প্র: আশপাশের মানুষকে বিরক্ত না করে গান বা অন্য কিছু শুনতে গেলে ইয়ার ফোন কানে গোঁজা ছাড়া রাস্তা কী?
উ: যতক্ষণ জেগে আছেন ততক্ষণই কিছু না কিছু শুনতে হবে এমন তো নয়! মাঝে মাঝে শব্দহীন জায়গায় থাকুন। কানকে বিশ্রাম দিন।
প্র: তাতে কী হবে?
উ: বেশি দিন ভাল করে শুনতে পাবেন।
প্র: বেশি আওয়াজের মধ্যে থাকাই কি কানে কম শোনার একমাত্র কারণ?
উ: হ্যাঁ, সেন্সরি নিউরাল হিয়ারিং লসের এ এক বিরাট কারণ?
প্র: সেন্সরি নিউরাল হিয়ারিং লস বলতে?
উ: কানের নার্ভ দুর্বল হয়ে কম শোনা।
প্র: সে তো ডায়াবেটিস হলেও হয়।
উ: হয় তো। ডায়াবেটিস বশে না থাকলে শরীরের অন্য নার্ভের মতো কানের নার্ভও দুর্বল হয়। তার সঙ্গে শব্দদূষণ জুড়লে সমস্যা আরও বাড়ে।
প্র: গান শোনা কি শব্দদূষণের পর্যায়ে পড়ে?
উ: উঁচু আওয়াজে শুনলে অবশ্যই পড়ে। নিয়মিত ডিস্কে গিয়ে দেখুন না কী হয়।
প্র: কথা তো হচ্ছে কানে ইয়ার ফোন গুঁজে গান শোনা নিয়ে।
উ: সেখানেও সমস্যা আছে। ঘণ্টার পর ঘণ্টা কানে ইয়ার ফোন গুঁজে মোবাইলে গান শুনলে বা ল্যাপটপে সিনেমা দেখলে কানের নার্ভ সারাক্ষণ উত্তেজিত থাকে। তাতে ধীরে ধীরে তার কার্যকারিতা কমতে শুরু করে।
প্র: কতক্ষণ পর্যন্ত শোনা নিরাপদ?
উ: ও রকম কোনও হিসেব নেই। কারও ক্ষেত্রে ৩-৪ ঘণ্টাতেই সমস্যা হয়। কারও সহনশক্তি আরেকটু বেশি।
প্র: ৩-৪ ঘণ্টা টানা না শুনে যদি এক ঘণ্টা করে ৩-৪ বার শোনা হয়?
উ: টানা শুনলে কান-মাথা গরম হবে, ভারী লাগবে। মাঝে মাঝে কানে শোঁ শোঁ আওয়াজ হতে পারে। এ সবই বিপদের পূর্বলক্ষণ। সেই তুলনায় গ্যাপ দিয়ে শুনলে বিপদ কিছুটা কম। কিন্তু মোট সময়কাল এক থাকলে, দীর্ঘমেয়াদি ক্ষতির কতটা তারতম্য হবে তা অত হিসেব করে বলা যাবে না।
প্র: তা হলে কী ভাবে শুনব?
উ: মোবাইল সেট হাতে ধরে বা সামনে রেখে নিচু আওয়াজে শুনুন। টিভি দেখার সময়ও আওয়াজ যত কম রাখা যায় তত ভাল। একটু চেষ্টা করে শুনতে হচ্ছে এমন ভলিউম রাখলে শ্রবণশক্তি ভাল থাকে।
প্র: গান শোনাটোনা তো দিেন কয়েক ঘণ্টার মামলা। আসল সমস্যা নিশ্চয়ই রাস্তাঘাটে গাড়িঘোড়ার বা কলকারখানার শব্দদূষণ?
উ: অবশ্যই। কিন্তু তা তো এড়ানোর রাস্তা নেই। তার সঙ্গে উচ্চস্বরে কানে তার গুঁজে দিন-রাত গান শুনলে বিপদ বাড়বে বই কমবে না।
প্র: রাস্তাঘাটের আওয়াজ যাতে শুনতে না হয়, সে জন্যই তো কানে তার গুঁজে গান শোনা।
উ: সেটা দুর্ঘটনা ঘটার একটা বড় কারণ। কাজেই ওভাবে হবে না। কান বাঁচাতে চাইলে অন্য সময় কিছু ব্যবস্থা নিতে হবে।
প্র: কী হবে?
উ: ঘরে থাকার সময় অন্তত বেশ কয়েক ঘণ্টা ইয়ার প্লাগ লাগিয়ে কানকে একটু বিশ্রাম দিন।
প্র: কলিং বেল বা ফোনের আওয়াজ যে শোনা যাবে না তা হলে!
উ: ফোনের আওয়াজ যত কম শোনা যায় ততই মঙ্গল। ফোন ভাইব্রেশন মোডে রাখুন। ফোনে কথা বলার বদলে টেক্সট করুন।
প্র: মোবাইল কানে ধরলে কি সত্যিই কানের নার্ভ খারাপ হয়?
উ: দিন-রাত কথা শুনতে থাকলে তার একটা এফেক্ট আছে। তা ছাড়া মোবাইল কানে চেপে রাখলে তা থেকে যে ইলেক্ট্রোম্যাগনেটিক রেডিয়েশন বেরোয়, তাও ক্ষতিকর। কাজেই কথা না বলে যদি উপায় না থাকে, ল্যান্ড ফোন ব্যবহার করুন।
প্র: ল্যান্ড ফোনে ক্ষতি নেই?
উ: তুলনায় কম।
প্র: যা বোঝা যাচ্ছে, হাজার সাবধানতা নিলেও কিছু না কিছু ক্ষতি হবেই। ক্ষতি হয়ে গেলে তখন কী করতে হবে?
উ: যে কানে ক্ষতি হল, সে তো হলই। অন্য কানটাকে বাঁচানোর চেষ্টা করবেন। ক্ষতিগ্রস্ত কানকেও সাবধানে রাখবেন, যাতে একেবারে বধির না হয়ে যান।
প্র: মানে? এর কোনও চিকিৎসা নেই নাকি?
উ: চিকিৎসা বলতে, কান বাঁচানোর যে যে পন্থার কথা বলা হল তা করা। আর বাড়াবাড়ি হলে হিয়ারিং এইড ব্যবহার করা। আজকাল ৪০-এর নীচেই অনেকের লাগছে। কাজেই বুঝতে পারছেন ব্যাপারটা কত গুরুত্বপূর্ণ?