Bhupat Singh Chauhan

ভারতে শতাধিক খুন করে পালান পাকিস্তানে, পাল্টান ধর্মও! শেষ জীবনে দুধ বেচতেন ভয়ঙ্কর ডাকাত

ভূপত সিংহ চৌহান। ডাকাতি আর খুনের বহু ঘটনা ঘটিয়েছেন তিনি। তাঁর ভয়াবহ ডাকাতির খবর স্থান পেয়েছিল আমেরিকার সংবাদপত্রেও।

Advertisement
নিজস্ব প্রতিবেদন
কলকাতা শেষ আপডেট: ০৫ এপ্রিল ২০২৩ ০৮:২৬
Share:
০১ ১৫

দাউদ ইব্রাহিম। নামটি শুনলেই মনে আসে সরু গোঁফ, চোখে কালো সানগ্লাস দেওয়া এক ব্যক্তির কথা। যিনি ভারত সরকারের ‘মোস্ট ওয়ান্টেড’দের তালিকার একেবারে ওপরের দিকে রয়েছেন। প্রকাশ্যে স্বীকার না করলেও, তিনি যে পাকিস্তানের গোপন ডেরায় আত্মগোপন করে আছেন, তা বিশ্বাস করেন অনেকেই। দাউদের মতো আরও এক জন কুখ্যাত অপরাধীকে পাকিস্তান শরণ দিয়েছিল সেই পঞ্চাশের দশকে।

০২ ১৫

যাঁর কথা বলা হচ্ছে, তিনি ভারত সরকারের কুখ্যাত অপরাধীদের তালিকায় ছিলেন আমৃত্যু। তিনিও দাউদের মতোই আশ্রয় নিয়েছিলেন প্রতিবেশী রাষ্ট্রে। দাউদ ইব্রাহিমের মতোই তিনিও গ্রহণ করেছিলেন পাকিস্তানের নাগরিকত্ব। সেখানেই মারা যান তিনি।

Advertisement
০৩ ১৫

তিনি ভূপত সিংহ। পুরো নাম ভূপত সিংহ চৌহান। ডাকাতি আর খুনের বহু ঘটনা ঘটিয়েছেন তিনি। তাঁর ভয়াবহ ডাকাতির খবর স্থান পেয়েছিল আমেরিকার সংবাদপত্রেও।

০৪ ১৫

পেশায় ডাকাত হলেও, লুটপাট করা বহুমূল্য ধনসম্পদ নাকি তিনি বিলিয়ে দিতেন গরিব মানুষের মধ্যে। গরিব গ্রামবাসীদের সমর্থন সহজেই পেতেন ভূপত ‘রবিন হুড’ সাজতেন বলে মনে করা হয়। ডাকাতি পেশা হলেও, কখনও কোনও মহিলাকে নাকি অসম্মান করতেন না ভূপত। আর এমন ভাবমূর্তির কারণেই বার বার চেষ্টা করেও তাঁর নাগাল পেত না পুলিশ।

০৫ ১৫

সাল ১৯৪১। ব্রিটিশ নিয়ন্ত্রণাধীন ভারতে অধুনা গুজরাতের বরোদায় রাজত্ব করতেন প্রতাপ সিংহ রাও গায়েকোয়াড। এক দিন রাজা এক ক্রীড়া প্রতিযোগিতার আয়োজন করেন। দেশের বিভিন প্রান্ত থেকে রাজাদের প্রতিনিধিরা অংশ নিয়েছিলেন এই প্রতিযোগিতায়। তাতে অংশ নিয়ে ক্রীড়া প্রতিযোগিতার ৬টি বিভাগে প্রথম এবং ৭টি প্রতিযোগিতায় দ্বিতীয় স্থান পান ভূপত।

০৬ ১৫

বরনোনিয়ার রাজার আস্তাবলের কর্মী ছিলেন ভূপত। লম্বা সুঠাম এবং পেশিবহুল শরীরের কারণে সহজেই সবার মধ্যে নজরে পড়তেন তিনি। সেখানেই গুলি চালানো, অশ্বারোহণ এবং গাড়ি চালানো শেখেন তিনি। অল্প সময়েই রাজার প্রিয়পাত্র হয়ে ওঠেন। ১৯৪৭ সালে দেশ স্বাধীন হওয়ার কিছু দিন পরে রাজার মৃত্যু হলে, রাজার বিরোধীদের রোষানলে পড়েন তিনি। তাঁর পিছনে পড়ে পুলিশও।

০৭ ১৫

এরপরেই পলাতক ভূপত হয়ে ওঠেন কুখ্যাত ডাকাত। নিজের অনুগামী রানা ভগবান ডাঙ্গরকে নিয়ে তৈরি করেন দল। একের পর এক ডাকাতির ঘটনা ঘটিয়ে পুলিশের ঘুম ছুটিয়ে দেন তাঁরা। তিন বছরে ৮৭টি হত্যা এবং ৯ লক্ষ টাকার ডাকাতি করেছিলেন তাঁরা।

০৮ ১৫

ভূপত ডাকাত থাকাকালীনই জুনাগড়ে একটি দাঙ্গার ঘটনা ঘটেছিল। সেই দাঙ্গায় হিন্দু এবং মুসলমান দুই সম্প্রদায়ের মহিলাদের প্রাণ এবং সম্ভ্রম রক্ষা করেছিলেন ভূপত। শোনা যায় বহু মানুষের প্রাণও বাঁচিয়েছিলেন তিনি।

০৯ ১৫

ভূপতকে ধরতে বার বার ব্যর্থ হয়ে বোম্বাই প্রেসিডেন্সির (বর্তমানে গুজরাত) প্রশাসন এক জন দক্ষ পুলিশ অফিসারকে নিয়োগ করে। তাঁর নাম বিষ্ণুগোপাল কানিতকর। তিনি দায়িত্ব নিয়েই একটি বিশেষ দল গঠন করেন। ভূপত এ কথা জানতে পেরে চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দেন প্রশাসনের দিকে। নামধাম আর সময় জানিয়ে পুলিশের উদ্দেশে চিঠি লিখে ডাকাতি করতে শুরু করেন তাঁরা।

১০ ১৫

বার বার কানিতকর চেষ্টা করেও ধরতে পারছিলেন না ভূপতকে। এর পর বিকল্প কৌশল খাটিয়ে কানিতকর শুরু করেন ভূপতের সঙ্গীদের এনকাউন্টার। একে একে পুলিশের গুলিতে মারা যেতে থাকেন তাঁর সঙ্গীরা। এক দিন পুলিশের গুলিতে মারা যান তাঁর সবচেয়ে বিশ্বস্ত বন্ধু রানা ভগবান ডাঙ্গর। তার পরেই তিনি বুঝতে পারেন, ভারতের মাটি আর তাঁর কাছে নিরাপদ নয়।

১১ ১৫

পুলিশের হাত থেকে বাঁচতে ১৯৫২ সালের ৬ জুন গুজরাতের কচ্ছের রন দিয়ে সীমানা অতিক্রম করে পাকিস্তানে প্রবেশ করেন ভূপত-সহ তাঁর তিন অনুগামী। সীমানা অতিক্রম করতেই তাঁরা ধরা পড়েন পাকিস্তান পুলিশের হাতে। এক বছর জেল হয় তাঁদের। এক বছর কারাবাসের পর তিনি দেশে ফিরতেও চেয়েছিলেন। কিন্তু পাকিস্তানে বসেই তিনি জানতে পারেন, ভারতের পুলিশ তাঁকে শতাধিক খুন এবং ডাকাতির ঘটনায় গ্রেফতার করতে সব প্রস্তুতি সেরে রেখেছে।

১২ ১৫

এমন পরিস্থিতি দেখে পাকিস্তানেই থাকার সিদ্ধান্ত নেন ভূপত। পাকিস্তানের থাকাকালীন ধর্মান্তরিত হন তিনি। হিন্দু ধর্ম ছেড়ে ইসলাম গ্রহণ করার পর তাঁর নাম হয়েছিল আমিন ইউসুফ। সেখানে বিয়ে করেন তিনি। পরবর্তী জীবনে দুধ বিক্রিকে নিজের পেশা হিসেবে বেছে নেন।

১৩ ১৫

ভূপতকে ফিরে পেতে পাকিস্তানের কাছে একাধিক বার দরবার করেছিল ভারত সরকার। ১৯৫৬ সালের ভারতের প্রধানমন্ত্রী জহওরলাল নেহরু এবং পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী মহম্মদ আলি বোগরার মধ্যে ভূপতকে ফেরানো নিয়ে কথাও হয়। পাক প্রধানমন্ত্রী ভূপতকে ভারতের হাতে তুলে দিতে সম্মতিও প্রকাশ করেছিলেন। কিন্তু তিনি শেষ পর্যন্ত নিজের কথা রাখেননি।

১৪ ১৫

তাঁকে ফিরিয়ে আনার আলোচনা শুরু হলে নিজেকে ‘প্রকৃত পাকিস্তানি’ বলে দাবি করেছিলেন ভূপত ওরফে ইউসুফ আমিন। কোনও ভাবেই যে তিনি আর ভারতে ফিরতে চান না তাও জানিয়ে দেন। জুনাগড়কে কী ভাবে ‘জোর করে’ ভারত অন্তর্ভুক্ত করেছে, তা নিয়ে একটি সিনেমা তৈরি করতে চেয়েছিলেন তিনি।

১৫ ১৫

এর পর ভূপত ওরফে ইউসুফ আমিনকে পাকাপাকি ভাবে পাকিস্তানে থাকার অনুমতি দেওয়া হয়। ২০০৬ সালে করাচিতেই শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন তিনি। সেখানেই ইউসুফ আমিনকে কবর দেওয়া হলে সমাপ্তি ঘটে এক ঐতিহাসিক অধ্যায়ের।

সব ছবি সংগৃহীত।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
Follow us on:
Advertisement
আরও গ্যালারি
Advertisement