Chinese Hypersonic Engine

পেন্টাগনের সিন্দুকে চিনা ‘সিঁদকাঠি’! যুক্তরাষ্ট্রের প্রযুক্তি ‘টুকে’ হাইপারসনিক জেট ইঞ্জিনে সওয়ার চালবাজ চিন

আমেরিকার চিন্তা বাড়িয়ে এ বার হাইপারসনিক ইঞ্জিনের সফল পরীক্ষা চালাল চিন। এর সাহায্যে বেজিং উচ্চ গতির লড়াকু জেট তৈরি করতে পারবে বলে মনে করা হচ্ছে। যদিও ভারত-পাকিস্তান ‘যুদ্ধে’ ব্যর্থ হওয়ায় ড্রাগন-অস্ত্রের কার্যকারিতা নিয়ে যথেষ্ট প্রশ্ন রয়েছে।

Advertisement
আনন্দবাজার ডট কম ডেস্ক
শেষ আপডেট: ২৬ মে ২০২৫ ১২:১৫
Share:
০১ ১৮

ফের পশ্চিমি দুনিয়া থেকে প্রযুক্তি ‘চুরি’! চিনের অত্যাধুনিক ‘হাইপারসনিক’ ইঞ্জিনের পরীক্ষায় স্পষ্ট মিলল ‘টোকাটুকি’র ছাপ! সাত দশক আগে সংশ্লিষ্ট বিষয়টির গবেষণায় মগ্ন ছিলেন মার্কিন বিজ্ঞানীরা। তাতে পুরোপুরি সাফল্য না পেলেও ‘হাইপারসনিক’ ইঞ্জিনের একটা ধারণা দিতে সক্ষম হন তাঁরা। যুক্তরাষ্ট্রের গবেষকদের তৈরি করা সেই প্ল্যাটফর্মের উপরে দাঁড়িয়েই সাফল্য পেয়েছে ড্রাগন। যদিও প্রযুক্তিটির আবিষ্কর্তা হিসাবে ‘নাম কিনতে’ প্রচারে খামতি রাখছে না বেজিং।

০২ ১৮

চলতি বছরের মে মাসের গোড়ায় ‘তির্যক বিস্ফোরণ ইঞ্জিন’ বা ওডিই-র (ওব্‌লিক ডেটোনেশন ইঞ্জিন) সফল পরীক্ষা চালায় আরপি-৩ নামের সরকার নিয়ন্ত্রিত চিনা গবেষকদের দল। পরে সংশ্লিষ্ট ই়ঞ্জিনটির সক্ষমতা ও কার্যকারিতা ফলাও করে প্রকাশিত হয় বেজিঙের মান্দারিন ভাষার ‘জার্নাল অফ অ্যারোস্পেস পাওয়ার’ পত্রিকায়। অন্য দিকে সাউথ চায়না মর্নিং পোস্ট একে জেট বিমানের জ্বালানিচালিত ‘হাইপারসনিক’ ইঞ্জিন বলে দাবি করে বসে। ফলে ড্রাগনের ওডিই-র সফল পরীক্ষা নিয়ে দানা বেঁধেছে রহস্য। এ ব্যাপারে মুখ কুলুপ এঁটে রয়েছে সেখানকার শি জিনপিং সরকার।

Advertisement
০৩ ১৮

চিনা গণমাধ্যমগুলি অবশ্য ‘ওব্‌লিক ডেটোনেশন ইঞ্জিন’-এর পরীক্ষাকে যুগান্তকারী আখ্যা দিয়েছে। বেজিঙের গবেষকদের দাবি, তাঁদের তৈরি ‘হাইপারসনিক’ ইঞ্জিনটি আট ম্যাক, অর্থাৎ শব্দের চেয়ে আট গুণ গতিতে ছুটতে সক্ষম। সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে ৩০ কিলোমিটার উচ্চতায় এর পরীক্ষা চালান তাঁরা। উল্লেখ্য, ‘হাইপারসনিক’ গতি পেতে সাধারণত স্ক্র্যামজেট ইঞ্জিন এবং তরল হাইড্রোজ়েন জ্বালানি ব্যবহার করা হয়। এ ক্ষেত্রেও ড্রাগনের বিজ্ঞানীরা সেই রাস্তা অবলম্বন করেছেন কি না, তা অবশ্য স্পষ্ট নয়।

০৪ ১৮

গত ৬ মে মান্দারিন ভাষার পত্রিকা ‘অ্যারোস্পেস পাওয়ার’-এ প্রকাশিত প্রতিবেদন অনুযায়ী, সংশ্লিষ্ট ইঞ্জিনটির পরীক্ষায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নেন ড্রাগনভূমির অন্যতম বড় মহাকাশ প্রযুক্তির গবেষণাকেন্দ্র ‘চায়না অ্যাকাডেমি অফ লঞ্চ ভেহিকেল টেকনোলজ়ি’র (সিএএলটি) বিজ্ঞানীরা। তাঁদের সঙ্গে ছিলেন নর্থওয়েস্টার্ন পলিটেকনিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকেরাও। দুই প্রতিষ্ঠানের যৌথ উদ্যোগে সংশ্লিষ্ট ইঞ্জিনটি বেজিং তৈরি করতে পেরেছে বলে জানা গিয়েছে।

০৫ ১৮

গত ফেব্রুয়ারিতে ওডিইর মূল্যায়ন করে চিনের এয়ারবোর্ন মিসাইল অ্যাকাডেমির কর্তাব্যক্তিরা। সেখানেই হাতিয়ার প্রযুক্তিতে উন্নতি আনতে সংশ্লিষ্ট ইঞ্জিনের পরীক্ষার ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। পরে তাতে সবুজ সঙ্কেত দেয় ড্রাগনভূমির ‘পিপল্‌স লিবারেশন আর্মি’ বা পিএলএ। কোনও রণতরী বা যুদ্ধবিমান নয়, স্থলভাগ থেকেই ওডিইর পরীক্ষা চালানো হয়েছে বলে জানা গিয়েছে।

০৬ ১৮

তবে চিন মুখে যা-ই বলুক না কেন, এই প্রযুক্তির জন্ম তাঁদের হাত ধরে হয়নি। ১৯৫৮ সালে ‘হাইপারসনিক’ ইঞ্জিন তৈরির পরিকল্পনা করেন যুক্তরাষ্ট্রের মিশিগান বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকেরা। শক ওয়েভ ব্যবহার করে যন্ত্রাংশ স্থির রেখেও শব্দের পাঁচ গুণের চেয়ে বেশি গতি পাওয়া সম্ভব বলে মনে করতেন তাঁরা। পরবর্তী কালে তাঁদের গবেষণাকে এগিয়ে নিয়ে যায় মার্কিন মহাকাশ গবেষণা সংস্থা নাসা (ন্যাশনাল অ্যারোনটিক্স অ্যান্ড স্পেস অ্যাডমিনিস্ট্রেশন)। ১৯৭৮ সালে সংশ্লিষ্ট ইঞ্জিনের ব্যাপারে আলাদা ব্যাখ্যা দেয় ওই সংস্থা।

০৭ ১৮

নাসার গবেষকেরা মনে করতেন, ‘হাইপারসনিক’ ইঞ্জিন ছয় থেকে ১৬ ম্যাক পর্যন্ত গতি নিতে পারবে। সেইমতো এর নকশা তৈরির পরিকল্পনা ছিল তাঁদের। কিন্তু, প্রযুক্তিগত বাধার কারণে এতে সাফল্য পাননি তাঁরা। তার পরেও এই প্রকল্পকে পুরোপুরি বাতিল করেনি আমেরিকা। ২০২১ সালে এই প্রযুক্তিতে বড় সাফল্য পান সেন্ট্রাল ফ্লরিডা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ইউসিএফ) গবেষকেরা। ‘ওব্‌লিক ডেটোনেশন’-এ স্থিতিশীল তরঙ্গ তৈরিতে সফল হন তাঁরা।

০৮ ১৮

সেন্ট্রাল ফ্লরিডা বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষণা সংক্রান্ত ফলাফল পরবর্তী কালে আমেরিকার ‘ন্যাশনাল অ্যাকাডেমি অফ সায়েন্সেস’ জার্নালে বিস্তারিত ভাবে প্রকাশিত হয়। ওই সময়ে ১৭ ম্যাক, অর্থাৎ শব্দের ১৭ গুণ গতিসম্পন্ন বিমানের ইঞ্জিন তৈরি করা যাবে বলে দাবি করে বসেন মার্কিন বিজ্ঞানীরা। কিন্তু কাজে নেমে এতে প্রযুক্তিগত চ্যালেঞ্জের মুখে পড়েন তাঁরা। ইঞ্জিনের অতিরিক্ত তাপ কী ভাবে নিয়ন্ত্রণ করা যাবে তা বুঝে উঠতে পারেননি ফ্লরিডার প্রতিষ্ঠানটির বিজ্ঞানীরা।

০৯ ১৮

দ্য ইউরেশিয়ান টাইমস জানিয়েছে, ফ্লরিডার গবেষকদের ওই প্ল্যাটফর্মের উপর দাঁড়িয়ে হাইপারসোনিক ইঞ্জিন তৈরি করেছে চিন। তবে এই প্রযুক্তিতে বেজিং যে অনেকটা এগিয়ে গিয়েছে, তা স্বীকার না করে উপায় নেই। সূত্রের খবর, ২০৩৫ সালের মধ্যে ছোট আকারের হাইপারসনিক বিমান তৈরির পরিকল্পনা রয়েছে ড্রাগনভূমির গবেষকদের। এর সাহায্যে খুব দ্রুত পৃথিবীর যে কোনও জায়গায় পৌঁছোনো যাবে।

১০ ১৮

বর্তমানে চিনা লালফৌজের হাতে একাধিক হাইপারসনিক ব্যালেস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র রয়েছে। তার মধ্যে ডিএফ-১৭, ডিএফ-২৭ এবং ওয়াইজে-২১ উল্লেখ্যযোগ্য। প্রতিরক্ষা বিশ্লেষকদের দাবি, আগামী দিনে হাইপারসনিক লড়াকু জেট তৈরিতে সাফল্য পেতে পারে বেজিং। সে ক্ষেত্রে মার্কিন সরকার যে বড় চ্যালেঞ্জের মুখে পড়বে, তা বলাই বাহুল্য। আর তাই বিষয়টি নিয়ে এখন থেকেই প্রমাদ গুনছে মার্কিন প্রশাসন।

১১ ১৮

গত বছরের ফেব্রুয়ারিতে চিনের নৌ-গবেষকেরা তড়িচ্চুম্বকীয় রেল গানের সফল পরীক্ষা চালান। ওই আগ্নেয়াস্ত্র দিয়ে হাইপারসনিক গতির গুলি ছোড়া গিয়েছে বলে দাবি করেছে বেজিং। অন্য দিকে, ২০১২ সাল থেকে এই বিষয়ে গবেষণা চালাচ্ছিলেন মার্কিন প্রতিরক্ষা গবেষকেরা। কিন্তু শত চেষ্টা করেও এ ব্যাপারে কোনও সাফল্য পাননি তাঁরা। ফলে বাধ্য হয়ে ২০২১ সালে ওই হাতিয়ার তৈরির স্বপ্ন দেখা বন্ধ করে দেয় ওয়াশিংটন।

১২ ১৮

তবে পশ্চিমি প্রযুক্তি ‘চুরি’ করে তৈরি চিনা অস্ত্রের কার্যকারিতা নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে। ‘অপারেশন সিঁদুর’কে কেন্দ্র করে চলা চার দিনের ভারত-পাকিস্তান ‘যুদ্ধে’ বেজিঙের অস্ত্রের অক্ষমতা বেআব্রু হয়ে গিয়েছে। নয়াদিল্লির ছোড়া ক্ষেপণাস্ত্র বা ড্রোন আটকাতে ব্যর্থ হয় ইসলামাবাদের বাহিনীর হাতে থাকা ড্রাগনভূমির ‘আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা’ এইচকিউ-৯পি। উল্টে ইজ়রায়েলি আত্মঘাতী ড্রোন ‘হারোপ’-এর সাহায্যে ওই এয়ার ডিফেন্সকে ভারতীয় সেনা পুরোপুরি ধ্বংস করেছে বলে সূত্র মারফত মিলেছে খবর।

১৩ ১৮

পাশাপাশি, এই লড়াইয়ে একেবারেই কাজ করেনি চিনের তৈরি পিএল-১৫ ক্ষেপণাস্ত্র। পাক বিমানবাহিনীতে যা ‘থান্ডারবোল্ট-১৫’ নামে পরিচিত। শত্রুবিমান ধ্বংস করতে মূলত ডগফাইটের সময় এটি ব্যবহার করা হয়। দৃষ্টিশক্তির বাইরে গিয়ে আঘাত হানার ক্ষমতা রয়েছে এই আকাশ থেকে আকাশ ক্ষেপণাস্ত্রের (এয়ার টু এয়ার মিসাইল)। হাতিয়ারটির নির্মাণকারী সংস্থার নাম চায়না অ্যারোস্পেস সায়েন্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি কর্পোরেশন বা সিএএসআইসি।

১৪ ১৮

তাৎপর্যপূর্ণ বিষয় হল, এ বারের লড়াইয়ে পাক বিমানবাহিনীর ছো়ড়া পিএল-১৫ ক্ষেপণাস্ত্রকে ইলেকট্রনিক্স ওয়ারফেয়ারের মাধ্যমে পুরোপুরি নিষ্ক্রিয় করে ফেলে ভারতীয় ফৌজ। ফলে কোনও রকম বিস্ফোরণ না ঘটিয়ে পঞ্জাবের হোশিয়ারপুরের একটি খেতে এসে পড়ে ওই ক্ষেপণাস্ত্র। পরে তা উদ্ধার করে এলাকাবাসীরাই প্রশাসনের হাতে তুলে দেয়। বর্তমানে পিএল-১৫-র প্রযুক্তি বুঝে নিতে ফরেন্সিক পরীক্ষা চালাচ্ছে এ দেশের প্রতিরক্ষা গবেষকেরা।

১৫ ১৮

এই কারণে চিনের হাইপারসনিক ক্ষেপণাস্ত্র বা ইঞ্জিন কতটা শক্তিশালী তা নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে। বেজিঙের পাশাপাশি এই প্রযুক্তিতে যথেষ্ট উন্নতি করেছে রাশিয়া। গত তিন বছর ধরে চলা ইউক্রেন যুদ্ধে একাধিক হাইপারসনিক ক্ষেপণাস্ত্র মস্কোর ফৌজকে ব্যবহার করতে দেখা দিয়েছে। সেই তালিকায় রয়েছে ৩এম২২ জ়িরকন এবং কেএইচ-৪৭এম২ কিনজ়েল।

১৬ ১৮

অন্য দিকে, হাইপারসনিক প্রযুক্তিতে এগিয়ে না গেলেও কৃত্রিম উপগ্রহভিত্তিক অত্যাধুনিক একটি ‘আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা’ (এয়ার ডিফেন্স) তৈরি করতে চলেছে আমেরিকা। এর জন্য প্রয়োজনীয় অর্থ বরাদ্দ করেছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। সংশ্লিষ্ট এয়ার ডিফেন্স ব্যবস্থাটির নাম ‘সোনালি গম্বুজ’ বা গোল্ডেন ডোম রাখা হয়েছে। এর সাহায্যে হাইপারসনিক ক্ষেপণাস্ত্রকে মাঝ-আকাশে ধ্বংস করা যাবে বলে দাবি করেছেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট।

১৭ ১৮

হাইপারসনিক প্রযুক্তিতে পিছিয়ে নেই ভারতও। এর প্রাথমিক পরীক্ষা চালিয়েছে প্রতিরক্ষা গবেষণা সংস্থা ‘ডিফেন্স রিসার্চ ডেভলপমেন্ট অর্গানাইজ়েশন’ বা ডিআরডিও। রাশিয়ার সঙ্গে যৌথ উদ্যোগে নয়াদিল্লি যে ‘ব্রহ্মস’ ক্রুজ় ক্ষেপণাস্ত্র তৈরি করেছে, বর্তমানে তার উন্নত সংস্করণ তৈরির কাজ চলছে। সেটিও ‘হাইপারসনিক’ ক্ষেপণাস্ত্র হতে যাচ্ছে বলে জানা গিয়েছে।

১৮ ১৮

সম্প্রতি চিনের গণমাধ্যমগুলি জানিয়েছে, থোরিয়ামভিত্তিক পরমাণু পরীক্ষায় সাফল্য পেয়েছে বেজিং। গত শতাব্দীর মাঝামাঝি এই প্রযুক্তি নিয়ে কাজ করেছিল মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। পরে সেই পরিকল্পনা বাতিল করে ওয়াশিংটন। এ ক্ষেত্রে ড্রাগনের বিরুদ্ধে রয়েছে প্রযুক্তি চুরির অভিযোগ। যদিও তা মানতে নারাজ জিনপিং প্রশাসন।

সব ছবি: সংগৃহীত।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
Follow us on:
আরও গ্যালারি
Advertisement