গ্রোথ পেনের গোড়ায়...

আপনার বাচ্চা কি পায়ের ব্যথায় কাবু? জেনে নিন গ্রোথ পেন থেকে রেহাই পাওয়ার উপায়আপনার বাচ্চা কি পায়ের ব্যথায় কাবু? জেনে নিন গ্রোথ পেন থেকে রেহাই পাওয়ার উপায়

Advertisement
শেষ আপডেট: ১৫ সেপ্টেম্বর ২০১৮ ০০:২৩
Share:

প্রতীকী ছবি।

চিকু সন্ধেবেলা পড়তে বসেই পা ধরে গান গাইতে শুরু করল, তার নাকি পায়ে ব্যথা। চিকুর মা তো রেগে আগুন। এ নির্ঘাত চিকুর পড়া এড়িয়ে যাওয়ার বাহানা। বাচ্চাদের এ রকম হুটহাট পায়ে ব্যথা হওয়া কিন্তু অস্বাভাবিক নয়। ৩-১৪ বছরের বাচ্চাদের মধ্যে এই ধরনের ব্যথা দেখা যায়। গ্রোথ পেন সাধারণত সন্ধে থেকে রাতের মধ্যেই হানা দেয়। তাই বাচ্চারা পায়ে ব্যথা হচ্ছে বললেই সেটাকে কোনও কিছু না করার অজুহাত ভেবে বসবেন না।

Advertisement

গ্রোথ পেন কী

বাচ্চাদের গ্রোয়িং স্টেজে পায়ে এ ধরনের ব্যথা হয়। বেশি খেললে বা ছোটাছুটি করলে ব্যথা বাড়তে পারে। একটা বয়সের পরে ব্যথা চলেও যায়। সব বাচ্চার যেমন একই সময়ে গ্রোথ পেন হয় না, তেমন অনেকের আবার গ্রোথ পেনই হয় না। এই প্রসঙ্গে ড. অপূর্ব ঘোষ জানালেন, ‘‘ব্যথাটা খুব কনফিউজ়িং। অনেক সময়েই দেখা গিয়েছে কোনও বাচ্চার পায়ে গ্রোথ পেনের মতো ব্যথা হচ্ছে। পরে পরীক্ষায় প্রমাণিত, তার হাড়ে হয়তো টিউমর বাসা বেঁধেছে বা রক্তের কোনও অসুখ। তাই গ্রোথ পেন হচ্ছে কি না, তা অনুমানের উপর নির্ভরশীল। কারণ গ্রোথ পেনের কোনও টেস্ট হয় না। সাধারণত সন্ধের দিকে দু’পায়ে ব্যথা হলে গ্রোথ পেন বলে ধরে নেওয়া হয়। অনেক দিন ধরে সেই ব্যথা না কমলে ডাক্তার দেখানো উচিত।’’

Advertisement

কোথায় ও কখন হয়

গ্রোথ পেন সাধারণত পায়ের কাফ মাস্‌লেই হয়। তা ছাড়া থাই বা হাঁটুর পিছনের অংশেও শিরায় টান ধরার মতো ব্যথা হতে পারে। এই ধরনের ব্যথা দুই পায়েই হয়। অল্টারনেটলি বা একসঙ্গেও দু’পায়ে হতে পারে। তাই রাতে ঘুমোতে যাওয়ার আগে পায়ের ব্যায়াম বা লেগ স্ট্রেচ করার মতো কিছু ব্যায়াম করলে ভাল। এতে পায়ে রক্ত সঞ্চালন ভাল হয়।

কী করবেন

প্রথমেই ডাক্তারের কাছে ছোটার দরকার নেই। বাড়িতেই বাচ্চার যত্ন নিতে পারেন।

• গরম জলে নুন দিয়ে বাচ্চাকে হাঁটু পর্যন্ত পা ডুবিয়ে বসে থাকতে বলবেন। গরম সেঁকে আরাম পাবে।

• হট প্যাড থাকলে সেটা দিয়েও সেঁক দিতে পারেন।

• পায়ে হালকা মাসাজ করে দিতে পারেন। তাতে রক্ত সঞ্চালন ভাল হবে এবং ব্যথা কমে যাবে।

• পা টিপে দিলেই বাচ্চারা আরাম পায়। তাই ব্যথা হলে হাল্কা করে পা টিপে দিতে পারেন।

কী করবেন না

• অনেকেই বাচ্চার পায়ে দড়ি বেঁধে দেন। পায়ে কখনও দড়ি বাঁধবেন না। এতে রক্ত চলাচলে ব্যাঘাত ঘটে।

• জোরে জোরে পা টিপবেন না। এতে সাময়িক আরাম পেলেও পরে ক্ষতি হওয়ার ভয় থাকে। জোরে টিপলে কোনও শিরায় হঠাৎ চাপ পড়ে গেলে সমস্যায় পড়তে পারেন।

• না জেনে ওষুধ খাওয়ানো উচিত নয়। আগে ঘরোয়া পদ্ধতিতে ব্যথা কমানোর চেষ্টা করুন।

খাদ্যাভ্যাসে বদল

বাচ্চাদের গ্রোথ পেন যাতে না হয়, তার জন্য খাদ্যাভ্যাসেও কিছু বদল আনতে পারেন। ডাক্তার অপূর্ব ঘোষের কথায়, ‘‘আমরা এখন স্টাডি করে দেখছি যে, ভিটামিন ডি-র অভাবেও বাচ্চাদের এই ধরনের ব্যথা হয়। তাই আমরা ভিটামিন ডি টেস্ট করতে দিই। তার অভাব থাকলে ভিটামিন ডি সাপ্লিমেন্ট দিই। রোদ থেকেও ভিটামিন ডি অনেকটাই পাওয়া যায়। কিন্তু এখন বাচ্চারা দিনের বেলায় তো স্কুলেই থাকে। সকালের রোদ পাবে কখন? সে ক্ষেত্রে ভিটামিন ডি সাপ্লিমেন্ট খেতে হবে। কারণ এর ফু়ড সোর্স বেশ কম। ডিমেও ভিটামিন ডি পেতে পারে।’’

মনে রাখবেন

• আপনার সন্তানের পায়ে ব্যথার সঙ্গে তার বন্ধুর পায়ে ব্যথার তুলনা করবেন না। প্রত্যেকের হাড়ের গঠন ভিন্ন। সেই অনুযায়ী পায়ের ব্যথার স্থায়িত্বও পাল্টায়।

• সব পায়ের ব্যথাকেই গ্রোথ পেন ভেবে বসবেন না। তার কারণ অন্য কিছুও হতে পারে।

ব্যথা যেমনই হোক, অনেক দিন পর্যন্ত তা না সারলে চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া জরুরি।

মডেল: অঙ্কিতা, আরিয়ানা

ছবি: দেবর্ষি সরকার

মেকআপ: কাজু গুহ

লোকেশন: ক্লাব ভর্দে ভিস্তা

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন