পপুরির সুবাসে...

দোকান থেকে কেনা কৃত্রিম সুগন্ধি নয়, নিজের হাতেই বানান ফুল-পাতা-মশলার মিশেলদোকান থেকে কেনা কৃত্রিম সুগন্ধি নয়, নিজের হাতেই বানান ফুল-পাতা-মশলার মিশেল

Advertisement

রূম্পা দাস

শেষ আপডেট: ২৫ নভেম্বর ২০১৭ ০৭:১০
Share:

ফুলের সামান্য সুবাসেই কি আপনার মনটা ভাল হয়ে যায়? অথবা গৃহকোণকে আরও বেশি শৌখিন করে তোলার রুচি কি আপনার রয়েছে? তা হলে এর সমাধান একটিই। পপুরি (potpourri)! এর জন্য প্রতি ঘরে সপ্তাহে তিন বার করে ফুলদানিতে বদলাতে হবে না ফুল। সাহায্য নিতে হবে না আলাদা কেমিক্যালযুক্ত কৃত্রিম ব্র্যান্ডের। এক কথায় পপুরি হল, বাটি ভর্তি শুকনো ফুল, হার্ব আর মশলার মিলমিশ। যার প্রাকৃতিক সুগন্ধ আপনার ঘরকে করে তুলবে তরতাজা।

Advertisement

পাবেন কোথায়?

Advertisement

কোনও বড় ফুলের বা সুগন্ধির দোকানে, শপিং মলে, অনলাইনে কিনতে পারেন পপুরি। বাড়িতেও বানিয়ে ফেলতে পারেন এটি। তার পর বাটিতে বা কাচের জারে অল্প করে পপুরি ছড়িয়ে রেখে দিন আপনার বেডরুমের সাইড টেব্‌ল কিংবা বাথরুমের তাকে। সুগন্ধে ভুরভুর করবে অন্দরমহল।

বাড়িতে বানানোর টিপ্‌স

সামান্যতম সৃজনীশক্তি আর কল্পনা দিয়ে বাড়িতে বানাতে পারেন পপুরি। প্রাথমিক সামগ্রীগুলি হল শুকনো ফুল, পাতা, মশলা, হার্ব, গাছের ছাল ও লেবুর খোসা, ফিক্সেটিভ, এসেনশিয়াল অয়েল।

শুকনো ফুল: এ ক্ষেত্রে কোন ফুলের রং আর গন্ধ প্রিয়, সেটা খেয়াল করুন। পপুরির জন্য বেশি ব্যবহৃত ফুল হল গোলাপ, ল্যাভেন্ডার, টিউলিপ, একিনপ্‌স, গাঁদা, ব্যাচেলরস বাটন্‌স, হানিসাক্‌ল, পিওনি, ফ্রিসিয়া, ক্যালেন্ডুলা, কারনেশন ইত্যাদি। ফুল নেওয়ার সময়ে পরিমাণের দিকে খেয়াল রাখুন। কারণ, ফুল শুকিয়ে গেলে তার পরিমাণ স্বাভাবিক ভাবেই কমে আসে।

পাতা-মশলা-হার্ব: পাতা বাছার সময়ে চেষ্টা করুন তার সংখ্যা যেন অল্প হয়। পাতা শুকিয়ে গেলে অল্পতেই ঝুরঝুরে হয়ে আসে। তাই সুগন্ধি ও মোটা পাতা নিন। দারচিনি, লবঙ্গ, তেজপাতা, অল স্পাইস, জায়ফল, জয়িত্রী, স্টার অ্যানিস ইত্যাদি মশলা দেওয়ার আগে শুকিয়ে অথবা গুঁড়ো করে নিন। হার্বের জন্য বাছতে পারেন রোজমেরি, ইউক্যালিপটাস, সেজ, থাইম, ওয়র্মউড, মিন্ট, সাদার্নউড, জেরানিয়াম, লেমন বাম বা বেসিল।

গাছের ছাল ও লেবুর খোসা: স্যান্ডালউড বা সিডার জাতীয় গাছের ছালের শুকনো গুঁড়ো অথবা ছোট কুচি পপুরিতে দিতে পারেন। অনেক সময়ে কমলালেবু, পাতিলেবু, কাগজি লেবুর খোসা শুকিয়েও রাখতে পারেন জারে।

এসেনশিয়াল অয়েল: সুগন্ধ আনতে কয়েক ফোঁটা এসেনশিয়াল অয়েলই যথেষ্ট। ল্যাভেন্ডার, রোজউড, জেরানিয়াম, গ্রেপফ্রুট, পেটিটগ্রেন, পালমারোসা, ভ্যানিলা, পাচৌলি, লাইম... বাছতে পারেন যে কোনও তেল।

প্রিজারভেটিভ: অনেক ফুল-পাতা রয়েছে, যা ঠিক মতো শুকোলেও সুবাস হারিয়ে ফেলে। তাই পপুরিতে ফিক্সেটিভ দেওয়া জরুরি। প্রিজারভেটিভ হিসেবে বেছে নিতে পারেন নুন। কোর্স সল্ট আর ফাইন সল্ট সম পরিমাণে মিশিয়ে, বেশ কয়েক ঘণ্টা ধরে নরম আঁচে আভেনে শুকিয়ে ব্যবহার করুন।

র‌ঙের গুরুত্ব

গাছের ফুল-পাতা-ছাল শুকিয়ে গেলে স্বাভাবিক ভাবেই রং বদলাতে শুরু করে। সাধারণ ভাবেই সেগুলো খয়েরি বা কালচে কিংবা হালকারঙা হতে থাকে। পপুরির গন্ধ যেমন গুরুত্বপূর্ণ, তেমনই তা দৃষ্টিনন্দনও হওয়া চাই। তাই গাঁদা, ফরগেট মি নট, হাইড্র্যানজিয়া, জিনিয়া, বেবিজ ব্রেথ, ন্যাস্টারটিয়াম জাতীয় ফুল ব্যবহার করলে পপুরি হবে রঙিন।

পপুরির রেসিপি

দু’কাপ গোলাপের পাপড়ি ও দু’কাপ কারনেশনের পাপড়ি শুকিয়ে নিন। একটি বাটিতে শুকনো পাপড়ি, আধকাপ অরিস রুট পাউডার মেশান। অন্য বাটিতে এক টেব্‌ল চামচ অরিস রুট পাউডারের সঙ্গে পাঁচ ফোঁটা এসেনশিয়াল রোজ অয়েল মিশিয়ে নিন। তাতে এক টেব্‌ল চামচ দারচিনি গুঁড়ো, একটা বড় দারচিনির টুকরো, ১২টি লবঙ্গ হালকা হাতে ঝাঁকিয়ে, জারে এক মাস রেখে দিন। এ বার প্রয়োজন মতো বাটিতে করে পপুরি সাজিয়ে রেখে দিন ঘরের কোনায়।

ল্যাভেন্ডারের পাপড়ি, থাইম, মিন্ট, বেসিল, লবঙ্গ, ক্যারাওয়ে সিড, অরিস রুট পাউডার ও এসেনশিয়াল ল্যাভেন্ডার অয়েল মিশিয়ে বানিয়ে ফেলতে পারেন ল্যাভেন্ডার পপুরি।

এটা মনে রাখা জরুরি, পপুরি বানাতে আলাদা রেসিপির দরকার হয় না। ইচ্ছেডানায় ভর করে মেশাতে থাকুন পাপড়ি, মশলাপাতি, গাছের ছাল-বাকল, তেল। আপনার ঘরের সুবাস কেমন হবে, সেটা কিন্তু ঠিক করে দেবে আপনারই তৈরি পপুরি।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন