সাবধানের মার নেই

আপনার-আমার সকলের কাছেই কার্ড ব্যবহার এখন জলভাত। এটিএমে টাকা তোলা থেকে রেলের টিকিট বুকিং— ডেবিট ও ক্রেডিট কার্ডের ব্যবহার এখন সর্বত্র। কিন্তু তেমনই সেই লেনদেনের প্রতি পায়ে কিন্তু ওৎ পেতে আছে বিপদ। বাঁচতে আগাম সাবধান হওয়ার টোটকা দিল বিষয় আশয়আপনার-আমার সকলের কাছেই কার্ড ব্যবহার এখন জলভাত। এটিএমে টাকা তোলা থেকে রেলের টিকিট বুকিং— ডেবিট ও ক্রেডিট কার্ডের ব্যবহার এখন সর্বত্র। কিন্তু তেমনই সেই লেনদেনের প্রতি পায়ে কিন্তু ওৎ পেতে আছে বিপদ।

Advertisement
শেষ আপডেট: ২১ ফেব্রুয়ারি ২০১৯ ০৫:৫৯
Share:

এ এক ঝক্কি। টাকা তোলার ডেবিট কার্ড থেকে টাকা খরচের ক্রেডিট কার্ড— তথ্য হাতিয়ে অ্যাকাউন্ট ফাঁকা করে দেওয়ার ভয় তাড়া করছে সর্বত্র। পকেটে নগদ নিয়ে না ঘোরায় যেমন নিরাপত্তা বেড়েছে, তেমনই কার্ডের তথ্য হাতিয়ে টাকা নিয়ে চম্পট দিতে পারে নেট দুনিয়ার সিঁধেল চোরেরা। তাই গোড়া থেকেই এ বিষয়ে কিছু সাবধানতার টোটকা মাথায় রাখা ভাল।

Advertisement

যা অবশ্যই করবেন

Advertisement

• কার্ড হাতে পেলে সবার আগে তার পিছনে সই করুন।

• ‘অ্যালার্ট’ পেতে অ্যাকাউন্টের সঙ্গে মোবাইল নম্বর ও ই-মেল যুক্ত করুন।

• খুব জরুরি প্রয়োজন ছাড়া চেনা এটিএম থেকেই টাকা তুলুন।

• কোনও এটিএমে সুরক্ষার অভাব রয়েছে বলে মনে হলে, তা এড়িয়ে চলুন। ভিড় বেশি থাকলেও অন্য এটিএমের খোঁজ করা ভাল।

• এটিএমে ঢোকার আগে দেখুন, কেউ পিছু নিচ্ছে কি না। টাকা তোলার সময়ে কেউ ‘পিন-প্যাড’-এর দিকে তাকিয়ে নেই তো?

• খেয়াল রাখুন, মেশিনে যেখানে পিন নম্বর দিচ্ছেন (পিন-প্যাড), তার উপরের দিকে কোনও ছোট ক্যামেরা লাগানো আছে কি না।

• মেশিনে কার্ড ঢোকানোর জায়গায় ডুপ্লিকেট কার্ড রিডার লাগানো নেই তো? বাড়তি কিছু লাগানো রয়েছে সন্দেহ হলে, তা নেড়েচেড়ে দেখুন।

• ঘরে একটিই এটিএম থাকলে, টাকা তোলার সময়ে সেখানে দ্বিতীয় কেউ ঢুকতে চাইলে বাধা দিন। একাধিক এটিএম থাকলে এবং আপনি থাকাকালীন অন্য কেউ তা ব্যবহার করলে, একটু বাড়তি সতর্ক থাকুন। পিন নম্বর টাইপ করার সময়ে অন্য হাত দিয়ে তা ঢেকে রাখুন।

• মাঝেমধ্যেই পিন নম্বর বদলান। অন্য কেউ জেনে থাকতে পারে বলে মনে হলে, তা সঙ্গে সঙ্গে করা জরুরি।

• নিয়মিত ব্যাঙ্ক স্টেটমেন্টে নজর রাখুন। আপনি করেননি, এমন কোনও লেনদেনের উল্লেখ থাকলে অবিলম্বে তা সংশ্লিষ্ট ব্যাঙ্ককে জানান।

• কোনও ভাবে এটিএম কার্ড চুরি হলে বা হারিয়ে গেলে, সঙ্গে সঙ্গে সংশ্লিষ্ট ব্যাঙ্কের ‘হেল্পলাইন’ বা কাস্টমার কেয়ারে ফোন করুন। নিশ্চিত করুন যাতে ওই কার্ড আর কেউ ব্যবহার করতে না-পারে।

• একই কথা ক্রেডিট কার্ডে প্রযোজ্য।

• যেখানে সেখানে ক্রেডিট কার্ড ব্যবহার করবেন না। বিশেষত অচেনা, অনির্ভরযোগ্য ওয়েবসাইটে।

• রেস্তোরাঁয় খাওয়ার পরে কিংবা বিপণিতে কেনাকাটার শেষে দাম মেটাতে ওই কার্ড কারও হাতে দিলে, সতর্ক নজর রাখুন। চোখ বুজে সই না-করে খুঁটিয়ে দেখুন বিল-ও।

• অপরিচিত ব্যক্তিকে কার্ডের নম্বর কিংবা তথ্য নয়। কাউকে তা জানাতে এড়িয়ে চলুন মেল, এসএমএস-ও।

• ডেবিট কার্ডে নিজে থেকেই লেনদেন-সীমা বাঁধুন।

• পিন লেখার সময়ে মেশিনের পর্দায় তা দেখা যাওয়ার কথা নয়। তার বদলে সেখানে ‘XXXX’ ফুটে ওঠার কথা। তেমনটা না-হলে, পুরো নম্বর লিখবেন না। ওই সমস্যার কথা ব্যাঙ্ককে জানান।

• মেশিনে কাজ শেষে কার্ড বেরোতেই চলে যাবেন না। ফের সেখানে পর্দায় (স্ক্রিন) ‘ওয়েলকাম’ ভেসে উঠতে দিন। দেখুন, কার্ড ঢোকানোর জায়গায় আলো ফের ব্লিঙ্ক করছে কি না। বেরনোর আগে ‘ক্যান্সেল’ বোতাম টিপুন।

যা একেবারেই করবেন না

• ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টের নম্বর, পিন, সিভিভি (কার্ডের পিছনে থাকা তিন সংখ্যার নম্বর, যা নেট-লেনদেনে কাজে লাগে), ওয়ান টাইম পাসওয়ার্ড কাউকে দেবেন না।

• এমনকি ব্যাঙ্কের শাখায় বসে কোনও কর্মী চাইলেও নয়।

• অনেক সময়ে ব্যাঙ্ক বা অন্য কোনও বিশ্বস্ত সংস্থার নাম করে ফোন, ই-মেল ইত্যাদির মাধ্যমে প্রতারক কার্ডের পিন নম্বর জানার চেষ্টা করে। ভুলেও সেই ফাঁদে পা দেবেন না। মনে রাখবেন, আপনার তথ্য এমনিতেই ব্যাঙ্কের কাছে আছে। তারা তা নতুন করে চাইবে কেন?

• পিন নম্বর মুখস্থ রাখুন। লিখে রাখলে, অবশ্যই সাংকেতিক ভাবে।

• কার্ড ব্যবহারে অপরিচিতের সাহায্য নেবেন না।

• কার্ডে জিনিসপত্র কেনাকাটার সময়ে সাবধান থাকুন। দোকানে কেনাকাটা বা রেস্তোরাঁয় খাওয়াদাওয়ার পরে কার্ড সোয়াইপ করানোর জন্য তা অন্য কারও হাতে দেবেন না।

• এটিএম ব্যবহারের পরে ‘ট্রানজাকশন স্লিপ’ ঘরের মধ্যে ফেলবেন না। পরে একটু দূরে কোথাও তা কুচিয়ে ছিঁড়ে ফেলুন।

কার্ড হারালে?

• প্রথমেই ব্যাঙ্ককে জানান। যাতে অন্য কেউ তা ব্যবহার করতে না-পারে। টোল-ফ্রি নম্বরে ফোন করে কার্ড ‘হট লিস্ট’ করার বন্দোবস্ত করুন। নইলে বিপদে পড়বেন।

• কোনও জঙ্গি বা নিষিদ্ধ সংগঠন তা ব্যবহার করলে যাতে বিপদে না-পড়েন, সে জন্য এফআইআর করে রাখা ভাল।

• কার্ড ‘ইনশিওর’ করতে পারেন। সে ক্ষেত্রে তা হারানোর পরে অন্য কেউ ব্যবহার করলেও, তার জন্য আর্থিক খেসারত আপনাকে দিতে হবে না। এড়ানো যাবে ঝামেলা।

সমস্যা হলে

• জেনে রাখুন কার্ড বা নেট ব্যাঙ্কিংয়ে সমস্যা হলে, যেতে হবে কার কাছে।

• হাতে রাখুন ২৪X৭ কল সেন্টারের নম্বর। গ্রাহক পরিষেবার (কাস্টমার কেয়ার) টোল-ফ্রি নম্বর।

• যে যে ব্যাঙ্কের কার্ড নিচ্ছেন, তাদের পুরো ঠিকানা।

• বিপদে পড়লে, প্রথমে ব্যাঙ্ককে চিঠি লিখুন বা ই-মেল করুন। সমস্যার কথা বিস্তারিত জানান। সম্ভব হলে জুড়ে দিন উপযুক্ত প্রমাণও।

• এক-দু’মাসের মধ্যে ব্যাঙ্কের তরফে উত্তর না-পেলে, রিজার্ভ ব্যাঙ্ক নিযুক্ত ব্যাঙ্কিং লোকপালের (ওম্বাডসম্যান) সঙ্গে যোগাযোগ করুন।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন