অনুভবের গান

রবীন্দ্রসদনে একক গানে রূপঙ্কর। শুনলেন শিখা বসুরবীন্দ্রসদনে একক গানে শিল্পী রূপঙ্কর। গান তো নয়, কিছু অনুভবের কথা। এ দিন শিল্পীর সঙ্গীত জীবনের কুড়ি বছর পূর্ণ হল। ‘পনেরোয় কুড়ি’ শীর্ষক অনুষ্ঠানের আয়োজন করেছিল বেহালা সাংস্কৃতিক সম্মিলনী। প্রথম পর্বে ছিল শিল্পীর অ্যালবামের কিছু গান। রূপঙ্করের গানের মূল আকর্ষণ গানের কথা। অনেকেই আজকাল অভিযোগ করেন আজকের আধুনিক গান তার কথার মাধুর্য হারাচ্ছে। সেখানে তাঁর গানের কাব্যাংশ বেশ মমতা দিয়ে গাঁথা।

Advertisement
শেষ আপডেট: ২৯ অগস্ট ২০১৫ ০০:০৩
Share:

রবীন্দ্রসদনে একক গানে শিল্পী রূপঙ্কর। গান তো নয়, কিছু অনুভবের কথা। এ দিন শিল্পীর সঙ্গীত জীবনের কুড়ি বছর পূর্ণ হল। ‘পনেরোয় কুড়ি’ শীর্ষক অনুষ্ঠানের আয়োজন করেছিল বেহালা সাংস্কৃতিক সম্মিলনী। প্রথম পর্বে ছিল শিল্পীর অ্যালবামের কিছু গান। রূপঙ্করের গানের মূল আকর্ষণ গানের কথা। অনেকেই আজকাল অভিযোগ করেন আজকের আধুনিক গান তার কথার মাধুর্য হারাচ্ছে। সেখানে তাঁর গানের কাব্যাংশ বেশ মমতা দিয়ে গাঁথা। তার ওপর শিল্পীর নিজস্ব গায়কি তো আছেই। প্রথম গান ‘তুমি শুনবে কি/তুমি দেখবে কি দিয়ে’। স্ত্রী চৈতালীর লেখা ‘এল সেই সাঁঝ লগন’ সত্যিই রোমান্টিক। শিল্পীর নিজের প্রিয় গান, কিন্তু জনপ্রিয় নয় – ‘ও পাখি’ বেশ ভাল লাগে। অনেক গান গাইলেন এবং প্রতিটি গানেই সমান লাবণ্য। দ্বিতীয় পর্বেও রূপঙ্কর সপ্রাণ। অনবদ্য লিরিক – ‘যদি তুমি চলে আসতে চাও/খোলা আছে আমার দুহাত/জেনো এখানে নেই কোনো নিষেধ।’ অথবা ‘আজ শ্রাবণের বাতাস বহে এ কোন সুরে গায়।’ তবে প্রথম পর্বে ছিল একটি রবীন্দ্রসঙ্গীত ‘আমার পরাণ যাহা চায়’। হয়তো পূর্ণ রাবীন্দ্রিক নয়, একটু অন্যরকম, আর এই বৈচিত্রটুকুই উপভোগ্য।
অনুষ্ঠানের আলাপচারিতায় শর্মিষ্ঠা গোস্বামী চট্টোপাধ্যায়। তাঁর সঙ্গে আড্ডার ফাঁকে ফাঁকে বের হয়ে এল নানান মজার তথ্য – রূপঙ্করের ছাত্রজীবনে লেখাপড়ায় একেবারেই মন ছিল না, ক্রিকেট খেলতে গিয়ে ঝগড়া আজও মনে রেখেছেন, গান শেখা মূলত রেডিয়ো শুনে। মৃণাল সেন প্রথম পরিচয়ে ভেবেছিলেন ওঁর নাম রূপক রক। সবই ভাল, তবে অনুষ্ঠানের সাড়ে তিন ঘণ্টা সময় বড় দীর্ঘ।

Advertisement

Advertisement

কোথায় তুমি

রবিতীর্থ প্রাক্তনী-র অনুষ্ঠানে বারীন মজুমদার

শান্তিনিকেতনে রবীন্দ্রনাথের জন্মদিন পালিত হয় পয়লা বৈশাখে। সেই রীতিটাকেই স্মরণে রেখে রবিতীর্থ প্রাক্তনী সম্প্রতি আইসিসিআর প্রেক্ষাগৃহে সাংস্কৃতিক সন্ধ্যার আয়োজন করেছিলেন। অনুষ্ঠানের সূচনা হল সুচিত্রা মিত্র ও পূর্বা দামের ছাত্রী প্রবাসী অনুরাধা বসুর একক গানে। ‘কোথায় তুমি’ শীর্ষক পাঁচটি গানের এই সংকলনে তিনি নির্বাচন করেছিলেন যথাক্রমে ‘কার মিলন চাও’, ‘তুমি যে আমারে চাও’, ‘ভুবনজোড়া আসনখানি’, ‘হে মোর দেবতা’। সুরেলা কণ্ঠ, গায়নভঙ্গি অকৃত্রিম এবং স্বতন্ত্র।
সুমিত্রা রায় ও অগ্নিভ বন্দ্যোপাধ্যায়ের পরিচালনায় দ্বিতীয় পর্বে পরিবেশিত হল গানের ‘সুরের আসনখানি’ শীর্ষক সঙ্গীতানুষ্ঠানটি। সংস্থার সদস্যরাই অংশগ্রহণ করলেন। ভাষ্যরচনা করেছেন অমিত দাশগুপ্ত ও স্বকীয় ভঙ্গিতে ভাষ্যপাঠ করেছেন প্রণতি ঠাকুর। বিশেষভাবে শীর্ষনামের গানটিও ‘ওই মহামানব আসে’ আলাদা করে উল্লেখযোগ্য। একক কণ্ঠের গানগুলির মধ্যে প্রথমেই বলতে হবে সুদেষ্ণা চট্টোপাধ্যায়ের ‘অশ্রুভরা বেদনা’ গানটির কথা। দৃপ্ত প্রাণবন্ত গায়নভঙ্গির উপস্থাপনায় তা স্বকীয় বৈশিষ্ট্যে উজ্জ্বল। বুলবুল দত্ত চৌধুরীকে নিবেদনে আরও প্রত্যয়ী হতে হবে। রত্না বিশ্বাস ও সংযুক্তা বিশ্বাস বেশ পরিণত। শুভ্রা সাহার ‘প্রভু তোমা লাগি’ পরিচ্ছন্ন পরিবেশন।

সুফি দর্শনে রবি-র ভাবনা

আইসিসিআর-এ সেই সৃষ্টির প্রতিফলন। শুনলেন পিয়ালী দাস।

সুফি একটি দর্শন। যার সঙ্গে মিলেছে রবীন্দ্রনাথের ভাবনাও। তারই প্রতিচ্ছবি কবিগুরুর সৃষ্টিতে। কিন্তু কী ভাবে? সেই যোগসূত্রটাকেই শুভদীপ খুঁজতে চেয়েছেন এই উপস্থাপনায়।

সম্প্রতি আইসিসিআর-এ অনুষ্ঠিত হল ‘টেগোর ইন সুফিয়ানা’ শীর্ষক অনুষ্ঠান। যেখানে নাচ, গান, কবিতা এবং পাঠের সমবেত কোলাজ-এ প্রেক্ষাগৃহ জুড়ে ছড়িয়ে পড়ল এক আধ্যাত্মিক অনুভূতি। রবীন্দ্র-ভাবনার সঙ্গে সুফিজমের যোগসূত্রকেই যেন খুঁজে দেখা হল সমগ্র অনুষ্ঠান জুড়ে। সুফিজম যেন মুক্তিরই প্রতিশব্দ। সুফিরা যেমন মরমি মানুষ, কবিগুরুও তেমনই ছিলেন। এই অনুষ্ঠানে সেই কথাগুলিই বার বার ফিরে আসে।

এদিনের অনুষ্ঠানে এক সুন্দর মেলবন্ধন ঘটেছিল রবীন্দ্রনাথের কবিতা এব‌ং সুফি গানের। পরিবেশিত হয় বুল্লে শাহ, আমির খসরু, নিজামউদ্দিন আউলিয়ার গান। কণ্ঠে ছিলেন সম্বুদ্ধ চট্টোপাধ্যায়। তাঁর পরিবেশন এক অন্য অনুভূতি বয়ে আনে।

নৃত্যে দীপ্তাংশু পাল, সম্রাট বন্দ্যোপাধ্যায়, দেবলীনা কুমার এবং গার্গী নিয়োগী। পাঠে অলকানন্দা রায়। অনুষ্ঠানের মূল ভাবনা এবং আবৃত্তিতে ছিলেন শুভদীপ চক্রবর্তী।

লোকগানের টানে

ছবি: উৎপল সরকার

সম্প্রতি আইসিসিসআর-এ অনুষ্ঠিত হল চিন্ময় আদকের একক লোকসঙ্গীতের আসর। প্রথমেই শিল্পী শোনালেন ‘এই বাংলায় জনম আমার’। তারপর পরিবেশন করলেন লালন ফকিরের গান ‘বেঁধেছি এমনই ঘর’। ভাটিয়ালি গান ‘আমায় ভাসাইলি রে’ বহুশ্রুত হলেও উপস্থাপনার গুণে তা অন্য মাত্রা এনে দেয়। এমনকী বিভিন্ন জেলার প্রচলিত গানগুলি গেয়ে শিল্পী শ্রোতাদের প্রশংসা আদায় করে নিলেন। বীরভূম জেলার কাওখালি, কোচবিহার জেলার চটকা, মালদহ জেলার আলকাপ, ঝুমুর, মেদিনীপুরের সং-এর গান শ্রোতাদের মুগ্ধ করে। তবে বাউল গান ‘হৃদমাঝারে রাখবো’ এক অন্য আমেজ এনে দেয়।

প্রেমে ও প্রতিরোধে

সম্প্রতি বাংলা অ্যাকাডেমিতে পরিক্রমা’র অনুষ্ঠানে শিল্পী ছিলেন তাপস নাগ ও মধুছন্দা তরফদার। ‘প্রেমে ও প্রতিরোধে’ শীর্ষক অনুষ্ঠানটিতে দু’খানি প্রেমের কবিতা পরিবেশনে মধুছন্দা ছিলেন সাবলীল। বিশেষ করে জয় গোস্বামীর একটি কবিতা তাঁর কণ্ঠে মানানসই হয়ে ওঠে। শামসুর রাহমান ‘উদ্ধার’ কবিতাটি যে প্রেক্ষাপটে লিখেছিলেন সেটিকেই তাপস নাগ উদাত্ত কণ্ঠস্বর ও সুনিপুণ বাচনভঙ্গির মধ্যে দিয়ে শ্রোতাদের উপলব্ধির গভীরতার মধ্যে নিয়ে যান। অনুষ্ঠানে অন্যান্য শিল্পীদের মধ্যে দেবাশিস কুমার বসুর আবৃত্তি মন্দ নয়।

তোমার সঙ্গে

সম্প্রতি শৈলজারঞ্জন মজুমদারের ছাত্রী মৃদুলা বন্দ্যোপাধ্যায়ের কণ্ঠে শোনা গেল রবীন্দ্রনাথের দশটি গান। যার শিরোনাম ছিল ‘তোমার সঙ্গে’।

পরিশীলিত কণ্ঠে তাঁর গানগুলি ছিল ‘আমি তোমার সঙ্গে বেঁধেছি’, ‘গহনকুসুমকুঞ্জ মাঝে’, ‘সেদিন দুজনে দুলেছিনু বনে’, ‘ফাগুন হাওয়ায় হাওয়ায়’, ‘একটুকু ছোঁয়া লাগে’, ‘আজি ঝড়ের রাতে তোমার’, ‘আমার অঙ্গে অঙ্গে কে বাজায়’, ‘তুমি কিছু দিয়ে যাও’ প্রভৃতি। পরের গানগুলি ছিল ‘এই উদাসী হাওয়ার পথে পথে’, ‘মধ্যমণি বিজনবাতায়নে’।

জীবনের ধ্রবতারা

সম্প্রতি ইজেডসিসি-র উদ্যোগে আয়োজিত অনুষ্ঠানে স্বামী বিবেকানন্দের প্রিয় গান শোনালেন উৎসব দাস। শুরু করলেন ‘নাহি সূর্য নাহি জ্যোতি’ দিয়ে। তারপর শোনালেন স্বামীজির প্রিয় রবীন্দ্রনাথের ধ্রুপদাঙ্গের গান – ‘তাঁহারে আরতি করে চন্দ্রতপন’, ‘মহাসিংহাসনে বসি শুনিছ’ প্রভৃতি গান। শেষে রামকৃষ্ণের প্রিয় গান ‘ডুব ডুব ডুব রূপসাগরে’ শুনিয়ে শ্রোতাদের মুগ্ধ করেন।

কবিপ্রণাম

জয়তী রাহা

নিখিলবঙ্গ নববর্ষ উৎসব সমিতি’ আয়োজিত ৬৫ তম কবিপ্রণাম সম্প্রতি হয়ে গেল রবীন্দ্র সদনে। রেজওয়ানা চৌধুরী বন্যার কণ্ঠে ‘তাই তোমার আনন্দ’, ‘আবার এসেছে আষাঢ়’ শুনে শ্রোতারা যেমন মুগ্ধ হয়েছেন, তেমনই স্বাগতালক্ষ্মী দাশগুপ্তের ‘আগুনের পরশমণি’, ‘এ কি করুণা’ মন ছুঁয়ে যায়। পাশাপাশি থাঙ্কমণি কুট্টির পরিবেশনায় এবং সোমনাথ কুট্টির নির্দেশনায় ‘কলামণ্ডলম’-এর শিল্পীদের পরিবেশিত নৃত্যনাট্য ‘বিবেকের পথে’ অনুষ্ঠানটিতে একঘেয়েমি আনতে দেয়নি। সমগ্র অনুষ্ঠানের সঞ্চালনায় ছিলেন শর্মিষ্ঠা বাগ। উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশের উপরাষ্ট্রপতি জকি আহাদ, বিশ্বভারতীর উপাচার্য সুশান্ত দত্তগুপ্ত প্রমুখ। যদিও প্রথম পর্বে দীর্ঘায়িত বক্তৃতা খানিকটা তাল কেটেছিল।

চেনা অচেনা

আইসিসিআর-এ পরিবেশিত হল সায়ন বন্দ্যোপাধ্যায়ের একক রবীন্দ্রসঙ্গীতের অনুষ্ঠান ‘চির অচেনা পরদেশী’। সায়নের কণ্ঠস্বর সুন্দর এবং সুরের নিয়ন্ত্রণ ভাল। কিন্তু কিছু ক্ষেত্রে উচ্চারণ ও ভাব স্পষ্ট হলে ভাল হত। শুনতে ভাল লাগে ‘আমি হৃদয়ের কথা বলিতে ব্যাকুল’, ‘কোথা বাইরে দূরে’ এবং ‘ধীরে ধীরে প্রাণে আমার’। কৌশিক সেন এবং চৈতি মিত্রের পাঠ অন্য মাত্রা এনে দেয়। ভাল লাগে ‘হৃদয় পানে হৃদয় টানে’, ‘যখন দেখা হল’।

অন্তর মম

সম্প্রতি ‘কাব্যলোক’-এর অনুষ্ঠানে শিল্পীরা ছিলেন বনশ্রী সেনগুপ্ত, সুস্মিতা দত্ত, মালবিকা ভট্টাচার্য, ইন্দ্রাক্ষী ঘোষ, আইভিলতা বিশ্বাস, দীপান্বিতা ভৌমিক এবং সুচরিতা বন্দ্যোপাধ্যায়। কবিতায় ছিলেন সুজিত দত্ত, অমর ঘোষ, মানসী ভট্টাচার্য ও মহুয়া দাস। এ দিন অনুষ্ঠানের বড় প্রাপ্তি বনশ্রী সেনগুপ্তের দুটি নজরুলের গান। বিশেষ করে তাঁর গাওয়া ‘খাঁটি সোনার চেয়ে খাঁটি’। বনশ্রীর কণ্ঠে সচরাচর নজরুলগীতি শোনা যায় না। তাই এই গান শ্রোতাদের কাছে বাড়তি পাওনা। পাঠে ছিলেন সুজিত দত্ত। তাঁর কণ্ঠে ‘অন্তর মম বিকশিত করো’, কুহেলী ও ঝুলন কবিতাগুলি অনুষ্ঠানটিকে বিশেষ মাত্রা দেয়। রেশ রয়ে যায় অনুষ্ঠানের শেষেও।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন