Shrimp Export of India

ভারতীয় চিংড়িচাষিদের হাল ফেরাতে ‘দেবদূত’ ইউরোপীয় ইউনিয়ন! মুখের উপর জবাব পেলেন শুল্কলোভী ট্রাম্প?

ভারতের সামুদ্রিক খাবার রফতানি বৃদ্ধির লক্ষ্যে অতিরিক্ত ১০২টি ভারতীয় মৎস্য সংস্থাকে রফতানির অনুমোদন দিল ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ)। সম্প্রতি ‘মেরিন প্রোডাক্টস এক্সপোর্ট ডেভেলপমেন্ট অথরিটি (এমপিইডিএ)’ জানিয়েছে তেমনটাই।

Advertisement
আনন্দবাজার ডট কম ডেস্ক
শেষ আপডেট: ১৭ সেপ্টেম্বর ২০২৫ ১৪:৩৩
Share:
০১ ২১

ট্রাম্পের শুল্কখাঁড়ার কোপ পড়েছিল ভারতের চিংড়িচাষিদের ঘাড়ে। ৬০ হাজার কোটির বাজার কি তা হলে ধ্বংস হয়ে যাবে? ঘুম উড়েছিল দেশের সামুদ্রিক মৎস্যচাষিদের। তাঁদের বিপদ থেকে রক্ষা করতে এ বার এগিয়ে এল ইউরোপীয় ইউনিয়ন।

০২ ২১

ভারতের সামুদ্রিক খাবার রফতানি বৃদ্ধির লক্ষ্যে অতিরিক্ত ১০২টি ভারতীয় মৎস্য সংস্থাকে রফতানির অনুমোদন দিল ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ)। সম্প্রতি ‘মেরিন প্রোডাক্টস এক্সপোর্ট ডেভেলপমেন্ট অথরিটি (এমপিইডিএ)’ জানিয়েছে তেমনটাই।

Advertisement
০৩ ২১

জানা গিয়েছে, জলজ পালন ইউনিট, প্রক্রিয়াকরণ কেন্দ্র এবং কোল্ড স্টোরেজের সুবিধা থাকা সংস্থাগুলি এখন ইউরোপীয় ইউনিয়নে সামুদ্রিক খাবার রফতানি করতে পারবে। বাণিজ্য মন্ত্রকও জানিয়েছে, এই পদক্ষেপের ফলে ইউরোপীয় ইউনিয়নে সামুদ্রিক খাবার রফতানি তাৎক্ষণিক ভাবে ২০ শতাংশ বৃদ্ধি পেতে পারে। ফলে স্বস্তি ফিরতে পারে ট্রাম্পের শুল্পবাণের আঘাতে ক্ষতির মুখে পড়া ভারতীয় চিংড়িচাষিদের জীবনে।

০৪ ২১

এই পদক্ষেপ ভারতের উপর মার্কিন শুল্কের প্রভাব কমাতে এবং সামুদ্রিক খাবার রফতানিকারকদের ইউরোপীয় বাজারে প্রবেশ করতে সাহায্য করবে বলেও আশা করা হচ্ছে।

০৫ ২১

ভারতের উপর প্রথমে ২৫ শতাংশ শুল্ক চাপিয়েছিলেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। পরে রাশিয়া থেকে তেল কেনার কারণে ‘জরিমানা’ হিসাবে আরও ২৫ শতাংশ শুল্ক চাপান নয়াদিল্লির উপরে। বর্তমানে ভারতের উপরে সব মিলিয়ে ৫০ শতাংশ শুল্ক চাপিয়ে রেখেছেন তিনি। এর পরেই ভারতের সামুদ্রিক মৎস্যচাষিদের জীবনে আঁধার নেমে আসে।

০৬ ২১

ট্রাম্পের শুল্কনীতির জেরে ভারতের যে আন্তর্জাতিক বাণিজ্য ধাক্কা খেতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছিল, তার মধ্যে অন্যতম ছিল সামুদ্রিক খাবার রফতানির ব্যবসা। ইতিমধ্যেই বিপুল ক্ষতির মুখে পড়েছেন সামুদ্রিক মৎস্যচাষিরা।

০৭ ২১

ভারতে উৎপন্ন সামুদ্রিক খাবারের যতটা না এ দেশে খাওয়া হয়, তার চেয়ে অনেক বেশি রফতানি হয়। রফতানি করা হয় মোট উৎপাদনের ৫০ শতাংশেরও বেশি। সামুদ্রিক খাবারের মধ্যে ভারত থেকে সবচেয়ে বেশি যে পণ্য বিদেশে রফতানি করা হয়, তা হল চিংড়ি।

০৮ ২১

পরিমাণের দিক থেকে এবং মূল্যের নিরিখে ভারত থেকে সবচেয়ে বেশি রফতানি হওয়া পণ্যগুলির মধ্যেও অন্যতম চিংড়ি। পরিমাণ ভারত থেকে রফতানি হওয়া সামুদ্রিক খাবারের দুই-তৃতীয়াংশ। এত দিন চিংড়ি-সহ যে পরিমাণ সামুদ্রিক খাবার ভারত থেকে রফতানি করা হত, তার মধ্যে প্রায় ৩৫ শতাংশ যেত আমেরিকায়। বাকি অন্যান্য দেশে রফতানি করা হত।

০৯ ২১

বিগত কয়েক বছরে সামুদ্রিক খাবার রফতানির দিক থেকে ফুলেফেঁপে উঠেছিল ভারত। বাণিজ্য মন্ত্রকের তথ্য অনুযায়ী, গত অর্থবর্ষে ৭৪৫ কোটি ডলার (ভারতীয় মুদ্রায় ৬০ হাজার কোটি টাকারও বেশি) মূল্যের প্রায় ১৭ লক্ষ টন সামুদ্রিক খাবার রফতানি করেছে ভারত। এর মধ্যে চিংড়ি রফতানি থেকে আয় হয়েছিল প্রায় ৫০০ কোটি ডলার (ভারতীয় মুদ্রায় ৪০ হাজার কোটি টাকারও বেশি)।

১০ ২১

২০২৪-২৫ অর্থবর্ষে ভারত থেকে ২৪০ কোটি ডলার মূল্যের চিংড়ি আমদানি করেছিল আমেরিকা। ভারতের সামুদ্রিক মৎস্যচাষকে উদীয়মান ক্ষেত্র হিসাবে দেখা হচ্ছিল এত দিন। সামুদ্রিক খাদ্যপণ্যের উৎপাদনও বৃদ্ধি পেয়েছিল ভারতের অভ্যন্তরে। বৃদ্ধি পেয়েছিল কৃত্রিম ভাবে ভেড়ি তৈরি করে চিংড়ির চাষ।

১১ ২১

কিন্তু ট্রাম্পের শুল্কবৃদ্ধির কারণে চাপে পড়েন সামুদ্রিক মৎস্যচাষিরা। ভারতীয় রাজ্যগুলির মধ্যে অন্ধ্রপ্রদেশে সবচেয়ে বেশি চিংড়ি চাষ হয়। তাই সে রাজ্যের চাষিদের উপরই প্রভাব পড়ে সবচেয়ে বেশি।

১২ ২১

ট্রাম্পের শুল্কনীতির পর ইতিমধ্যেই চিংড়ি রফতানি ১৫-১৮ শতাংশ কমে গিয়েছে বলে মনে করা হচ্ছে। সব মিলিয়ে সামুদ্রিক খাদ্যপণ্যের রফতানি কমেছে প্রায় ৫০ শতাংশ। ফলে স্বাভাবিক ভাবেই সামুদ্রিক খাদ্যপণ্যের দাম কমাতে বাধ্য হচ্ছেন চাষিরা। বিশেষ মুনাফা না হওয়ায় কৃত্রিম ভাবে চিংড়ির চাষও বন্ধ হয়ে যাচ্ছে বেশ কিছু জায়গায়। অন্য চাষের দিকে ঝুঁকছেন সামুদ্রিক মৎস্যচাষিদের একাংশ।

১৩ ২১

মনে করা হচ্ছে, আমেরিকার শুল্কের চাপে সামুদ্রিক খাদ্যপণ্য উৎপাদনের সঙ্গে প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষ ভাবে যুক্ত প্রায় ২ কোটি ৮০ লক্ষ মানুষের জীবনে প্রভাব পড়েছে। আর এই আবহে লাভ হচ্ছে ইন্দোনেশিয়া, ভিয়েতনাম, তাইল্যান্ড, ইকুয়েডরের সামুদ্রিক মৎস্যচাষিদের। কারণ, ভারতের মতো ওই দেশগুলিতেও সামুদ্রিক খাদ্যপণ্য উৎপাদনের পরিমাণ বেশি।

১৪ ২১

অথচ এর মধ্যে বেশির ভাগ দেশেই ট্রাম্পের চাপানো শুল্কের পরিমাণ ভারতের উপর চাপানো শুল্কের অর্ধেকেরও কম। আর তাই আমেরিকার বাজার দখল করতে মরিয়া হয়ে উঠেছে ওই দেশগুলির সামুদ্রিক খাদ্যপণ্য রফতানিকারকেরা। কিছু ক্ষেত্রে সফলও হতে শুরু করেছে তারা।

১৫ ২১

তাই বিশেষজ্ঞদের আশঙ্কা ছিল, পরবর্তী কালে শুল্ক পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলেও আমেরিকার বাজারে সামুদ্রিক খাবার নিয়ে ঢোকার ক্ষেত্রে বেগ পেতে হবে ভারতীয় মৎস্যচাষিদের।

১৬ ২১

এর পরেই বিষয়টি নিয়ে সক্রিয় হয় কেন্দ্রীয় সরকার। সামুদ্রিক খাবার রফতানিকারকদের বিকল্প বাজার অনুসন্ধান করার পরামর্শ দেওয়া হয় সরকারের তরফে। আমেরিকা ছাড়া সামুদ্রিক খাবারের চাহিদা রয়েছে এমন দেশ, যেমন রাশিয়া, ব্রিটেন, নরওয়ে, সুইৎজ়ারল্যান্ড, চিন, জাপান এবং পশ্চিম এশিয়া ও ইউরোপীয় ইউনিয়নের দেশগুলিতে বিকল্প খোঁজার পরামর্শ দেওয়া হয়।

১৭ ২১

এ ছাড়া মৎস্যচাষে ত্রাণ দেওয়ার সিদ্ধান্তের কথাও জানায় সরকার। রফতানি ঋণ দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। সামুদ্রিক মৎস্যচাষিরা যাতে উৎপাদন বন্ধ না করেন, সেই আবেদনও জানানো হয় কেন্দ্রের তরফে।

১৮ ২১

রাজ্য সরকারগুলিও এ বিষয়ে বিভিন্ন পদক্ষেপ করতে শুরু করে। অন্ধ্রপ্রদেশে দীর্ঘমেয়াদি কিছু পরিকল্পনা গ্রহণ করা শুরু হয়। সামুদ্রিক খাবার রফতানির চেষ্টা করা হচ্ছিল ইউরোপের বাজারে। এ ছাড়াও যাতে দেশে সামুদ্রিক খাবারের চাহিদা বৃদ্ধি করা যায়, সে চেষ্টাও চলছিল। বিশ্ববাজারে সামুদ্রিক খাবারের চাহিদা বিপুল। তাই চেষ্টা চলছিল সামুদ্রিক খাবারের শিল্প বহুমুখী করারও।

১৯ ২১

এর পরেই সামুদ্রিক মৎস্যচাষিদের সঙ্কটময় পরিস্থিতিতে ‘দেবদূতের’ মতো আগমন ইউরোপীয় ইউনিয়নের। ভারতের সামুদ্রিক খাবার রফতানি বৃদ্ধির লক্ষ্যে অতিরিক্ত ১০২টি মৎস্য ইউনিটকে রফতানির অনুমোদন দেওয়ার কথা ঘোষণা করেছে ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ)। ফলে মনে করা হচ্ছে ভারতীয় সামুদ্রিক মৎস্যচাষিদের সুমসয় আবার ফিরতে চলেছে।

২০ ২১

এই পদক্ষেপের ফলে ভারত-ইইউ বাণিজ্য চুক্তির আলোচনার গতি আরও বৃদ্ধি পাবে বলেও আশা করা হচ্ছে, যা বর্তমানে ১৩তম পর্যায়ে রয়েছে। পাশাপাশি, ভারত দীর্ঘ দিনের বাধা দূর করে ইউরোপের বাজার দখলে আরও এক ধাপ এগোল বলেও মনে করছেন বিশেষজ্ঞেরা।

২১ ২১

সামুদ্রিক মৎস্যচাষিদের জন্য ইউরোপীয় ইউনিয়নের দরজা খোলা এই মুহূর্তে ভারতের ‘বড় জয়’ হিসাবে দেখছেন বিশেষজ্ঞদের একাংশ। আবার বিশেষজ্ঞদের অনেকে এ-ও মনে করছেন, ইউরোপের বাজার খুললেও ভারতের সামুদ্রিক মৎস্যচাষিদের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ আমেরিকার বাজার। ফলে ভারতকে চেষ্টা করতে হবে আমেরিকার বাজারে আধিপত্য বিস্তারের।

ছবি: সংগৃহীত।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
Follow us on:
আরও গ্যালারি
Advertisement