বলিউডের তাবড় অভিনেতা, কপূর পরিবারের অন্যতম উজ্জ্বল নক্ষত্র। সত্তরের দশকের বলিউড কাঁপানো সুদর্শন নায়ক। দর্শকদের নজর কেড়েছেন নিজের অভিনয় দক্ষতা দিয়ে। ‘জংলি’, ‘চায়না টাউন’ থেকে ‘কাশ্মীর কি কলি’— রোম্যান্টিক হিরোর ভূমিকায় পর্দা কাঁপিয়ে দিয়েছিলেন শম্মি কপূর।
অসাধারণ অভিনয় এবং প্রাণবন্ত নাচের জন্য অনুরাগীদের মনে জায়গা করে নিলেও তাঁর অন্য এক পরিচয় অজানাই রয়ে গিয়েছে। স্কুলের গণ্ডি না পেরোলেও একটি ক্ষেত্রে প্রবল ঝোঁক ছিল শম্মির।
খুব কম লোকই জানেন অভিনয় বাদ দিয়ে প্রযু্ক্তির প্রতি তাঁর আলাদা উৎসাহ ছিল। বিশেষ করে কম্পিউটার ও ইন্টারনেট সম্পর্কে তাঁর অনুসন্ধিৎসার কথা খুব কম লোকেরই জানা। পৃথ্বীরাজ কপূরের তিন পুত্রের মধ্যে দ্বিতীয় পুত্র শম্মি ছিলেন ভারতের প্রথম ইন্টারনেট ব্যবহারকারীদের মধ্যে একজন।
মজার কথা হল ভারতে আনুষ্ঠানিক ভাবে চালু হওয়ার আগেই অভিনেতা ইন্টারনেট ব্যবহার করতে শুরু করেছিলেন। সমমনস্ক কয়েক জনের সঙ্গে মিলে খুলে ফেলেছিলেন একটি দলও। ইন্টারনেট ইউজ়ার ক্লাব অফ ইন্ডিয়া বা সংক্ষেপে আইইউসিআই।
৯০-এর দশকের গোড়ার দিকে শম্মি তাঁর ভাইঝি ঋতু নন্দার থেকে অ্যাপ্লের একটি ম্যাকিনটশ কম্পিউটার (ম্যাক) উপহার পেয়েছিলেন। সংবাদ প্রতিবেদন অনুযায়ী, শম্মি স্টিভ জোব্সের অ্যাপ্ল ইনকর্পোরেটেডের মাধ্যমে একটি ইন্টারনেট সংযোগ লাভ করেছিলেন। তা দিয়ে তিনি ওয়ার্ল্ড ওয়াইড ওয়েব অন্বেষণ শুরু করেছিলেন।
এক সাক্ষাৎকারে ৫০-এর দশকের এই তারকা অভিনেতা জানিয়েছিলেন, ভারতে ইন্টারনেট আসার আগেই তিনি ইন্টারনেটের দুনিয়া আবিষ্কার করতে সমর্থ হয়েছিলেন। ভারতে ১৯৯৫ সালে ভিএসএনএলের ইন্টারনেট পরিষেবার সূচনা হয়। তার অনেক আগে থেকেই ইন্টারনেট কী তা তিনি জেনে ফেলেছিলেন। তিনি বলেন, ‘‘আমি এটাকে শখ হিসেবে বেছে নিয়েছিলাম। অ্যাপ্ল কম্পিউটার থাকার জন্য ই-ওয়ার্ল্ড নামে একটি ওয়েবসাইটের সংযোগ পেয়েছিলাম আমি।’’
ভিএসএনএলের ইন্টারনেট পরিষেবা যখন শুরুই হয়নি তখন কী ভাবে ভারতের বাইরে কোনও কিছুতে লগ ইন করা সম্ভব হত? খুব কম লোকই জানতেন ইন্টারনেট বস্তুটি কি? ভারতের মুষ্টিমেয় কিছু ব্যবহারকারী ই-ওয়ার্ল্ড এ লগ ইন করার জন্য একটি নম্বরটি ব্যবহার করতেন। সেই নম্বরটি ব্রিটিশ টেলিকম নেটওয়ার্কের সঙ্গে যুক্ত করা ছিল। সেই মুষ্টিমেয় লোকেদের এক জন ছিলেন শম্মি।
মুম্বইয়ে ইন্টারনেট প্রচারকারী কয়েক জন উদ্যোক্তা ছিলেন যাঁরা শম্মি কপূরকে দলে নেওয়ার জন্য যোগাযোগ করেন। সেই দলে ইন্টারনেট ইউজ়ার ক্লাব অফ ইন্ডিয়ার চেয়ারম্যান নিযুক্ত হন তিনি। এই দলের প্রধান মুখ হয়ে ওঠেন শম্মি। বিভিন্ন আড্ডায় বা পার্টিতে ইন্টারনেটের অর্থ কী তা বলার জন্য মুখিয়ে থাকতেন শম্মি।
তাঁর এই ক্লাবের এক সদস্য ‘দ্য মিন্ট’কে জানিয়েছিলেন, শম্মি ই-ওয়ার্ল্ডে সর্বদাই বিচরণ করতেন। ভোর ৪টেয় ঘুমাতে যেতেন। ৮-১০ এমবি ফাইল (সেই সময়ের অনুপাতে বড় ফাইল) ডাউনলোড করে ভোরে ঘুমোতে যেতেন।
বেশির ভাগ সময় তিনি শিল্পকলা, তাঁর অন্যান্য পছন্দের সম্পর্কিত পড়াশোনার জন্য ই-ওয়ার্ল্ডে বিচরণ করে বেড়াতেন। অন্যান্য দেশে কী ঘটছে তা পড়তেন এবং ভারতে কী ঘটছে তার সঙ্গে তুল্যমূল্য বিচার করে দেখতেন। সেই সমস্ত তথ্য তিনি ক্লাবের সঙ্গে ভাগ করে নিতেন ও তাঁদেরও এই ধরনের সার্চ করার পরামর্শ দিতেন।
‘‘যখন ইন্টারনেট ভারতে এসেছিল, তখন আমরা ইতিমধ্যেই সব কিছু দেখে ফেলেছি। এটা ছিল চোখ খুলে দেওয়ার মতো ঘটনা। সম্পূর্ণ নতুন কিছু।” বলেছিলেন শম্মি।
শম্মির নিজের জ্ঞান ও অভি়জ্ঞতা দিয়ে কপূর পরিবারের প্রথম ওয়েবসাইটটি তৈরি হয়। আজও সেটি রয়ে গিয়েছে, যা অভিনেতা নিজের হাতে তৈরি করেছিলেন। সেটিতে কপূর বংশের চলচ্চিত্রের তালিকা থেকে শম্মির বিরল ছবি, কপূর পরিবারের বিস্তারিত তথ্য রয়েছে।
চলচ্চিত্র থেকে অবসর নেওয়ার পর, শম্মি কম্পিউটার এবং ইন্টারনেটের উপর মনোযোগ দেন। প্রয়াত এই অভিনেতা এথিক্যাল হ্যাকার্স অ্যাসোসিয়েশন অফ ইন্ডিয়ার মতো সংগঠন প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিলেন।
১৯৯০ সালের পর থেকে আমৃত্যু এই অভিনেতা ম্যাক ব্যবহার করতেন। যদিও, মাইক্রোসফ্ট কম্পিউটার সম্পর্কে তাঁর খুবই সীমিত জ্ঞান ছিল। তাঁর কাছে প্রয়োজনীয় সমস্ত গ্যাজেট ছিল। তিনি ফেসবুক, টুইটারে সক্রিয় ছিলেন এবং তাঁর ওয়েবসাইটেও কাজ করে গিয়েছেন মৃত্যুর আগে পর্যন্ত।