২০০৩ সালে বলিপাড়ায় পা রেখেছিলেন সেলিনা জে়টলি। কেরিয়ারের গোড়াতেই প্রশংসা কুড়োতে শুরু করেছিলেন অভিনেত্রী। পরভিন ববি এবং জ়িনাত আমনের মতো নায়িকার সঙ্গেও সেলিনার সৌন্দর্যের তুলনা করা হত। কিন্তু কাজের চেয়েও বেশি তাঁর নাম জড়িয়েছে নানা বিতর্কে।
সম্প্রতি দুবাইয়ের স্বঘোষিত চিত্রসমালোচক উমের সান্ধু সেলিনাকে নিয়ে বিস্ফোরক দাবি করেন। নিজের টুইটার অ্যাকাউন্ট থেকে পোস্ট করে তিনি জানান যে, সেলিনা বলিউড জগতের একমাত্র অভিনেত্রী যিনি বাবা (ফিরোজ় খান) এবং ছেলে (ফারদিন খান) দু’জনেরই শয্যাসঙ্গিনী ছিলেন।
উমেরের টুইটটি নজরে পড়ায় তার পাল্টা জবাবও দিয়েছেন সেলিনা। অশালীন মন্তব্যের বিরুদ্ধে পাল্টা টুইট করে অভিনেত্রী লেখেন, ‘‘মিস্টার সান্ধু, এই টুইটটি পোস্ট করায় আপনি হয়তো পুরুষ হওয়ার দৌড়ে দৈর্ঘ্যে ও পরিধিতে বেড়েছেন, আপনার হয়তো একটু আশাও বেড়েছে যে আপনার যৌন অক্ষমতা সেরে উঠবে। বিশ্বাস করুন, সেরে ওঠার আরও উপায় রয়েছে। চাইলে আপনি চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে পারেন, দয়া করে সময় নিয়ে নিজের চিকিৎসা করিয়ে নেবেন!’’
সান্ধুর টুইটের জবাব দেওয়ার পর নেটাগরিকদের একাংশ প্রশংসা করেছেন সেলিনার। অভিনেত্রীকে নিয়ে চর্চাও কম হচ্ছে না। তবে এই প্রথম বার নয়, এর আগেও বহু বার বিতর্কে জড়িয়েছেন সেলিনা। বলিপাড়ায় চর্চার কেন্দ্রবিন্দু হয়ে উঠেছিলেন তিনি।
১৯৮১ সালের ২৪ নভেম্বর হিমাচল প্রদেশের শিমলায় জন্ম সেলিনার। লখনউ, মুম্বই এবং ওড়িশায় স্কুল-কলেজের পড়াশোনা শেষ করেছেন তিনি। খেলাধুলোর প্রতিও আগ্রহ ছিল তাঁর।
কানাঘুষো শোনা যায় যে, ১৬ বছর বয়সে একটি পার্টিতে এক অচেনা পুরুষের প্রতি আকৃষ্ট হয়ে পড়েন সেলিনা। কয়েক বার দেখা করার পর তাঁর সঙ্গে সম্পর্কে আসেন অভিনেত্রী। এক পুরনো সাক্ষাৎকারে সেলিনা এই সম্পর্ক নিয়ে মুখ খোলেন।
সেলিনা জানান যে, ছেলেটির সঙ্গে সম্পর্কে আসার কিছু দিন পর তাঁর উপর মানসিক অত্যাচার শুরু হয়। এমনকি, প্রেমিক তাঁকে মারধর করতেন বলেও দাবি করেন অভিনেত্রী। পরে তিনি জানতে পারেন যে, তাঁর প্রেমিক সমকামী ছিলেন। জানার পর সেলিনা সেই সম্পর্ক থেকে বেরিয়ে আসেন।
১৬-১৭ বছর বয়স থেকেই বিভিন্ন সৌন্দর্য প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করতে শুরু করেন সেলিনা। স্নাতক হওয়ার পর কলকাতার একটি বেসরকারি সংস্থায় চাকরিও করেন তিনি।
২০০১ সালে সৌন্দর্য প্রতিযোগিতায় বিজয়ী হওয়ার পর বিনোদন জগতে কাজ শুরু করেন সেলিনা। ফিরোজ় খান প্রযোজিত এবং পরিচালিত ‘জানাশীন’ ছবিতে অভিনয়ের প্রথম সুযোগ পান তিনি। ফারদিন খানের বিপরীতে অভিনয় করতে দেখা যায় তাঁকে।
নামী সংস্থার বিভিন্ন বিজ্ঞাপনেও অভিনয় করেন সেলিনা। ২০০৪ সালে ‘জুলি’ নামের একটি হিন্দি ছবির মুখ্য চরিত্রে অভিনয়ের প্রস্তাব পেয়েছিলেন তিনি। কিন্তু সেলিনা সেই প্রস্তাব খারিজ করে দেন।
সেলিনা জানান, ‘জুলি’ ছবিতে তাঁকে যে ধরনের চরিত্রে অভিনয় করতে বলা হয়েছিল, সেই চরিত্রটি পছন্দ হয়নি তাঁর। তাই তিনি প্রস্তাব ফিরিয়ে দেন। পরে সেই চরিত্রে অভিনয় করতে দেখা যায় নেহা ধুপিয়াকে।
‘নো এন্ট্রি’, ‘আপনা সপনা মানি মানি’, ‘মানি হ্যায় তো হানি হ্যায়’, ‘থ্যাঙ্ক ইউ’-এর মতো বহু হিন্দি ছবিতে কাজ করেছেন তিনি। এমনকি, তেলুগু এবং কন্নড় ছবিতেও অভিনয় করেছেন সেলিনা।
২০০৬ সালে ‘জওয়ানি দিওয়ানি: আ ইউথফুল জয়রাইড’ ছবির শুটিং চলাকালীন নাকি বলি অভিনেতা ইমরান হাশমির সঙ্গে সম্পর্কে জড়িয়ে পড়েন সেলিনা। কিন্তু এই সম্পর্কের কথা অস্বীকার করেন অভিনেত্রী।
এক সাক্ষাৎকারে সেলিনা জানান যে, ইমরান সেই সময় অন্য এক জনের সঙ্গে সম্পর্কে ছিলেন। শুট চলাকালীন অভিনেতার সঙ্গে পরকীয়া সম্পর্কে জড়াননি সেলিনা। এ সবই মিথ্যা রটনা বলে দাবি করেন অভিনেত্রী।
এমনকি, গোবিন্দের সঙ্গেও নাম জড়িয়েছিল সেলিনার। এই প্রসঙ্গে অভিনেত্রী বলেন যে, ‘‘আমি গোবিন্দকে শ্রদ্ধা করি। পছন্দ করি। আমার প্রিয় সহঅভিনেতা তিনি। কিন্তু তাঁর সঙ্গে আমার পরকীয়া সম্পর্ক নেই। এ সব মিথ্যা কথা।’’
২০১০ সালে অস্ট্রিয়ার এক হোটেল ব্যবসায়ী পিটার হ্যাগের সঙ্গে আলাপ হয় সেলিনার। দুবাইয়ে একটি ফ্যাশন স্টোরের উদ্ধোধনী অনুষ্ঠানে দু’জনের আলাপ হয়। এক বন্ধুর মাধ্যমে দু’জনের পরিচয় হলেও সে দিন কোনও কথা বলেননি সেলিনা এবং পিটার।
পরে সেলিনার সঙ্গে বন্ধুত্ব তৈরি হয় পিটারের। ২০১০ সালেই গোপনে আংটিবদল করেন দু’জনে। ২০১২ সালে যমজ পুত্রসন্তানের জন্ম দেন সেলিনা। সংসার নিয়েই ব্যস্ত হয়ে পড়েন অভিনেত্রী।
২০১৫ সালে সানি লিওনের সঙ্গে ঝামেলায় জড়িয়ে পড়েন সেলিনা। এক সাক্ষাৎকারে সেলিনা দাবি করেন যে, সানি এবং তাঁর স্বামী ড্যানিয়েল ওয়েবারকে মুম্বইয়ের বাড়িটি দু’বছরের জন্য ভাড়া দিয়েছিলেন সেলিনা। কিন্তু অভিনেত্রীর বাড়ির যত্ন নেননি দম্পতি।
সেলিনার দাবি, বাড়িঘর নোংরা করে রাখতেন সানি এবং ড্যানিয়েল। শৌচালয়ের অবস্থাও খুব শোচনীয় ছিল বলে জানান নায়িকা। তাই তারকা দম্পতিকে বাড়ি ছাড়ার নির্দেশ দেন সেলিনা। ড্যানিয়েল তাঁকে হুমকি দিতেন বলেও দাবি করেন সেলিনা।
সেলিনার সব অভিযোগ মিথ্যা, এমনটাই দাবি করেছিলেন সানি এবং ড্যানিয়েল। তাঁরা জানান যে, সেলিনার বাড়িতে সিসিটিভি ক্যামেরা লাগিয়েছিলেন সানি এবং ড্যানিয়েল। ঘরবাড়িও পরিষ্কার রাখতেন তাঁরা।
সানি জানান যে, সেলিনাই ডিপোজ়িটের টাকা ফেরত দেননি তাঁকে। সানি বলেন, ‘‘সেলিনাকে সামনাসামনি কখনওই দেখেনি ড্যানিয়েল। ওঁকে হুমকি দেওয়ার তো কোনও প্রশ্নই ওঠে না।’’
২০২১ সালে শিল্পা শেট্টির স্বামী রাজ কুন্দ্রার নাম যখন পর্নকাণ্ডে জড়িয়ে পড়ে, তখন সেলিনার নামও প্রকাশ্যে আসে। রাজ নাকি তাঁর ছবিতে সেলিনাকে অভিনয়ের প্রস্তাব দিয়েছিলেন। যদিও সেলিনা মিথ্যা রটনা বলে সব অভিযোগ উড়িয়ে দিয়েছিলেন।
সেলিনার এক ঘনিষ্ঠ সূত্রে খবর, শিল্পার বিনোদন অ্যাপে কাজ করার প্রস্তাব পেয়েছিলেন সেলিনা। শিল্পা এবং সেলিনা ভাল বন্ধু। কিন্তু রাজের অ্যাপের ব্যাপারে কিছুই জানতেন না তিনি। ব্যস্ত থাকার কারণে শিল্পার সঙ্গে কাজ করতে পারেননি সেলিনা, এমনটাই দাবি করেন অভিনেত্রী।
২০১৭ সালে সেলিনার এক পুত্র হৃদ্রোগে আক্রান্ত হয়ে মারা যায়। এই ঘটনায় মানসিক দিক দিয়ে ভেঙে পড়েন অভিনেত্রী। পিটার তাঁর চাকরি ছেড়ে দিয়ে পরিবার-সহ অস্ট্রিয়ায় ফিরে যান।
সেলিনা এবং পিটার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন যে, তাঁরা আবার নতুন করে তাঁদের জীবন শুরু করবেন। তাই দুবাই ছেড়ে অস্ট্রিয়ায় চলে যান তাঁরা। অভিনয়জগত থেকেও দূরে সরে গিয়েছিলেন অভিনেত্রী। সেলিনা জানান যে, এই সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন বলেই তিনি মানসিক অবসাদ কাটিয়ে উঠতে পেরেছেন।
সুস্থ হয়ে আবার অভিনয়ে ফিরে আসেন সেলিনা। ২০২০ সালে মুক্তিপ্রাপ্ত ‘সিজ়ন’স গ্রিটিংস’ নামে একটি শর্ট ফিল্মে অভিনয় করতে দেখা যায় সেলিনাকে।