মহেশ দত্তানি।
কলকাতায় এসে নাটক মঞ্চস্থ করে গেলেন বিশিষ্ট নাট্যব্যক্তিত্ব মহেশ দত্তানি। সম্ভবত তিনিই প্রথম ভারতীয় নাট্যকার, যিনি ইংরেজিতে নাটক লিখে সাহিত্য অকাদেমি পুরস্কার পেয়েছেন। তাঁর লেখা নাটক পরিচালনা করেছেন আলেক পদম্সি, লিলেট দুবে, অরবিন্দ গৌরের মতো মুম্বই নাট্যজগতের উজ্জ্বল তারকারা। আর কেবল নাটকই নয়, চিত্রজগতেও তিনি সুপরিচিত নাম। ‘ডান্স লাইক আ ম্যান’, ‘মর্নিং রাগা’র মতো চলচ্চিত্র তিনি পরিচালনা করেছেন। ফলে প্রত্যাশা ছিল ঢের। তার উপরে অভিনয়ে ছিলেন নাট্য পরিচালক ও অভিনেতা ভারত দাভোলকর এবং অভিনেত্রী মঞ্জরী ফড়নিস।
সম্প্রতি জি ডি বিড়লা সভাঘরে মহেশ দত্তানির লেখা এই নাটকের নাম ‘ডাবল ডিল রিলোডেড’। লোভ ও বিশ্বাসঘাতকতা এ নাটকের বিষয়। অথবা বলা যেতে পারে সেই প্রবাদ-বাক্যটি, ‘অর্থই অনর্থের মূল’! মূল দু’টি চরিত্র জিৎ (ভারত) ও রিয়ার (মঞ্জরী) কথা থেকে আমরা জানতে পারি, তাদের দু’জনের দেখা হয় একটি দোকানে। ওই দোকানে রিয়ার পার্স খোয়া গেলে জিৎ ওকে সাহায্য করে। ফেরার সময়ে রিয়া জিৎকে গাড়িতে লিফ্ট দেয়। ভদ্রতার বশে জিৎ রিয়াকে আমন্ত্রণ জানায় বাড়িতে ও অনুরোধ করে দু’পাত্র খেয়ে যাওয়ার জন্য।
কথোপকথনে এর পরে ক্রমশ জানা যায়, রিয়ার স্বামী রজনীশকে জিৎ চেনে। ফলে দর্শকও বোঝেন, এই দুই চরিত্রের মধ্যে একটা যোগসূত্র আছে। পরতের পর পরত খুলতে খুলতে দেখা যায়—বেরিয়ে পড়েছে লালসা, তঞ্চকতা, অবিশ্বাস, ঘৃণা ও নৃশংসতা। রিয়ার স্বামীর চক্রান্তেই এক ব্যাঙ্ক ডাকাতির কেসে জিৎকে দশ বছর তিহাড় জেলে বন্দি থাকতে হয়েছিল। একেবারে সশ্রম কারাদণ্ড! রিয়া যে তার স্বামীর প্রতি একটুও অনুরক্ত নয়, সে কথা সে আগেই জিৎকে জানিয়েছে। তাই রজনীশের অন্যায় চক্রান্তের বদলা নিতে জিৎ এ বার রিয়াকেই হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করতে চায়। এক ষড়যন্ত্রের বিরুদ্ধে আর এক ষড়যন্ত্র! কিন্তু রিয়ার ক্রূরতা জিৎ ও রজনীশের অনেক ঊর্ধ্বে। ওই ব্যাঙ্ক ডাকাতিতে সে যেমন মদত দিয়েছিল, তেমনই খুন করেছিল তার প্রিয় বান্ধবীকে— রজনীশের সঙ্গে তার অবৈধ প্রণয়ের সম্পর্ক গড়ে উঠেছে এমনই এক সন্দেহের জেরে। এ বার সে জিতের বাড়িতেই ডেকে আনে স্বামী রাজকে এবং একের পর এক গুলিবিদ্ধ করে, তাকে মেরে ফেলে! তার আগেই রিয়া বিশ্রী ভাবে আহত করেছে জিৎকেও। নিজের কুকার্যের সমস্ত প্রমাণ লোপাট করে সেখান থেকে চলে যাওয়ার আগে জিৎকেই পুলিশের কাছে দোষী সাব্যস্ত করার অভিপ্রায়ে পিস্তলটি সে আহত জিতের হাতে ধরিয়ে দেয়। রিয়া চলে যায় বীরদর্পে, কার্যসিদ্ধি করে। কিন্তু ওস্তাদের মার যে বরাবর শেষরাতেই! তাই জিতের লুকোনো ভিডিয়ো ক্যামেরায় ড্রয়িং রুমের ওই গোটা নাট্যদৃশ্যই বন্দি হয়ে গিয়েছে। এর চেয়ে বড় প্রমাণ আর কীই বা হতে পারে, আসল অপরাধীকে ধরার জন্য? অর্থাৎ জিতেরই জিত হল। বা বলা যেতে পারে, জয় হল সত্যের।
নাটকের সংলাপ যথেষ্ট প্রাঞ্জল। প্রাঞ্জল দু’জনের অভিনয়ও। তবুও এই নাটক সাদামাঠা থ্রিলার হয়েই আটকে রইল— যার অনেকটাই প্রায় প্রথম থেকে আন্দাজ করা যায়। কোনও চমক নেই, নেই কোনও নতুনত্ব!
এ প্রসঙ্গেই মনে পড়ল একটা নাটকের কথা। সেটিও থ্রিলার। এই নাটকের মতোই তাতে একটাই সেট ড্রয়িং রুমের। চরিত্র দু’টি। কিন্তু কোন স্তরে পৌঁছে যায় সে নাটক! যাঁরা দেখেছেন, তাঁরা জানেন—‘টিকটিকি’!
অশ্বিনী গিদোয়ানি প্রযোজিত এই ‘ডাবল ডিল রিলোডেড’ নাটকে তবুও ঘুমপাড়ানি গানটির ব্যবহার সুপ্রযুক্ত। সম্পর্কের জটিলতা, মলিনতা এবং কদর্যতার মাঝখানে যেন একচিলতে কোমলতার পরশ!