এ দেশের অন্যতম কঠিন এবং সম্মানজনক পেশা হল আইএএস, আইপিএস বা আইএফএস। সেই পেশায় পা রাখার প্রথম ধাপ হল ইউনিয়ন পাবলিক সার্ভিস কমিশন বা ইউপিএসসি পরিচালিত পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হওয়া।
দেশের লক্ষ লক্ষ পড়ুয়ার কাছে সিভিল সার্ভিস পরীক্ষায় পাশ করা স্বপ্নের সমান। অন্যতম কঠিন এই পরীক্ষায় বসে সফল হওয়া মুখের কথা নয়! হাই স্কুল বা কলেজের পঠনপাঠন শেষের পর কেরিয়ার গড়তে অনেকেই ইউপিএসসি পরীক্ষার প্রস্তুতি নেন।
একাগ্রতা, অধ্যবসায়, মেধা আর পরিশ্রম, এই তিন মন্ত্রেই আইএএস, আইপিএস এবং আইএফএস হওয়ার স্বপ্নপূরণ সম্ভব। ইউপিএসসি উত্তীর্ণ হওয়ার জন্য প্রচুর পরিশ্রম এবং ধৈর্যের প্রয়োজন।
তবে যাঁকে নিয়ে কথা তিনি ইউপিএসসি পাশ করার আগেই যথেষ্ট প্রতিষ্ঠিত ছিলেন। সম্মানজনক পেশাতেও যুক্ত ছিলেন। কিন্তু ইউপিএসসি পাশ করে সেই পেশা ছেড়ে দেন। তাঁর নাম অঞ্জলি গর্গ।
ছোট থেকেই মেধাবী ছাত্রী অঞ্জলি। সেই সুবাদে ডাক্তারির পরীক্ষাতেও সুযোগ পান সহজে। পড়াশোনা শেষ করে গায়ে চিকিৎসকের অ্যাপ্রন চাপান। কিন্তু তাতেও শান্তি পাননি। দেশের জন্য আরও বেশি কিছু করার তাগিদে চিকিৎসা পেশা ছেড়ে আইএএস অফিসার হন তরুণী।
প্রতি বছর লক্ষ লক্ষ প্রার্থী ইউপিএসসির প্রস্তুতি নেন। কিন্তু খুব কম সংখ্যক প্রার্থীই সফল হন। কিছু প্রার্থীকে পরীক্ষায় পাশ করার জন্য বছরের পর বছর পরিশ্রম করে যেতে হয়। তার পরেও সাফল্য আসে না।
কিন্তু অঞ্জলি অনন্যা। চিকিৎসক হিসাবে রাত জেগে কর্তব্য পালনের পাশাপাশি সমান তালে ইউপিএসসির জন্যও পড়াশোনা চালিয়ে গিয়েছিলেন তিনি। দিনরাত এক করে পড়েছিলেন।
১৯৯৬ সালে ১৪ সেপ্টেম্বর অঞ্জলির জন্ম। চণ্ডীগড়ের এক ব্যবসায়ী পরিবারে জন্ম হয় তাঁর। অঞ্জলির পরিবারের সকলেই ব্যবসার সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। কিন্তু ছোটবেলা থেকেই তাঁর ঝোঁক ছিল পড়াশোনার দিকে।
ছোটবেলা থেকেই মেধাবী ছাত্রী অঞ্জলি দ্বাদশ শ্রেণিতে ৯৬ শতাংশ নম্বর পেয়েছিলেন। সেই সময় তিনি ঠিক করেছিলেন ডাক্তার হবেন। চিকিৎসার পেশাকেই জীবনের ব্রত করার সিদ্ধান্ত নেন।
দ্বাদশ শ্রেণির পর ডাক্তারির সর্বভারতীয় প্রবেশিকা পরীক্ষা নিট-এ উত্তীর্ণ হন অঞ্জলি। নিট পাশ করে প্রথমে ভিএমএনসি এবং পরে দিল্লির সফদরজং মেডিক্যাল কলেজে পড়াশোনা করেন।
পড়াশোনা শেষ করে চিকিৎসক হিসাবে কেরিয়ার শুরু করেন অঞ্জলি। তবে এমবিবিএস পড়ার সময় থেকেই অঞ্জলি লক্ষ করেছিলেন দেশের বেশ কিছু জায়গায় সঠিক স্বাস্থ্য পরিষেবার অভাব রয়েছে।
অঞ্জলির দাবি, তিনি এ-ও বুঝতে পেরেছিলেন যে রোগীদের চিকিৎসা করার বাইরেও পদ্ধতিগত পরিবর্তন প্রয়োজন। এর পরেই আরও বৃহত্তর জনগণের পাশে দাঁড়াতে আইএএস হওয়ার সিদ্ধান্ত নেন অঞ্জলি।
অঞ্জলির জন্য এই সিদ্ধান্ত খুব সহজ ছিল না। ঝুঁকিপূর্ণও ছিল। কারণ একে তো চিকিৎসক হিসাবে সদ্য কেরিয়ার শুরু করেছিলেন তিনি। তার উপর আবার ইউপিএসসি দেশের অন্যতম কঠিন পরীক্ষা।
তবে এত কিছু না চিন্তা করে ইউপিএসসিতে বসার সিদ্ধান্ত নেন অঞ্জলি। পরীক্ষার জন্য পড়াশোনা করার পাশাপাশি সফদরজং হাসপাতালে ১২ ঘণ্টা রাতের শিফটে কাজ করতে হত তাঁকে। বই নিয়েই কাজে যেতেন তিনি। ফাঁক পেলেই পড়ে নিতেন। আবার বাড়ি গিয়ে পড়াশোনা করতেন।
কঠিন পরিশ্রম এবং কম ঘুম অঞ্জলির স্বাস্থ্যের উপরও প্রভাব ফেলে। অসুস্থ হয়ে প়়ড়েন তিনি। কিন্তু হাল ছাড়েননি। চেষ্টা চালিয়ে যান। যদিও প্রথম বার পরীক্ষা দিয়ে সফল হননি অঞ্জলি।
কোভিড অতিমারির সময় চিকিৎসক হওয়ার সুবাদে অঞ্জলির উপর চাপ বৃদ্ধি পায়। তাঁর বাবা-মাও অসুস্থ হয়ে পড়েন। ফলে সেই ভাবে প্রস্তুতি নিতে পারেননি তিনি।
অঞ্জলির সাফল্য আসে দ্বিতীয় চেষ্টায়। ২০২২ সালে ইউপিএসসি পরীক্ষায় ৭৯ র্যাঙ্ক করেন তিনি। যোগ দেন আইএএস হিসাবে। বর্তমানে হিমাচল প্রদেশের ধর্মশালায় একজন সহকারী কমিশনার হিসেবে কর্মরত তিনি।
চিকিৎসক থেকে আইএএস— অঞ্জলির যাত্রা সহজ ছিল না। তবে তিনি প্রমাণ করেছেন, কঠোর পরিশ্রম এবং অধ্যবসায় থাকলে জীবনে সাফল্য আসবেই, স্বপ্নপূরণ হবেই। হাজার হাজার তরুণ-তরুণীর কাছে অনুপ্রেরণার অপর নাম হয়ে উঠেছেন অঞ্জলি।