চাঁদে সঙ্গম করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন প্রেমিকাকে। ‘করেছিলেন’ও তাই। এই কাজ করতে চাঁদ থেকে নাসার আনা ২.১ কোটি ডলার (ভারতীয় মুদ্রায় ১৮৪ কোটি টাকা) মূল্যের পাথর চুরি করেছিলেন এক তরুণ। অবাক লাগলেও সত্যিই তেমনটা ঘটেছিল ২৩ বছর আগে।
নাসা থেকে চাঁদের পাথর চুরি করা ওই তরুণের নাম ছিল থাড রবার্টস। নাসাতেই শিক্ষানবিশ হিসাবে কাজ করতেন তিনি। ২৩ বছর আগে, ২০০২ সালের জুলাই মাসে থাড এবং তাঁর সহযোগীরা ৭.৭ কেজির বহুমূল্য চাঁদের পাথর চুরি করেছিলেন নাসা থেকে।
২০০২ সাল। উটাহ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পদার্থবিদ্যা, ভূতত্ত্ব এবং ভূপদার্থবিদ্যায় সদ্য ডিগ্রি অর্জন করা থাড তখন ২৪ বছর বয়সি তরুণ। শিক্ষানবিশ হিসাবে নাসায় যোগ দিয়েছিলেন তিনি।
নাসায় থাডের সঙ্গে আলাপ হয় নাসার ‘টিস্যু কালচার’ পরীক্ষাগারে কর্মরত ২২ বছর বয়সি টিফানি ফাউলারের। দ্রুত প্রেমে পরিণত হয় তাঁদের বন্ধুত্ব। একত্রবাসও শুরু করেন তাঁরা।
একত্রবাসে থাকাকালীন কথায় কথায় প্রেমিকা টিফানিকে চাঁদে সঙ্গম করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন থাড। এর পরেই নাসায় থাকা চাঁদের পাথর চুরির ফন্দি আঁটেন তিনি। একটি উল্কাপিণ্ড চুরিরও উদ্দেশ্য ছিল তাঁর।
এফবিআই-এর তদন্ত অনুযায়ী, ২৪ বছর বয়সি থা়ড ঠিক করেছিলেন রাতের অন্ধকারে চুরি করবেন। অ্যাপোলো অভিযানে গিয়ে চাঁদ থেকে সংগ্রহ করা অমূল্য পাথরটি সে সময় নাকি হিউস্টনের জনসন স্পেস সেন্টারে একটি ৬০০ পাউন্ডের আলমারিতে তালাবন্ধ ছিল।
আঁটসাঁট নিরাপত্তার মধ্যে থাকা চাঁদের সেই পাথর চুরির জন্য নিজের এবং সঙ্গীদের জন্য নাসার বিজ্ঞানীদের ব্যাজ জোগাড় করেছিলেন থাড। কিনেছিলেন বিশেষ পোশাকও।
চুরির কাজে প্রেমিকা টিফানিকেও ‘পার্টনার’ বানিয়েছিলেন থাড। সঙ্গী ছিলেন শে সোর নামে নাসার অন্য এক শিক্ষানবিশও। জুলাইয়ের এক সন্ধ্যায় নাসার তিন শিক্ষানবিশ মিলে জনসন স্পেস সেন্টারের ৩১ নম্বর ভবনে পৌঁছোন। সেখানেই রাখা ছিল চাঁদের ওই পাথর।
থাড এবং টিফানি চুরি করতে ভিতরে ঢুকেছিলেন। শে বাইরে থেকে নজর রাখছিলেন নিরাপত্তা ক্যামেরাগুলির দিকে। ‘নিওপ্রিন’ পোশাক পরে বায়ুশূন্য কক্ষে যান থাড এবং টিফানি। চাঁদের পাথরগুলি যে আলমারিতে ছিল সেই আলমারি নিয়েই পালিয়ে যান তাঁরা। পরে আলমারি ভেঙে পাথরগুলি নিয়ে নেন।
শুধু সঙ্গম নয়, এফবিআই দাবি করেছিল যে থাডের চাঁদের পাথর চুরির ঘটনাটি আর্থিক ভাবেও উদ্দেশ্যপ্রণোদিত ছিল। বেলজিয়ামের এক জন ক্রেতার সঙ্গে যোগাযোগ করেছিলেন তিনি। ওই পাথরের প্রতি গ্রামের জন্য নাকি পাঁচ হাজার ডলার পর্যন্ত দিতে রাজি ছিলেন ওই ক্রেতা।
তবে পাথর নিয়েই তা বিক্রি করে দেননি থাড। পাথর নিয়ে বাড়ি যান। বিছানার তলায় চাঁদের পাথর রেখে সঙ্গম করেন প্রেমিকা টিফানির সঙ্গে। ‘চাঁদে সঙ্গম’ করার ইচ্ছা পূর্ণ করেন যুগল।
অন্য দিকে, চাঁদের পাথর চুরি নিয়ে তত ক্ষণে নাসায় হইচই পড়ে গিয়েছে। খোঁজ খোঁজ রব উঠেছে। তদন্তে নেমেছে পুলিশ-এফবিআই।
কিছু দিন পরে বেলজিয়ামের ওই ক্রেতার কাছে চাঁদের পাথরগুলি নিয়ে পৌঁছোন থাড। সেগুলি বিক্রির চেষ্টা করেন তাঁকে। কিন্তু বেলজিয়ামের ওই ক্রেতা পাথরগুলি কোথা থেকে এসেছে তা নিয়ে সন্দেহ পোষণ করেন। এফবিআইয়ের সঙ্গে যোগাযোগ করেন তিনি। এর পর থাডকে গ্রেফতার করতে অভিযান শুরু করে পুলিশ। কয়েক দিনের মধ্যেই থাড এবং তাঁর সঙ্গীরা গ্রেফতার হন।
গ্রেফতারির পর থাড অপরাধ স্বীকার করে নেন। উটাহ বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার সময় তিনি সল্ট লেক সিটির প্রাকৃতিক ইতিহাস জাদুঘর থেকে ডাইনোসরের হাড় এবং জীবাশ্ম চুরি করার কথাও নাকি স্বীকার করেন।
আট বছরের জেল হয়েছিল থাডের। তবে ছ’বছরের বেশি সময় ধরে কারাবাস ভোগের পর ২০০৮ সালে, অর্থাৎ কারাদণ্ডের সাজার মেয়াদের দু’বছর আগেই মুক্তি দেওয়া হয় তাঁকে।
অন্য দিকে, টিফানি এবং শে-ও নিজেদের দোষ স্বীকার করেছিলেন। তাঁদের ১৮০ দিনের গৃহবন্দি থাকার এবং ১৫০ ঘণ্টা সমাজসেবা করার নির্দেশ দেওয়া হয়। ক্ষতিপূরণ হিসাবে ৯,০০০ ডলারেরও বেশি নাসা কর্তৃপক্ষের হাতে তুলে দেওয়ার নির্দেশও দেওয়া হয় তাঁদের।
সংবাদমাধ্যমের প্রতিবেদন অনুযায়ী, গ্রেফতারির পর থাড এবং টিফানির আর কখনও দেখা হয়নি। তাঁদের প্রেম পরিণতি পায়নি। তবে চাঁদের পাথরের উপর শুয়ে সঙ্গম হয়েছিল, যেমনটা তাঁরা করবেন বলে ঠিক করেছিলেন।
২০১১ সালে এই ঘটনা নিয়ে একটি গল্প লেখেন বেন মেজরিচ। বইটির নাম ছিল ‘সেক্স অন দ্য মুন’। সেখানে ওই ঘটনার খুঁটিনাটি বর্ণনা করা আছে।
২০০৪ সালে ‘লস অ্যাঞ্জেলস টাইমস’-এর সঙ্গে এক সাক্ষাৎকারে থাড বলেছিলেন, ভালবাসার জন্যই ওই চুরি করেছিলেন তিনি। তাঁর কথায়, ‘‘আমি টিফানির প্রেমে পড়েছিলাম। যা করেছিলাম ভালবাসার জন্য করেছিলাম। ভেবেছিলাম প্রেমিকাকে চাঁদ এনে দেব। চাঁদে মিলনের ইচ্ছাও ছিল।’’
২০১২ সালে অন্য এক সাক্ষাৎকারে থাড এ-ও বলেছিলেন, ‘‘চুরির পর চাঁদের কিছু পাথর আমি কম্বলের নীচে রেখেছিলাম। সেই কম্বলের উপর সঙ্গম করি। এটা অনুভূতির বিষয়।’’