Hamza Bin Laden

শীতঘুম কাটিয়ে ‘কাবুলিওয়ালার দেশে’ ফণা তুলছে সাপ! ‘যুবরাজ’ লাদেনের নেতৃত্বে ফের আমেরিকার ঘুম কাড়বে আল-কায়দা?

প্রিয় পুত্রসন্তান হামজ়াকে নিজের যোগ্য উত্তরাধিকার হিসাবে তৈরি করার স্বপ্ন দেখেছিলেন ওসামা বিন লাদেন। আফগানিস্তানে যখন মার্কিন সেনা তালিবানের বিরুদ্ধে অভিযান চালিয়ে তাদের কোণঠাসা করে ফেলে, সেই সময়ই সেখান থেকে পালিয়ে পাকিস্তানে আশ্রয় নেন হামজ়া বিন লাদেন।

Advertisement
আনন্দবাজার ডট কম ডেস্ক
শেষ আপডেট: ১১ নভেম্বর ২০২৫ ০৭:৪৯
Share:
০১ ১৮

ছেলেকে অ্যাবটাবাদের বাড়িতে নিয়ে এসে নিজের হাতে জঙ্গি প্রশিক্ষণ দিতেন স্বয়ং বাবা, ওসামা বিন লাদেন। পশ্চিমি দুনিয়া, বিশেষ করে আমেরিকার রাতের ঘুম উড়িয়ে দেওয়া জঙ্গি সংগঠনের মস্তিষ্ক তিনি। আল কায়দা, সারা দুনিয়ার আতঙ্ক বাড়ানোর জন্য শুধু নামটাই যথেষ্ট ছিল।

০২ ১৮

আল কায়দার ‘বেতাজ বাদশা’ হিসাবে যদি ওসামাকে ধরা হয়, তবে সেই সাম্রাজ্যের রাজপুত্র হামজ়া বিন লাদেন। একাধিক সন্তানের মধ্যে লাদেনের অন্যতম প্রিয় হামজ়া। সৌদি আরবের ধনী পরিবারের ছেলে থেকে সন্ত্রাসের মাথা হয়ে ওসামা মনে মনে স্থির করে ফেলেছিলেন হামজ়ার হাতে তুলে দেবেন ‘সাম্রাজ্যের’ ভার।

Advertisement
০৩ ১৮

প্রিয় পুত্রসন্তান হামজ়াকে নিজের যোগ্য উত্তরাধিকারী হিসাবে তৈরি করার স্বপ্ন দেখেছিলেন তিনি। সেই কাজ শুরু করে দিয়েছিলেন তিনি। কৈশোর পেরোনোর আগেই ছেলেকে জঙ্গি হিসাবে প্রশিক্ষণ দিতে হাতে তুলে দিতেন ভয়ঙ্কর সব অস্ত্র। আল কায়দার একাধিক ভিডিয়োয় দেখা গিয়েছিল নরম গোঁফ-দাড়ি গজানো কিশোর হামজ়ার মুখ।

০৪ ১৮

২০০১ সালের ১১ সেপ্টেম্বর আমেরিকার টুইন টাওয়ারে যে জঙ্গি হামলা হয়েছিল, তার মূল চক্রী ছিলেন আল কায়দা প্রধান ওসামা বিন লাদেন। ৯/১১ হামলার পর তাঁর খোঁজে সারা বিশ্বে চিরুনিতল্লাশি করেছিল আমেরিকার সেনাবাহিনী। সেই থেকে পালিয়ে বেড়ানো শুরু ওসামা ও তাঁর পরিবারের। ওসামার চিন্তা ছিল সংগঠন নিয়েও।

০৫ ১৮

আল কায়দার কাজকর্মে যেমন খুশি ছিলেন, তেমন দুশ্চিন্তাও ছিল সংগঠনের ভবিষ্যৎ নিয়ে। প্রতি মুহূর্তে শঙ্কিত থাকতেন তাঁর বিরুদ্ধে তৈরি হওয়া কোনও ষড়যন্ত্রের আশঙ্কায়। সর্ব ক্ষণ ত্রস্ত থাকতেন, প্রযুক্তিকে কাজে লাগিয়ে তাঁর অন্দরমহলে নজরদারি চালাবে আমেরিকা।

০৬ ১৮

আফগানিস্তানের টোরা বোরায় লাদেনকে হাতের মুঠোয় পেয়েও ধরতে ব্যর্থ হয় মার্কিন সেনাবাহিনী। মহিলার ছদ্মবেশে মার্কিন সেনাকে বোকা বানিয়ে আফগানিস্তান থেকে পাকিস্তানে পালিয়ে গিয়েছিলেন আল কায়দা প্রধান। সেখানে ছিলেন ২০১১ সাল পর্যন্ত। মার্কিন সেনাকে অপেক্ষায় রেখে রাতের অন্ধকারে ট্রাকের পিছনে চেপে আফগানিস্তান ছেড়েছিলেন লাদেন, এমনটাই মনে করেন অভিযানে দায়িত্বপ্রাপ্ত সিআইএ কর্তারা।

০৭ ১৮

আফগানিস্তানের হামলা থেকে বরাতজোরে প্রাণে বাঁচার পর সীমান্ত পেরিয়ে সপরিবারে পাকিস্তানের অ্যাবটাবাদে আশ্রয় নেন ওসামা। ১০ বছর পাকিস্তানের আশ্রয়ে সংগঠনকে আবারও এক ছাতার তলায় আনার চেষ্টা করেছিলেন লাদেন। ২০১১ সালে পাকিস্তানের খাইবার পাখতুনখোয়া প্রদেশের অ্যাবটাবাদে অভিযান চালিয়ে লাদেনকে হত্যা করে মার্কিন সেনা। রাতের অন্ধকারে সেনা পাঠিয়ে নিকেশ করা হয়েছিল আল কায়দা প্রধানকে।

০৮ ১৮

সেই হামলায় লাদেন ও তাঁর পরিবারের বেশ কয়েক জন নিহত হয়েছেন বলে আমেরিকা দাবি জানিয়েছিল। অ্যাবটাবাদে প্রায় নিশ্ছিদ্র দুর্গে তিন স্ত্রী এবং ১৭ জন ছেলেমেয়ে নিয়ে থাকতেন ওসামা। প্রায় ছ’বছর ধরে সেখানে আত্মগোপন করেছিলেন। ওই বাড়িরই তিন তলায় খোঁজ মেলে লাদেনের। মার্কিন নেভি সিলের কম্যান্ডোদের বুলেটে ঝাঁঝরা হয়ে গিয়েছিলেন তিনি। সেই হামলায় মারা যান লাদেনের প্রিয় পুত্র হামজ়া, প্রথমে এমনটাই দাবি ছিল আমেরিকার।

০৯ ১৮

ওসামা বিন লাদেন নিহত হওয়ার বছর চারেক পরে অ্যাবটাবাদের আস্তানা থেকে উদ্ধার হওয়া নথিপত্র প্রকাশ করেছে মার্কিন সরকার। সেখানেই পাওয়া গিয়েছে ওসামার লেখা চিঠিপত্র। মিলেছিল প্রশিক্ষণের নানা ভিডিয়ো, একাধিক পর্ন ভিডিয়োও। সেই নথির মধ্যে আল কায়দার এক শীর্ষনেতাকে উল্লেখ করা একটি চিঠি পাওয়া গিয়েছিল। সেখানে বিন লাদেন লিখেছিলেন, বহু দিন আগেই হামজ়াকে অ্যাবটাবাদ থেকে নিরাপদ স্থানে সরিয়ে দেওয়া হয়েছে।

১০ ১৮

আমেরিকা বার বার হামজ়ার মৃত্যুর দাবি তুললেও ২০১৭ সালে একটি রিপোর্টে প্রকাশিত হয় পাকিস্তানের গুপ্তচর সংস্থা আইএসআইয়ের নিরাপদ আশ্রয়ে রয়েছেন আল কায়দার ‘যুবরাজ’। ২০০১-এ আফগানিস্তানে মার্কিন সেনা যখন তালিবানের বিরুদ্ধে অভিযান চালিয়ে তাদের কোণঠাসা করে ফেলে, সেই সময়ই সেখান থেকে পালিয়ে পাকিস্তানে আশ্রয় নেন হামজ়া বিন লাদেন। সঙ্গে প্রাক্তন আল কায়দা প্রধান অল জাওয়াহিরি। ২০২২ সালে তাকেও মেরে ফেলে আমেরিকা।

১১ ১৮

২০১৯ সালে হামজ়ার মাথার দাম ১০ লক্ষ ডলার বলে ঘোষণা করেছিল আমেরিকা। সেই বছরই রাষ্ট্রপুঞ্জের ১৫ সদস্যের নিরাপত্তা পরিষদ নিষিদ্ধ জঙ্গিদের তালিকায় হামজ়ার নামও অন্তর্ভুক্ত করে। আমেরিকার ঘোষণার পর হামজ়ার নাগরিকত্ব বাতিল করে দেয় লাদেনের মাতৃভূমি সৌদি আরব। আমেরিকার ধারণা, সন্ত্রাসবাদের ভবিষ্যৎ মুখ হয়ে উঠতে চলেছেন হামজ়া।

১২ ১৮

সেই বছরেরই শেষের দিকে তৎকালীন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প সদর্পে ঘোষণা করেছিলেন, এক বিমান হামলায় হত্যা করা হয়েছে লাদেনের এই উত্তরসূরিকে। হোয়াইট হাউস থেকে দেওয়া সংক্ষিপ্ত বিবৃতিতে তিনি জানান, পেন্টাগনের সন্ত্রাসবিরোধী এক অভিযানে নিহত হয়েছেন হামজ়া। তবে সেই অভিযান কবে ও কোথায় চালানো হয়েছিল সে সম্পর্কিত কোনও বিস্তারিত তথ্য দেওয়া হয়নি।

১৩ ১৮

আমেরিকার সেই দাবি মাত্র পাঁচ বছরের খারিজ হয়ে গিয়েছে। মার্কিন গোয়েন্দা দফতরের সূত্র উল্লেখ করে সংবাদপত্রগুলির প্রতিবেদনে দাবি করা হয়েছে, যুবক বিন লাদেনকে সামনে রেখে ধীরে ধীরে ফের জোটবদ্ধ হচ্ছে আল কায়দা। বাবার খুনের বদলা নিতে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও পশ্চিমি দেশগুলিতে হামলা চালানোর ডাক দিয়েছে।

১৪ ১৮

লাদেনের মৃত্যুর পর আল কায়দার শক্তি কিছুটা কমলেও তারা যে একেবারে শেষ হয়ে যায়নি সেই তথ্য বার বার উঠে এসেছে মার্কিন সংবাদপত্রগুলির একাধিক রিপোর্টে। দাবি করা হয়, শক্তি সঞ্চয় করে আল কায়দা তলে তলে হামলার ছক কষছে এবং তার পুরোভাগে রয়েছেন লাদেন-পুত্র হামজ়া।

১৫ ১৮

হামজ়া বিন লাদেনের বয়স ৩৫ থেকে ৪০ বছরের মধ্যে। ৯/১১-র নেতৃত্বে থাকা মহম্মদ আটার মেয়ের সঙ্গে বিয়ে হয়েছিল তাঁর। ২০২৪ সালে সংবাদমাধ্যম ‘দ্য মিরর’-এর প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছিল, আফগানিস্তানের উত্তরাঞ্চলে আত্মগোপন করে আছেন লাদেন-পুত্র। সঙ্গে রয়েছেন তাঁর ভাই আবদুল্লাহ বিন লাদেন। সেখান থেকেই জঙ্গি সংগঠনটির হাল ধরেছেন দুই সহোদর।

১৬ ১৮

২০১৫-য় এক অডিয়োবার্তায় শোনা গিয়েছিল, সিরিয়ায় জঙ্গিদের জোট বাঁধার কথা বলছেন হা‌মজ়া। তাঁর বক্তব্য ছিল, যুদ্ধবিধ্বস্ত সিরিয়ায় লড়াই চালালে ‘মুক্ত প্যালেস্টাইন’-এর পথ প্রশস্ত হবে। এক বছর পরে আর একটি বার্তায় বাবার পথ অনুসরণ করে তিনি নিজেদের দেশ, সৌদি আরব সম্পর্কে বলেছিলেন, সেখানকার নেতৃত্বকে পদচ্যুত করতে হবে। হামজ়া কোথায়, তা নিয়ে ধোঁয়াশা থাকলেও কোনও কোনও সূত্রের দাবি, ইরানে মায়ের সঙ্গে বেশ কিছু বছর কাটিয়েছেন তিনি।

১৭ ১৮

তবে মার্কিন গোয়েন্দা বাহিনী এফবিআই-এর ধারণা ছিল, পাকিস্তান, আফগানিস্তান, সিরিয়া ও ইরানেই ঘোরাফেরা করতেন হামজ়া। রাষ্ট্রপুঞ্জের রিপোর্ট অনুযায়ী, আফগানিস্তান-পাকিস্তান সীমান্তে ওসামা বিন লাদেনের ছেলে হামজ়ার মতো আল কায়দার শীর্ষনেতারা লুকিয়ে থাকতে পারেন। লাঘমান, পাকতিকা, কন্দহর, গজনী ও জ়াবুল প্রদেশে রয়েছে কয়েকশো আল কায়দা জঙ্গি।

১৮ ১৮

আর একটি রিপোর্ট অনুযায়ী, আল কায়দার সদস্যেরা সহজেই স্থানীয় মানুষের সঙ্গে মিশে যেতে পারে। স্থানীয় গোষ্ঠীর লড়াইয়ের সঙ্গেও নিজেদের জড়িয়ে ফেলে তারা। সংবাদমাধ্যমের প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে ‘সন্ত্রাসের রাজপুত্র’ হা‌মজ়ার সুরক্ষায় ৪৫০ জন স্নাইপার মোতায়েন থাকে। আফগানিস্তানের মাটিতে বসে আল কায়দার সংগঠন ঢেলে সাজছে এবং তার নেতৃত্বে থাকছেন জুনিয়র লাদেন।

সব ছবি: সংগৃহীত।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
Follow us on:
আরও গ্যালারি
Advertisement