US Venezuela invasion

রণতরী-ডুবোজাহাজে ঘিরে ফেলছে আমেরিকা! রুশ-চিনের ‘বন্ধু’ দেশ দখলে সেনা পাঠালেন ডোনাল্ড ট্রাম্প?

ল্যাটিন আমেরিকার দেশ ভেনেজ়ুয়েলা দখলের নির্দেশ দিয়েছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প? মার্কিন সৈন্য ক্যারিবিয়ান সাগরের দিক থেকে কারাকাসকে ঘিরে ধরতেই উঠে গিয়েছে সেই প্রশ্ন।

Advertisement
আনন্দবাজার ডট কম ডেস্ক
শেষ আপডেট: ২৫ অগস্ট ২০২৫ ১০:৪৯
Share:
০১ ২১

দক্ষিণ আমেরিকায় (অপর নাম ল্যাটিন আমেরিকা) যুদ্ধের দামামা! চক্রব্যূহে ভেনেজ়ুয়েলাকে ঘিরেছে মার্কিন ফৌজ। আসন্ন বিপদ আঁচ করে হাতিয়ারে শান দিচ্ছে কারকাসও। হাত গুটিয়ে বসে নেই রাশিয়া ও চিনের মতো ‘সুপার পাওয়ার’ দেশগুলিও। ক্যারিবিয়ান সৈকতের ওই সংঘাতকে কেন্দ্র করে বিশ্ব জুড়ে অশান্তির আশঙ্কাকে একেবারই উড়িয়ে দিচ্ছেন না আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিশেষজ্ঞেরা। আর তাই ক্রমশ উদ্বেগ বাড়ছে নয়াদিল্লিরও।

০২ ২১

‘দ্য ওয়াশিংটন পোস্ট’-সহ একাধিক মার্কিন গণমাধ্যমের প্রতিবেদন অনুযায়ী, সম্প্রতি ভেনেজ়ুয়েলাকে ঘিরতে ক্যারিবিয়ান সাগরে বিপুল সংখ্যায় রণতরী এবং পরমাণু-ডুবোজাহাজ নামিয়েছে মার্কিন সরকার। যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প সবুজ সঙ্কেত দিলেই রাজধানী কারকাসে হামলা চালাবে তারা। আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিশ্লেষকদের বড় অংশের দাবি, কুর্সি বদলের মাধ্যমে ল্যাটিন আমেরিকার দেশটিতে ‘পুতুল সরকার’ বসাতে চাইছে ওয়াশিংটন।

Advertisement
০৩ ২১

সংবাদমাধ্যম ‘দ্য ওয়ার জ়োন’ জানিয়েছে, ভেনেজ়ুয়েলার সৈকত সংলগ্ন এলাকায় বাহিনী মোতায়েন করতে চলতি বছরের অগস্টের তৃতীয় সপ্তাহে একটি ‘এক্‌জ়িকিউটিভ অর্ডার’-এ সই করেন ট্রাম্প। তার আগে অবশ্য পেন্টাগনের শীর্ষকর্তাদের সঙ্গে বেশ কয়েক বার বৈঠক করেন তিনি। এর পরেই ক্যারিবিয়ান সাগরের দিক থেকে কারাকাসকে ঘিরতে শুরু করে আমেরিকার নৌসেনা।

০৪ ২১

সূত্রের খবর, ভেনেজ়ুয়েলার সৈকত সংলগ্ন এলাকায় ইতিমধ্যেই ঢুকে পড়েছে মার্কিন নৌসেনার ‘আরলেইগ বার্ক ডেস্ট্রয়ার’ শ্রেণির ক্ষেপণাস্ত্র বহণকারী অন্তত তিনটে রণতরী। এ ছাড়া ক্যারিবিয়ান সাগরে একাধিক পরমাণু ডুবোজাহাজ নামিয়েছে ওয়াশিংটন। পাশাপাশি, চার হাজারের বেশি মেরিন কম্যান্ডোকে প্রস্তুত রেখেছে পেন্টাগন। যুদ্ধ শুরু হলে কারাকাসের সৈকত দখলের গুরুদায়িত্ব যে এঁদের কাঁধে পড়বে, তা বলাই বাহুল্য।

০৫ ২১

কিন্তু, কেন হঠাৎ ভেনেজ়ুয়েলা আক্রমণের পরিকল্পনা করেছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট? ট্রাম্প প্রশাসনের যুক্তি, যুক্তরাষ্ট্রে মাদক চোরাচালানের জন্য একমাত্র দায়ী কারাকাস। সেই কারণে ল্যাটিন আমেরিকার দেশটিকে ‘শিক্ষা’ দেওয়া একান্ত ভাবে প্রয়োজন হয়ে পড়েছে। তবে সেখানে কী ধরনের সামরিক অভিযানে আমেরিকার নৌসেনা নামতে চলেছে, তা অবশ্য স্পষ্ট করেনি পেন্টাগন।

০৬ ২১

২০১৩ সাল থেকে ভেনেজ়ুয়েলার প্রেসিডেন্ট পদে রয়েছেন নিকোলাস মাদুরো। যদিও তাঁকে রাষ্ট্রপ্রধান হিসাবে মানতে নারাজ ওয়াশিংটন। যুক্তরাষ্ট্রের অভিযোগ, অন্যায় ভাবে কারাকাসের কুর্সি দখল করে রেখেছেন তিনি। আর তাই নির্বাচনের নামে ল্যাটিন আমেরিকার দেশটিতে চলছে প্রহসন। মাদুরোর নামে একটি গ্রেফতারি পরোয়ানাও জারি করেছে মার্কিন সরকার। তাঁকে ধরিয়ে দিলে পাঁচ কোটি ডলার ইনাম দেবে ট্রাম্প প্রশাসন। ভারতীয় মুদ্রায় যেটা প্রায় ৪৪০ কোটি টাকা।

০৭ ২১

আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিশ্লেষকদের দাবি, ট্রাম্প-মাদুরো সংঘাত একেবারেই নতুন নয়। ২০১৭-’২১ সাল পর্যন্ত প্রথম দফায় ক্ষমতায় থাকাকালীন ভেনেজ়ুয়েলার কুর্সি থেকে নিকোলাসকে সরানোর কম চেষ্টা করেননি মার্কিন প্রেসিডেন্ট। কিন্তু নানা কারণে সে বার সফল হননি তিনি। দ্বিতীয় বার শপথ নেওয়ার পর থেকে কারাকাসে সেনা অভিযানের ছুতো খুঁজছিলেন তিনি। মাদক-বিরোধী অভিযানের নামে এ বার সেটা চালাতে পারেন ট্রাম্প।

০৮ ২১

দুঁদে কূটনীতিকেরা অবশ্য মনে করেন, ভেনেজ়ুয়েলায় রাজনৈতিক পালাবদলের চেষ্টার নেপথ্যে আমেরিকার অন্য উদ্দেশ্য রয়েছে। গত কয়েক বছরে রাশিয়া এবং চিনের সঙ্গে ঘনিষ্ঠতা বৃদ্ধি করেছেন নিকোলাস মাদুরো। আর তাতেই প্রমাদ গোনে ওয়াশিংটন। মস্কো এবং বেজিংকে দক্ষিণ আমেরিকার দেশটিতে ঘাঁটি গেড়ে বসতে দিতে নারাজ যুক্তরাষ্ট্রের সরকার। আর তাই কারাকাসের ডানা ছাঁটতে উঠেপড়ে লেগেছে ট্রাম্প প্রশাসন।

০৯ ২১

সম্প্রতি এই ইস্যুতে বিস্ফোরক মন্তব্য করেন মার্কিন বিদেশ সচিব মার্কো রুবিয়ো। তাঁর কথায়, ‘‘অত্যন্ত গোপনে ভেনেজ়ুয়েলার ভিতরে ঘাঁটি গেড়েছে রাশিয়া ও চিন। ওখানে হামলাকারী ড্রোনের কারখানা তৈরি করতে চলেছে ইরান। লেবাননের সশস্ত্র গোষ্ঠী হিজ়বুল্লাকে খোলাখুলি ভাবে সমর্থন করছে কারাকাস। আমেরিকার জাতীয় নিরাপত্তার পক্ষে এগুলি অত্যন্ত বিপজ্জনক।’’

১০ ২১

আমেরিকার অভিযোগ, ভেনেজ়ুয়েলায় সক্রিয় রয়েছে চিনা গুপ্তচরবাহিনী। যুক্তরাষ্ট্রের বিরুদ্ধে বড় রকমের ষড়যন্ত্রে লিপ্ত রয়েছে তারা। প্রতিরক্ষা বিশ্লেষকদের কেউ কেউ অবশ্য মনে করেন, এ সব কিছুই ছেঁদো যুক্তি। আসলে কারাকাসের খনিজ তেলের বিপুল ভান্ডার কব্জা করতে চাইছে ওয়াশিংটন। আর তাই মাদক, মাফিয়া থেকে শুরু করে নির্বাচনে প্রহসন এবং মস্কো-বেজিং ষড়যন্ত্রের আষাঢ়ে গল্প সাজাচ্ছে ট্রাম্প প্রশাসন।

১১ ২১

গত বছর (পড়ুন ২০২৪) নির্বাচনী প্রচারে নিজের মুখে সে কথা স্বীকারও করেছিলেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট। নর্থ ক্যারোলিনার একটি সভায় দেওয়া ভাষণে তিনি বলেন, ‘‘আমরা (পড়ুন আমেরিকা) ভেনেজ়ুয়েলার থেকে খনিজ তেল কিনছি। এটা দুর্ভাগ্যজনক। কারণ, আমার প্রথম দফার শাসনকালে পতনের মুখে চলে এসেছিল কারাকাস। তখনই বাহিনী পাঠিয়ে দেশটাকে কব্জা করা উচিত ছিল। তা হলেই ওদের তেলের উপরে সম্পূর্ণ অধিকার থাকত আমাদের।’’

১২ ২১

বর্তমানে ভেনেজ়ুয়েলার কাছে রয়েছে বিশ্বের বৃহত্তম খনিজ তেলের ভান্ডার। ২০১৯ সালে ‘দুনিয়ার জ্বালানি’ শীর্ষক একটি রিপোর্টে ‘বিপি স্ট্যাটিসটিক্যাল রিভিউ’ নামের সমীক্ষক সংস্থা জানায়, কারাকাসের মাটির গভীরে সঞ্চিত আছে আনুমানিক ৩,০৩৩ কোটি ব্যারেল ‘তরল সোনা’। দ্বিতীয় স্থানে থাকা সৌদি আরবের কুয়োগুলিতে জমা আছে ২,৯৭৭ কোটি ব্যারেল অপরিশোধিত তেল। যদিও ‘তরল সোনা’ উত্তোলনের নিরিখে প্রথম স্থানে আছে রিয়াধ।

১৩ ২১

এ-হেন পরিস্থিতিতে মার্কিন আগ্রাসনের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়িয়েছেন ভেনেজ়ুয়েলার প্রেসিডেন্ট নিকোলাস মাদুরো। ইতিমধ্যেই ৪৫ লক্ষ দেশবাসীকে আমেরিকার বিরুদ্ধে অস্ত্র ধরার আহ্বান জানিয়েছেন তিনি। তার পরেই নাগরিকদের যুদ্ধের প্রশিক্ষণ দিতে শুরু করেছে কারাকাসের সেনা ও সরকার। পাশাপাশি, এই ইস্যুতে আন্তর্জাতিক সমর্থন আদায়ের চেষ্টাও চালিয়ে যাচ্ছেন মাদুরো।

১৪ ২১

সংবাদসংস্থা ‘সিএনএন’-এর প্রতিবেদন অনুযায়ী, গত ২১ অগস্ট চিনা প্রেসিডেন্ট শি জিনপিঙের সঙ্গে ফোনে কথা বলেন ভেনেজ়ুয়েলার প্রেসিডেন্ট। পাশাপাশি কারাকাসে নিযুক্ত বেজিঙের রাষ্ট্রদূত ল্যান হুর সঙ্গে বেশ কয়েক বার বৈঠক করেন তিনি। এর পর সম্পূর্ণ সামরিক পোশাকে বেশ কয়েকটি জনসভায় ভাষণ দিতে দেখা যায় মাদুরোকে।

১৫ ২১

ব্রিটিশ গণমাধ্যম ‘দ্য গার্ডিয়ান’-এর অবশ্য দাবি, মার্কিন নৌবাহিনীর পক্ষে ভেনেজ়ুয়েলা দখল করা মোটেই সহজ নয়। কারণ, বছর ছয় আগে দেশের ভিতরে রাশিয়াকে গুপ্তঘাঁটি তৈরির অনুমতি দেয় কারাকাস। সেই সামরিক ছাউনিতে দূরপাল্লার ক্ষেপণাস্ত্র মোতায়েন রেখেছে মস্কো। মার্কিন আগ্রাসনের বিরুদ্ধে এগুলি অনায়াসেই ব্যবহার করতে পারে ক্রেমলিন।

১৬ ২১

সূত্রের খবর, বর্তমান পরিস্থিতিতে ভেনেজ়ুয়েলার পাশে দাঁড়াতে সেখানে সৈন্য মোতায়েন করতে চলেছেন রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন। এ ছাড়া কারাকাসকে বিপুল সংখ্যায় ক্ষেপণাস্ত্র ও ড্রোন সরবরাহ করতে পারে চিন। পাশাপাশি, সামরিক কৃত্রিম উপগ্রহ মারফত যুক্তরাষ্ট্রের হাঁড়ির খবরও মাদুরোর ফৌজি জেনারেলদের কাছে পৌঁছে দিতে পারে বেজিং ও মস্কো।

১৭ ২১

কিন্তু, তার পরেও যুক্তরাষ্ট্রের বাহিনীর সামনে ভেনেজ়ুয়েলা কত ক্ষণ টিকতে পারবে, তা নিয়ে যথেষ্ট সন্দেহ রয়েছে প্রতিরক্ষা বিশ্লেষকদের একটা বড় অংশের। তাঁদের অনুমান, কারাকাসের রাজনৈতিক ক্ষমতা বদলের জন্য আমেরিকার ফৌজি জেনারেলদের খুব বেশি বলপ্রয়োগ করতে হবে না। তবে ল্যাটিন আমেরিকার দেশটিতে মার্কিন সেনা ঢুকে পড়লে গেরিলা যুদ্ধ চালিয়ে তাঁদের ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ বাড়াতে পারে মাদুরোর বাহিনী।

১৮ ২১

বিশ্লেষকদের দাবি, ভেনেজ়ুয়েলার পতন হলে আন্তর্জাতিক রাজনীতিতে আসবে বড় বদল। সে ক্ষেত্রে আরও একটি ‘বন্ধু’ দেশকে হারাবে রাশিয়া ও চিন। উল্টো দিকে ল্যাটিন আমেরিকায় বাড়বে মার্কিন প্রভাব। বিশ্ব বাজারে খনিজ তেলের দামও ঊর্ধ্বমুখী হওয়ার আশঙ্কা থাকবে।

১৯ ২১

একটা সময়ে ভেনেজ়ুয়েলা থেকে ‘তরল সোনা’ আমদানি করত ভারতও। ওই তেল পরিশোধনের বরাত পায় ধনকুবের শিল্পপতি মুকেশ অম্বানীর সংস্থা ‘রিলায়্যান্স’। কিন্তু, পরবর্তী সময়ে কারকাস থেকে তেল আমদানি প্রায় বন্ধ করে দেয় নয়াদিল্লি। যুদ্ধের কারণে বিশ্ব বাজারে জ্বালানি অগ্নিমূল্য হলে কেন্দ্রের পক্ষে অন্য কোনও বিকল্প খুঁজে পাওয়া বেশ কঠিন হবে, বলছেন বিশ্লেষকেরা।

২০ ২১

মার্কিন নিষেধাজ্ঞার কারণে দীর্ঘ দিন ধরেই ইরান থেকে খনিজ তেলের আমদানি বন্ধ রেখেছে ভারত। অন্য দিকে রাশিয়ার থেকে সস্তা দরে ‘তরল সোনা’ কেনার কারণে নয়াদিল্লির পণ্যে অতিরিক্ত ২৫ শতাংশ শুল্ক চাপিয়েছেন ট্রাম্প। শুধু তা-ই নয়, মস্কো থেকে তেল নেওয়া বন্ধ না করলে নিষেধাজ্ঞার হুমকিও দিয়েছে আমেরিকা। ফলে বিকল্প হিসাবে ভেনেজ়ুয়েলার কথা ভাবছিল কেন্দ্র। যুদ্ধ বাধলে এই বিকল্প হাতছাড়া হবে নরেন্দ্র মোদী সরকারের।

২১ ২১

২০০৩ সালে ইরাক আক্রমণ করে আমেরিকা। যুক্তরাষ্ট্রের অভিযোগ ছিল, গণবিধ্বংসী হাতিয়ার রয়েছে সেখানকার প্রেসিডেন্ট সাদ্দাম হুসেনের কাছে। যদিও বাগদাদ দখলের পর তার অস্তিত্ব খুঁজে পায়নি মার্কিন সেনা। সাদ্দামকে অবশ্য শেষ পর্যন্ত ফাঁসিকাঠে ঝুলতে হয়েছিল। লড়াই থামার পর আরব মুলুকটির যাবতীয় তেলের খনির নিয়ন্ত্রণ পায় ওয়াশিংটন। ভেনেজ়ুয়েলাতেও একই চিত্রনাট্যের পুনরাবৃত্তি হবে? উত্তর দেবে সময়।

সব ছবি: সংগৃহীত।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
Follow us on:
আরও গ্যালারি
Advertisement