রায়’-এ।

Advertisement

মহিলা মহলে অসম্ভব জনপ্রিয় এই রহস্যভেদীকে কাহিনিকার ডা. নীহাররঞ্জন গুপ্ত এমন একটি গাম্ভীর্য দিয়েছেন, এমন এক পশ্চিমি ধাঁচায় গড়েছেন, তাতেই যেন এক ভিন্ন ধারার সম্মোহনী টান তৈরি হয়।

কিরীটী অমনিবাসের মলাট এঁকেছিলেন শৈল চক্রবর্তী। তাঁর ছেলে দীপক চক্রবর্তী ওরফে চিরঞ্জিত এ বার স্বয়ং কিরীটী রায়। চমৎকার মানিয়েছে তাঁকে। পিরিয়ড পিসের অংশীদার হয়ে চিরঞ্জিত তাঁর বাজারি ধরাচুড়ো ছেড়ে নিজেকে ভেঙেছেন।

ছবি জুড়ে রাগরাগিণীর ঢল। কখনও তিলক কামোদ, কোথাও বা দেশ। আর সেই রাগের সঙ্গে জুড়ে গিয়েছে আরও একটি রাগিণী— স্বস্তিকা মুখোপাধ্যায়।

স্বস্তিকার অ্যাংলো ইন্ডিয়ান চরিত্রটি একই সঙ্গে লাস্যময়ী ও বিপন্ন এক নারীর। যাকে ভর করেই ছবি এগিয়েছে ক্লাইম্যাক্সের দিকে। পোশাক, মেকআপ, অভিনয় সবটা মিলে স্বস্তিকা এখানে যথেষ্ট ভারসাম্য রেখে খেলে গেলেন।

বলতে গেলে এই দু’জনের অভিনয়ই দর্শককে কিছুটা হলেও হলমুখী করছে।

কিন্তু সমাধান সূত্র খুঁজতে বসে গোয়েন্দা হঠাৎ কেন যে রবীন্দ্রসঙ্গীত গেয়ে ওঠেন বোঝা গেল না!

ঠিক তেমনি বেমানান সেতারবাদক রঞ্জন, আর তার প্রেমিকা বাসবীর খোলা মাঠে বৃষ্টিভেজা দৃশ্য।

যদিও পিরিয়ড পিসকে থ্রিলার করে তোলার কাজটা চমৎকার ধরেছেন সঙ্গীত পরিচালক জয় সরকার।

কিন্তু নির্দেশনায় কেন এই অহেতুক মেলোড্রামা এসে জোড়ে! যা দর্শকদের গোয়েন্দা গল্পের শিহরন দেওয়ার বদলে কৌতুক জুগিয়ে যায়!

যদিও হাল্কা রসের খেলায় অভিনয়ের গুণে উতরে দেওয়ার ভারটা নিয়েছেন পুলিশ অফিসার রথীন শিকদার (কৌশিক গঙ্গোপাধ্যায়)।

ফিল্ম সমালোচনা

কিরীটী রায়

চিরঞ্জিত-স্বস্তিকা-সায়নী

কিন্তু প্রশ্ন হল, নীহাররঞ্জনের কাহিনি তো কৌতুক-প্রধান নয়। তাতেও কিরীটীর আশপাশে কেন এমন হেমেন্দ্রকুমার রায়ের ‘সুন্দরবাবু’সুলভ কৌতুকের আসা যাওয়া? বাসবীর পাঁচ প্রেমিককে দেখলে সেটা বারবার মনে হয়। খুব হতাশ করেন তাঁরা। না আছে তাঁদের অভিনয় গুণ, না স্ক্রিন প্রেজেন্সে কণামাত্র চটক।

বাংলা ছবিতে প্রেমিক পুরুষের কি এতই অভাব!

গল্পের ওঠাপড়ায় ছোট্ট ছোট্ট কিছু ‘লাইসেন্স’ নিয়েছেন পরিচালক। সমসাময়িক রাজনীতির ওঠানামা কাহিনির পাশে পাশে ঘুরেছে সেই সুবিধেটা আদায় করেই।

বাসবী আর লুসি দুই চরিত্রে সায়নী ঘোষ বেশ ধারালো।

বাসন্তীর চরিত্রে অঙ্কিতা চক্রবর্তী এবং কাঞ্চনা মৈত্র-র শ্যামাও যথেষ্টই স্বচ্ছন্দ।

কিরীটীর মতো গোয়েন্দা তার বুদ্ধি দিয়ে পৌঁছে যাবেন রহস্যের শেষ প্রান্তে, এটাই তো স্বাভাবিক।

কিন্তু প্রত্যেক বার ছবিতে তাঁকে সেপিয়াটোনের আলোয় কাল্পনিক ভাবে দাঁড় করিয়ে দর্শককে দৃশ্যগুলো বুঝিয়ে দেওয়ার দায়টা পরিচালক না নিলেও পারতেন।

তবে ‘সেতারের সুর’-য়ের মতো জটিল, বহু চরিত্রের ঘটনাবহুল দীর্ঘ উপন্যাসকে সেলুলয়েডে আনার কাজটা মোটেই সহজ ছিল না।

তবু ছবিতে কোথায় যেন টান টান রহস্যে মোড়া গোয়েন্দা-কাহিনির অভাব স্পষ্ট।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন