প্রতিবাদ: অ্যাকাডেমিতে প্রদর্শিত শুভব্রত নন্দীর-র একটি ছবি
শিল্পী শুভব্রত নন্দীর একক প্রদর্শনী অনুষ্ঠিত হল অ্যাকাডেমিতে। এই শিল্পী বহু বছর বিভিন্ন প্রদর্শনীতে অংশগ্রহণ করেছেন।
শুভব্রতর ভাষা অত্যন্ত জোরালো, প্রতিবাদের। আজকের নাগরিক যন্ত্র-সভ্যতার ভয়াবহতা, বঞ্চনা, বিপন্নতা এবং শোষণের বিরুদ্ধে তাঁর প্রতিবাদ মূর্ত। আশৈশব শহুরে পরিবেশে বেড়ে ওঠা ওঁর স্পর্শকাতর মন প্রত্যক্ষ করেছে মনুষ্যত্বের অবক্ষয়। ছিন্ন ভিন্ন শহরের বুকে শ্রম-রক্ত ভেজা ইট কাঠ কংক্রিট কীভাবে ক্রমশ নিস্পেষিত করেছে মানুষের বাঁচার স্বপ্নকে। ভালবাসা, প্রেমকে করেছে দীর্ণ, পথভ্রান্ত। আরও পাওয়ার আকাশ-মুখি লোভ কীভাবে নিরন্তর পিষে ফেলেছে মানুষের কোমল হৃদয়বৃত্তকে, আশা-ভালবাসা, আনন্দে থাকবার উপাদানটিকে। আর সে জায়গায় তৈরি করছে শূন্যতার ইমারত। সেই ইমারতে বাস করে লোলুপতা, ক্ষোভ, বিত্ত বাসনা।
আঙ্গিকের দিক থেকে শিল্পীর কাজ অত্যন্ত মর্মস্পর্শী। শিল্পীর একটি ছবি ‘ভেনেশিয়ান ব্লাইনড’ ভিন্ন মজার স্বাদের। এই বেলাইনড-এর ভেতর থেকে বাইরের টুকরো-টুকরো ‘নানা খানা’র জগতটাকে দেখে যেন দৃশ্যটি ক্ষীয়মান হয়, অন্ধত্ব জাগে। তাঁর সমস্ত কাজটি সম্পন্ন এক বিস্ময়কর জ্যামিতিক জালে। বস্তুত শিল্পীর মূল কাজগুলিই চৌকো, লম্বা, গোল ইত্যাদি। আকৃতির নানান স্তরে বিস্তরে বিন্যস্ত। রঙের বাহুল্য বর্জিত, ছাই, কালো, সাদার সূক্ষ্ম পরতে আকস্মিক লালের ছোঁয়া যেন ছবিগুলোকে দিয়েছে এক স্বপ্নময় প্রাণের স্পন্দন। তবে চমকে দেয়, বড় বড় ক্যানভাস-এর কাজগুলো। দানবের চেহারা নিয়ে পশুপাখি-মানুষ-প্রকৃতির হননের খেয়ালে মত্ত ‘সভ্যতার প্রতীক’ এই আকাশচুম্বী বাড়িগুলো যেন আলো আঁধারী অশরীরি বার্তা বয়ে আনে।