নিয়ম মেনে ডায়েট

ঘরে ঘরে এখন প্রেশার, সুগার, ইউরিক অ্যাসিড নিয়ে দুশ্চিন্তা। পছন্দের খাবারে পড়ছে লাগাম। রোগ এবং ওজন নিয়ন্ত্রণে রেখেও তালিকাভুক্ত করুন প্রিয় খাবার ঘরে ঘরে এখন প্রেশার, সুগার, ইউরিক অ্যাসিড নিয়ে দুশ্চিন্তা। পছন্দের খাবারে পড়ছে লাগাম। রোগ এবং ওজন নিয়ন্ত্রণে রেখেও তালিকাভুক্ত করুন প্রিয় খাবার 

Advertisement

মধুমন্তী পৈত চৌধুরী

শেষ আপডেট: ০৩ ফেব্রুয়ারি ২০১৮ ০০:০০
Share:

খেতে যাঁরা ভালবাসেন, ডায়েটের নাম শুনলেই তাঁদের বুকে শেল বেঁধে। তবে ডায়েট করা মানেই কিন্তু পছন্দের খাবারগুলোকে ব্লক লিস্টে পাঠানো নয়। মানে ধরুন, আপনি মুসুর ডাল খেতে খুব পছন্দ করেন। সপ্তাহের প্রায় সব দিনই মুসুর ডাল খান। কিন্তু ইউরিক অ্যাসিডের পরিমাণ একটু বেড়েছে। তা হলে কি সাধের মুসুর ডাল একেবারে বন্ধ? তা নয়, খাবেন, কিন্তু সপ্তাহে এক দিন। আধুনিক গবেষণা অন্তত তা-ই বলছে। কোন খাবার কতটা পরিমাণে খাবেন অর্থাৎ খাবারের গুণগত ও পরিমাণগত দিকটি হবে বিবেচনার প্রথম বিষয়।

Advertisement

বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে প্রেশার, সুগার, কোলেস্টেরল, থাইরয়েড ও ইউরিক অ্যাসিড যেন বেড়ে না যায়, সেই জন্য ছোটবেলা থেকেই ব্যালান্সড ডায়েট বা সুষম খাবারের অভ্যেস গড়ে তুলতে হবে। ডায়াটেশিয়ান অর্পিতা ঘোষ দেবের মতে, মেটাবলিক ডিজঅর্ডারের (প্রেশার, সুগার, ইউরিক অ্যাসিড ইত্যাদি) অন্যতম কারণ ত্রুটিপূর্ণ খাদ্যাভাস। এর সঙ্গে জিনগত ফ্যাক্টর, স্ট্রেস, দূষণের মতো বিষয়গুলো জুড়ে গিয়ে কুড়ি বছরের কম বয়সিদের মধ্যেও ইদানীং এই ধরনের সমস্যা দেখা যাচ্ছে। তবে মনে রাখবেন, প্রতিটি মানুষের ক্যালরির চাহিদা আলাদা। এবং সেটি নির্ধারিত হয় লিঙ্গ, উচ্চতা, ওজন ও কাজের প্রকৃতি অনুযায়ী।

Advertisement

ডায়াবেটিস

ডায়াবেটিস হওয়া মানেই আলু-ভাত-চিনি বন্ধ। সাধারণ ভাবে এমনটাই মনে করা হয়। ডায়াটেশিয়ান রুনু দত্ত পাল বলছেন, ভাত খাওয়া যেতেই পারে। তবে পুরো খিদেটা ভাত দিয়ে মেটাবেন না। ভাতের পরিমাণ কমিয়ে দিয়ে স্যালাড, তরকারির পরিমাণ বাড়িয়ে দিন। তরকারিতে দু’-চার টুকরো আলু থাকলেও ক্ষতি নেই। লাঞ্চে ভাত খেলে ডিনারে রুটি খান। রুটি যদি হজম করতে না পারেন, তবে ডালিয়া। চিনির বদলে সুগার ফ্রি ব্যবহার করা যেতে পারে। তবে তা তিন-চার গ্রামের বেশি নয়। চিনির বদলে খেজুরের রসও খেতে পারেন। ডায়াবেটিস রোগীদের ডালের ক্ষেত্রে কোনও বাধা নেই। পেট ভরানোর জন্য মুসুম্বি, জামরুল, পাকা পেঁপে, পেয়ারা, আপেলের মধ্যে যে কোনও একটি ফল দিনে একটা করে খেতে পারেন। খেতে পারেন দইয়ের শরবত, ডাবের জল, ভেজানো ছোলা। তবে সব সময় পরিমাণের উপর নজর রাখুন।

ইউরিক অ্যাসিড

টম্যাটো, রেড মিট আর পালং শাক ইউরিক অ্যাসিডের ক্ষেত্রে একেবারে বারণ। তবে বীজ বাদ দিয়ে টম্যাটো খেলে তাতে কিন্তু ক্ষতি নেই। পালং শাকের বদলে নটে শাক, কলমি শাক বা অন্য যে কোনও তরকারি খেতে পারেন।
ফুলকপি-বাঁধাকপিও পরিমাণমতো (৫০ গ্রাম) খেতে পারেন। শুধু ব্রকোলি চলবে না। সপ্তাহে এক দিন ডিম খাওয়া যেতে পারে। মাঝেসাঝে মাছের ডিমও খেতে পারেন। কফির চেয়ে ব্ল্যাক টি খাওয়া শ্রেয়। ডাবল টোনড দুধ খেতে পারেন। চিকেনের স্টকের পরিবর্তে রান্না করা চিকেন খাওয়া সমীচীন। সয়াবিনের বদলে ছোলাভাজা খাওয়া যেতে পারে। তবে সে ক্ষেত্রে ছাতু খাবেন না।

কোলেস্টেরল

চিংড়ি, পাঁঠার মাংস আর হাঁসের ডিম নৈব নৈব চ। তার মানে‌ কখনও খাবেন না, এমন নয়। চর্বি বাদ দিয়ে পাঁঠার মাংস দু’-এক পিস খাওয়া যেতে পারে। বন্ধ করতে হবে রাস্তার ভাজাভুজি খাওয়া। কিন্তু ইচ্ছে হলে ঘরে রিফাইনড তেলে ভেজে এক-আধ দিন খেতে পারেন। ঘি-মাখনের বদলে চলতে পারে মার্জারিন। কাজুবাদাম বাদ দিয়ে পিনাট, আমন্ড, আখরোট খাওয়া যেতে পারে। গরু বা মোষের দুধ সরাসরি না খাওয়া ভাল। ডাবল টোনড মিল্ক খাওয়া যেতে পারে।

ফুড পিরামিড

১. ডায়েটের ৫০ শতাংশ হবে টাটকা ফল। রস নয়, টাটকা ফল খাওয়া শ্রেয়

২. সবুজ তরকারি অবশ্যই খেতে হবে। তবে যে উপসর্গের জন্য যতটুকু বরাদ্দ

৩. কার্বোহাইড্রেটও জরুরি। তবে সেটাই যেন মুখ্য ডায়েট না হয়

৪. বাদামও খাবেন। তবে নিয়ম মেনে মাঝেসাঝে

৫. প্রসেসড ফুড খেতে পছন্দ করলেও তা মাঝেমধ্যে

থাইরয়েড

থাইরয়েড রোগীদের নিয়মিত ওষুধ খেতে হয়। খেয়াল রাখতে হবে, ওষুধ খাওয়ার আগে ও পরে এক ঘণ্টা বিরতি দিতে হবে। সেই নিয়ম মেনে ফুলকপি, বাঁধাকপি, সয়াবিন খেলে ক্ষতি নেই। তবে এ ক্ষেত্রে আনাজগুলো ভাপিয়ে নিয়ে জলটা ফেলে রান্না করলে ভাল। কচু না খেলেই ভাল। অবশ্য টম্যাটো খাওয়া যেতে পারে।

প্রেশার

এ ক্ষেত্রে তরকারিগুলো ঈষদুষ্ণ জলে ধুয়ে নিলে অতিরিক্ত সোডিয়াম বেরিয়ে যায়। নুন আছে এমন কোনও বাদাম, চিঁড়েভাজা, ডালভাজা খাওয়া যাবে না।
নুনের পরিমাণ ৫-৬ গ্রামের মধ্যে থাকতে হবে। দই খাওয়া যেতে পারে।

ডায়াটেশিয়ানরা বারবার বলছেন, মেটাবলিক ডিজঅর্ডার হওয়া মানেই পছন্দের খাবারগুলো বন্ধ করে দেওয়া নয়। সব সময় ক্যালোরির উপর নজর রাখুন। মেটাবলিক ডিজঅর্ডারকে নিয়ন্ত্রণ করার প্রথম শর্ত ওজন কম রাখা। আর ওজন কম রাখতে হলে কোন খাবার কতটা পরিমাণে খাবেন, সেটার সঠিক ধারণা থাকা প্রয়োজন। যে কোনও ধরনের রোগীর ডায়েটে ফল অবশ্যই থাকতে হবে। আর ডায়াটেশিয়ানদের মতে, ফলের রস বা বাজার থেকে কেনা জুসের বদলে গোটা ফল খাওয়া শ্রেয়। আর একটি গুরুত্বপূর্ণ পথ্য হল দই। যদি না দুগ্ধজাত দ্রব্যে অ্যালার্জি থাকে, তবে সব ধরনের রোগী দই খেতে পারেন। এ ছাড়া প্রচুর পরিমাণে জল খেতে হবে। আর তার সঙ্গে ব্যায়াম করলেই এই উপসর্গগুলো নিয়ন্ত্রণে রাখা যাবে।

মডেল: ত্বরিতা ছবি: শুভজিৎ শীল লোকেশন: হোয়াটস আপ কাফে

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন