আগরতলায় বাংলাদেশের সহকারী হাই কমিশনের অফিসের বাইরে বাড়তি সতর্কতা। ছবি: পিটিআই।
বাংলাদেশের অশান্তির আঁচ টের পাওয়া গেল এ রাজ্যেও। বৃহস্পতিবার রাতে বাংলাদেশ থেকে এ রাজ্যে ঢোকার চেষ্টা এবং ভারতীয় ভূখণ্ড থেকে বাংলাদেশে যাওয়ার চেষ্টা আটকেছে সীমান্ত রক্ষী বাহিনী (বিএসএফ)। শুক্রবার উত্তর ২৪ পরগনার পেট্রাপোল লাগোয়া বাংলাদেশের বেনাপোলে ভারত-বিরোধী স্লোগান দেয় সে দেশের কিছু লোক। পরিস্থিতি তেতে উঠলে হস্তক্ষেপ করে বাংলাদেশ পুলিশ। এই আবহে বাংলাদেশ সীমান্তে নজরদারিতে কড়াকড়িকরছে বিএসএফ।
বাংলাদেশের ইনকিলাব মঞ্চের নেতা শরিফ ওসমান হাদির মৃত্যুসংবাদ বৃহস্পতিবার রাতে ছড়াতেই গোলমাল শুরু। সে রাতেই উত্তর ২৪ পরগনার বসিরহাটের ঘোজাডাঙা সীমান্ত দিয়ে এ দেশে ঢোকার চেষ্টা করছিল তিন যুবক। বাধা দেওয়ায় তারা বিএসএফের দিকে ইট-পাথর ছোড়ে। জওয়ানেরা পাল্টা গুলি চালালে, এক জন আহত হয়। এক সঙ্গী তাকে নিয়ে ফের বাংলাদেশে ঢোকে। অন্য জন লাগোয়া গ্রামে ঢুকে পড়ে। তার খোঁজ চলছে। বাংলাদেশের পরিস্থিতির কারণেই ওই তিন জন এ দেশে ঢোকার চেষ্টা চালাচ্ছিল বলে প্রাথমিক ভাবে অনুমান। তবে তারা পাচারকারী কি না, তা-ও দেখা হচ্ছে।
ওই রাতেই দক্ষিণ দিনাজপুরের গঙ্গারামপুরের কাটাবাড়ি সীমান্ত পেরিয়ে বাংলাদেশে ঢোকার সময় সাত জন বাংলাদেশি নাগরিক বিএসএফের হাতে আটক হন। দক্ষিণ দিনাজপুরের পুলিশ সুপার চিন্ময় মিত্তল বলেন, ‘‘সাত জন বাংলাদেশিকে বিএসএফ আটক করেছে। তবে আমাদেরহাতে দেয়নি।’’
উত্তর ২৪ পরগনার পেট্রাপোল সীমান্তের ‘নো ম্যানস ল্যান্ড’-এর ওপারে বাংলাদেশের বেনাপোলে এ দিন সকালে কিছু লোক হাদির মৃত্যুর জন্য ভারতকে দায়ী করে ভারত-বিরোধী ও প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী-বিরোধী স্লোগান দিতে থাকে। প্রত্যক্ষদর্শীদের দাবি, বেনাপোলে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে যেতে শুরু করলে সে দেশের পুলিশ হস্তক্ষেপ করে। ঢাকার বাসিন্দা নাজির হোসেন বলেন, “উল্টোপাল্টা স্লোগান দিয়েছে অনেকে। পুলিশ লাঠি চালালে ওরা পালায়। আমরা শান্তি চাই।’’ এই পরিস্থিতিতে উত্তেজনার আশঙ্কা থাকায় পেট্রাপোল সীমান্তে বিএসএফ নিরাপত্তা বাড়িয়েছে।
তবে বেনাপোল স্থলবন্দরে থাকা ভারতীয় ট্রাক চালকদের নিরাপত্তা নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে। ‘পেট্রাপোল ক্লিয়ারিং এজেন্ট স্টাফ ওয়েলফেয়ার অ্যাসোসিয়েশন’-এর সম্পাদক কার্তিক চক্রবর্তী বলেন, “বেনাপোলে থাকা ভারতীয় ট্রাক চালকদের বন্দরের বাইরে বেরোতে নিষেধ করা হয়েছে।’’ তিনি জানান, এ দিন সরকারি ভাবে বাণিজ্য বন্ধ ছিল। ফলে, এই পরিস্থিতির প্রভাব বাণিজ্যে পড়বে কি না, তা (আজ) শনিবার বোঝা যাবে।
নদিয়ায় যে সব এলাকায় কাঁটাতারের বেড়া নেই, তেমন এলাকায় বিএসএফ ভারতীয়দের বাংলাদেশের দিকে চাষ করতে যাওয়ার ক্ষেত্রে কড়াকড়ি করছে বলে স্থানীয় সূত্রের খবর। হাঁসখালি, কৃ্ষ্ণগঞ্জ, ভীমপুর ও চাপড়া সীমান্তে বিএসএফের তৎপরতা বেড়েছে। কোথাও কোথাও বিএসএফ জওয়ানদের বুলেটপ্রুফ জ্যাকেট পরে টহল দিতে দেখা যাচ্ছে। মুর্শিদাবাদের জলঙ্গি, রানিনগর সীমান্তেও বিএসএফের তৎপরতা বেড়েছে।
উত্তরবঙ্গের বিভিন্ন জেলার বাংলাদেশ সীমান্তেও কড়াকড়ি হয়েছে। মূলত, প্রতি ৫০ মিটার অন্তর অতিরিক্ত তিন জন জওয়ান মোতায়েন করা হয়েছে বলে বিএসএফ সূত্রের দাবি। কোচবিহারের চ্যাংরাবান্ধা স্থলবন্দরে তল্লাশি বেড়েছে। তিন বিঘা করিডরের চারপাশে অতিরিক্ত জওয়ান মোতায়েন করা হয়েছে। জলপাইগুড়ি, দক্ষিণ দিনাজপুর, মালদহে উন্মুক্ত সীমান্ত লাগোয়া গ্রামগুলিতে কারা আসছে, কত ক্ষণ থাকছে—নজরদারি চলছে। বিএসএফের উত্তরবঙ্গের এক কর্তা বলেন, “কড়াকড়ি ছিলই। এখন সীমান্ত লাগোয়া গ্রামগুলির পরিস্থিতির উপরে নজর আরও বাড়ানো হয়েছে।”
প্রতিদিন ২০০’রও বেশি এমন প্রিমিয়াম খবর
সঙ্গে আনন্দবাজার পত্রিকার ই -পেপার পড়ার সুযোগ
সময়মতো পড়ুন, ‘সেভ আর্টিকল-এ ক্লিক করে