ঘাত-প্রতিঘাতে টানটান

দর্শককে টেনে রাখে শেষ পর্যন্ত। ‘বিষ’ নাটকটি দেখে এসে লিখছেন মনসিজ মজুমদার।দর্শককে টেনে রাখে শেষ পর্যন্ত। ‘বিষ’ নাটকটি দেখে এসে লিখছেন মনসিজ মজুমদার।

Advertisement
শেষ আপডেট: ২৯ মার্চ ২০১৪ ১৭:০৭
Share:

কল্পায়ুর ‘বিষ’ (রচনা ও পরিচালনা: জ্যোৎস্না চট্টোপাধ্যায়) চলতি সময়ের অন্যতম উল্লেখযোগ্য নাটক। প্রযোজনার সম্পদ জোরালো রচনা। দু’টি চরিত্রের মধ্যে সংলাপের ঘাত-প্রতিঘাতে গড়ে ওঠে টানটান টেনশন, দর্শককে টেনে রাখে শেষ দৃশ্য পর্যন্ত। সাসপেন্সের উৎস এক বিষ যা দিয়ে একটি নিখুঁত হত্যা ঘটানো যায়। ময়না তদন্তে বিষ ও খুনি অধরা থাকে। কিন্তু এই নাটক কি ক্রাইম থ্রিলার? না এক উৎকেন্দ্রিক মানবতাবাদী রসায়ন অধ্যাপক নীলকণ্ঠ চক্রবর্তীর কাহিনি? যিনি আবিষ্কার করেছেন ওই বিষ আর তার প্রতিষেধক। বিষে বিষক্ষয় করতে চান হিংসায় উন্মত্ত মানব অস্তিত্বের?

Advertisement

নাটক যে অতি পরিচ্ছন্ন থ্রিলার শুরুতেই তার ইঙ্গিত মেলে। প্রিয়ব্রতকে বিষের হদিশ দিয়েছে খলনায়ক নীলকণ্ঠের নিযুক্ত কোনও এজেন্ট, যে ফোনেই জানিয়ে দেয়। যুবকের মুরগি হতে আসার দিনক্ষণ। তাই অধ্যাপক তাঁর প্রাইভেট ছাত্রছাত্রীদের সেদিন আসতে বারণ করেন। পিকাসোর ‘গ্যেরনিকা’র অংশবিশেষ কপি ও রাসায়নিক ফর্মুলার দুর্বোধ্য অংক এঁকে বসার ঘর সাজিয়েছেন নিজেই, যাতে তাঁর বিজ্ঞানী ও মানবতাবাদী ভাবমূর্তি সুনিশ্চিত হয়। ফলে, বিষ ও তার প্রতিষেধক যে নিখাদ মিথ সন্দেহই করে না প্রিয়ব্রত। স্ত্রীর সন্দেহবিষে অতিষ্ঠ সে, স্ত্রী হত্যায় বদ্ধ পরিকর। এমন এক অলীক বিষ তার কাছে সত্য হওয়া স্বপ্ন। সে বিশ্বাস করে নীলকণ্ঠের কথায়। বিষ মেশানো কফি খেয়েছে সে, তার আয়ু আর দশ মিনিট। এখন যে কোনও মূল্যেই চাই বিষের প্রতিষেধক। মৃত্যুভয় জাগিয়ে প্রতিষ্ঠানের নামে টাকা আদায় এবং সম্ভাব্য সব বিপদ থেকে আইনি বর্মে আত্মরক্ষা করার মতো খর বুদ্ধির অভাব নেই মানবতাবাদী বিজ্ঞানসাধকের।

নাটুকেপনা আর আবেগ থরথর কবিতার উচ্চারণে আসল ও জালি নীলকণ্ঠকে মঞ্চে এক করেছেন সুরজিৎ বন্দ্যোপাধ্যায় অসাধারণ অভিনয়ে। তাকে চিনতে দর্শকও ধন্ধে পড়েন। সংলাপ বলায় একটু তড়িঘড়ি করলেও অনিন্দ্য বন্দ্যোপাধ্যায়ের প্রিয়ব্রত স্মার্ট ব্যবসায়ী যুবক, অস্থির বিষপ্রার্থী, কিন্তু বৃদ্ধের কূট চালে কুপোকাত। চরিত্রগুলি সত্যিই মানানসই।

Advertisement

যখন সময়ের কথা বলে

দেবজিৎ বন্দ্যোপাধ্যায়

১৯৬৮ সালের ১২ ডিসেম্বর নাট্যদলটির জন্ম। ৪৫ পেরিয়ে ৪৬-এ ‘মাঙ্গলিক’। এই উপলক্ষে বেশ কয়েকটি নাটক আয়োজিত হল সেখানে। সৈয়দ মুস্তাফা সিরাজের গল্প থেকে নাটক ‘মানুষ ভূত’-এর পঁচিশ বর্ষ পূর্তিও হয়ে গেল মধুসূদন মঞ্চে। দলের জন্মদিনে পরিবেশিত হয় মোহিত চট্টোপাধ্যায়ের ‘মল্লভূমি’। এ ছাড়াও ছিল সমীর বিশ্বাসের ‘এলাম ফিরে’। নাটকটি সময়ের কথা বলে। অত্যাধুনিক যুগে সব বাবা-মায়েরই স্বপ্ন তার একমাত্র সন্তানকে এমন ভাবে মানুষ করতে হবে যাতে সে অনেক উপরে উঠতে পারে। তার জন্য কৈশোর জীবন থেকে শুরু হয় মানসিক চাপ। শুভেন্দু বিদেশ যায় কিন্তু আর দেশে ফেরা হয় না। দীর্ঘ পঁচিশ বছর বাদে সুধাময়ের একমাত্র পুত্র শুভেন্দু ফিরে আসে। প্রত্যেকটি চরিত্রই সুঅভিনীত। সমীর বিশ্বাস (সুধাময়), দেবযানী মুখোপাধ্যায় (সুখলতা), শতাব্দী বসু (পাখনা), দেবাশিস গঙ্গোপাধ্যায় (সোনা), সৌম্য বিশ্বাস (শুভেন্দু) প্রত্যেকেই দারুণ অভিনয় করেছেন।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement
Advertisement