আলোচনা

ঘূর্ণায়মান জলে স্থির মাছ

শুচিব্রত দেবের নরম হলদে জমিতে দূরে গাছের জটলা, সরু রাস্তা বরাবর আনুভূমিক, আবার নীচেও দুটি ফিগার পরস্পরের বিপরীতে যেন শূন্যে ভেসে চলেছে। ছোট ছোট রেখা দিয়ে তিনি মধুবনী পেন্টিংয়ের মতো করে অবয়ব দুটি করেছেন, সব মিলিয়ে ছবিটি বেশ উপভোগ্য।

Advertisement

শমিতা নাগ

শেষ আপডেট: ২৫ নভেম্বর ২০১৭ ০০:০০
Share:

মুক্তি: অ্যাকাডেমিতে প্রদর্শিত বিনীতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ছবি

রবীন্দ্রসংগীত ‘এই আকাশে আমার মুক্তি’ গেয়ে শান্তিনিকেতন কলাভবন পরিবারের প্রাক্তনদের সম্মিলিত প্রদর্শনী হয়ে গেল অ্যাকাডেমিতে। রামানন্দ বন্দ্যোপাধ্যায়, পার্থপ্রতিম দেব, শান্তনু ভট্টাচার্য, জনক ঝংকার নার্জারি, তপন মিত্র, প্রবীর বিশ্বাস, শুচিব্রত দেব, জহর দাশগুপ্ত, শর্মিলা রায়, অরুন্ধতী বন্দ্যোপাধ্যায়—এই সব শিল্পী রয়েছেন অভিভাবকের মতো। রামানন্দ বন্দ্যোপাধ্যায়ের ‘ইভনিং স্কেপ’ শান্ত সমাহিত জলাভূমি সন্ধ্যা নামার অপেক্ষায়। শুচিব্রত দেবের নরম হলদে জমিতে দূরে গাছের জটলা, সরু রাস্তা বরাবর আনুভূমিক, আবার নীচেও দুটি ফিগার পরস্পরের বিপরীতে যেন শূন্যে ভেসে চলেছে। ছোট ছোট রেখা দিয়ে তিনি মধুবনী পেন্টিংয়ের মতো করে অবয়ব দুটি করেছেন, সব মিলিয়ে ছবিটি বেশ উপভোগ্য।

Advertisement

পার্থপ্রতিম দেব ছবি আঁকার ক্ষেত্রে চিরনবীন। সর্বদাই নতুন কিছু করেন। তপন মিত্রের সাদাকালো মুখাবয়ব ভাল লাগল। প্রতিমা দত্তের ছোট আকারের সাদাকালো আলপনা নজর কাড়ে। বড় ছবিটি আলপনার অলঙ্করণে করা পাখি। দুটি পুরনো শান্তিনিকেতন ঘরানার ধারা। পরিচ্ছন্ন সুন্দর সাবলীল কাজ।

শান্তনু ভট্টাচার্যের কাজ দেখে মন খারাপ হয়ে গেল। তিনি সাদাকালোর মাস্টারমশাই। অনেক গ্রাফিক্স শিল্পীরই হাতেখড়ি তাঁর কাছে। এখানে আলংকারিক পেন্টিং করেছেন। প্রথম দর্শনেই চাইনিজ কাজের ছাপ চোখে পড়ে। কালো পশ্চাৎপটে গণেশজননী লাল হলদে নীল রং উডকাটের মতো প্রয়োগ করেছেন।

Advertisement

জনক ঝংকার বিমূর্ত ভাস্কর্যে তাঁর নিজস্বতা অনুসারে ছোট ভাস্কর্যকে বিশালতার ব্যাপ্তি দিয়ে উপস্থাপিত করেছেন। প্রবীর বিশ্বাসের পেন্টিং ভাল লাগল। তরোয়াল হাতে নীল বাজপাখি রূপকধর্মী। পাশে দাঁড়ানো আর একটি প্রাণী আশ্বাস চাইছে। রং চাপানোতে মুনশিয়ানা আছে, তবে ছবি প্রভাবমুক্ত নয়। হরেন ঠাকুরের বীরভূমের আদিবাসী পল্লির ছবিতে কোলাজের মতো করে রং এনেছেন।

শর্মিলা ঠাকুরের কাটুমকুটুমধর্মী কাজটি ভিন্নধর্মী। দশটি হাতের অনুষঙ্গে দেবীকে ভেবেছেন। সুলোচনা সারস্বত একটু অন্য রকম। কসমিক ওয়ার্ল্ড নিয়ে তাঁর চিন্তাভাবনা— বিশেষত উজ্জ্বল বর্ণের সূর্যের মতো ফর্মটি আর একটু স্পেস চাইছে। অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায় কালো রেখাকে বিভিন্ন ভাবে ব্যবহার করেছেন। সাদাকালোয় প্রসাধনরতা মহিলা কালীঘাট পটের আধুনিক সংস্করণ।

বিনীতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের দুটি গ্রাফিক্স মাটির প্রদীপের মতো। ঘূর্ণায়মান জলের মধ্যে একটি স্থির মাছের লিথোগ্রাফ, সুন্দর টেক্সচারে অল্প আয়াসে করা। ভাল কাজ সুদীপ্ত বসুর। ছোট ব্রোঞ্জ ভাস্কর্যটি মনুমেন্টাল গুণসম্পন্ন। মৌসুমী মান্না সুন্দর চিত্রল সিটিস্কেপ করেছেন।

অনুষ্ঠান

সম্প্রতি আইসিসিআর-এ সৃজক আয়োজন করেছিল নৃত্যনাট্যের অনুষ্ঠান ‘তমসো মা জ্যোতির্গময়’। সুন্দর উপস্থাপনা। ভাবনা ও নির্দেশনায় গৌতম উপাধ্যায় ও রূপা উপাধ্যায়। নৃত্যনাট্যে কণ্ঠ মিলিয়েছেন দূর্বা সিংহ রায়চৌধুরী, সৃজন চট্টোপাধ্যায়, তানিয়া দাস প্রমুখ। আবহ জন্মেজয় বসু ও সুভাষ চক্রবর্তীর। পাঠে রূপা উপাধ্যায়। নৃত্যে অংশ নিয়েছিলেন যে সব শিল্পী, তাঁদের মধ্যে রয়েছেন রূপা, চন্দ্রাণী, অদিতি, নন্দিতা, শ্রেয়সী, শর্মিষ্ঠা, দিগন্ত প্রমুখ। অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন মাসায়ুকি তাগা এবং গৌতম দে।

নৃত্য, মূকাভিনয়, চিত্র, আলো ও বাদ্যের মেলবন্ধনে শিশির মঞ্চে প্রমা আয়োজন করেছিল আবৃত্তি দৃশ্যায়ন। সৃজনে প্রদ্যোৎ চৌধুরী। পরে ছিল শ্রুতি নাটক ‘দেনা পাওনা’। নৃত্য পরিকল্পনায় বলাকা দাস, মূকাভিনয়ে শান্তিময় রায়।

ফণীভূষণ মঞ্চে সুরসাধনা আয়োজন করেছিল গান, পাঠ ও নৃত্যের অনুষ্ঠান। শুরুতেই ছিল হংসধ্বনি অ্যাকাডেমির সমবেত সংগীত। এ দিন গান গাইলেন অলোক রায়চৌধুরী, তানিয়া দাস, কিংশুক রায় প্রমুখ। পাঠে ছিলেন বিজয়লক্ষ্মী বর্মণ, শোভনসুন্দর ও ঈশিতা। নৃত্যে অস্মিতা রায় এবং সুবর্ণা ভৌমিক।

জীবনানন্দ সভাঘরে টালিগঞ্জ অন্যভাবনা আয়োজন করেছিল ‘একগুচ্ছ সুকুমার’। উল্লেখযোগ্য নিবেদন ছিল ‘আবোলতাবোল’, ‘দ্রিঘাংচু’, ‘হযবরল’। উপস্থাপনায় ছিলেন জগন্নাথ বসু।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন