ধর্ম, বিশ্বাস ও রাজনীতি

খাটুরা চিত্তপট-এর ‘আগন্তুক’ নাটকেপরিবর্তনে পরিবর্তিত হয় সব কিছু, শুধু পাল্টায় না সাধারণ মানুষের অবস্থান। একত্রিত হতে দেয় না অলীক শক্তি। কখনও তা অন্ধ ধর্মবিশ্বাস আবার কখনও তা ভিন্ন রাজনৈতিক মতাদর্শ। খাঁটুরা চিত্তপট-এর নতুন নাটক ‘আগন্তুক’-এ নাট্যকার নির্দেশক শুভাশিস রায়চৌধুরী পথ দেখালেন সেই সত্য-কে। মজার মোড়কে। সাহিত্যিক অলোক শহরের কোলাহল থেকে দূরে বনমালিপুর গ্রামে আসেন পুজো সংখ্যার লেখার তাগিদে।

Advertisement
শেষ আপডেট: ২১ মার্চ ২০১৫ ০০:০৩
Share:

পরিবর্তনে পরিবর্তিত হয় সব কিছু, শুধু পাল্টায় না সাধারণ মানুষের অবস্থান। একত্রিত হতে দেয় না অলীক শক্তি। কখনও তা অন্ধ ধর্মবিশ্বাস আবার কখনও তা ভিন্ন রাজনৈতিক মতাদর্শ। খাঁটুরা চিত্তপট-এর নতুন নাটক ‘আগন্তুক’-এ নাট্যকার নির্দেশক শুভাশিস রায়চৌধুরী পথ দেখালেন সেই সত্য-কে। মজার মোড়কে। সাহিত্যিক অলোক শহরের কোলাহল থেকে দূরে বনমালিপুর গ্রামে আসেন পুজো সংখ্যার লেখার তাগিদে। ভাড়া নেন গ্রামের অন্ধ ধর্মবিশ্বাসী মানুষ সিদ্ধেশ্বরের বাড়িতে। সিদ্ধেশ্বরের স্বপ্ন ভোটে দাঁড়াবার। এই বাড়িতেই অলোকের সঙ্গে আলাপ হয় আগন্তুকের। যে আজন্ম মানুষ হিসেবে তার পরিচয় খুঁজে যাচ্ছে। অলোক নতুন করে জীবনকে চিনতে শুরু করে। এর পর থেকেই গ্রামে এক অদ্ভুত চুরি শুরু হয়। চুরি হয় তাদের বাড়িতেই যারা ভোটে দাঁড়াবে। ভিন্নধর্মালম্বী ভোট প্রার্থী একে অপরের থেকে দূরত্ব রেখে চললেও চুরিকে কেন্দ্র করে একত্রিত হয় তাঁরা। রাজনৈতিক চাপে দিশেহারা হয়ে যান বনমালীপুর ফাঁড়ির দারোগা ও তার ভাগ্নে কনেস্টেবল পটলা। দারোগা চরিত্রটিকে নিধিরাম সর্দার রূপে খুঁজে পাই নাটকে যাঁর নানা রকম স্বপ্ন। কখনও স্বপ্ন দেখেন শখের গোয়োন্দা হবেন, আবার চোরের সন্ধান করতে এসে হাতের কাছে সাহিত্যিক-কে পেয়ে সুপ্ত কবি প্রতিভা প্রকাশ করে ফেলেন, এদিকে কনেস্টেবল এক বিশেষ ক্ষমতার অধিকারী, সে গন্ধ শুঁকে বলে দেয়। মজার ছলে এই চরিত্র দুটি-কে নাটকে এনেছেন নাট্যকার শুভাশিস। এর পরেই জমে ওঠে আসল নাটকের মজা। আগন্তুকের ভূমিকায় শুভাশিসের প্রাণবন্ত অভিনয় প্রমাণ করে তিনি কতটা পরিণত। অলোকের ভূমিকায় ভাল লাগে শঙ্খদীপের অভিনয়। কন্সটেবল পটলার ভূমিকায় চন্দন ভট্টাচার্য, সিদ্ধেশ্বরের চরিত্রে সুজিত মজুমদার, ওসমানের ভূমিকায় শুভাশিস কাশ্যপী, ফিলিপ চরিত্রে সোমনাথ সিন্হা, পাঁচু পোদ্দার হিসাবে নীলাঞ্জন বন্দ্যোপাধ্যায়ের অভিনয় ভাল লাগে। স্বপন বন্দ্যোপাধ্যায়ের আবহ নাটকটিকে সম্পূর্ণতা দেয়। বিশেষ করে নাটকে রবীন্দ্রনাথ, সলিল, সুমন-এর গানের ব্যবহার এক অন্য পরিবেশ সৃষ্টি করে।

Advertisement

Advertisement

রাজা হল কুপোকাত

‘তঞ্চক প্রবঞ্চক’ নাটকে। লিখছেন পিনাকী চৌধুরী

সম্প্রতি নিরঞ্জন সদনে অনুষ্ঠিত হল রাসবিহারী শৈলুষিক প্রযোজিত নাটক ‘তঞ্চক প্রবঞ্চক’। সুকুমার রায়ের গল্প অবলম্বনে নাট্যরূপ দিয়েছেন কমলেশ্বর মুখোপাধ্যায়।

একদা বুদবুদ দ্বীপে এক অস্থিরমতি রাজা ছিলেন, স্বেচ্ছাচারী এবং ক্ষমতালোভী। সেই রাজার ভয়ে সব প্রজারা এবং সভাসদরা তটস্থ থাকতেন। কেউ সেই রাজার বিরুদ্ধাচরণ করার সাহস পর্যন্ত পেতেন না। অসহিষ্ণু রাজার বিরুদ্ধে সকলের মনে কিন্তু অসন্তোষ দানা বাঁধছিল, কিন্তু এক এক অতি সূক্ষ্ম বুদ্ধিসম্পন্ন চতুর তঞ্চক কী ভাবে একাধিক বার সেই প্রবল পরাক্রমশালী রাজাকে সূক্ষ্ম বুদ্ধির দ্বারা ঘোল খাওয়ায় এবং রাজাকে বোকা বানিয়ে সর্বস্বান্ত করে, তাই নিয়েই এই নাটক। একেবারে শেষে দেখা যায়, রাজা জলে ডুবে মারা গেলেন। তারপর যেন সেই বুদবুদ দ্বীপে শান্তি ফিরল। স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেললেন সবাই। শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত নাটকের স্বাভাবিক গতি বজায় থাকে। টানটান উত্তেজনা না থাকলেও নাটকটি কিন্তু দর্শকদের ভাল লাগে।

তঞ্চকের ভূমিকায় পদ্মনাভ দাশগুপ্ত অসাধারণ। রাজার ভূমিকায় অর্জুন দাশগুপ্ত এবং রানির ভূমিকায় পৃথা বন্দ্যোপাধ্যায় যথাযথ। ভাল লাগে বকুলের ভূমিকায় পিয়ালি বসুকে। নির্দেশনায় ওঙ্কারপ্রসাদ ঘোষ, সংলাপ ও আবহে কমলেশ্বর মুখোপাধ্যায় এবং পদ্মনাভ দাশগুপ্ত।

একটি মিথ্যে হাজার মজা

পরাণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের ‘মিথ্যেবাদী’ নাটকে

শ্রুতিরঙ্গম (দমদম) প্রযোজিত নাটক ‘মিথ্যেবাদী’ টানটান উত্তেজনা তৈরি করে। কী ভাবে মিথ্যে কথা একটি শিল্প হয়ে উঠতে পারে তা নাট্যকার ও নির্দেশক পরাণ বন্দ্যোপাধ্যায় দেখিয়েছেন দারুণ মুন্সিয়ানায়। ছোট সংসার মিস্টার এবং মিসেস সরকার-এর কয়েক বছর আগে তাদের একমাত্র সন্তানকে হারিয়ে এক বুক ব্যথা নিয়ে তাঁরা জীবন কাটায়। মিসেস সরকার ছেলে হারানোর ব্যথাটা সহ্য করতে না পেরে মানসিক দিক দিয়ে বেসামাল হয়ে পড়েন। ঘরের জিনিসপত্র ভাঙচুর করেন, চেঁচামেচি করেন। সরকার চেষ্টা করেন সামাল দিতে। কখনও পারেন, কখনও হাল ছেড়ে দেন। এরই মাঝে আসে একটি কাজের ছেলে। সংসারের সমস্ত কাজের দায়িত্ব সে কাঁধে তুলে নেয়। কিন্তু একটাই অসুবিধে ছেলেটি মিথ্যেবাদী। তাই সে ভয়ে কথা বলে না। চোরের অপবাদ মাথায় নিয়ে শেষে কথা বলে। সেটাও মিথ্যে কথা। সেই মিথ্যের জোরে ওলটপালট হয়ে গেল সরকার পরিবারে।

প্রত্যেকের অভিনয় নিখুঁত। পরাণ বন্দ্যোপাধ্যায়, মৌমিতা ঘোষ অনবদ্য। এ ছাড়াও সঞ্জু সাহা, সিদ্ধার্থ ঘোষ, অনুপম পাল, মধুমিতা সেনগুপ্ত প্রমুখ যথাযথ। মঞ্চভাবনায় নীলাভ।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন