সুতিতে পথ অবরোধে মহিলারা

কংগ্রেস নেতার বাড়িতে চড়াও হয়ে হামলা ও ভাঙচুর চালানোর অভিযোগ উঠল পুলিশের বিরুদ্ধে। বৃহস্পতিবার রাতে সুতি থানার অরঙ্গাবাদ এলাকার জগতাই গ্রামের এই ঘটনায় পুলিশকে ঘিরে বিক্ষোভ শুরু করেন গ্রামের মহিলারা। বিশাল পুলিশ বাহিনী গিয়ে পরিস্থিতি আয়ত্তে আনলেও শুক্রবার সকাল থেকে অরঙ্গাবাদ রাজ্য সড়ক অবরোধ করেন তাঁরা। হামলার পিছনে সুতির তৃণমূল বিধায়কের ষড়যন্ত্র রয়েছে, এই অভিযোগ তুলে বহরমপুরে এর বিরুদ্ধে সাংবাদিক বৈঠক ডেকে সোচ্চার হন জেলা কংগ্রেস নেতারাও।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

অরঙ্গাবাদ শেষ আপডেট: ২২ ফেব্রুয়ারি ২০১৫ ২২:০৩
Share:

পথ অবরোধে মহিলারা। নিজস্ব চিত্র।

কংগ্রেস নেতার বাড়িতে চড়াও হয়ে হামলা ও ভাঙচুর চালানোর অভিযোগ উঠল পুলিশের বিরুদ্ধে। বৃহস্পতিবার রাতে সুতি থানার অরঙ্গাবাদ এলাকার জগতাই গ্রামের এই ঘটনায় পুলিশকে ঘিরে বিক্ষোভ শুরু করেন গ্রামের মহিলারা। বিশাল পুলিশ বাহিনী গিয়ে পরিস্থিতি আয়ত্তে আনলেও শুক্রবার সকাল থেকে অরঙ্গাবাদ রাজ্য সড়ক অবরোধ করেন তাঁরা। হামলার পিছনে সুতির তৃণমূল বিধায়কের ষড়যন্ত্র রয়েছে, এই অভিযোগ তুলে বহরমপুরে এর বিরুদ্ধে সাংবাদিক বৈঠক ডেকে সোচ্চার হন জেলা কংগ্রেস নেতারাও।

Advertisement

জেলা কংগ্রেসের সাধারণ সম্পাদক অশোক দাস বলেন, “পুলিশের এই আচরণের প্রতিবাদ জানাতে শনিবার পুলিশ সুপারের কাছে যাবেন জেলার সমস্ত কংগ্রেস বিধায়কেরা। তাতে ফল না হলে জেলা জুড়ে আন্দোলনে নামবে কংগ্রেস।”

সোমবার সুতির ব্যাঙডুবিতে বোমা বিস্ফোরণের ঘটনার তদন্তে নেমে পুলিশ জানতে পারে, ওই এলাকারই একটি বিড়ির গুদামে আশ্রয় নিয়েছিল কংগ্রেস আশ্রিত দুষ্কৃতীরা। আরও জানা যায়, গুদামটি সুতি ২ ব্লক কংগ্রেস সভাপতি আলফাজুদ্দিন বিশ্বাসের। পুলিশের দাবি, তল্লাশির সময়ে সেখান থেকে ১০ কেজি বোমা তৈরির মশলা উদ্ধার হয়। এর পরেই গুদামটি সিল করে দিয়ে ওই কংগ্রেস নেতার বিরুদ্ধে মামলা রুজু করে পুলিশ। সে সময়ে অভিযোগ অস্বীকার করলেও ঘটনার পর থেকেই পলাতক আলফাজুদ্দিন।

Advertisement

পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, সুতি থানার ইমামবাজারে দীর্ঘ দিন ধরেই এলাকার দখল নিয়ে কংগ্রেস ও তৃণমূলের মধ্যে বিরোধ চলছে। গত দু’বছরে একাধিক বার দু’দলের সংঘর্ষে ৩ জনের মৃত্যুও ঘটেছে। একাধিক মামলায় দু’পক্ষেরই অভিযুক্ত শতাধিক কর্মী-সমর্থক হয় জেলে রয়েছেন অথবা এলাকা ছাড়া। এই এলাকা ছাড়া কর্মী-সমর্থকেরা গ্রামে ঢুকতে চেষ্টা করলেই বাঁধছে সংঘর্ষ। এই অশান্তির জেরে গ্রামের সাধারণ মানুষ এতটাই আতঙ্কিত যে, বোমা-গুলির ভয়ে বাড়ি থেকে বেরোতে পারেন না তাঁরা। ক্রমাগত চলতে থাকা এই সংঘর্ষে তিতিবিরক্ত পুলিশও।

এ দিকে বৃহস্পতিবার রাত সাড়ে ১০টা নাগাদ অভিযুক্ত কংগ্রেস নেতাকে গ্রেফতার করতে দু’টি গাড়িতে করে জনা দশেক পুলিশ কর্মী জগতাইতে যান। কিন্তু অভিযুক্তের পরিবারের লোকজনের দাবি, তাঁর বাড়িতে না ঢুকে পাশেই তাঁর দাদা বছর পঁয়ষট্টির বৃদ্ধ এব্রাহিম বিশ্বাসের বাড়িতে হানা দেয় পুলিশ। বর্তমানে জগতাই ১ গ্রাম পঞ্চায়েতের কংগ্রেস সভাপতি এব্রাহিম ৩ দফায় ১৫ বছর ওই পঞ্চায়েতেরই প্রধান ছিলেন। তাঁর ছেলে মহম্মদ দাউদ হোসেনের অভিযোগ, “রাতে পুলিশ বলে পরিচয় দিলেও আমরা দরজা খুলিনি। তখন কাঠের দরজা ভেঙে ফেলেন পুলিশ কর্মীরা। মোটর বাইক-সহ সামনে যা পেয়েছেন, তা-ই ভাঙচুর করেছেন তাঁরা। আমার বৃদ্ধা মা ও স্ত্রী আটকানোর চেষ্টা করলে পুলিশ কর্মীরা তাঁদের দু’জনকেই ধাক্কা মেরে ফেলে ভিতরের ঘরে ঢোকার চেষ্টা করেন।” দাউদ হোসেনের মা সূর্য্যবান বিবি বলেন, “পুলিশকে বার বার বলা হয় এটা ব্লক কংগ্রেস সভাপতির বাড়ি নয়, তাঁর দাদার বাড়ি। কিন্তু ওরা কথা শোনেনি। আমাদের চিৎকার শুনে গ্রামবাসীরা ছুটে আসেন। তখনই গ্রামের মহিলাদের বিক্ষোভের মুখে পড়েন পুলিশ কর্মীরা।”

পুলিশ সূত্রের খবর, গণ্ডগোল দেখে বাকি পুলিশ কর্মীরা এলাকা ছাড়লেও তাঁদের এক জনকে গ্রামেই আটকে রাখেন মহিলারা। তাঁকে ছেড়ে দেওয়ার পর বিশাল পুলিশ বাহিনী গ্রামে ঢুকে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। যদিও সে দিন গ্রামে আর তল্লাশি চালায়নি তারা। ওই রাতের প্রায় ঘন্টা দু’য়ের এই ঘটনায় কাউকে গ্রেফতারও করা হয়নি।

ঘটনার প্রতিবাদে পর দিন সকালে গ্রামের কয়েকশো মহিলা রাজ্য সড়ক অবরোধ করেন। ঘন্টা খানেক পরে পুলিশের অনুরোধে অবশ্য অবরোধ তুলে নেওয়া হয়। এ দিকে সাংবাদিক বৈঠকে এ নিয়ে অশোকবাবু অভিযোগ করে বলেন, “পুলিশের সাহায্য নিয়ে কংগ্রেস থেকে তৃণমূলে যোগ দেওয়া সুতির বিধায়ক ইমানি বিশ্বাস আলফাজুদ্দিনকে মিথ্যে মামলায় ফাঁসিয়েছেন। পুলিশ তাঁরই কথা মতো আলফাজুদ্দিনের বৃদ্ধ দাদার বাড়িতে ঢুকে হামলা চালিয়েছে।” ইমানি বিশ্বাস অবশ্য বলেন, “ব্লক কংগ্রেস নেতা যদি দুষ্কৃতীদের মদত দেন, তাঁর আশ্রয়ে যদি বোমা বানানো চলে, তবে পুলিশ যা ব্যবস্থা নেওয়ার নেবে। এর সঙ্গে আমার কোনও সম্পর্ক নেই। আমি কলকাতায় আছি। ফলে গত রাতে পুলিশ কী করেছে আমার জানা নেই।” পুলিশ সুপার সি সুধাকর বলেন, “অভিযুক্ত নেতাকে ধরতে রাতে পুলিশ তাঁর বাড়িতে গিয়েছিল। পুলিশ ভাঙচুর বা মারধর করেনি। কংগ্রেস বিধায়কেরা আমার কাছে শনিবার অভিযোগ জানাতে এলে তাঁদের কথা শুনব।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন