কথায় কথায় অপশব্দ ব্যবহারের অভ্যাস খারাপ। কিন্তু কিছু কিছু রাজ্যের জন্য বিষয়টি সাধারণ একটি বিষয়ে পরিণত হয়েছে। কিন্তু কোন রাজ্যে অপশব্দ ব্যবহারের প্রবণতা বেশি? কমই বা কোন রাজ্যের?
সেই উত্তরই পাওয়া গিয়েছে সুনীল জগলান নামে এক সমাজকর্মী এবং অধ্যাপকের নেতৃত্বে দেশব্যাপী গালিগালাজ বন্ধ করার জন্য পরিচালিত একটি অভিযানের ফলাফল প্রকাশের পর।
সেই অভিযান চলাকালীন ভারতের শহুরে এবং গ্রামীণ এলাকার ৭০,০০০-এরও বেশি মানুষের উপর একটি সমীক্ষা চালানো হয়। সেই মানুষের তালিকায় ছিলেন অটোওয়ালা থেকে শুরু করে বধূ, ছাত্রছাত্রী, এমনকি পরিচ্ছন্নতা কর্মীরা।
সমীক্ষার উদ্দেশ্য ছিল এটা বোঝা যে, ভারতীয়েরা কতটা অকপটে, বিশেষ করে পরিবারের সদস্যদের সামনে অপশব্দ ব্যবহার করেন।
সেই সমীক্ষা অনুযায়ী, গালিগালাজ দেওয়ার ব্যাপারে সব রাজ্যকে টপকে শীর্ষে রয়েছে রাজধানী দিল্লি। তালিকায় তার পরে রয়েছে উত্তর ভারতের অন্য একাধিক রাজ্য।
সমীক্ষায় দেখা গিয়েছে, অপশব্দ ব্যবহারের ক্ষেত্রে মহিলাদের তুলনায় সিদ্ধহস্ত পুরুষেরা। যদিও ৩০ শতাংশ মহিলা স্বীকার করেছেন যে, তাঁরা নিয়মিত ভাবে গালিগালাজ দেন বা সহ্য করেন।
সমীক্ষায় যোগদানকারী তরুণ প্রজন্মের ২০ শতাংশ আবার (অপ)শব্দভান্ডারের জন্য দায়ী করেছেন ওটিটি প্ল্যাটফর্ম, ভিডিয়ো গেম এবং সমাজমাধ্যমকে।
এক নজরে দেখে নেওয়া যাক, অপশব্দ ব্যবহারের দিক থেকে কোন রাজ্য কোন স্থানে রয়েছে। তালিকার প্রথমেই রয়েছে দিল্লি। সমীক্ষায় অংশগ্রহণকারী ৮০ শতাংশ দিল্লিবাসী জানিয়েছেন, তাঁরা নিয়মিত অপশব্দ ব্যবহার করেন। এর জন্য অবশ্য মানসিক চাপ এবং লাগামছাড়া ট্রাফিককেও দায়ী করেছেন অনেকে।
তালিকায় এর পরেই স্থান দিল্লির প্রতিবেশী পঞ্জাবের। সমীক্ষায় অংশগ্রহণকারী ৭৮ শতাংশ জানিয়েছেন, কথা বলার সময় অপশব্দ ব্যবহার করেন তাঁরা। যদিও অনেকেই জানিয়েছেন, কখনও কখনও প্রিয়জনদের প্রতি ভালবাসা জাহির করতেও তাঁরা গালিগালাজ করেন।
সমীক্ষা অনুযায়ী, উত্তরপ্রদেশে সেই সংখ্যা ৭৪ শতাংশ। সমীক্ষায় অংশগ্রহণকারী অনেকেই জানিয়েছেন, রাজনৈতিক সমাবেশ থেকে শুরু করে খেলার মাঠের ঝগড়া— উত্তরপ্রদেশে খারাপ ভাষার ব্যবহার হয় সর্বত্র।
ওই সমীক্ষায় অংশগ্রহণকারী বিহারের বাসিন্দাদেরও ৭৪ শতাংশ অপশব্দ ব্যবহারের কথা জানিয়েছেন। অর্থাৎ, সে দিক থেকে উত্তরপ্রদেশের সঙ্গে সমানে সমানে রয়েছে বিহার।
রাজস্থানে ঝড় কেবল মরুভূমির মধ্যেই সীমাবদ্ধ নয়। অপশব্দ ব্যবহারের ক্ষেত্রেও মাঝেমধ্যে সেই ঝড় ওঠে। সমীক্ষায় অংশগ্রহণকারী ৬৮ শতাংশ রাজস্থানি কথা বলার সময় কটুভাষা ব্যবহারের কথা স্বীকার করেছেন।
তালিকায় এর পরেই রয়েছে হরিয়ানা। হরিয়ানায় ৬২ শতাংশ ক্ষেত্রে অপশব্দ ব্যবহারের প্রবণতা দেখা গিয়েছে।
তালিকায় এর পরে রয়েছে যথাক্রমে মহারাষ্ট্র এবং গুজরাত। সমীক্ষায় অংশগ্রহণকারী ৫৮ শতাংশ মরাঠি এবং ৫৫ শতাংশ গুজরাতি কথা বলার ক্ষেত্রে গালিগালাজের কথা স্বীকার করেছেন।
সমীক্ষা অনুযায়ী, মধ্যপ্রদেশের ক্ষেত্রে খারাপ ভাষা ব্যবহারের প্রবণতা ৪৮ শতাংশ। উঁচু উঁচু পাহাড়ে ঘেরা উত্তরাখণ্ডের ক্ষেত্রে সেই হার ৪৫ শতাংশ।
ভূস্বর্গ কাশ্মীরে খারাপ ভাষা ব্যবহারের প্রবণতা কম হলেও খুব কম নয়। সমীক্ষায় অংশগ্রহণকারী ১৫ শতাংশ কাশ্মিরি কটুভাষা প্রয়োগের কথা জানিয়েছেন।
উত্তর-পূর্বের সাতটি রাজ্য বা ‘সেভেন সিস্টার্স’-এর ক্ষেত্রে অপশব্দ ব্যবহারের প্রবণতা ২০ শতাংশ। অন্তত তেমনটাই বলছে ওই সমীক্ষা।
এর বাইরে বাকি রাজ্যগুলির খারাপ ভাষা ব্যবহারের খতিয়ান ওই সমীক্ষায় উঠে আসেনি। তবে বলাই বাহুল্য সমীক্ষার ফলাফলটি নিয়ে ইতিমধ্যেই হইচই পড়েছে। সমাজমাধ্যমে অনেকে আবার সমীক্ষার নির্ভরযোগ্যতা নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন।
কিন্তু বিষয়টি প্রসঙ্গে কী বলছেন নেটাগরিকেরা? নেটাগরিকদের একাংশ ওই সমীক্ষা নিয়ে মজার মজার মন্তব্য করলেও অনেকে আবার বিষয়টি নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন।
সেই প্রসঙ্গে এক নেটাগরিক লিখেছেন, ‘‘গালি ছাড়া কথায় মজা নেই। তবে এ কথা স্বীকার করতেই হয় যে, দিল্লি অনেক বিষয়েই এগিয়ে রয়েছে।’’ অন্য এক ব্যবহারকারী আবার লিখেছেন, ‘‘ভালবাসার দ্বিতীয় নাম গালিগালাজ।’’