ছাত্র-যুব গণবিক্ষোভের রোষে পুড়ছে নেপাল। সমাজমাধ্যমের উপর নেপাল সরকারের নিষেধাজ্ঞার পরই অশান্তির আগুন ছড়াতে শুরু করে ভারতের পড়শি দেশে। সোমবার থেকে শুরু হওয়া বিক্ষোভ অন্য চেহারা নেয় মঙ্গলবার।
সমাজমাধ্যমের উপর নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করেও কোনও লাভ হয়নি। অগ্নিগর্ভ হয়ে ওঠে নেপাল। দুর্নীতি, স্বজনপোষণ, আর্থিক বৈষম্যের মতো বিষয়গুলি সামনে চলে আসে। আন্দোলনকারীদের রোষের মুখে পড়ে নেপাল সরকার।
মঙ্গলবার রোষের আগুন দাবানলের মতো সারা দেশে ছড়িয়ে পড়ে। বহু সরকারি ভবন, নেতা-মন্ত্রীদের বাড়ি পুড়িয়ে দেওয়া হয়। মারধরও করা হয় নেতা-মন্ত্রীদের। ভাঙচুর করা হয় সে দেশের সুপ্রিম কোর্ট এবং পার্লামেন্ট ভবন।
পরে পার্লামেন্ট ভবনে আগুনও ধরিয়ে দেন বিক্ষোভকারীরা। অশান্ত পরিস্থিতিতে মঙ্গলবারই নেপালের প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে ইস্তফা দিয়েছেন কেপি শর্মা ওলি।
অন্য দিকে, ওলি সরকারকে উৎখাত করে সে দেশে রাজনৈতিক ও সামাজিক সংস্কারের দাবিও তুলেছেন বিক্ষোভকারীরা। পাশাপাশি, গত তিন দশক ধরে রাজনৈতিক নেতাদের করা লুটের তদন্তের দাবিও তোলা হয়েছে।
আন্দোলনকারীরা ঘোষণা করেছেন, বিক্ষোভের সময় যাঁরা প্রাণ হারিয়েছেন, তাঁদের সকলকে সরকারি ভাবে ‘শহিদ’ স্বীকৃতি দিতে হবে। নিহতদের পরিবারকে রাষ্ট্রীয় সম্মান, স্বীকৃতি এবং আর্থিক সাহায্যের দেওয়ার দাবিও তুলেছেন তাঁরা।
বেকারত্ব মোকাবিলা, অভিবাসন কমানো এবং সামাজিক অবিচার মোকাবিলায় বিশেষ কর্মসূচি চালু করারও ডাক দিয়েছেন নেপালের ছাত্র-যুব সমাজ।
একটি বিবৃতিতে বিক্ষোভকারীরা বলেছেন, ‘‘এই আন্দোলন কোনও দল বা ব্যক্তির জন্য নয় বরং নেপালের সব প্রজন্মের মানুষ এবং দেশের ভবিষ্যতের জন্য। শান্তি প্রতিষ্ঠা হওয়া দরকার। তবে তা কেবল একটি নতুন রাজনৈতিক ব্যবস্থার উপর ভিত্তি করেই সম্ভব।’’
এ ছাড়াও একাধিক দাবি তুলেছেন বিক্ষোভকারীরা। জেন জ়ির দাবি, যত তাড়াতাড়ি সম্ভব নেপালের বর্তমান ‘হাউস অফ রিপ্রেজ়েনটেটিভ’কে বরখাস্ত করতে হবে। জনপ্রতিনিধিদের উপর ভরসা হারিয়েছেন সাধারণ মানুষ।
সাধারণ নাগরিক, বিশেষজ্ঞ এবং তরুণদের সক্রিয় অংশগ্রহণে সংবিধান সংশোধন বা সম্পূর্ণ পুনর্লিখনের দাবিও তুলেছেন বিক্ষোভকারীরা।
অন্তর্বর্তিকালীন সময়ের পরে নতুন নির্বাচন পরিচালনা এবং তা স্বাধীন, সুষ্ঠু ও সরাসরি জনসাধারণের অংশগ্রহণের উপর ভিত্তি করে হচ্ছে কি না তা নিশ্চিত করার দাবিও তুলেছেন নেপালের ছাত্র-যুবরা।
এ ছাড়াও বৈধ নির্বাচনের মাধ্যমে নেতৃত্ব প্রতিষ্ঠা এবং গত তিন দশক ধরে সরকারি সম্পত্তির অভিযোগে অভিযুক্ত নেতাদের বিরুদ্ধে তদন্তের দাবিও জানানো হয়েছে বিক্ষোভকারীদের তরফে।
একই সঙ্গে শিক্ষা, স্বাস্থ্য, ন্যায়বিচার, নিরাপত্তা এবং যোগাযোগ— এই পাঁচ মৌলিক প্রতিষ্ঠানের কাঠামোগত সংস্কার এবং পুনর্গঠনের দাবিও জানানো হয়েছে।
বিক্ষোভকারীরা এ-ও আশা প্রকাশ করেছেন যে, প্রেসিডেন্ট এবং নেপালের সেনা তাঁদের প্রস্তাবগুলি বাস্তবায়ন করবে।
বুধবার সকাল থেকে নেপালে বড় ধরনের কোনও অশান্তির ঘটনা না ঘটলেও চলছে বিক্ষিপ্ত সংঘর্ষ। অন্য দিকে, আনুষ্ঠানিক ভাবে নেপালের দায়িত্ব নিয়েছে সে দেশের সেনাবাহিনী।
সেনার তরফে বিবৃতি দিয়ে জানানো হয়েছে, যত দিন পর্যন্ত না নতুন সরকার গঠিত হচ্ছে, তত দিন দেশের শাসনভার চালাবে তারা। শুধু তা-ই নয়, পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে দেশ জুড়ে কার্ফু জারি করা হয়েছে সেনার তরফে।
দেশে লুটপাট চালালে, ভাঙচুর করলে কড়া পদক্ষেপ করা হবে, এমনটাই জানিয়েছে নেপালের সেনাবাহিনী। দেশের নাগরিকদেরও সহযোগিতা চেয়েছে তারা। সেনাবাহিনীর নিয়ন্ত্রণে নেপাল সরকারের প্রধান সচিবালয় ভবনও।