এখানে শীত থাকে বারোমাস

একটু সচেতন হলেই ফ্রিজ ভাল থাকে বহুদিন, একইসঙ্গে বিদ্যুৎ সাশ্রয়ও সম্ভব। রইল সেই উপায়বাড়িতে সাধারণত রান্নাঘরের আশেপাশেই ফ্রিজ রাখা হয়। ফ্রিজ রাখার জায়গা নিয়ে তেমন ভাবাও হয় না। কিন্তু এখান থেকেই শুরু তার যত্ন নেওয়ার পালা।

Advertisement
শেষ আপডেট: ০২ ফেব্রুয়ারি ২০১৯ ০০:০১
Share:

ঠান্ডা তো প্রায় যেতেই বসেছে। দিন দিন অল্প অল্প করে তাপমাত্রা চড়ছে। কিন্তু এ মুলুকের তাপমাত্রা সব সময়েই নীচের দিকে। ফলে ঠান্ডা এখানে বারো মাস। এ রকম সারা বছর ধরে ঠান্ডা পেলে তাকে যত্নআত্তি করতে হবে বইকি! সেই জন্যই তো রেফ্রিজারেটরের ব্যবহারবিধি জেনে নেওয়া প্রয়োজন।

Advertisement

• বাড়িতে সাধারণত রান্নাঘরের আশেপাশেই ফ্রিজ রাখা হয়। ফ্রিজ রাখার জায়গা নিয়ে তেমন ভাবাও হয় না। কিন্তু এখান থেকেই শুরু তার যত্ন নেওয়ার পালা। জায়গা বাছার আগে তিনটি বিষয় মাথায় রাখবেন। আভেনের কাছে নয়, সূর্যালোক থেকে দূরে, কোনও হিট ভেন্ট যাতে কাছে না থাকে, এমন জায়গা বাছতে হবে ফ্রিজ রাখার জন্য। আপনার বাড়ি বা ফ্ল্যাটে জায়গার অভাবে যদি রান্নাঘরে আভেনের পাশেই ফ্রিজের জায়গা বরাদ্দ থাকে, সে ক্ষেত্রে ইনসুলেটেড বোর্ড দিয়ে আভেন ও ফ্রিজের মাঝে ব্যবধান তৈরি করতে হবে। দেওয়াল থেকে তিন দিকেই অন্তত ছ’ইঞ্চি জায়গা ছেড়ে ফ্রিজ রাখতে হবে।

• এর পরের ভুলটা অনেকেই করে থাকেন, ফ্রিজের উপরটাকে স্টোরেজ হিসেবে ব্যবহার করে। সকলের আগে সেটা বন্ধ করতে হবে। ফ্রিজের উপরটা পুরো ফাঁকা রাখবেন। অনেকে তোয়ালে দিয়ে ফ্রিজ ঢেকে দেন, যা কখনওই করা উচিত নয়। প্রতি সপ্তাহে ফ্রিজের মাথা কাপড় দিয়ে মুছে পরিষ্কার করাও জরুরি। খেয়াল রাখবেন, ফ্রিজের মাথায় যেন ধুলো না জমে।

Advertisement

• ফ্রিজের দরজায় যে রাবার সিল বা গ্যাসকেট থাকে, তা আলগা হয়ে গেলে অবশ্যই পাল্টে নেবেন। রোজ ফ্রিজ খোলা-বন্ধ করতে করতে দরজার রাবার সিল বা গ্যাসকেট আলগা হয়ে যেতে পারে। গ্যাসকেট আলগা হয়ে গেলে বাইরের উষ্ণ হাওয়া সহজেই ফ্রিজে ঢোকে। ফ্রিজ ঠান্ডা রাখতে এর মোটরকে বেশি পাওয়ার টানতে হয়। তাই কয়েক বছর বাদে বাদে গ্যাসকেট পাল্টে নিলে ফ্রিজের কার্যক্ষমতা বাড়বে।

• ফ্রিজের পিছন দিকটাও পরিষ্কার রাখা প্রয়োজন। বিশেষত ফ্রিজের পিছনের কয়েল। বেশি ধুলো জমলে ফ্রিজের কমপ্রেসরে চাপ পড়ে। তাই প্রতি মাসের নির্দিষ্ট সময়ে ফ্রিজের পিছন দিকটা, বিশেষত কয়েলগুলো পরিষ্কার করে নিতে হবে।

• গরম খাবার ফ্রিজে রাখবেন না। বরং খাবার বাইরে রেখে ঘরের তাপমাত্রায় এনে ফ্রিজে ভরে রাখুন। খাবার রাখার সময়ে খেয়াল রাখবেন, প্রত্যেকটা পাত্রের মাঝে যেন দু’ইঞ্চি ব্যবধান থাকে। ফ্রিজে যে কোনও খাবার রাখার সময়ে তা ঢেকে রাখবেন। আর কাঁচা আনাজপাতি রাখার জন্য প্লাস্টিকের ব্যবহার করবেন না। বরং তা নীচের ভেজিটেবিল বাস্কেটে রাখুন।

• ফ্রিজে দরজা খোলার সময়েও যত্নবান হওয়া দরকার। অনেকক্ষণ ফ্রিজের দরজা হাট করে খুলে রাখবেন না। ফ্রিজে কিছু ভরার সময়ে যা যা ভরবেন, সে সব কিছু ফ্রিজের কাছে নিয়ে এসে তার পরে দরজা খুলে একে একে তা ফ্রিজে ভরে নিতে পারেন।

• এখন বেশির ভাগ ফ্রিজই আর ডিফ্রস্ট করার দরকার পড়ে না। তবে যে সব ফ্রিজে ডিফ্রস্টের প্রয়োজন আছে, সেই ফ্রিজ সপ্তাহে অন্তত এক বার ডিফ্রস্ট করা জরুরি। না হলে বরফ জমে ফ্রিজের কর্মক্ষমতা তো কমিয়ে দেবেই, একই সঙ্গে অনেক বেশি বিদ্যুতের অপচয়ও হবে। অনেক ফ্রিজেই আবার পাওয়ার-সেভার সুইচ থাকে। তাই ফ্রিজে খাবার কম থাকলে এই পাওয়ার সেভার সুইচের সাহায্য নিতে পারেন।

কোথায় কী রাখবেন

ফ্রিজ়ার: নামেই বোঝা যাচ্ছে ফ্রোজ়েন ফুড রাখতে পারেন এখানে। যেমন ফ্রোজ়েন মিট, স্টক, ফ্রোজ়েন ফ্রুট, মিল্ক প্যাকেট ইত্যাদি।

দরজা: ফ্রিজের দরজা আপাত ভাবে সবচেয়ে গরম থাকে। তাই এখানে জলের বোতল, ফলের রস, কন্ডিমেন্ট রাখা যেতে পারে। অনেকেই দরজায় দুধের টেট্রাপ্যাক বা বোতল রাখেন। সেটা কিন্তু উচিত নয়। কারণ দুধে খুব সহজেই ব্যাকটিরিয়া জন্মায়। তাই দুধ স্টোর করার ব্যাপারে যত্নবান হওয়া উচিত। ফ্রিজ়ারে রাখতে অসুবিধে হলে ফ্রিজের ভিতরে উপরের দিকের শেল্ফ বরাদ্দ করতে পারেন দুধ রাখার জন্য।

উপরের তাক: ফ্রিজের উপরের ও নীচের তাকে রান্না করা খাবার ও কাঁচা আনাজপাতি ভাগ করে রাখতে পারেন। আনাজপাতি নীচের দিকে রাখাই ভাল। তার সঙ্গেই ডিমও রাখতে পারেন।

ফ্রিজে যা রাখবেন না: আলু, পেঁয়াজ, রসুন, মধু ফ্রিজে রাখার কোনও দরকার পড়ে না। তাই অহেতুক একগাদা জিনিস ভরে ফ্রিজকে ভারী না করাই ভাল।

মনে রাখা উচিত, প্রত্যেক ফ্রিজের ডিজ়াইন আলাদা। তাই সেই অনুযায়ী বদলে যায় ফ্রিজ়ে জিনিস রাখার ব্যবস্থা। খেয়াল রাখবেন ফ্রিজের মধ্যে যেন কিছুটা জায়গা থাকে, যাতে হাওয়া খেলতে পারে। তবেই ফ্রিজের কর্মক্ষমতা বাড়বে। আর বছরে অবশ্যই এক বার সার্ভিসিং করাবেন। মাসে এক বার ভাল করে পুরো ফ্রিজের ভিতর-বাইরে পরিষ্কার করাও জরুরি।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন