Toilet Man Bindeshwar Pathak

নববধূর কান্না, শিশুর মৃত্যু বদলে দেয় জীবন! ৭৫ টাকায় যাত্রা শুরু করে ‘টয়লেটম্যান’ হন বিন্দেশ্বর

দেশের প্রান্তিক মানুষের জীবনধারাকে উন্নত করার লক্ষ্যেও কাজ করেছেন বিন্দেশ্বর। সমাজের বাধা, বঞ্চনা এবং অপমানের হাত থেকে বিধবাদের মুক্তি দিতেও অগ্রণী ভূমিকা পালন করেছিলেন তিনি।

Advertisement
আনন্দবাজার অনলাইন ডেস্ক
কলকাতা শেষ আপডেট: ১৭ অগস্ট ২০২৩ ১৩:০৯
Share:
০১ ২৪

ভারতে স্বাধীনতা এসেছিল ১৯৪৭ সালের ১৫ অগস্ট। দেশকে স্বাধীনতা এনে দেওয়ার জন্য যেমন হাজার হাজার স্বাধীনতা সংগ্রামীর অবদান রয়েছে, তেমনই স্বাধীনতা লাভের পর দেশকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার নেপথ্যেও রয়েছে অনেকের অবদান। সে রকমই এক জন হলেন সমাজকর্মী বিন্দেশ্বর পাঠক। দেশের ৭৭তম স্বাধীনতা দিবসেই হৃদ্‌রোগে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যু হয়েছে তাঁর। মৃত্যুর সময় বয়স হয়েছিল ৮০ বছর।

০২ ২৪

বিন্দেশ্বর ছিলেন দেশের সুলভ শৌচালয় আন্দোলনের পথিকৃৎ। তিনি পরিচিত ছিলেন ভারতের ‘টয়লেটম্যান’ হিসাবেও। অনেকে তাঁকে ডাকতেন ‘স্বচ্ছতার সান্তা ক্লজ’ নামেও।

Advertisement
০৩ ২৪

স্বাধীনতা দিবসের সকালে নিজের অফিসে পতাকা উত্তোলন করেন বিন্দেশ্বর। পতাকা উত্তোলনের পরই তিনি জ্ঞান হারান। সঙ্গে সঙ্গে তাঁকে দিল্লির এমস হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়। সেখানেই চিকিৎসকরা তাঁকে মৃত বলে ঘোষণা করেন। বিন্দেশ্বরের মৃত্যুতে শোকজ্ঞাপন করেছেন রাষ্ট্রপতি দ্রৌপদী মুর্মু, প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী-সহ অন্যান্যরা।

০৪ ২৪

সুলভ শৌচালয় আন্দোলনের পথিকৃৎ বিন্দেশ্বর স্বচ্ছ ভারতের স্বপ্ন দেখা শুরু করেছিলেন ফাঁকা পকেট নিয়ে। মাত্র ৭৫ টাকা নিয়ে যাত্রা শুরু করেন তিনি।

০৫ ২৪

বিন্দেশ্বর ‘সুলভ ইন্টারন্যাশনাল’-এর প্রতিষ্ঠাতা। ‘সুলভ ইন্টারন্যাশনাল’ একটি অসরকারি সংস্থা যা শিক্ষার মাধ্যমে মানবাধিকার, পরিবেশের স্বচ্ছতা, বর্জ্য পদার্থ ব্যবস্থাপনা এবং সমাজ সংস্কারের কাজ করে। ১৯৭০ সালে বিন্দেশ্বর এই সংস্থার প্রতিষ্ঠা করেন।

০৬ ২৪

বিন্দেশ্বরের মূল লক্ষ্য ছিল প্রকাশ্যে প্রস্রাব এবং মলত্যাগ করা থেকে সাধারণ মানুষকে বিরত রাখা। দেশ জুড়ে রাস্তায় রাস্তায় সুলভ শৌচালয় তৈরির ভাবনাও তাঁরই।

০৭ ২৪

বিন্দেশ্বর এবং তাঁর সংস্থার প্রচেষ্টার কারণে দেশের বিভিন্ন জায়গায় সুলভ মূল্যে শৌচালয় তৈরি সম্ভব হয়েছিল। যা লক্ষ লক্ষ মানুষের জীবনকে উন্নত এবং স্বাস্থ্যকর করে তুলেছে।

০৮ ২৪

দেশের প্রান্তিক মানুষের জীবনধারাকে উন্নত করার লক্ষ্যেও দীর্ঘ দিন কাজ করেছেন বিন্দেশ্বর। সমাজের বাধা, বঞ্চনা এবং অপমানের হাত থেকে বিধবাদের মুক্তি দিতেও অগ্রণী ভূমিকা পালন করেছিলেন তিনি।

০৯ ২৪

বিন্দেশ্বরের এই যাত্রা কী ভাবে শুরু হয়েছিল? অনুপ্রেরণাই বা কোথা থেকে পেয়েছিলেন? বিন্দেশ্বর এক সাক্ষাৎকারে জানিয়েছিলেন, পটনায় এক শৌচকর্মীর নবববিবাহিত বধূকে বর্জ্যপদার্থ তোলার সময় কাঁদতে দেখে ‘সুলভ ইন্টারন্যাশনাল’ তৈরির ভাবনা আসে বিন্দেশ্বরের মাথায়।

১০ ২৪

আরও একটি ঘটনা নাড়া দিয়েছিল বিন্দেশ্বেরকে। দিল্লিতে ষাঁড়ের আক্রমণে গুরুতর জখম হয় এক শিশু। কিন্তু সে মেথর পরিবারের সদস্য হওয়ায় কেউ সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেয়নি। বিন্দেশ্বর এবং তাঁর কয়েক জন বন্ধু মিলে ওই শিশুটিকে হাসপাতালে নিয়ে গেলেও সে মারা যায়। এর পরই স্বচ্ছতার জন্য এবং মেথর শ্রেণির মানুষদের জন্য কাজ করার অঙ্গীকার নেন তিনি।

১১ ২৪

লক্ষ্যপূরণের জন্য বন্ধুদের কাছে হাত পাততে হয়েছিল বিন্দেশ্বরকে। ১৯৭০ সালে, ৯ জন বন্ধুর কাছ থেকে ৫ টাকা, ১০ টাকা করে নিয়ে ৭৫ টাকা সংগ্রহ করেছিলেন তিনি।

১২ ২৪

অফিস ভাড়া নেওয়ার পয়সা না থাকায় এক বন্ধুর বাড়িতেই ‘সুলভ ইন্টারন্যাশনাল’ খুলেছিলেন বিন্দেশ্বর। স্বচ্ছ সমাজ গড়়ার লক্ষ্যে শুরু হয় দিন-রাত কঠোর পরিশ্রম।

১৩ ২৪

বেশ কয়েক দিন সক্রিয় রাজনীতিতেও জড়িয়ে পড়েছিলেন বিন্দেশ্বর। কিন্তু এর ফলে তিনি তাঁর লক্ষ্য থেকে বিচ্যুত হচ্ছেন মনে করে রাজনীতি থেকে দূরে সরে আসেন।

১৪ ২৪

১৯৭০ সালে যাত্রা শুরু করে ১৯৭৪ সালের মধ্যে পটনায় প্রায় ৫০টি সুলভ শৌচালয় তৈরি করে ফেলেছিলেন বিন্দেশ্বর। ১৯৮০ সালের মধ্যে পটনার প্রায় ২৫ হাজার মানুষকে প্রকাশ্যে মলত্যাগ করার প্রবণতা থেকে সরিয়ে এনেছিলেন।

১৫ ২৪

বিন্দেশ্বরের জন্ম বিহারের বৈশালী জেলার রামপুর বঘেল গ্রামে। স্কুলের পড়়া শেষ করার পর তিনি পটনার বিএন কলেজ থেকে সমাজবিজ্ঞানে স্নাতক হন। সমাজবিজ্ঞানের শিক্ষক হওয়ার ইচ্ছা থাকলেও সেই স্বপ্নপূরণ হয়নি। যদিও তিনি অন্য চাকরির সুযোগ পেয়েছিলেন।

১৬ ২৪

শেষ পর্যন্ত বিন্দেশ্বর ‘বিহার গান্ধী জন্মশতবর্ষ কমিটি’ নামের সংগঠনে সমাজকর্মী হিসেবে যোগ দেন। গান্ধীজির ১০০তম জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে পটনায় এই সংস্থা তৈরি করা হয়েছিল। যাঁরা হাতে করে মল-সহ অন্যান্য বর্জ্য পরিষ্কার করেন, তাঁদের বিভিন্ন রোগ থেকে সুরক্ষিত রাখাই ছিল এই সংস্থার মূল লক্ষ্য।

১৭ ২৪

তবে সমাজ সংস্কারের কাজ করতে গিয়ে অনেক বাধার মুখেও পড়তে হয় ‘টয়লেটম্যান’ বিন্দেশ্বরকে। তাঁকে নিয়ে প্রায়ই ঠাট্টা-তামাশা চলত পাড়ায় পাড়ায়। চরম অর্থ সঙ্কটের মুখেও পড়তে হয় তাঁকে। এক সময় তাঁর কাছে খাবার টাকাও ছিল না। ঘুমোতেন প্ল্যাটফর্মে। বিন্দেশ্বরের লক্ষ্যপূরণের জন্য তাঁর স্ত্রী এবং মা-ও নিজেদের গয়না বিক্রি করে তাঁর হাতে টাকা তুলে দেন। প্রথম সুলভ শৌচালয় বিহারের আরা শহরে তৈরি করেন বিন্দেশ্বর।

১৮ ২৪

বিন্দেশ্বরের শ্বশুর ছিলেন খ্যাতনামী চিকিৎসক। কিন্তু জামাই কী করেন, তা কাউকে বলতে পারতেন না তিনি। মেয়ের জীবন নষ্ট হয়ে যেতে পারে ভেবেও তিনি চিন্তিত ছিলেন। এ নিয়ে বিন্দেশ্বরকে কথাও শোনাতে ছাড়তেন না। কিন্তু শ্বশুরের বাক্যবাণ বিন্দেশ্বরকে দমাতে পারেনি।

১৯ ২৪

সুলভ শৌচালয় তৈরির পাশাপাশি এই শৌচালয়গুলির বর্জ্য পদার্থ থেকে বায়োগ্যাস এবং জৈবসার তৈরির চিন্তাভাবনাও সেরে ফেলেছিলেন বিন্দেশ্বর। দেশে গ্রিনহাউস গ্যাসের নির্গমন কমানোর জন্যও সচেষ্ট হয়েছিলেন। সুদূর দক্ষিণ আফ্রিকা পর্যন্ত বিন্দেশ্বরের চিন্তা প্রসারিত হয়েছিল।

২০ ২৪

সমাজসেবামূলক কাজের জন্য পদ্মভূষণ-সহ দেশে-বিদেশে বহু পুরস্কার পেয়েছেন বিন্দেশ্বর। যার মধ্যে এনার্জি গ্লোব পুরস্কার, দুবাই ইন্টারন্যাশনাল অ্যাওয়ার্ড, স্টকহোম ওয়াটার প্রাইজ এবং লিজেন্ড অফ প্ল্যানেট অ্যাওয়ার্ড অন্যতম।

২১ ২৪

১৯৯২ সালে পোপ দ্বিতীয় জন পল বিন্দেশ্বরকে ‘সেন্ট ফ্রান্সিস’ পুরস্কারে সম্মানিত করেন এবং সমাজসেবামূলক কাজের জন্য তাঁর প্রশংসা করেন। ২০১৬ সালে, নিউইয়র্ক সিটির মেয়র ১৪ এপ্রিল দিনটিকে ‘বিন্দেশ্বর পাঠক দিবস’ হিসাবে ঘোষণা করেন।

২২ ২৪

‘সুলভ ইন্টারন্যাশনাল’ সারা দেশের রেলস্টেশন এবং বিভিন্ন মন্দিরে শৌচালয় পরিচালনা এবং রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্বে রয়েছে। ভারতের হাজারেরও বেশি শহরে শৌচালয় তৈরি করিয়েছে এই সংস্থা। এই সব শৌচালয়ে ব্যবহারকারীদের কাছ থেকে নামমাত্র টাকা নেওয়া হয়। ২০২০ সালে ‘সুলভ ইন্টারন্যাশনাল’ ৪৯০ কোটির ব্যবসা করেছিল।

২৩ ২৪

শুধু শৌচালয় তৈরি নয়, সমাজের অর্থনৈতিক ভাবে দুর্বল এবং পিছিয়ে পড়া পরিবারের সন্তানদের বিনামূল্যে কম্পিউটার, টাইপিং, বৈদ্যুতিক ব্যবসা, কাঠের কাজ, চামড়ার কারুশিল্প, সেলাই তৈরির প্রশিক্ষণও দেয় বিন্দেশ্বেরর এই সংস্থা। বিধবাদের ভাতাও প্রদান করে।

২৪ ২৪

দিল্লিতে শৌচালয় সংক্রান্ত একটি যাদুঘরও তৈরি করিয়েছেন বিন্দেশ্বর। তৈরি করিয়েছেন একটি ইংলিশ মিডিয়াম স্কুলও। একাধিক বইও লিখেছেন তিনি। তার মধ্যে প্রধানমন্ত্রী মোদীর জীবনী উল্লেখযোগ্য।

—ফাইল চিত্র।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
Follow us on:
Advertisement
আরও গ্যালারি
Advertisement