India’s Hypersonic Missile

দু’হাজার কেজি পরমাণু বিস্ফোরক নিয়ে শত্রুর গড়ে হামলা! গতির ঝড় তোলা ‘ব্রহ্মাস্ত্রে’ চিনকে চমকাচ্ছে ভারত

চিন ও পাকিস্তানের রক্তচাপ বাড়িয়ে এ বার হাইপারসনিক ক্ষেপণাস্ত্র হাতে পেতে চলেছে ভারতীয় সেনা। শব্দের চেয়ে আট গুণ গতিতে ছুটতে সক্ষম ‘ব্রহ্মাস্ত্র’র সফল পরীক্ষা চালিয়েছে নয়াদিল্লি। হাতিয়ারের গুণাগুণ বর্ণনা করে প্রশংসায় ভরিয়ে দিয়েছেন মার্কিন প্রতিরক্ষা বিশ্লেষকেরা।

Advertisement
আনন্দবাজার ডট কম ডেস্ক
শেষ আপডেট: ২৫ জুলাই ২০২৫ ১২:১৩
Share:
০১ ২০

শত্রুসংহারে ‘চুপিসারে’ হাইপারসনিক ক্ষেপণাস্ত্র তৈরি করছে ভারত। সেই মারণাস্ত্রের সফল পরীক্ষার খবর পেতেই বেজায় খুশি আমেরিকা। মার্কিন গণমাধ্যমগুলির দাবি, নয়াদিল্লির নতুন প্রজন্মের ক্ষেপণাস্ত্র অনায়াসে টেক্কা দিতে পারবে চিনকে। ‘আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা’ (পড়ুন এয়ার ডিফেন্স) ব্যবহার করেও একে আটকানো অসম্ভব। যুক্তরাষ্ট্রের সংবাদমাধ্যমগুলির এ-হেন প্রতিবেদনে বেজিঙের যে রক্তচাপ বেড়েছে তা বলাই বাহুল্য।

০২ ২০

চলতি বছরের ২২ জুলাই ভারতের হাইপারসনিক ক্ষেপণাস্ত্র পরীক্ষা নিয়ে একটি রিপোর্ট প্রকাশ করে জনপ্রিয় মার্কিন গণমাধ্যম ‘দ্য মিরর ইউএস’। সেখানে বলা হয়েছে, হাইপারসনিক এবং পারমাণবিক হাতিয়ার বহনে সক্ষম উন্নত প্রযুক্তির ক্ষেপণাস্ত্র তৈরির প্রচেষ্টায় ঢিলে দিচ্ছেন না নয়াদিল্লির প্রতিরক্ষা গবেষকেরা। এতে এশিয়ায় ‘শক্তির ভরকেন্দ্র’ বদলাতে পারে। ক্ষেপণাস্ত্র প্রযুক্তিতে চিনকে টক্কর দেওয়ার জায়গায় কেন্দ্রের নরেন্দ্র মোদী সরকার পৌঁছে গিয়েছে বলেও সেখানে উল্লেখ করা হয়েছে।

Advertisement
০৩ ২০

‘দ্য মিরর ইউএস’ জানিয়েছে, সম্প্রতি একসঙ্গে তিনটি ক্ষেপণাস্ত্রের সফল পরীক্ষা চালায় ভারতের প্রতিরক্ষা গবেষণা সংস্থা ডিআরডিও (ডিফেন্স রিসার্চ ডেভেলপমেন্ট অর্গানাইজ়েশন)। এর মধ্যে আধুনিকতমটির নাম ‘এক্সটেন্ডেড ট্র্যাজেক্টরি লং ডিউরেশন হাইপারসনিক ক্রুজ় মিসাইল’ বা ইটি-এলডিএইচসিএম। শব্দের আট গুণ বেগে (পড়ুন আট ম্যাক) ছুটে গিয়ে সংশ্লিষ্ট মারণাস্ত্রটি নিখুঁত নিশানায় শত্রুর উপর হামলা চালাতে সক্ষম বলে জানা গিয়েছে।

০৪ ২০

মার্কিন গণমাধ্যমগুলির প্রতিবেদন অনুযায়ী, ‘বর্ধিত ট্র্যাজেক্টরি দীর্ঘস্থায়ী হাইপারসনিক ক্রুজ় ক্ষেপণাস্ত্র’টির পাল্লা ১,৫০০ কিলোমিটার। এর গতিবেগ ঘণ্টায় সাড়ে ন’হাজার কিমির বেশি। ‘প্রকল্প বিষ্ণু’র আওতায় একে তৈরি করেছে ডিআরডিও। আগামী দিনে ইটি-এলডিএইচসিএমের পাল্লা এবং গতিবেগ আরও বাড়তে চলেছে বলে প্রতিরক্ষা মন্ত্রক সূত্রে মিলেছে খবর।

০৫ ২০

প্রতিরক্ষা বিশ্লেষকদের দাবি, যুদ্ধের সময়ে নিমেষে ‘খেলা ঘুরিয়ে’ দিতে পারে হাইপারসনিক ক্ষেপণাস্ত্র। সাম্প্রতিক বেশ কয়েকটি সংঘর্ষে তার নমুনা দেখা গিয়েছে। সংশ্লিষ্ট মারণাস্ত্রগুলি পারমাণবিক এবং প্রথাগত, দু’ধরনের ক্ষেপণাস্ত্র বহন করতে সক্ষম। মার্কিন গণমাধ্যমগুলির দাবি, বর্তমানে ভারতীয় সেনার হাতে থাকা অন্যান্য সুপারসনিক বা সাবসনিক ক্ষেপণাস্ত্রগুলিকে হাইপারসনিক শ্রেণিতে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা চালাচ্ছে ডিআরডিও।

০৬ ২০

গতির নিরিখে দুনিয়ার যাবতীয় ক্ষেপণাস্ত্রকে তিনটি শ্রেণিতে ভাগ করা যেতে পারে। এর মধ্যে একেবারে নীচের স্তরে রয়েছে সাবসনিক ক্ষেপণাস্ত্র। এগুলি মূলত শব্দের গতিতে ছুটতে পারে। সুপারসনিক ক্ষেপণাস্ত্রের গতি আবার শব্দের গতিবেগের চেয়ে কিছুটা বেশি। আর যে ক্ষেপণাস্ত্রগুলি শব্দের পাঁচ গুণ বা তার চেয়ে বেশি গতিতে ছুটতে পারে সেগুলি হাইপারসনিক শ্রেণির। বর্তমানে আমেরিকা, রাশিয়া, চিন এবং ইরানের মতো হাতেগোনা কয়েকটি দেশের কাছে রয়েছে হাইপারসনিক ক্ষেপণাস্ত্র। এই তালিকায় খুব দ্রুত যে নয়াদিল্লির নাম যুক্ত হবে, তাতে কোনও সন্দেহ নেই।

০৭ ২০

হাইপারসনিক যুগে পা রাখতে গত বছর স্ক্র্যামজ়েট ইঞ্জিনের সফল পরীক্ষা করে ডিআরডিও। দু’হাজার ডিগ্রি পর্যন্ত তাপমাত্রায় ওই ইঞ্জিন বেশ ভাল ভাবে কাজ করেছিল। এর পরেই ‘গেম চেঞ্জার’ ইটি-এলডিএইচসিএম তৈরিতে মন দেন এ দেশের প্রতিরক্ষা বিজ্ঞানীরা। সংশ্লিষ্ট ক্ষেপণাস্ত্রটি দু’হাজার কেজি পর্যন্ত প্রচলিত এবং পরমাণু বিস্ফোরক (পড়ুন ওয়ারহেড) বহন করতে পারবে বলে জানা গিয়েছে।

০৮ ২০

মার্কিন প্রতিরক্ষা বিশ্লেষকদের দাবি, প্রাথমিক পর্যায়ে ‘প্রকল্প বিষ্ণু’র আওতায় ইটি-এলডিএইচসিএমের তিনটি ভ্যারিয়্যান্ট তৈরির পরিকল্পনা রয়েছে নয়াদিল্লির। ডিআরডিও একে ভারতীয় স্থলবাহিনী, নৌবাহিনী এবং বিমানবাহিনীর ব্যবহারের উপযোগী করে তৈরি করতে চাইছেন। এর মধ্যে স্থলবাহিনী সবার আগে হাতে পাবে এই ক্ষেপণাস্ত্র। নৌসেনার ক্ষেত্রে রণতরীর পাশাপাশি ডুবোজাহাজ থেকে যাতে হাইপারসনিক ক্ষেপণাস্ত্রটিকে ছোড়া যায়, সেই গবেষণাও চলছে। তবে ওই ভ্যারিয়েন্ট আসতে কিছুটা সময় লাগবে।

০৯ ২০

হাইপারসনিক ক্ষেপণাস্ত্র মূলত দু’ধরনের হয়ে থাকে। একটির নাম ‘হাইপারসনিক গ্লাইড ভেহিকলস’। রকেটের মাধ্যমে একে উৎক্ষেপণ করতে হয়। এরোডায়নামিক লিফ্‌ট ব্যবহার করে তা বিদ্যুৎগতিতে লক্ষ্যবস্তুর দিকে এগিয়ে যায়। গত বছরের নভেম্বর মাসে এরই সফল পরীক্ষা চালায় ভারতের প্রতিরক্ষা গবেষণা সংস্থা ডিআরডিও।

১০ ২০

উচ্চ গতি সম্পন্ন এই ক্ষেপণাস্ত্রের সবচেয়ে বড় সুবিধা হল লঞ্চিংয়ের পর প্রয়োজনমতো দিক পরিবর্তন। সাপের মতো এঁকেবেঁকে নিশানার দিকে এগিয়ে যাওয়ার ক্ষমতা রয়েছে এর। পৃথিবীর বায়ুমণ্ডলের অনেকটা নীচের স্তর দিয়ে ছুটতে পারে হাইপারসনিক ক্ষেপণাস্ত্র। ফলে একে চিহ্নিত করতে পারে না রেডার বা আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা।

১১ ২০

গত মে মাসে ‘অপারেশন সিঁদুর’ এবং তাকে কেন্দ্র করে পাকিস্তানের সঙ্গে চলা যুদ্ধে রাশিয়ার সঙ্গে যৌথ উদ্যোগে তৈরি ‘ব্রহ্মস’ সুপারসনিক ক্রুজ় ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবহার করে নয়াদিল্লি। এর আঘাতে উড়ে যায় ইসলামাবাদের বায়ুসেনার ১১টি ঘাঁটি। পাক গণমাধ্যমগুলির দাবি, সংঘাতের সময়ে মোট ১৫টি ‘ব্রহ্মস’ ছুড়েছিল ভারতীয় সেনা। এর জেরে রহিম ইয়ার খান, সরগোধা, জ্যাকোবাবাদ এবং নূর খান ছাউনি-সহ রাওয়ালপিন্ডির বিমানবাহিনীর ২০ শতাংশ পরিকাঠামো পুরোপুরি ধ্বংস হয়ে যায়।

১২ ২০

উত্তর-পূর্ব ভারতের ব্রহ্মপু্ত্র এবং রাশিয়ার মস্কোভা নদীর নাম মিলিয়ে ‘ব্রহ্মস’ শব্দটি তৈরি করা হয়েছে। এর প্রযুক্তির ক্ষেত্রে ডিআরডিও এবং ক্রেমলিনের এনপিও মাশিনোস্ট্রোয়েনিয়ারের ৫০-৫০ শতাংশ অংশীদারি রয়েছে। একে দুনিয়ার দ্রুততম ক্রুজ় ক্ষেপণাস্ত্র বলা যেতে পারে। শব্দের প্রায় তিন গুণ বেশি গতিতে ছুটতে পারে ‘ব্রহ্মস’। এর নির্মাণকারী সংস্থার নাম ‘ব্রহ্মস অ্যারোস্পেস লিমিটেড’।

১৩ ২০

গত কয়েক বছর ধরে ‘ব্রহ্মস’কে আবার হাইপারসনিক শ্রেণিতে বদলে দেওয়ার চেষ্টা চালাচ্ছেন ভারত ও রাশিয়ার প্রতিরক্ষা গবেষকেরা। সে ক্ষেত্রে শব্দের আট গুণ বেশি গতিতে ছুটতে পারবে ‘ব্রহ্মস’। এর পাল্লা বেড়ে দাঁড়াবে দেড় হাজার কিলোমিটার। এ ছাড়া অগ্নি এবং পৃথ্বী ক্ষেপণাস্ত্রগুলিকেও হাইপারসনিক শ্রেণিতে বদলে ফেলার পরিকল্পনা রয়েছে নয়াদিল্লির।

১৪ ২০

ভারতের প্রতিবেশী দেশগুলির মধ্যে একমাত্র চিনের কাছে রয়েছে হাইপারসনিক ক্ষেপণাস্ত্র। বেজিঙের ‘পিপল্‌স লিবারেশন আর্মি’ (পিএলএ) ‘ডিএফ জ়েডএফ’ নামের একটি ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবহার করে। এর গতিবেগ ম্যাক ৮ বলে জানা গিয়েছে। ‘ডিএফ জ়েডএফ’-এর পাল্লা ২,৩০০ কিলোমিটার। সেই কারণেই এ দেশের হাইপারসনিক ক্ষেপণাস্ত্রগুলির পাল্লা বৃদ্ধির প্রয়োজনীয়তা অনুভব করছে ডিআরডিও।

১৫ ২০

২০২২ সালের ২৪ ফেব্রুয়ারি থেকে ইউক্রেনে চলা ‘বিশেষ সামরিক অভিযান’-এ (স্পেশ্যাল মিলিটারি অপারেশন) হাইপারসনিক ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবহার করছে রাশিয়া। সেই তালিকায় প্রথমেই আসবে ‘কেএইচ-৪৭এম২ কিলজ়েল’-এর নাম। এর সাহায্যে ইউক্রেনের ফ্রাঙ্কিভস্ক এলাকার ভূগর্ভস্থ গোলাবারুদের বিশাল গুদাম উড়িয়ে দেয় মস্কোর বায়ুসেনা।

১৬ ২০

এ ছাড়া ‘৩এম২২ জ়িরকম’ নামের আরও একটি পরমাণু অস্ত্র বহনে সক্ষম হাইপারসনিক ক্রুজ় ক্ষেপণাস্ত্র রয়েছে ক্রেমলিনের অস্ত্রাগারে। শব্দের চেয়ে ন’গুণ গতিতে ছুটতে পারে রাশিয়ার এই ‘ব্রহ্মাস্ত্র’। এর সাহায্যে ইউক্রেনের রাজধানী কিভকে নিশানা করে মস্কোর ফৌজ। ওই হামলায় ‘জ়িরকম’-এর তাণ্ডব দেখে শিউরে ওঠে গোটা দুনিয়া।

১৭ ২০

গত বছরের ২১ নভেম্বর ইউক্রেনীয় শহর ডেনিপ্রোয় ‘আন্তর্মহাদেশীয় ব্যালেস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র’ (ইন্টারকন্টিনেন্টাল ব্যালেস্টিক মিসাইল বা আইসিবিএম) দিয়ে আক্রমণ শানায় মস্কো। হাতিয়ারটির নাম ছিল ‘ওরেশনিক’, রুশ ভাষায় যার অর্থ হ্যাজেল গাছ। পরে এই নিয়ে বিবৃতি দিতে গিয়ে খোদ রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন বলেন, ‘‘শব্দের ১০ গুণ গতিতে (১০ ম্যাক) উড়ে গিয়ে নিখুঁত নিশানায় লক্ষ্যে আঘাত হেনেছে ওরেশনিক।’’

১৮ ২০

এ বছরের জুনে ইজ়রায়েল এবং ইরানের মধ্যে ১২ দিনের ‘যুদ্ধ’-এ ব্যবহার হয়েছে হাইপারসনিক ক্ষেপণাস্ত্র। সংঘাতের সময়ে ইহুদিদের একাধিক শহরকে নিশানা করতে ‘ফাত্তাহ-১’ এবং ‘ফাত্তাহ-২’ নামের দু’টি এই শ্রেণির ক্ষেপণাস্ত্র ছোড়ে সাবেক পারস্য দেশের শিয়া ধর্মগুরু তথা ‘সর্বোচ্চ নেতা’ (পড়ুন সুপ্রিম লিডার) আয়াতোল্লা আলি খামেনেইয়ের নিয়ন্ত্রণে থাকা আইআরজিসি (ইসলামিক রেভলিউশনারি গার্ড কোর)।

১৯ ২০

ইজ়রায়েলের ‘আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা’ যথেষ্ট উন্নত। তা সত্ত্বেও ইরানের দিক থেকে উড়ে আসা কোনও হাইপারসনিক ক্ষেপণাস্ত্রকেই আটকাতে পারেনি ইহুদিদের এয়ার ডিফেন্স। ফলে তেল আভিভ-সহ একাধিক শহরের ঘনবসতিপূর্ণ এলাকার বেশ ক্ষতি হয়। চোখের নিমেষে ভেঙে পড়ে উঁচু ইমারত। জীবনহানিরও ঘটনা ঘটেছিল।

২০ ২০

প্রতিরক্ষা বিশেষজ্ঞদের দাবি, হাইপারসনিক ক্ষেপণাস্ত্রের সাহায্যে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার মলাক্কা প্রণালী থেকে পারস্য উপসাগর পর্যন্ত বিস্তীর্ণ এলাকায় স্থায়ী সুরক্ষা দেওয়া যাবে। ঠেকানো যাবে চিনের গুপ্তচর জাহাজের দাদাগিরি। আর তাই ভারতের এই সাফল্য ইউরোপ এবং আমেরিকাতেও শোরগোল ফেলে দিয়েছে।

সব ছবি: সংগৃহীত।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
Follow us on:
আরও গ্যালারি
Advertisement