যেন সত্যি হল প্রবাদবাক্য। প্রচলিত একটি কথা রয়েছে ‘কেঁচো খুঁড়তে কেউটে’। কিন্তু বাস্তবে কি তা হয়! আদৌ কেঁচো খুঁড়তে বসে কেউটে বার হয় নাকি?
কেঁটো খুঁড়তে গিয়ে কেউটে না হলেও কুবেরের ধন পেলেন সুইডেনের এক নাগরিক। যিনি আদতেই কেঁচো খুঁড়তে গিয়ে পেয়েছিলেন মধ্যযুগীয় রুপো। তা-ও আবার একটি-দু’টি নয়, ২০ হাজারটি রুপোর মুদ্রা।
সুইডেনের এক নাগরিকের হাতে এসেছিল এতগুলি মধ্যযুগীয় সম্পদ। সুইডেনের রাজধানী স্টকহোমে থাকতেন তিনি।
একদিন সকালে মাছ ধরার জন্য কেঁচো খুঁড়তে বেরিয়েছিলেন। তখনই তাঁর হাতে আসে একটি বড় তামার কড়াই।
প্রথম দিকে কিছুটা অবাক হলেও পরে ওই ব্যক্তি বুঝতে পারেন এটি যে-সে তামার কড়াই নয়। এর মধ্যে রয়েছে হাজার হাজার বছরের পুরনো সম্পদ। এতগুলি সম্পদ হাতে পেয়ে প্রথমে কী করবেন বুঝেই উঠতে পারেননি।
তবে বেশি দেরি না করেই যোগাযোগ করেন সুইডিশ জাতীয় ঐতিহ্য বোর্ডের (সুইডিশ ন্যাশনাল হেরিটেজ বোর্ড) সঙ্গে। সংস্থার আধিকারিকেরা খবর পাওয়ামাত্রই ঘটনাস্থলে পৌঁছোন। যাওয়ার পর তাঁদের চক্ষু চড়কগাছ হয়ে গিয়েছিল।
জং ধরা পুরনো এক বড় তামার কড়াই। আর তাতে রয়েছে নানা গয়না। এ ছাড়াও বহু প্রাচীন মুদ্রাও ছিল। তবে সব ক’টিই রুপোর। আপাতদৃষ্টিতে মনে হচ্ছিল এই গয়না বহু বছর ধরে মাটির নীচে রাখা ছিল।
গবেষণার পরে দেখা যায় সত্যিই তাই। ওই ২০ হাজার রুপোর মুদ্রা প্রায় ৮০০ বছর পুরনো।
যখন এই গয়নাসমেত তামার কড়াইটিকে মাটি চাপা দেওয়া হয়েছিল, তখন স্টকহোম শহরটিও তৈরি হয়নি— এমনটাই মনে করেন ন্যাশনাল হেরিটেজ বোর্ডের আধিকারিকেরা।
বেশ কয়েকটি মুদ্রায় রাজা নট এরিকসনের ছবি আঁকা ছিল। নট ১১৭৩ থেকে ১১৯৫ সাল পর্যন্ত সুইডেন শাসন করেছিলেন। তা দেখেই ধারণ করা যায় রুপোগুলি বহু পুরনো।
গবেষকদের মতে, কিছু মুদ্রায় মধ্যযুগীয় ধর্মযাজকদের ছবিও আঁকা ছিল। চলতি বছরের অক্টোবর মাসে মোট ৬ কিলোগ্রাম রুপো উদ্ধার করেছিলেন ওই ব্যক্তি।
একটি পাত্রে একই সঙ্গে ধর্মীয়, রাজকীয় বা সাধারণ মুদ্রা পাওয়া খানিকটা অস্বাভাবিক বলেই মনে করেন গবেষকরা। কারণ যে সময়কালের গুপ্তধন উদ্ধার হয়েছে সে সময় রাজা এবং সাধারণ মানুষের মধ্যে বেশ ফারাক ছিল বলেই মনে করছেন গবেষকেরা।
প্রায় ৮০০ বছর আগে সুইডেন এক অস্থির অবস্থার মধ্যে দিয়ে গিয়েছিল। তখন সুইডেন তার প্রভাব বিস্তার করার লক্ষ্যে এগোচ্ছিল। যুদ্ধকালীন পরিস্থিতি ছিল সেখানে।
সেই সময় অনেকেই তাঁদের সম্পদ নিরাপদে রাখতে মাটির তলায় লুকোত। সে রকম ভাবেই ওই তামার কড়াই ভর্তি সম্পদও সমাজের কোনও প্রভাবশালী ব্যক্তি যুদ্ধকালীন পরিস্থিতিতে রেখে গিয়েছিলেন বলে ধারণা করা হচ্ছে। পরে আর সেটি সংগ্রহ করে উঠতে পারেননি।
যদিও এখনও গবেষণা চলছে গুপ্তধন নিয়ে। বর্তমানে সেগুলি সুইডিশ জাতীয় ঐতিহ্য বোর্ডের তত্ত্বাবধানে নিরাপদ স্থানে রাখা রয়েছে। রুপোর এই সম্ভারকে প্রদর্শনীর কাজে আদৌ ব্যবহার করা হবে কি না এই নিয়ে এখনও পর্যন্ত সংস্থার তরফে কোনও সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়নি।