কুবের উবাচ

বয়স কম। বেতন মন্দ নয়। মাস চালানোর পরেও হাতে বাড়তি টাকা থাকে। অথচ তা গুছিয়ে সঞ্চয়ের পরিকল্পনা নেই। এমন সমস্যা এই প্রজন্মের অনেকেরই। সমস্যার শিকড় ভবিষ্যতের লক্ষ্য সম্পর্কে স্পষ্ট ধারণা না-থাকা। তমালদের প্রোফাইলেও এই সমস্যার ছবি স্পষ্ট।

Advertisement

শৈবাল বিশ্বাস

শেষ আপডেট: ৩০ জুলাই ২০১৫ ০১:০১
Share:

তমাল (৩৪) • সর্বাণী (৩২) • ছেলে (২) • মা (৬৬)

Advertisement

স্বামী-স্ত্রী দু’জনেই স্কুল শিক্ষক • বহরমপুরে বাড়ি • ইচ্ছে, কলকাতায় ফ্ল্যাট কেনা • বছরে এক বার বেড়াতে আগ্রহী • চান, বিদেশ যেতে

Advertisement

বয়স কম। বেতন মন্দ নয়। মাস চালানোর পরেও হাতে বাড়তি টাকা থাকে। অথচ তা গুছিয়ে সঞ্চয়ের পরিকল্পনা নেই। এমন সমস্যা এই প্রজন্মের অনেকেরই। সমস্যার শিকড় ভবিষ্যতের লক্ষ্য সম্পর্কে স্পষ্ট ধারণা না-থাকা। তমালদের প্রোফাইলেও এই সমস্যার ছবি স্পষ্ট।

দু’জনের রোজগার ভাল। কিন্তু নিখুঁত আর্থিক পরিকল্পনা তাঁদের কোথায়? চিঠিতে ছেলের পড়াশোনা বা নিজেদের সচ্ছল অবসর নিশ্চিত করার টোটকা চাওয়ার থেকে অনেক বেশি উৎসাহ চোখে পড়ল ফ্ল্যাট কেনা, ঘুরতে যাওয়া, বিদেশ যাওয়া নিয়ে। শখ থাকা দোষের নয়। তবে আগে জরুরি প্রয়োজন মিটিয়ে নেওয়া ভাল। আজ এই ভুল শুধরে নেওয়ারই পথ খুঁজব আমরা। সব খরচের পরেও তমালদের ২২ হাজার টাকা থাকে। দেখব, তা কী ভাবে বিভিন্ন প্রকল্পে ছড়িয়ে দেওয়া সম্ভব।


কাজের জীবনবিমা

তমালদের ৭টি জীবনবিমা রয়েছে। বছরে প্রিমিয়াম ১.১২ লক্ষ টাকার বেশি। অথচ বিমামূল্য ১৯ লক্ষ টাকা। ফলে না-হয়েছে বিমার লক্ষ্য পূরণ, না-হচ্ছে সঞ্চয়। সঙ্গে রয়েছে চাইল্ড প্ল্যান। তমাল নিজেও পলিসিগুলির সমস্যা জানেন। রিটার্ন নিয়ে চিন্তিত। বিশেষজ্ঞের সঙ্গে কথা বলে কয়েকটি বিমা বন্ধ করুন। তার বদলে বরং স্বামী-স্ত্রী দু’জনেই ২০ লক্ষ টাকার একটি করে টার্ম পলিসি করুন। অর্থাৎ, মোট ৪০ লক্ষ। তমালের বিমার জন্য মাসে ৭২৪ টাকা মতো লাগবে। সর্বাণীর ৬৩৮ টাকা। মূল্যবৃদ্ধির সঙ্গে তাল মিলিয়ে বিমার অঙ্ক বাড়ান।

গন্তব্য পিপিএফ

পিপিএফে বিনিয়োগ ও রিটার্নে করছাড় মেলে। এই প্রকল্পে লগ্নি বাড়ান। অন্তত ৪,০০০ টাকা করুন।

করুন স্বাস্থ্যবিমা

আপাতত ৫ লক্ষ টাকার ফ্যামিলি ফ্লোটার বিমা কিনুন। প্রিমিয়াম পড়বে মাসে প্রায় ১,০৪৩ টাকা। পরে বিমার অঙ্ক বাড়ান। মায়ের জন্য আলাদা করে স্বাস্থ্যবিমা কিনতে হবে। সে ক্ষেত্রে প্রথমেই যত বেশি সম্ভব টাকার বিমা করুন। কারণ এর চেয়ে বেশি বয়সে প্রিমিয়ামও প্রচুর বেড়ে যাবে।

হাতিয়ার ফান্ড

চার বছর আগে তমালের দু’টি এসআইপি ছিল। লোকসান হওয়ায় বন্ধ করে দিয়েছেন। কিন্তু এখন আবার ফান্ডে এসআইপি করতে আগ্রহী।

দেখুন, ফান্ডে লগ্নির শর্তই হল ধৈর্য। আর লম্বা সময়ের জন্য সেখানে টাকা লাগিয়ে রাখার কলজে। ভাবুন, তখন বেরিয়ে না-এলে এখন ওই ফান্ড থেকেই কেমন রিটার্ন পেতেন তমাল। তাই এ বিষয়ে আমার পরামর্শ—

লগ্নি করুন লক্ষ্য বেছে: লগ্নির আগে লক্ষ্য স্থির করুন। তারপরে ফান্ড বাছুন। দু’বছরের মধ্যে গাড়ি কিনতে চাইলে যেমন ইকুইটি ফান্ডে পুরো টাকা রাখা চলবে না, তেমনই পেনশনের তহবিল গড়তে শুধু ডেট ফান্ড কার্যকরী না-ও হতে পারে।

জানুন ঝুঁকি নেওয়ার ক্ষমতা: বেশি রিটার্নের জন্য কতটা সাহসী হতে পারবেন, প্রথমেই তা ভাবুন। সেই বুঝে ফান্ড বাছাই করা ভাল।


তুলনা করুন: বিভিন্ন সংস্থার একই ধরনের ফান্ডের তুলনা করুন। গত কয়েক বছরে তাদের রিটার্ন দেখুন। খেয়াল করুন পরিচালন পদ্ধতি, তহবিলের অঙ্ক। তবে সিদ্ধান্ত নিন।

সংস্থা চিনুন: কোন ধরনের ফান্ডে টাকা রাখবেন, তা ঠিক করার পরে বাছুন সংস্থা। অনেক সংস্থাই ইকুইটি, ডে়ট, ডাউভার্সিফায়েড ইত্যাদি ফান্ড চালায়। টাকা রাখার আগে তাদের সম্পর্কে ভাল ভাবে খোঁজখবর করুন।

লগ্নি ছড়ান: কোনও একটি ফান্ডে সব টাকা না-রেখে অন্তত দু’তিনটিতে তা ছড়িয়ে দিন। এতে ঝুঁকি কমবে।

টার্ম পলিসি, স্বাস্থ্যবিমা, পিপিএফের পরেও তমালদের হাতে যে-টাকা থাকবে, তার মধ্যে ৭,০০০ টাকা ইকুইটি ফান্ডে এবং বাকি ৭,০০০ টাকা ডেট ফান্ডে ভাগ করে রাখতে হবে।

বাড়তি টাকা শেয়ারে

লোকসানের ভয়ে মিউচুয়াল ফান্ড থেকে টাকা তুলে নিলেও শেয়ারে এখনও তমালের ৭ হাজার টাকা খাটছে। আপাতত তা ধরা থাকুক। পরে অবস্থা বুঝে স্থির করতে পারবেন, তা রাখবেন কি না।

সেভিংস অ্যাকাউন্ট

সেভিংস অ্যাকাউন্টে তমালের দেড় লক্ষ টাকা রাখা রয়েছে। আমার মতে, এই টাকা এখন সেখানেই থাকুক। আপদ-বিপদে কাজে আসবে।

এ ছাড়াও...

প্রতি মাসে সব লগ্নির পরে হাতে যে টাকা থাকবে, তা রেকারিংয়ে রাখুন। এক বা দু’বছর পরে তা কোনও স্থায়ী আমানত প্রকল্পে রাখতে পারবেন।

ফ্ল্যাট কেনার যে-পরিকল্পনা করছেন, আপাতত তা মুলতুবি থাক। বরং ডাউনপেমেন্টের জন্য এসআইপি-র মাধ্যমে তহবিল গড়ুন।

রেকারিংয়ের টাকা প্রতি বছর বেড়াতে যাওয়ার জন্য রাখতে পারেন। প্রথম কয়েক বছর অসুবিধা হলেও, বেতন বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে দেখবেন ভাল অঙ্কের টাকাই জমবে।

(অনুরোধ মেনে নাম পরিবর্তিত)

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন