কিশোরী বয়স পার করার সঙ্গে সঙ্গেই অভিনয় জীবনে কেরিয়ার শুরু। ছোট পর্দায় একটি হিন্দি ধারাবাহিকে অভিনয় করে রাতারাতি জনপ্রিয় হয়ে ওঠেন। কেরিয়ারের চূড়ায় থাকাকালীন এক টেলি অভিনেতার সঙ্গে বিয়ে। ন’বছর পর বিচ্ছেদ। টেলিপাড়া থেকে কেন হঠাৎ ‘উধাও’ হন ‘কুমকুম’ খ্যাত জুহি পরমর?
১৯৮০ সালের ১৪ ডিসেম্বরে মধ্যপ্রদেশের উজ্জয়িনীতে এক গুজরাতি পরিবারে জন্ম জুহির। উজ্জয়িনীতে জন্ম হলেও বাবা-মা এবং বোনের সঙ্গে রাজস্থানের জয়পুরে থাকতেন তিনি। সেই শহরেই বেড়ে ওঠা।
১৯৯৮ সালে সম্প্রচারিত ‘ওহ্’ নামের হিন্দি ধারাবাহিকে প্রথম অভিনয়ের সুযোগ পান জুহি। এক বছর পর রাজস্থানের এক সৌন্দর্য প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করে বিজয়ী হন তিনি।
‘চুড়িয়া’, ‘শাহীন’, ‘ইয়ে জীবন হ্যায়’, ‘রিস্তে’-র মতো একাধিক হিন্দি ধারাবাহিকে অভিনয় করেন জুহি। ২০০১ সালে মুক্তিপ্রাপ্ত ‘রঙ্গাই জানে রঙ্গমা’ নামের একটি গুজরাতি ছবিতে অভিনয়ও করেন তিনি।
তিন থেকে চার বছর অভিনয় জগতের সঙ্গে যুক্ত থাকলেও জুহি জনপ্রিয়তা পান ‘কুমকুম-এক প্যারা সা বন্ধন’ ধারাবাহিকে মুখ্য চরিত্রে অভিনয় করে। রাতারাতি ছোট পর্দার অভিনেত্রী হিসাবে খ্যাতি ছড়িয়ে পড়ে তাঁর। ‘কুমকুম’ নামেই অধিক পরিচিতি পাওয়া শুরু করেন তিনি। ২০০২ সাল থেকে ২০০৯ সাল পর্যন্ত এই ধারাবাহিক সম্প্রচারিত হয়েছিল।
কুমকুমের চরিত্রে অভিনয় করে জুহি এতই পরিচিতি পান যে, ‘বিরাসত’, ‘সঞ্জীবনী’, ‘কসৌটি জিন্দেগি কে’ এবং ‘কিঁউ কি সাস ভি কভি বহু থি’র মতো জনপ্রিয় ধারাবাহিকে অতিথি শিল্পী হিসাবে অভিনয় করতে দেখা যায় তাঁকে।
জনপ্রিয়তার প্রথম সারিতে থাকা অভিনেত্রী ছোট পর্দার পাশাপাশি অভিনয়ের সুযোগ পেয়েছেন বড় পর্দাতেও। ‘পহেচান: দ্য ফেস অফ ট্রুথ’, ‘পদ্দুরাম’ এবং ‘এক থা টাইগার’-এর মতো একাধিক হিন্দি ছবিতে অভিনয় করেন জুহি।
কর্মসূত্রে জুহির সঙ্গে আলাপ হয় ব্যবসায়ী এবং টেলি অভিনেতা সচিন শ্রফের। অভিনয়ের পাশাপাশি সঞ্চালনাও করতেন সচিন। প্রথম আলাপ থেকে বন্ধুত্ব, বন্ধুত্ব থেকে প্রেম। ২০০৯ সালে সচিনের সঙ্গে সাত পাকে বাঁধা পড়েন জুহি। সেই সময় কেরিয়ারের শীর্ষে ছিলেন অভিনেত্রী। জয়পুরে রাজকীয় অনুষ্ঠানের মাধ্যমে বিয়ে সারেন তাঁরা।
বিয়ের পর ধারাবাহিক জগৎ থেকে নিজেকে হঠাৎ দূরে সরিয়ে নেন জুহি। একাধিক রিয়্যালিটি শোয়ের সঞ্চালনা করতে দেখা গেলেও ধারাবাহিকে অভিনয় করেননি তিনি।
২০১১ সালে ‘বিগ বস্’-এর পঞ্চম সিজ়নে প্রতিযোগী হিসাবে অংশগ্রহণ করে বিজয়ী হন জুহি। ২০১৩ সালে কন্যাসন্তান সামাইরা শ্রফের জন্ম দেন জুহি। কন্যার যখন তিন বছর বয়স তখন আবার ধারাবাহিক জগতে ফেরেন তিনি। সিদ্ধার্থ কুমার তিওয়ারির পৌরাণিক ধারাবাহিক ‘কর্মফলদাতা শনি’ ধারাবাহিকে দেখা যায় তাঁকে।
দীর্ঘ বিরতির পর ছোট পর্দায় আগমনের খবর সমাজমাধ্যমে জানিয়েছিলেন জুহি। নিজের ছবি পোস্ট করলে জুহিকে দেখে চমকে গিয়েছিলেন তাঁর অনুরাগীরা। ধারাবাহিকে অভিনয়ের জন্য নিজের ওজন ১৭ কিলোগ্রাম কমিয়ে ফেলেছিলেন অভিনেত্রী।
এক পুরনো সাক্ষাৎকারে জুহি জানিয়েছিলেন, বিয়ের পর অভিনয়ের জন্য একাধিক প্রস্তাব পেয়েছিলেন তিনি। কিন্তু সন্তান বড় হওয়ার পর জুহি তার সামনে নিজেকে কর্মরতা মা হিসাবে তুলে ধরতে চেয়েছিলেন।
অভিনয় জগতে প্রত্যাবর্তনের মাঝেই ব্যক্তিগত জীবনে ছন্দপতন হয় জুহির। ২০১৮ সালে বিবাহবিচ্ছেদ হয় জুহি এবং সচিনের। টেলিপাড়ায় কানাঘুষো শোনা যায়, বিচ্ছেদের অনেক আগে থেকেই নাকি আলাদা থাকছিলেন দুই টেলি তারকা। দু’জনের মধ্যে অধিকাংশ সময় অশান্তি লেগে থাকত বলেও শোনা যেত।
বিচ্ছেদ প্রসঙ্গে জুহি পরে জানিয়েছিলেন, সচিনের সঙ্গে প্রেমহীন দাম্পত্য বয়ে নিয়ে যাওয়া তাঁর পক্ষে সম্ভব হচ্ছিল না। বিয়ের ব্যর্থতার জন্য জুহিকে দায়ী করেছিলেন সচিন। কিন্তু সেই অভিযোগ মানতে চাননি অভিনেত্রী।
বিচ্ছেদের পরে কন্যা সামাইরার দায়িত্ব পান জুহি। কন্যার ভবিষ্যতের কথা ভেবে প্রাক্তন স্বামীর সঙ্গে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক বজায় রেখেছেন তিনি। সামাইরা যেন তার বাবার স্নেহ থেকে বঞ্চিত না হয়, সে দিকে খেয়াল রাখেন সচিনও।
বিচ্ছেদের পর ‘তন্ত্র’ এবং ‘হমারি ওয়ালি গুড নিউজ়’ নামের দু’টি হিন্দি ধারাবাহিকে অভিনয় করেন জুহি। টেলিপাড়া সূত্রে খবর, ২০১৯ সালে ভুল চিকিৎসার কারণে মৃত্যুমুখে পড়েছিলেন তিনি। জুহি এক পুরনো সাক্ষাৎকারে জানিয়েছিলেন, হোলি উৎসব পালন করতে বান্ধবী আশকা গোরাডিয়ার বাড়ি গিয়েছিলেন তিনি।
বান্ধবীর বাড়ি গিয়ে আচমকাই দম বন্ধ হয়ে যায় জুহির। নিঃশ্বাসের সমস্যা শুরু হয়। জুহিকে নিকটবর্তী হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়। অভিযোগ, সেখানে ভুল ওষুধ দেওয়ার ফলে সমস্যা আরও বেড়ে যায়। সমস্যা বুঝতে পেরে জুহিকে ওই হাসপাতাল থেকে বার করে নিয়ে আসেন আশকা। দ্রুত অন্য হাসপাতালে ভর্তি করানোর পরে সঠিক চিকিৎসায় ধীরে ধীরে সুস্থ হয়ে ওঠেন জুহি।
এক পুরনো সাক্ষাৎকারে জুহি জানিয়েছিলেন, আপাতত তাঁর বিয়ের কোনও পরিকল্পনা নেই। কারণ বিবাহবিচ্ছেদ তাঁকে অনেক কিছু শিখিয়েছে। এখন কন্যাকে ঘিরে তাঁর জীবন আবর্তিত হলেও সারা জীবন যে তিনি একা থাকবেন না, সে কথাও জানিয়েছিলেন অভিনেত্রী।
২০২৩ সালে চাঁদনি কোঠির সঙ্গে গাঁটছড়া বাঁধেন জুহির প্রাক্তন স্বামী সচিন। অভিনয় জগতের সঙ্গে যুক্ত নন, চাঁদনি পেশায় গৃহসজ্জাশিল্পী।
বিনোদন জগতে দীর্ঘ কেরিয়ার থাকা জুহি এ বার হাজির হয়েছেন ওটিটির পর্দায়। ‘ইয়ে মেরি ফ্যামিলি’ নামের ওয়েব সিরিজ়ে অভিনয় করতে দেখা গিয়েছে তাঁকে।
সমাজমাধ্যমে জুহির অনুগামীমহল নজরে পড়ার মতো। ইতিমধ্যে ইনস্টাগ্রামে জুহির অনুগামীর সংখ্যা সাড়ে ন’লক্ষের গণ্ডি পার করে ফেলেছে।