বাড়ি সাজানোর জন্য শেষ কথা আপনার রুচি। কিন্তু যদি আপনার পরিবারে থাকে একটি খুদে সদস্য, তা হলে তার ঘরটাও হতে হবে অন্য রকম। সে ক্ষেত্রে যতই আপনার নিজের পছন্দ থাকুক না কেন, ছোট্ট সদস্যটির ইচ্ছেকেও কিন্তু গুরুত্ব দিতে হবে। তাই বাচ্চার ঘর সাজানো সহজ কথা নয়।
• শিশুর ঘর সাজানোর ক্ষেত্রে প্রথমেই নজর দিতে হবে তার বয়সের উপর। সাধারণত নার্সারি, শিশু এবং টিনএজার— এই তিনটি ভাগে ভাগ করা যায়। আপনার খুদের বয়সের উপর ভিত্তি করে সাজান তার ঘর।
• প্রাথমিক ভাবে যেগুলো মাথায় রাখতে হবে, তা হল ঘরের রং, বিছানা-সহ অন্য প্রয়োজনীয় আসবাবপত্র এবং আলাদা উপাদান যা ঘরটিকে করে তুলবে অনন্য।
• বাচ্চার ঘরের রং যদি হাল্কা বা সাদা হয়, তাতে তাদের বোরডম আসাই স্বাভাবিক। তাই রংচঙে, উজ্জ্বল এবং কোনও বিশেষ থিম অনুযায়ী রঙের প্যাটার্ন দিয়ে দেওয়াল রং করতে পারেন। অথবা একটি দেওয়ালে গাঢ় রং করে, বাকি তিন দেওয়ালে ওই রঙেরই কোনও হাল্কা শেড দিতে পারেন।
• বিছানার ক্ষেত্রে অতিরিক্ত বড় বেড না রেখে বাচ্চার বয়সের চেয়ে সামান্য বড় কিনতে পারেন। কিছু কিছু আইডিয়া কখনওই পুরনো হয় না। তেমনই বিছানার সঙ্গে রাখতে পারেন ছোট স্লাইডিং বুক ক্যাবিনেট। রাতে ঘুমোনোর আগে বই পড়ার অভ্যেসও তৈরি হবে। আবার বই পড়তে পড়তে বাচ্চার চোখ ঘুমে ঢলে পড়লে দূরে উঠে গিয়ে বইও রাখতে হবে না।
• বাচ্চাদের ঘরের মেঝের পরিসর বড় হওয়াই জরুরি। যত্রতত্র জিনিস ছড়িয়ে রাখা নয়, বরং বড় মেঝেয় তারা নিজেদের ইচ্ছেমতো খেলে বেড়াতে পারবে। তাই ঘরের দরকারি আসবাব রাখতে পারেন দেওয়ালে ঝুলিয়ে।
• দু’টি দেওয়ালের মাঝের কোণে সুদৃশ্য তাক (যেমন বাক্যবন্ধনী কিংবা কথোপকথনের চিহ্ন) লাগালে ঘরটা দেখতে হবে সুন্দর। একই সঙ্গে দরকারি জিনিস সেই তাকে তুলে রাখা যাবে।
• একই ঘরে দু’টি বাচ্চা একসঙ্গে বড় হলে তাদের জন্য দু’টি পৃথক বিছানা ব্যবহার করাই শ্রেয়। তাই ব্যবহার করতে পারেন বাঙ্ক বেড। তবে গ্রীষ্মকালীন দেশ হওয়ায় উপরের বাঙ্কে হাওয়া চলাচলের দিকটাও ভুলবেন না যেন।
• আবার মাঝখানে একটি জানালাকে ঘিরে তার দু’পাশে রাখতে পারেন দু’টি বিছানা। এতে বাঙ্ক বেডের ‘কে উপরে, কে নীচে’ সেই ঝগড়াও যেমন এড়ানো যাবে, তেমনই দুই বাচ্চাকেও দেওয়া হবে সমান স্পেস।
• ঘরের জায়গা খুবই কম হলে বইয়ের তাকের সঙ্গেই জুড়ে দিতে পারেন পড়ার টেব্লের ধারণা। অর্থাৎ, শেল্ফের একদম নীচের পাল্লাটাই ব্যবহার করতে পারেন টেব্ল হিসেবে। পড়া শেষে পাল্লা বন্ধ করলেই হল!
• বাচ্চাকে আরও অর্গানাইজ করে তুলতে তার প্রয়োজনীয় জিনিস রাখুন বাচ্চারই উচ্চতার সঙ্গে খাপ মিলিয়ে। স্টোরেজ, বেঞ্চ, কোট র্যাকের নাগাল যেন সে নিজেই পায়। এতে নিজের জিনিস সে যেমন গুছিয়ে রাখতে পারবে, তেমনই আবার হয়ে উঠবে দায়িত্বশীলও।
• বাচ্চার সৃজনশীলতার খেয়াল রাখতে হবে আপনাকেই। তাই ঘরের এক কোনায় থাক ব্ল্যাক কিংবা হোয়াইট বোর্ড। তাতে সে চক, রং দিয়ে আঁকিবুকি কাটতে পারবে। বাচ্চা বয়সে একটু বড় হলে, পরীক্ষার রুটিন কিংবা দিনলিপিও লিখতে পারবে বোর্ডে।
• ঘরের ছাদটিকেই করে তুলুন এক টুকরো আকাশ। দোকানে অনেক ধরনের গ্লো স্টিকার পাওয়া যায়। চাঁদ, তারা, নক্ষত্রের সেই স্টিকার লাগিয়ে রাখুন ঘরের সিলিংয়ে। রাতে জ্বলে ওঠা তারা দেখার উৎসাহে আপনার বাচ্চা ঘুমোতে যাবেও বেশ তাড়াতাড়ি।
• ওয়াল ট্যাটু বেশ কয়েক বছর ধরেই ইনটেরিয়ার ট্রেন্ডে ইন। বেশ কিছু ট্যাটু আছে, যা নির্বিঘ্নে দেওয়ালের রং না চটিয়েই তুলে ফেলা যায়। বাচ্চার পছন্দের রকমফের অনুযায়ী তাই আজ যদি দেওয়ালে লাগান নার্নিয়ার ট্যাটু, কাল তা বদলে যেতেই পারে মহাকাশবিজ্ঞানে।
• জিনিসপত্র সংগ্রহ করে জমিয়ে রাখা বাচ্চাদের একটি সহজাত অভ্যেস। আর সেই কুড়িয়ে রাখা জিনিস জমানোর জন্য বাক্স নয়, বরং ঘরের এক কোনায় রঙিন দড়ি লাগিয়ে রাখুন। তাতে বাচ্চা যেমন ক্লিপ দিয়ে ছোটখাটো জিনিস লাগিয়ে রাখতে পারবে, তেমনই ইচ্ছে হলে আবার হাতে আঁকা কার্ডও ঝোলাতে পারবে।
• দেওয়ালে রং করা ও আঁকিবুকি কাটার অভ্যেস শিশুদের প্রায় চিরন্তন। আপনি যতই ব্ল্যাক বোর্ড লাগিয়ে রাখুন না কেন, দেওয়ালে মোম রং কিংবা হাতের ছাপ থাকবে না, এটা প্রায় অসম্ভব। তাই দেওয়ালেরই একটা দিকে ছোট অংশে মাউন্ট বোর্ড লাগিয়ে রাখুন। তার উপরে আটকে দিন বড় চার্ট পেপার। তাতে ইচ্ছেমতো রং কিংবা হাতের ছাপ পড়লেও অসুবিধে নেই। সময়মতো বদলে দিলেই হল।
• আপনার খুদেটির যদি পুতুল হয় প্রাণের দোসর, তা হলে একটা ডল হাউজের বন্দোবস্ত করতে ভুলবেন না যেন। মেয়ে বড় হয়ে গেলে ডল হাউজকেই বুদ্ধি খাটিয়ে বদলে ফেলতে পারবেন বুক শেল্ফে।
• বাচ্চার ঘরের আলো যেন যথেষ্ট পরিমাণে খেলা করতে পারে। অর্থাৎ নিজের খেয়ালে সে যখনই ঘরের যে কোনও কোণে বই নিয়ে বসে পড়বে, সেখানে আলোর অভাব যেন না হয়।
• বাচ্চার ইচ্ছের কথা মাথায় রেখেই ঘরে বানিয়ে ফেলতে পারেন তার লুকোনোর জায়গা। তা সেটি দেওয়ালের ফাঁকে গুপ্ত তাকই হোক কিংবা বিছানার নীচে চাদর দিয়ে তৈরি ক্যানোপি!
• আপনার বাচ্চা বইপ্রেমী হোক কিংবা যদি তাকে বইয়ের প্রতি আগ্রহী করে তুলতে চান, তা হলে অবশ্যই ঘরে রাখুন
ট্রি শেপ জাতীয় অন্য ধরনের বুক শেল্ফ।
সবশেষে এটা বলা জরুরি, আপনার বাচ্চার ঘর যেমন তাকে ভাল মানুষ হয়ে উঠতে সাহায্য করবে, তেমনই ওই ঘরটুকুই হয়ে উঠবে তার প্রিয় একান্ত পরিসর।