F-35B Fighter Jet

‘ঈশ্বরের আপন দেশে’ রোদে-জলে পড়ে ১১ কোটি ডলারের ‘এফ-৩৫বি’! রয়্যাল নেভির জড়ভরত যুদ্ধবিমানে ঘনাচ্ছে রহস্য

চলতি বছরের ১৪ জুন থেকে কেরলের তিরুঅনন্তপুরম আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে দাঁড়িয়ে রয়েছে ব্রিটিশ নৌবাহিনীর অত্যাধুনিক পঞ্চম প্রজন্মের ‘স্টেল্‌থ’ শ্রেণির লড়াকু জেট ‘এফ-৩৫বি’। কেন নিজের ছাউনিতে ফিরে যেতে পারছে না ওই যুদ্ধবিমান? একে ঘিরে তৈরি হয়েছে ধোঁয়াশা।

Advertisement
আনন্দবাজার ডট কম ডেস্ক
শেষ আপডেট: ২৬ জুন ২০২৫ ১৪:৩২
Share:
০১ ১৮

এক-দুই করে ১১ দিন পার। তার পরেও মালাবার উপকূলে ঠায় দাঁড়িয়ে রয়েছে ব্রিটিশ বায়ুসেনার পঞ্চম প্রজন্মের লড়াকু জেট ‘এফ-৩৫বি লাইটনিং টু’। রোদ-জল-বৃষ্টিতে ‘অসহায় ভাবে’ দাঁড়িয়ে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের তৈরি ওই অত্যাধুনিক যুদ্ধবিমান। কিন্তু কেন ওই লড়াকু জেট নিজেদের ছাউনিতে ফিরিয়ে নিয়ে যাচ্ছে না ইংরেজ নৌবাহিনী? প্রযুক্তিগত ত্রুটি, না কি নেপথ্যে রয়েছে অন্য কোনও ষড়যন্ত্র? সময় গড়াতেই এই নিয়ে ধীরে ধীরে দানা বাঁধছে সন্দেহ।

০২ ১৮

‘ব্রিটিশ রয়্যাল নেভি’র যুদ্ধবিমান ‘এফ-৩৫বি’কে নিয়ে সন্দেহ করার যথেষ্ট কারণ রয়েছে। কেরলের তিরুঅনন্তপুরম আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে জরুরি অবতরণ করা ইস্তক লড়াকু জেটটিকে ‘হ্যাঙ্গারে’ (যেখানে বিমান দাঁড় করিয়ে রাখা হয়) নিয়ে যাওয়ার অনুরোধ করে ভারত। কিন্তু পত্রপাঠ তা খারিজ করে দেয় ব্রিটিশ নৌসেনা। এর কোনও যুক্তিগ্রাহ্য কারণ এখনও দেখায়নি তাঁরা। ফলে ইংরেজ নৌবাহিনীর উদ্দেশ্য আদৌ সাধু কি না, তা নিয়ে প্রশ্ন উঠে গিয়েছে।

Advertisement
০৩ ১৮

শুধু তা-ই নয়, ব্রিটিশ নৌবাহিনীর ‘এফ-৩৫বি’ লড়াকু জেটের জরুরি অবতরণের কারণ নিয়েও যথেষ্ট ধোঁয়াশা রয়েছে। যুদ্ধবিমানটি ‘এইচএমএস প্রিন্স অফ ওয়েলস’ বিমানবাহী রণতরীর বহরে মোতায়েন ছিল বলে জানা গিয়েছে। সংবাদ সংস্থা পিটিআইয়ের প্রতিবেদন অনুযায়ী, কেরল উপকূল থেকে প্রায় ১০০ নটিক্যাল মাইল দূরে দাঁড়িয়ে থাকা ইংরেজ যুদ্ধজাহাজ থেকে ওড়ে ‘এফ-৩৫বি’। কিন্তু জ্বালানি কম থাকায় তিরুঅনন্তপুরমের আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে অবতরণ করে সেটি।

০৪ ১৮

অন্য একটি সংবাদমাধ্যম আবার দাবি করেছে, কেবলমাত্র জ্বালানি কম থাকার কারণেই যে লড়াকু জেটটিকে জরুরি অবতরণ করতে হয়েছে, এমন নয়। খারাপ আবহাওয়ার কারণে সাহায্য চান ওই যুদ্ধবিমানের ফাইটার পাইলট। বিষয়টি নিয়ে ইতিমধ্যেই মুখ খুলেছে ভারতীয় বায়ুসেনা। বিমানবাহিনীর এক পদস্থ আধিকারিক জানিয়েছেন, ‘‘ব্রিটিশ রয়্যাল নেভির ‘এফ-৩৫বি’ মহড়ায় যোগ দিয়েছিল। এই ধরনের কসরতের সময় সমস্যা হওয়া অস্বাভাবিক নয়। সেই কারণে আমাদের তরফে সব রকম সাহায্য করা হচ্ছে।’’

০৫ ১৮

সূত্রের খবর, সম্প্রতি ভারত মহাসাগরীয় এলাকায় এ দেশের নৌবাহিনীর সঙ্গে একটি যৌথ মহড়ায় যোগ দেয় ‘এইচএমএস প্রিন্স অফ ওয়েলস’। তারই অংশ হিসাবে আকাশে উড়েছিল ওই ‘এফ-৩৫বি’। ফ্লাইট রেডারের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, কেরল উপকূলে পৌঁছে বিপদসঙ্কেত দেন সংশ্লিষ্ট যুদ্ধবিমানের ফাইটার পাইলট। এর পরই বিমান চলাচল নিয়ন্ত্রণ করে তাঁকে জরুরি অবতরণের অনুমতি দেন তিরুঅনন্তপুরম আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষ।

০৬ ১৮

দক্ষিণী সংবাদমাধ্যম ‘দ্য হিন্দু’ লিখেছে, সংশ্লিষ্ট জেটটি কেরল উপকূলে পৌঁছে জরুরি ট্রান্সপন্ডার কোড ‘এসকিউইউএডব্লিউকে ৭৭০০’ প্রেরণ করতে শুরু করে। এটি প্রকৃতপক্ষে একটি বিপদসঙ্কেত। সেটা পেতেই তৎপর হয় তিরুঅনন্তপুরম বিমানবন্দরের শীর্ষকর্তারা। যুদ্ধবিমানটি অবতরণের পর তাকে বে ৪-এ নিয়ে যাওয়া হয়। ‘এফ-৩৫বি’র নিরাপত্তায় মোতায়েন হয় আধা সেনা ‘সেন্ট্রাল ইন্ডাস্ট্রিয়াল সিকিউরিটি ফোর্স’ বা সিআইএসএফ। পাশাপাশি, খবর যায় ভারতীয় বায়ুসেনা ছাউনিতেও।

০৭ ১৮

সূত্রের খবর, প্রাথমিক ভাবে যুদ্ধবিমানটিতে শুধুমাত্র জ্বালানি কম রয়েছে বলে মনে করা হয়েছিল। কিন্তু পরে বিষয়টি জটিল হতে শুরু করে। বিশেষজ্ঞদের অনুমান, লড়াকু জেটটির হাইড্রোলিকে কিছু সমস্যা রয়েছে। যে কোনও যুদ্ধবিমানের ক্ষেত্রে এই হাইড্রোলিক অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এর মাধ্যমে ল্যান্ডিং গিয়ার, ব্রেক এবং জেটটির উড়ান নিয়ন্ত্রণ করেন যোদ্ধা পাইলট।

০৮ ১৮

ভারতীয় বিমানবাহিনী সূত্রে খবর, ‘ব্রিটিশ রয়্যাল নেভি’র বিমানবাহী রণতরী ‘এইচএমএস প্রিন্স অফ ওয়েলস’-এর শীর্ষকর্তারা ইতিমধ্যেই দাঁড়িয়ে থাকা যুদ্ধবিমানটিকে পরিদর্শন করেছেন। লড়াকু জেটটির ঠিক কোথায় ত্রুটি রয়েছে, সেটা তাঁদের কাছেও স্পষ্ট নয়। এর মেরামতির চেষ্টা ব্যর্থ হলে সামরিক পরিবহণ বিমানের সাহায্যে ‘এফ-৩৫বি’কে আটলান্টিকের দ্বীপরাষ্ট্রে পাঠাতে হতে পারে, বলছেন প্রতিরক্ষা বিশ্লেষকেরা।

০৯ ১৮

ব্রিটিশ যুদ্ধবিমানের জরুরি অবতরণ ঘিরে বিশেষজ্ঞদের মনে ঘুরপাক খাচ্ছে বেশ কিছু প্রশ্ন। মহড়ার সময়ে কম জ্বালানি নিয়ে কেন বিমানবাহী রণতরী ছাড়লেন পাইলট? লড়াকু জেটটিকে হ্যাঙ্গারে নিয়ে যাওয়ার ক্ষেত্রে ‘ব্রিটিশ রয়্যাল নেভি’র আপত্তি রয়েছে কেন? হাইড্রোলিকের সমস্যা বুঝতে অসুবিধা হচ্ছে কোথায়?

১০ ১৮

বিশ্লেষকদের দাবি, ‘এফ-৩৫বি’কে হ্যাঙ্গারে নিয়ে যাওয়ার ক্ষেত্রে ব্রিটিশ কর্তৃপক্ষের আপত্তির নেপথ্যে স্পষ্ট যুক্তি রয়েছে। কোনও অবস্থাতেই তাঁরা লড়াকু জেটটির জটিল প্রযুক্তি কাউকে জানাতে দিতে চান না। ফলে খোলা আকাশের নীচে যুদ্ধবিমানটিকে দাঁড় করিয়ে রেখেছেন ইংরেজ যোদ্ধা পাইলট। ব্রিটিশ হাইকমিশনের এক মুখপাত্র বলেন, “আমরা বিমানটি দ্রুত মেরামতের চেষ্টা করছি এবং ভারতীয় কর্তৃপক্ষের সহযোগিতার জন্য কৃতজ্ঞ।”

১১ ১৮

মার্কিন প্রতিরক্ষা সংস্থা ‘লকহিড মার্টিন’-এর তৈরি এই ‘এফ-৩৫বি’ প্রকৃতপক্ষে একটি মাল্টিরোল যুদ্ধবিমান। অর্থাৎ, নিখুঁত নিশানায় শত্রুব্যূহে হামলা চালানোর পাশাপাশি নজরদারি বা ‘গুপ্তচরবৃত্তি’র কাজেও একে ব্যবহার করা যেতে পারে। লড়াকু জেটটি ‘স্টেল্‌থ’ শ্রেণির হওয়ায় সহজে একে চিহ্নিত করতে পারে না কোনও রেডার।

১২ ১৮

‘এফ-৩৫বি’-এর আরও কয়েকটি বৈশিষ্ট্য রয়েছে। অত্যন্ত ছোট রানওয়েতে একে ওড়ানো সম্ভব। লড়াকু জেটটি উল্লম্ব ভাবে অবতরণ করতে পারে। সদ্যসমাপ্ত ইরান-ইজ়রায়েল যুদ্ধে এর বহুল ব্যবহার করেছে ইহুদি বায়ুসেনা। তবে মার্কিন শক্তিজোট তথা ‘উত্তর আটলান্টিক চুক্তি সংগঠন’ বা নেটো-ভুক্ত (নর্থ আটলান্টিক ট্রিটি অর্গানাইজ়েশন) দেশগুলিকে এটি প্রচুর পরিমাণে বিক্রি করেছে যুক্তরাষ্ট্রের সরকার। ব্রিটেন নেটো সদস্য হওয়ায় সংশ্লিষ্ট জেটটিকে তাদের বহরে শামিল করতে পেরেছে।

১৩ ১৮

ব্রিটেন ছা়ড়াও নেদারল্যান্ডস এবং ইটালির কাছে রয়েছে এই মার্কিন লড়াকু জেট। যুদ্ধবিমানটির মূল ভার্সানটির নাম ‘এফ-৩৫ লাইটনিং টু’। এর মোট তিন ধরনের মডেল রয়েছে। ‘এফ-৩৫বি’ মূলত বিমানবাহী রণতরীর জন্য তৈরি করা হয়েছে। উল্লেখ্য, ভারত নেটোর সদস্য না-হওয়া সত্ত্বেও সংশ্লিষ্ট যুদ্ধবিমানটি ভারতীয় বায়ুসেনার হাতে তুলে দিতে ইচ্ছুক আমেরিকা।

১৪ ১৮

চলতি বছরের ফেব্রুয়ারিতে যুক্তরাষ্ট্র সফরে যান প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। ওই সময় তাঁর সঙ্গে রুদ্ধদ্বার বৈঠক করেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। পরে সংবাদমাধ্যমের মুখোমুখি হয়ে তিনি বলেন, ‘‘নয়াদিল্লিকে এফ-৩৫ লাইটনিং টু সরবরাহ করতে কোনও সমস্যা নেই ওয়াশিংটনের।’’ এর কিছু দিনের মধ্যেই বেঙ্গালুরুতে ‘অ্যারো ইন্ডিয়া শো ২০২৫’-এর আয়োজন করে ভারতীয় বিমানবাহিনী। সেখানে ‘এফ-৩৫’ যুদ্ধবিমান নিয়ে হাজির ছিল ‘লকহি‌ড মার্টিন’ এবং মার্কিন বায়ুসেনা।

১৫ ১৮

সামরিক বিশেষজ্ঞেরা জানিয়েছেন, যে কোনও বিদেশি যুদ্ধবিমানের ৪৮ ঘণ্টারও বেশি সময় ধরে আটকে থাকা এমনিতেই বিরল ঘটনা। ‘এফ-৩৫বি’ বিশ্বের অন্যতম দামি এবং উন্নত মানের যুদ্ধবিমান। কোনও রকম ক্যাটাপুল্ট সিস্টেম ছাড়াই বিমানবাহী রণতরী থেকে উড়তে পারে পঞ্চম প্রজন্মের এই লড়াকু জেট। তাই ভারতীয় বায়ুসেনা একে ‘স্বাভাবিক ঘটনা’ বললেও সন্দেহ থেকেই যাচ্ছে।

১৬ ১৮

কেরলের বিমানবন্দরে ‘এফ-৩৫বি’ যুদ্ধবিমান ‘বন্দি’ থাকাকে কেন্দ্র করে সমাজমাধ্যমে ট্রোলিংয়ের শিকার হয়েছে ব্রিটিশ নৌসেনা। পঞ্চম প্রজন্মের এই লড়াকু জেটের আনুমানিক দাম ১১ কোটি ডলার বলে জানা গিয়েছে। নেটাগরিকদের কেউ কেউ এ-হেন ‘এফ-৩৫বি’কে অনলাইনে বিক্রি করার পরামর্শ দিয়েছেন। মজা করে লিখেছেন, ৪০ লক্ষ ডলার দিয়েই ‘জড়ভরত’কে বাড়ি নিয়ে যাওয়া যাবে। তবে মূল্য নিয়ে দরদাম করা যেতেই পারে।

১৭ ১৮

‘এফ-৩৫’ শ্রেণির যুদ্ধবিমানগুলি পরমাণু হাতিয়ার বহনে সক্ষম। ভারতে এই লড়াকু জেটের একটি ‘বন্দি’ থাকলেও সংশ্লিষ্ট যুদ্ধবিমানের উপর থেকে ভরসা হারাচ্ছে না ব্রিটিশ সরকার। আগামী দিনে আমেরিকার থেকে আরও ১২টি ‘এফ-৩৫এ’ কিনবে আটলান্টিকের পারের ওই দ্বীপরাষ্ট্র। নেদারল্যান্ডসের ‘দ্য হেগ’ শহরে নেটোর বৈঠকে যোগ দিয়ে এই ঘোষণা করেছেন ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী কিয়ের স্টার্মার।

১৮ ১৮

গত ২৪ এবং ২৫ জুন ‘দ্য হেগ’ শহরে চলা দু’দিনের নেটোর সম্মেলনে যোগ দেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প। তাঁর সামনেই ওই ঘোষণা করেন স্টার্মার। পরে সংবাদমাধ্যমকে তিনি বলেন, ‘‘এই চরম অনিশ্চয়তার যুগে আমরা শান্তি প্রতিষ্ঠার বিষয়টিকে আর হালকা ভাবে নিতে পারি না। তাই আমাদের সরকার ব্রিটেনের জাতীয় নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে বিনিয়োগ করছে। আমাদের সামরিক বাহিনী যাতে নিজেদের প্রয়োজনীয় সরঞ্জাম পায়, তা নিশ্চিত করা হচ্ছে।’’

সব ছবি: সংগৃহীত।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
Follow us on:
আরও গ্যালারি
Advertisement