দাঁতের মর্ম

মুক্তোর মতো সুন্দর দাঁতের জন্য কী কী করবেন? জেনে নিন তার রহস্য মুক্তোর মতো সুন্দর দাঁতের জন্য কী কী করবেন? জেনে নিন তার রহস্য

Advertisement
শেষ আপডেট: ০৯ সেপ্টেম্বর ২০১৭ ০০:০০
Share:

মডেল: শ্রীময়ী, মেকআপ: নবীন দাস, ছবি: অমিত দাস

তন্বী শ্যামা শিখরিদশনা পক্ববিম্বাধরোষ্ঠী

Advertisement

মেঘদূত/ কালিদাস

Advertisement

নারীর সৌন্দর্য বর্ণনায় সুন্দর দাঁতের প্রতি নজর এড়িয়ে যায়নি মহাকবির। সময়টা হাজার বছর আগে হোক বা বর্তমান, মুক্তোর মতো ঝকঝকে দাঁতের হাসি নারী-পুরুষ নির্বিশেষে মনেপ্রাণে চায় সকলেই। কিন্তু এর জন্য আমরা কতটা সচেতন? দাঁত নিয়ে আমরা কি ততটাই যত্নবান— যতটা ত্বক, চুল বা শরীর নিয়ে? ঝকঝকে সুন্দর দাঁত শুধু সুন্দর হাসির জন্য নয়, স্পষ্ট উচ্চারণ ও সুস্বাস্থের জন্যও প্রয়োজন।

প্রস্তুতি ছোট থেকেই

দাঁতের যত্ন শুরু করতে হবে জন্মের পরপরই। কিছু অভিভাবক মনে করেন, দুধের দাঁত থাকতে থাকতে বাচ্চারা যত খুশি চকোলেট, কেক, মিষ্টি খেয়ে নিক। দুধের দাঁত পড়ে গিয়ে যখন নতুন দাঁত উঠবে, তখন যত্ন নিলেই হবে। এই ভুল ধারণাটি পুষে রাখলে দাঁত নিয়ে বিড়ম্বনা অনিবার্য। অতিরিক্ত মিষ্টি জাতীয় খাবার এবং সারা দিনে অন্তত দু’বার ব্রাশ করার অভ্যেস না করালে দুধের দাঁতেও কেরিজ (চলতি বাংলায় দাঁতে পোকা) হতে পারে, দাঁত কালো হয়ে যায়, মুখে দুর্গন্ধ এমনকী প্রবল যন্ত্রণা হতে পারে। অনেক সময় যন্ত্রণা এমন পর্যায়ে পৌঁছয় যে, দুধের দাঁত তুলে ফেলতে হয়। কোনও ডেনটিস্ট চাইবেন না দুধের দাঁত তুলতে। কারণ এতে নতুন দাঁত উঠতে সমস্যা হয়, দুটি দাঁতের মধ্যে ফাঁকও তৈরি হয়।

দাঁত যাতে উঁচু না হয়...

অনেক সময়ই উঁচু বা এবড়োখেবড়ো দাঁতের জন্য উচ্চারণ স্পষ্ট হয় না। এই প্রসঙ্গে বলি, থাম সাকিং বা আঙুল চোষা কিংবা হাঁ করে ঘুমোনোর জন্য কিন্তু দাঁত উঁচু হয়। তাই বাচ্চাদের রেগুলার হেলথ চেকআপের রুটিনে ডেনটিস্টের কাছে নিয়ে যাওয়ার পর্বটাও রাখুন। এমনকী, বাবা-মা তাঁদের প্রয়োজনে ডেনটিস্টের কাছে গেলে, সঙ্গে বাচ্চাকেও নিয়ে যান। এতে বাচ্চাটিও দাঁত নিয়ে সচেতন হবে।

মজবুত দাঁতের ডায়েট

সুস্থ সুন্দর দাঁতের জন্য ফাইবার ও সিট্রাস জাতীয় খাবার খাওয়া উচিত। বাচ্চাদের আপেল, পেয়ারা, কলা, আখ বা মরসুমি ফল কেটে না দিয়ে গোটা কামড়ে খাওয়া অভ্যেস করান। এতে দাঁতের গোড়া মজবুত হয়। দাঁতের পাটি সুন্দর থাকার জন্য অনেকেই বলেন, চেপে-চেপে দাঁত মাজা উচিত। কিন্তু তাতে কিছুই হয় না। সুন্দর দাঁতের গঠন নির্ভর করে ছোট থেকে নিয়ম মেনে দাঁতচর্চা আর কিছুটা বংশধারার উপর। প্রেগনেন্সির ৪-৬ সপ্তাহের মধ্যে দাঁত তৈরির কাজ শুরু হয়ে যায়। এই সময় হবু মায়েদের উচিত ফাইবার ও ক্যালশিয়াম জাতীয় খাবার খাওয়া। কিন্তু বাচ্চার দাঁতের গঠন ভাল না হলে তাকে বংশগত বলে বসে না থেকে, ডাক্তারের পরামর্শ নিন।

বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে

ছোটবেলায় দাঁতের সমস্যা না থাকলে যে পরিণত বয়সে তা হবে না, তা নয়। দাঁত কিন্তু মৃত কোষ। হাড় ভাঙলে জোড়া লাগে, কিন্তু দাঁত ভাঙলে নয়। আজকাল ক্রমবর্ধমান দাঁতের সমস্যার অন্যতম কারণ রেডিমেড খাবার। শুধু ছোটবেলায় নয়, গোটা ফল চিবিয়ে খাওয়া বা ফাইবারযুক্ত খাবার না খেলে দাঁত ক্রমশ দুর্বল হয়ে পড়ে। পাশাপাশি জল খেতে হবে প্রচুর পরিমাণে। জল ব্যাকটিরিয়া ধুয়ে ফেলে, এর ফলে দাঁতের এনামেল ঠিক থাকে।

ঠান্ডা-গরমের শিরশিরানি

দাঁতে যে সমস্যা হচ্ছে, সেটা বুঝবেন কী করে? সমস্যার প্রথম লক্ষণ, ঠান্ডা বা গরম কিছু খেতে গিয়ে দাঁত শিরশির করা। শিরশিরানি থেকে মুক্তি পেতে অনেক রকম পেস্ট পাওয়া যায়। সেগুলোতে সাময়িক উপশম পাওয়া যায়। দাঁত হলদেটে হয়ে যাওয়া একটা বড় সমস্যা। অতিরিক্ত ধূমপান, পান-জরদা-খয়ের খাওয়ার জন্য দাঁতে দাগ হয়। এই সমস্যা কিছুটা আবহাওয়ার জন্যও হয়। বিশেষ করে রাজস্থান, হরিয়ানার মতো ফ্লোরাইড বেল্টের মানুষের দাঁত হলদেটে হয়। এ ক্ষেত্রে কিছু করা যায় না। প্রায়শই ডেনটিস্টদের একটা প্রশ্নের সম্মুখীন হতে হয়, কোন কোম্পানির পেস্ট সবচেয়ে ভাল? কেরিজ আটকানো বা দাঁত দুধের মতো সাদা করা পেস্টের কম্মো নয়। পেস্ট শুধু মাত্র মুখ ফ্রেশ রাখে। আসল হল ব্রাশ করার পদ্ধতি। পাশাপাশি নয়, ব্রাশ করা উচিত উপর-নীচে। মাড়ি পর্যন্ত ব্রাশ করবেন। সবচেয়ে ভাল হয় প্রতিবার খাওয়ার পর ব্রাশ করতে পারলে। কিন্তু স্কুল বা কর্মক্ষেত্রে থাকার সময় তা সম্ভব নয়, সে ক্ষেত্রে খাওয়ার পর তিন-চার বার জল দিয়ে কুলি করে মুখ পরিষ্কার করুন। রাতে ব্রাশ করা সবচেয়ে জরুরি। এর পর জল ছাড়া আর কিছুই খাবেন না। যাঁদের দাঁত অল্পেই শিরশির করে, তাঁরা খালি পেটে লেবু মধুর শরবত এড়িয়ে চলুন। মাংসের হাড়, মাছের কাঁটা, সুপুরি ইত্যাদি শক্ত কিছু চিবোনোর সময় খেয়াল রাখুন, যাতে খাদ্যাংশ দাঁতের ফাঁকে ঢুকে না যায়। যদি সে সমস্যা হয়, তা হলে তাড়াতাড়ি ব্রাশ বা ফ্লস দিয়ে বের করে দিন। অতিরিক্ত টুথপিক ব্যবহার বা সেফটিপিন দিয়ে দাঁত খোঁচানো মারাত্মক। অনেকেরই অভ্যেস, পেনসিল-কলমের মাথা বা চুইংগামও চিবোনো, এতে দাঁতের এনামেলের ক্ষতি হয়। দাঁতের মাথা ধারালো হলে দেরি না করে ডাক্তারের কাছে যান। শার্প টিথের জন্য মুখে বা জিভে ক্ষত হতে পারে, যা ক্যানসারের জন্ম দিতে পারে।

মনে রাখবেন, সুস্থ দাঁত ভবিষ্যতে নকল দাঁতের হাত থেকে বাঁচাবে। ৯০ শতাংশ মানুষ নকল দাঁত নিয়ে বেজায় সমস্যায় পড়েন। সুতরাং দাঁত থাকতে দাঁতের মর্ম না বুঝলে হাতে পেনসিল ছাড়া আর কিছুই থাকবে না!

ঊর্মি নাথ

পরামর্শ: ড. পারমিতা গঙ্গোপাধ্যায়

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন