যোগাযোগ বাড়ানো বা তথ্য জোগাড়ে ডিজিটাল জগতের তুলনা নেই। কিন্তু এই ভার্চুয়াল জগতের চক্করে আমাদের সম্পর্ক ভেঙে গেলে, সীমাহীন খরচ বেড়ে গেলে, রাশ টানা অবশ্যই দরকার।
হাত-পা, মন, মস্তিষ্ক সব যেন বন্দি এই ডিজিটাল হাতকড়ায়। পাঁচ জন বন্ধু পাশাপাশি বসেও ফোনে আটকে, বাড়িতে থাকলেও সেই ভার্চুয়াল জগতে। জীবন থেকে ডিজিটাল এফেক্ট সরিয়ে সুস্থ জীবন যাপন করার চাবিকাঠি কিন্তু আমাদেরই হাতে। তবে এই ডিজিটাল ডিটক্স অত সোজা নয়। শুরু করতে হবে ধীরে ধীরে...
ভাবুন, ভাবা প্র্যাকটিস করুন
সারা দিনে কত বার ফোন চেক করেন? টিভি দেখেন কত ক্ষণ? কত ঘণ্টা কম্পিউটার স্ক্রিনের সামনে বসে থাকেন? আর কত ক্ষণ বাড়ির লোকদের সঙ্গে গল্প করেন? বাড়ির ছাদের পাঁচিলে গা ঘেঁষে রাস্তা দিয়ে চলে যাওয়া লোকগুলোকে দেখেছেন শেষ কবে? খোলা মাঠে ফুটবলে লাথি মেরেছেন কোন উইকএন্ডে? একটু ভাবুন। প্রশ্নগুলো নিজেকে করে দেখুন।
সময় ভাগ করুন
প্রত্যেক দিন মোবাইল, টিভি, কম্পিউটার বা ল্যাপটপে কতটা করে সময় দেবেন, সেটা আগে ঠিক করতে হবে। ধরুন দিনে এক ঘণ্টা করে টিভি ও মোবাইল ব্যবহার করবেন। তার পরে আর নয়।
ফোনের জায়গা
মুঠোফোনই বেশির ভাগ সময় কেড়ে নেয়। হাতের কাছে ফোন থাকলেই, ফোন না়ড়াচাড়া করতে ইচ্ছে করে। তাই বাড়িতে ফোনের জন্য একটা জায়গা নির্দিষ্ট করুন, আর তা যেন হয় আপনার শয়নকক্ষের বাইরে। রাতে ঘুমোতে যাওয়ার আগের মুহূর্ত পর্যন্ত চোখের সামনে ফোন নিয়ে খুটখুট করবেন না। ফোনের আলো কিন্তু ঘুমেও ব্যাঘাত ঘটায়।
ছাঁটাই অভিযান
দরকারি অ্যাপ ছাড়া বাকি অ্যাপগুলো ডিলিট করে দিন। মানে ধরুন, গাড়ি ধরার, লোকেশন দেখার মতো দরকারি অ্যাপ রেখে সোশ্যাল নেটওয়র্কিং ও চ্যাট করার অ্যাপ ছাঁটাই করুন। দেখবেন আর ফোনের দিকে তাকাতেও ইচ্ছে করছে না। এটা পড়ে অবাক হবেন না। ডায়েট শুরু করার সময়ে একটু কড়া হতেই হয়।
ডিটক্স বাডি
একা ডায়েট না করে এক জন সঙ্গী খুঁজুন। তা হলে নিজে যদি কখনও নিজেকে নিয়ন্ত্রণ করতে না-ও পারেন, সে আপনাকে আটকাবে। আর সময় মতো একই সাহায্য আপনিও আপনার বন্ধুকে করতে পারেন। ফোন, কম্পিউটার ছেড়ে সেই বন্ধুর সঙ্গে গল্প করে সময়ও কাটাতে পারবেন অনেকটা।
ঘোষণা জরুরি
বন্ধুবান্ধব, অফিস, বাড়িতে ঘোষণা করে দিন যে, আপনি ডিজিটাল ডায়েটে আছেন। তা হলে আপনি সতর্ক থাকবেন। কখনও ভুলে ফোন চেক করলে তারাও আপনার ধনুকভাঙা পণ মনে করিয়ে দেবে। আপনাকে দেখে উৎসাহিত হয়ে আপনার কাছের লোকজনও এই ডায়েট শুরু করতে পারেন।
ফোন ফ্রি হলিডে
দু’দিনের জন্য ফোন বন্ধ করে ঘুরতে চলে যান। কোনও নদীর ধারে বসে চোখেমুখে জল দিন, জঙ্গলে সময় কাটান। কাল্পনিক জগতে না আছে স্বাদ-গন্ধ-স্পর্শ। বরং ছুঁয়ে দেখুন বাস্তব জীবন, যা অনেক সুন্দর।
ডিজিটাল ডায়েট
ডিজিটাল উপোস চলছে যখন, অন্য কিছু দিয়ে মন ভরাতে হবে। তাই হাতে তুলে নিতে পারেন পছন্দের বই। দীর্ঘ ক্ষণ বইয়ে মন না বসলে শুরু করুন রহস্য উপন্যাস বা ছোট গল্পের বই দিয়ে। বাড়ির সদস্যদের ডেকে দাবা বা লুডোর বোর্ড সাজিয়ে বসে পড়তে পারেন। দেখবেন কেমন ছোটবেলায় ফিরে যাবেন চোখের পলকে। ছুটির দিনে ক্রিকেট ব্যাট বা ব্যাডমিন্টন হাতে বেরিয়ে পড়ুন বাড়ির সামনের গলিতে।
একটু চেষ্টা করে দেখুন। ফোনের ক্যামেরায় না দেখে মনের ক্যামেরায় আশপাশের মানুষের সঙ্গে কাটানো মুহূর্তগুলো বন্দি করে রাখুন। জীবনটা সুন্দর হবে, হতাশাও কাটবে। নতুন নস্ট্যালজিয়া তৈরি হবে।