China Pakistan Relation

বন্ধু হারাবে পাকিস্তান? চিন-বিরোধী রোষানলে পুড়ছে দেশেরই একাংশ, ৯০ দিনের চরমসীমা পেল বেজিং

পাকিস্তানের উপর দিয়ে তিন হাজার কিলোমিটারের চিন-পাকিস্তান ইকোনমিক করিডর তৈরি করা হচ্ছে। যার অধিকাংশই বালুচিস্তানের উপর দিয়ে যাওয়ার কথা। সেখানেই ধাক্কা খাচ্ছে চিন।

Advertisement
আনন্দবাজার অনলাইন ডেস্ক
কলকাতা শেষ আপডেট: ১৮ অগস্ট ২০২৩ ০৭:৫৩
Share:
০১ ২২

পাকিস্তানের পরম বন্ধু কি এ বার তাদের দিক থেকে মুখ ফিরিয়ে নেবে? অর্থনৈতিক সঙ্কটের মুখে কি বন্ধু হারাবে ইসলামাবাদ? দেশের অভ্যন্তরীণ জটিলতায় সেই আশঙ্কা মাথাচাড়া দিয়ে উঠছে।

০২ ২২

গত কয়েক মাসে পাকিস্তানের অর্থনীতির উপর দিয়ে যেন ঝড় বয়ে গিয়েছে। দেশের বৈদেশিক মুদ্রার ভান্ডার তলানিতে ঠেকেছে। ক্রমে ইসলামাবাদের উপর ভারী হয়েছে ঋণের বোঝা।

Advertisement
০৩ ২২

এই পরিস্থিতিতে দেশটি দেউলিয়া হয়ে যেতে বসেছিল। তার দিকে বন্ধুর মতো হাত বাড়িয়ে দিয়েছে চিন। তারা পাকিস্তানকে অর্থসাহায্য করেছে। সেখানে একাধিক উন্নয়নমূলক প্রকল্প শুরু করেছে।

০৪ ২২

পাকিস্তানের উপর দিয়ে তিন হাজার কিলোমিটারের চিন-পাকিস্তান ইকোনমিক করিডর (সিপিইসি) তৈরি করছে বেজিং। এই প্রকল্পের আওতায় পাকিস্তানের বিস্তীর্ণ অংশে রাস্তা এবং রেলপথ নির্মিত হবে।

০৫ ২২

চিনের কাশগড় থেকে পাক-অধিকৃত কাশ্মীর হয়ে ইসলামাবাদ, লাহোর পেরিয়ে আরব সাগরের তীরে গদর পর্যন্ত বিস্তৃত সিপিইসি। এই করিডর নির্মাণের কাজ শুরু করে দিয়েছে চিন।

০৬ ২২

তবে চিন অবশ্য নিঃস্বার্থে কিছু করছে না। পাকিস্তানে সিপিইসি তৈরি হলে আখেরে বেজিংয়ের অনেক লাভ। এর মাধ্যমে পাকিস্তানের মধ্যে দিয়ে আরব সাগর পর্যন্ত অবাধে যাতায়াত করতে পারবে তারা। তবে চিনের পাশাপাশি এতে লাভ হবে পাকিস্তানেরও।

০৭ ২২

সিপিইসি-র অধিকাংশই কিন্তু পাকিস্তানের বালুচিস্তান প্রদেশের উপর দিয়ে পরিকল্পিত। আর এখানেই ধাক্কা খাচ্ছে চিন। পাকিস্তানের এই বিশেষ প্রদেশটিতে তারা পদে পদে প্রতিহত হচ্ছে।

০৮ ২২

বালুচিস্তানের মানুষের সঙ্গে পাকিস্তান সরকারের বিরোধ দীর্ঘ দিনের। এই অঞ্চলের মানুষ পাক সরকারকে স্বীকার করে না। বরং তাদের দাবি, জোর করে তাদের পাকিস্তানের অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে।

০৯ ২২

বালুচিস্তানের দাবি, পাকিস্তানের জন্মের পর ১৯৪৮ সালের ২৭ মার্চ অন্যায় ভাবে বালুচিস্তান দখল করেছে পাক সেনা। তার আগে এটি একটি স্বাধীন প্রদেশ ছিল।

১০ ২২

উল্লেখ্য, বর্তমানে পাকিস্তানের সবচেয়ে বড় প্রদেশ বালুচিস্তান। এটি নানা সম্পদের খনি। বালুচিস্তানের মাটিতে লুকিয়ে পাকিস্তানের অর্থনৈতিক সাফল্যের বীজ।

১১ ২২

অথচ, এই বালুচিস্তানকেই সবচেয়ে অবহেলা করা হয় বলে অভিযোগ। এখানে পাক সরকারের কোনও উন্নয়নমূলক কাজ হয় না। তাই অনেক ক্ষেত্রেই এখনও অনেক পিছিয়ে বালুচিস্তান। অভিযোগ, এই প্রদেশের মানুষকে পিছনে রেখে কেবল এখানকার সম্পদ ব্যবহার করে কার্যসিদ্ধি করে পাক সরকার।

১২ ২২

পাকিস্তানের অধীনতা থেকে মুক্ত হয়ে স্বাধীন হওয়ার দাবিতে বালুচিস্তানে গড়ে উঠেছে বালুচিস্তান লিবারেশন আর্মি (বিএলএ)। এটি একটি বিচ্ছিন্নতাবাদী গোষ্ঠী, যার প্রধান এবং একমাত্র দাবি, পাকিস্তানের বশ্যতা ছিন্ন করে বেরিয়ে যাওয়া।

১৩ ২২

বিএলএ পাকিস্তানের সেনার সঙ্গে হামেশাই সংঘর্ষে লিপ্ত হয়। পাক সরকার এবং সেনা তাদের প্রধান শত্রু। আর চিন সেই পাক সেনার সঙ্গেই হাত মিলিয়েছে। ফলে চিনকে বালুচিস্তান থেকে তাড়িয়ে দিতে কোমর বেঁধে নেমেছে বিএলএ।

১৪ ২২

পাকিস্তানের সঙ্গে মিত্রতা এবং নানা প্রকল্পের কাজের সূত্রে বহু চিনা নাগরিক এই দেশে আসেন। নানা পেশার সঙ্গে তাঁরা যুক্তও হয়ে থাকেন। এই চিনাদের উপর মুহুর্মুহু হামলা হয় বালুচিস্তানে।

১৫ ২২

কখনও চিনা প্রযুক্তিবিদদের গাড়ি আত্মঘাতী বোমা হামলায় উড়িয়ে দেওয়া হয়, কখনও করাচিতে চিনা শিক্ষক, শিক্ষিকাকে গুলি করে খুন করেন বিএলএ-র সৈনিকেরা। চিনা দূতাবাসেও হামলার ঘটনা বিরল নয়।

১৬ ২২

সম্প্রতি, এই বিএলএ-র তরফে চিনকে চূড়ান্ত সতর্কবার্তা দেওয়া হয়েছে। একটি ভিডিয়োবার্তার মাধ্যমে বেজিংকে ৯০ দিন সময় দিয়েছে বিএলএ। বলা হয়েছে, ওই সময়ের মধ্যে বালুচিস্তান না ছাড়লে চিনের কাউকে ছাড়বে না তারা। শুরু হবে লাগাতার হামলা।

১৭ ২২

বালুচিস্তানের গদর বন্দর সিপিইসি-র গুরুত্বপূর্ণ একটি কেন্দ্র। এই বন্দরকে ঘিরে অনেক উন্নয়ন এবং বাণিজ্যিক লাভের অঙ্ক কষেছে চিন। এখানে চিনের অনেক মানুষ এসে বাস করছেন।

১৮ ২২

তাই বিএলএ-র সতর্কবার্তা চিনকে চিন্তায় ফেলতে পারে। এই পরিস্থিতিতে বিচ্ছিন্নতাবাদী গোষ্ঠীর জন্য যদি পাকিস্তানের দিক থেকে চিনকে হাত গুটিয়ে নিতে হয়, তবে তা ইসলামাবাদের জন্যও খুব একটা সুখকর হবে না।

১৯ ২২

বিএলএ-র সতর্কবার্তা মেলার পর করাচিতে অবস্থিত চিনা দূতাবাস তার তীব্র বিরোধিতা করেছে। হামলাকারীদের কঠোর ভাবে দমন করার কথা বলেছে বেজিং। পাকিস্তানকে অনুরোধ করা হয়েছে, বিএলএ সমস্যার সমাধানের জন্য দ্রুত পদক্ষেপ করা হোক।

২০ ২২

পাকিস্তানে বসবাসকারী চিনা নাগরিকদের উদ্দেশে চিনা দূতাবাস থেকে সতর্কবার্তা জারি করা হয়েছে। নাগরিকদের সাবধানে থাকার পরামর্শ দিয়েছে দূতাবাস। তাদের বড়সড় কোনও জমায়েত না করতে বলা হয়েছে।

২১ ২২

বস্তুত, পাকিস্তানের অন্দরে অনেকটা এগিয়ে গিয়েছে চিন। ইতিমধ্যে অনেক টাকা ঢালা হয়ে গিয়েছে। এই পরিস্থিতিতে পিছনে ফিরতে হলে তাদেরও অনেক ক্ষতির আশঙ্কা রয়েছে। তাই সহজে পাকিস্তান ছাড়তে চায় না বেজিং।

২২ ২২

তাই পাক সরকার এবং সেনার সঙ্গে কথা বলে বোঝাপড়ার মাধ্যমে বালুচিস্তান সমস্যা মিটিয়ে নিতেই আগ্রহী চিন। সেই চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে পাকিস্তানের চিনা দূতাবাসও। তবে এই প্রদেশকে কেন্দ্র করে আগামী দিনে চিনের আরও রক্তক্ষয় হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।

সব ছবি: সংগৃহীত।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
Follow us on:
Advertisement
আরও গ্যালারি
Advertisement