Rapist

ধর্ষক যখন মহিলাদের রোষে! কোথাও গাছে বেঁধে বেদম প্রহার, কোথাও এজলাসে ঢুকে কুপিয়ে খুন

এজলাস থেকে ফিরে কস্তুরবা নগরের বস্তিতে উদ্‌যাপনে মেতেছিলেন মহিলারা। সেই রাতে গান, নাচ করেছিলেন তাঁরা মন খুলে। পরে কালীচরণকে খুনের অভিযোগে পাঁচ জনকে গ্রেফতার করেছিল পুলিশ।

Advertisement
সংবাদ সংস্থা
নাগপুর শেষ আপডেট: ০৪ নভেম্বর ২০২২ ১০:৩৩
Share:
০১ ২৫

ধর্ষককে গণধোলাই। কখনও মার খেয়ে ধর্ষক নিহত। কখনও বা গুরুতর আহত। সম্প্রতি এমন একটি ঘটনার সাক্ষী থাকল রাজস্থানের আলওয়ার।

০২ ২৫

সেখান থেকে এক ১৯ বছরের এক তরুণীকে ধর্ষণের ঘটনা প্রকাশ্যে আসে। আলওয়ার জেলার থানাগজী এলাকার ঘটনা। ঘটনার কথা প্রকাশ্যে আসতেই প্রতিবেশীরা অভিযুক্ত যুবক আর তাঁর পরিজনদের উপর হামলা চালান। স্থানীয়দের হামলায় অভিযুক্ত যুবক, অভিযুক্তের মা, ভাই-সহ মোট পাঁচজন আহত হন।

Advertisement
০৩ ২৫

পরের ঘটনা ত্রিপুরার। ধর্ষণে অভিযুক্ত ৪৬ বছরের এক ব্যক্তিকে একদল মহিলা গাছে বেঁধে চরম শাস্তি দেন। পুলিশ সূত্রে খবর, ধর্ষণে অভিযুক্ত ব্যক্তিকে গাছে বেঁধে চলে বেদম প্রহার। মহিলাদের মারে ওই ব্যক্তির মৃত্যু হয়। ত্রিপুরার ঢালাই জেলার গন্ডচেরা থানা এলাকায় ঘটনাটি ঘটে। পুলিশ সূত্রে খবর, ওই ব্যক্তি ৮ বছর জেল খেটেছেন। ছাড়া পাওয়ার পর তিনি মায়ের সঙ্গে একটি ধর্মীয় অনুষ্ঠানে এসেছিলেন। পাঁচ বছর বয়সি এক শিশুকন্যাকে পার্শ্ববর্তী একটি জঙ্গলে নিয়ে গিয়ে তিনি নির্যাতন করেন বলে অভিযোগ। এর পর সেই নাবালিকাকে সেখানে রেখে চলে গিয়েছিলেন ওই ব্যক্তি।

০৪ ২৫

মেয়েটির কান্নার আওয়াজ শুনে স্থানীয়রা ওই শিশুকন্যাকে ঘটনাস্থল থেকে উদ্ধার করে এবং তাঁকে স্থানীয় একটি হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। তাদের দাবি ছিল, মেয়েটিকে শেষ বার ওই জেলখাটা ওই ব্যক্তির সঙ্গে দেখা গিয়েছিল। তাই যাবতীয় সন্দেহ ওই ব্যক্তির ওপর গিয়ে পড়ে। স্থানীয় মহিলারা তাঁকে স্থানীয় গ্রামে ধরে ফেলেন। তাঁকে গাছে বেঁধে চলে উত্তম-মধ্যম প্রহার। ঘটনার ভিডিও সমাজমাধ্যমে ভাইরাল হয়েছিল। এমন ভাবে ওই ব্যক্তিকে মারা হচ্ছিল যে, তিনি ঘটনাস্থলে অচৈতন্য হয়ে পড়েন। তাঁকে উদ্ধার করে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হলে চিকিৎসকরা তাঁকে মৃত বলে ঘোষণা করেন।

০৫ ২৫

পরের ঘটনা নাগপুরের। সে দিন যাঁরা ছিলেন এজলাসে, অনেকেরই মনে হয়েছিল, কোনও সিনেমার শুটিং চলছে। যাঁরা শুনেছিল সেই ঘটনা, তাঁদেরও একই কথা মনে হয়েছিল। আচমকাই এজলাস কক্ষে স্রোতের মতো ঢুকে আসছেন ২০০ থেকে ৪০০ মহিলা। তার পর তাঁরা সব্জি কাটার ছুরি দিয়ে এলোপাথাড়ি আক্রমণ করছেন অভিযুক্তকে। কয়েক মিনিটে সব শেষে। কাঠগড়া, এজলাসের দেওয়ালে তখন শুধুই রক্তের ছোপ। দেহে প্রাণ নেই ভারত কালীচরণের।

০৬ ২৫

ভারত কালীচরণ। ওরফে আক্কু যাদব। ২০০৪ সালের ১৩ অগস্ট এজলাসের মধ্যেই মামলা চলাকালীন গণপিটুনি দিয়ে তাঁকে মেরে ফেলেছিলেন অন্তত ২০০ মহিলা। দাঁড়িয়ে দেখা ছাড়া কিছু করার ছিল না পুলিশের। কালীচরণকে বাঁচাতে গুরুতর জখম হয়েছিলেন বেশ কয়েক জন পুলিশকর্মীও।

০৭ ২৫

খুন, ডাকাতি, অপহরণ, ধর্ষণ, গণধর্ষণ, রাহাজানি— একের পর এক অভিযোগ ছিল কালীচরণের বিরুদ্ধে। ২০০৪ সালের ১৩ অগস্ট নাগপুর জেলা আদালতের সাত নম্বর কক্ষে ছিল সে সব অপরাধের শুনানি।

০৮ ২৫

ওই দিনই ছেড়ে দেওয়া হতে পারে কালীচরণকে, মুখে মুখে রটে যায় সেই খবর। পুলিশ চেয়েছিল, রায় বার হওয়ার পরেও কিছু দিন তাঁকে হেফাজতে রাখবে। তার পর পরিস্থিতি শান্ত হলে তাঁকে মুক্তি দেবে। তা আর হয়নি।

০৯ ২৫

কালীচরণের মুক্তির সম্ভাবনার খবর জানতেই আশপাশের বস্তি থেকে অন্তত ২০০ মহিলা হাজির হন এজলাসে। বসে পড়েন দর্শকাসনে। হাতে লুকিয়ে রাখেন সব্জি কাটার ছুরি আর লঙ্কা গুঁড়ো।

১০ ২৫

দুপুর ২টো ৩০ মিনিট। এজলাসে ঢোকেন কালীচরণ। মুখে এতটুকু অপরাধবোধ ছিল না তাঁর। হাসতে হাসতে কাঠগড়ায় ওঠেন।

১১ ২৫

দর্শকাশনে তখন বসে ছিলেন এক তরুণী, যাঁকে ধর্ষণ করেছিলেন কালীচরণ। নির্যাতিতাকে দেখে হাসতে শুরু করেন। সকলের সামনেই ‘যৌনকর্মী’ বলেন। জোর গলায় জানান, জেল থেকে ছাড়া পেলে আবারও ধর্ষণ করবেন। শুনে হাসতে শুরু করে পুলিশও।

১২ ২৫

তখনই ছুটে আসেন এক মহিলা। কালীচরণের মাথায় চটি মারতে থাকেন। বলেন, ‘‘হয় তুই থাকবি পৃথিবীতে, নয়তো আমি।’’

১৩ ২৫

আচমকাই যেন বাঁধ ভেঙে যায়। কোথা থেকে জলস্রোতের মতো ছুটে আসেন ২০০ মহিলা। অন্তত ৭০ বার কোপানো হয়েছিল কালীচরণকে। মুখে ছিটিয়ে দেওয়া হয়েছিল লঙ্কা গুঁড়ো। পাথর দিয়ে থেঁতলানো হয়েছিল মুখ।

১৪ ২৫

এক মহিলা কেটে নিয়েছিলেন কালীচরণের যৌনাঙ্গ। ভয়ে পালিয়ে যান পুলিশকর্মীরা।

১৫ ২৫

ভয়ে চিৎকার করতে থাকেন কালীচরণ। বলেন, ‘‘আমাকে ছেড়ে দিন। আর করব না।’’ কেউ কানে তোলেননি। ছুরি দিয়ে লাগাতার কোপাতে থাকেন কালীচরণকে।

১৬ ২৫

১৫ মিনিটে সব শেষ. দশকের পর দশক ধরে যে অপরাধ করেছিলেন, তাতে ইতি পড়ে যায় মাত্র ১৫ মিনিটে। এজলাসে সাদা পাথরের মেঝেতে তখন শুধুই রক্তের ছোপ। কালীচরণের তখন বয়স ছিল ৩২ বছর।

১৭ ২৫

পরে ওই অভিযুক্ত মহিলারা জানিয়েছিলেন, পরিকল্পনা করে খুন করেননি তাঁরা। কালীচরণের কথায় রাগ সামলাতে পারেননি। তবে প্রত্যেক মহিলাই স্বীকার করেছিলেন যে, অন্তত এক বার কোপ বসিয়েছিলেন কালীচরণের শরীরে।

১৮ ২৫

এজলাস থেকে ফিরে কস্তুরবা নগরের বস্তিতে উদ্‌যাপনে মেতেছিলেন মহিলারা। সেই রাতে গান, নাচ করেছিলেন তাঁরা মন খুলে। পরে কালীচরণকে খুনের অভিযোগে পাঁচ জনকে গ্রেফতার করেছিল পুলিশ। কিন্তু কস্তুরবা নগরের প্রতিটি মহিলা রুখে দাঁড়ান। জানান, সকলেই সে দিন এজলাসে খুন করেছিলেন কালীকে। অগত্যা পাঁচ মহিলাকে ছেড়ে দিয়েছিল নাগপুর পুলিশ।

১৯ ২৫

১৯৭১ সালে জন্মেছিলেন কালীচরণ। অন্তত তিন জনকে খুনের অভিযোগ ছিল তাঁর বিরুদ্ধে। বাড়ি বাড়ি ঢুকে ডাকাতি ছিল নিত্য দিনের কাজ। অন্তত ৪০ জন মহিলাকে ধর্ষণ করেছিলেন বলে অভিযোগ। তাঁদের মধ্যে ছিল ১০ বছরের মেয়েও।

২০ ২৫

ডাকাতি, ছিনতাইয়ে কেউ বাধা দিতে এলে কালীচরণ এবং তাঁর সঙ্গীরা গণধর্ষণ করতেন বলে অভিযোগ। পুলিশকে নিয়মিত ঘুষ দিয়ে অপরাধ চাপা দিতেন বলেও অভিযোগ ছিল। তাঁর নিশানা ছিল মূলত কস্তুরবা নগরের দলিত পরিবারগুলি। যখন তখন বাড়িতে চড়াও হয়ে টাকা চাইতেন বলেও অভিযোগ।

২১ ২৫

তবে কস্তুরবা নগর সব থেকে খেপেছিল ধর্ষণের কারণে। অভিযোগ, ১২ বছরের কিশোরীকে তুলে নিয়ে গিয়ে পরিত্যক্ত জায়গায় গণধর্ষণ করেছিলেন কালীচরণ ও তাঁর সঙ্গীরা। বলা হয়ে থাকে, কস্তুরবা নগরের প্রতি ঘরে ঘরে এক জন করে নির্যাতিতা ছিলেন, যাঁদের ধর্ষণ করেছিল কালীচরণ।

২২ ২৫

বহু নির্যাতিতা থানায় গিয়ে অভিযোগ জানিয়েছিলেন। তাঁদের অভিযোগ, পুলিশ কিছুই করেনি। উল্টে নির্যাতিতাদের কুকথা বলেছে। ‘যৌনকর্মী’ বলেছে। কালীচরণের বিরুদ্ধে একটি ধর্ষণের মামলাও দায়ের করেনি পুলিশ।

২৩ ২৫

আরও অভিযোগ, কলমা নামে এক মহিলা সন্তানের জন্ম দেওয়ার ১০ দিনের মাথায় তাঁকে ধর্ষণ করেছিলেন কালীচরণ। সহ্য করতে না পেরে গায়ে কেরোসিন ঢেলে আত্মহত্যা করেছিলেন কলমা।

২৪ ২৫

সাত মাসের এক সন্তানসম্ভবাকে রাস্তায় টেনে এনে বেআব্রু করেছিলেন কালীচরণ বলে অভিযোগ। এর পর প্রকাশ্যে ওই মহিলাকে গণধর্ষণ করেন কালীচরণ ও তাঁর সঙ্গীরা।

২৫ ২৫

জীবৎকালে ১৪ বার জেলে গিয়েছিলেন কালীচরণ। তার পর ছাড়াও পেয়ে গিয়েছিলেন। একই ভাবে তাঁকে গণপিটুনিতে অভিযুক্তরাও প্রমাণের অভাবে ছাড়া পেয়ে গিয়েছিলেন। অনেকে মনে করেন, এ সব আসলে ‘পোয়েটিক জাস্টিস’। অনেকে সবের জন্য পুলিশি নিষ্ক্রিয়তাকেই দায়ী করেন।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
Follow us on:
Advertisement
আরও গ্যালারি
Advertisement