Fighter Jet Mid Air Refuelling

মাঝ-আকাশে জ্বালানি ভরে শত্রুদেশে বোমাবর্ষণ! লড়াকু জেটে ‘মিড এয়ার রিফুয়েলিং’-এর খরচ জানলে আঁতকে উঠবেন

দূরপাল্লার পথ পাড়ি দিয়ে শত্রুর দেশে বোমাবর্ষণ করে নিমেষে যুদ্ধের গতি ঘুরিয়ে দিতে পারে লড়াকু জেট ও বোমারু বিমান। এর জন্য সংশ্লিষ্ট বিমানগুলিতে থাকে মাঝ-আকাশে জ্বালানি ভরার সুবিধা। এর খরচ শুনলে চমকে যাবেন সাধারণ মানুষ।

Advertisement
আনন্দবাজার ডট কম ডেস্ক
শেষ আপডেট: ২১ অক্টোবর ২০২৫ ১৪:১৫
Share:
০১ ১৮

আধুনিক যুদ্ধে লড়াকু জেটের গুরুত্ব অপরিসীম। শত্রুদেশের আকাশের দখল নিয়ে রাতারাতি সংঘর্ষের রং বদলে দিতে পারে দ্রুত গতির এই যুদ্ধবিমান। শুধু তা-ই নয়, দূরপাল্লার আক্রমণ পরিচালনার সক্ষমতা রয়েছে ‘গেম চেঞ্জার’ সমরাস্ত্রটির। এর জন্য মাঝ-আকাশে জ্বালানি ভরার সুবিধা থাকে আধুনিক প্রজন্মের জেটগুলিতে। সংশ্লিষ্ট প্রক্রিয়াটির নাম ‘মিড এয়ার রি-ফুয়েলিং’। এর এক বারের খরচ শুনলে চমকে উঠতে পারে আমজনতা।

০২ ১৮

মাঝ-আকাশে লড়াকু জেটে তেল ভরার ক্ষেত্রে প্রয়োজন হয় একটি ট্যাঙ্কার বিমানের। হাতিয়ারবোঝাই যুদ্ধবিমানের আশপাশে উড়বে সেটি। জ্বালানি ভরতে হলে প্রথমে জেটের পাইলট ট্যাঙ্কার বিমানটির চালকের সঙ্গে যোগাযোগ করবেন। তিনি অনুমতি দিলে ট্যাঙ্কার বিমানটি থেকে বেরিয়ে আসবে একটি তেল ভরার পাইপ। এর পর জেটের সামনে বা পিঠের উপরে থাকা উঁচু কঞ্চির মতো অংশে গিয়ে আটকে যাবে ওই পাইপ। সঙ্গে সঙ্গে শুরু হবে তেল সরবরাহ।

Advertisement
০৩ ১৮

লড়াকু জেটের জ্বালানির দাম গ্যালনপ্রতি চার থেকে সাত ডলার। মাঝ-আকাশে তেল ভরলে সেই খরচ বৃদ্ধি পায় কয়েক গুণ। এ ক্ষেত্রে আবার যুদ্ধবিমান ভেদে ব্যয়ের হিসাবের তারতম্য রয়েছে। জনপ্রিয় মার্কিন প্রতিরক্ষা সংস্থা লকহিড মার্টিনের তৈরি এফ-১৬ ফাইটিং ফ্যালকনে ‘মিড এয়ার রিফুয়েলিং’ করতে হলে চার থেকে ১৪ হাজার ডলার পর্যন্ত খরচ হতে পারে। জেটটি কত পরিমাণ তেল নিচ্ছে, তার উপর ব্যয়ের সূচক নির্ভর করবে।

০৪ ১৮

যুক্তরাষ্ট্র নির্মিত এফ-১৬ যুদ্ধবিমানকে পাকিস্তান বিমানবাহিনীর শিরদাঁড়া বলা যেতে পারে। ভারতীয় বায়ুসেনা আবার দাসো অ্যাভিয়েশনের তৈরি ফরাসি জেট রাফাল এবং রুশ যুদ্ধবিমান এসইউ-৩০এমকেআই ব্যবহার করে। এ ছাড়া এ দেশের বিমানবাহিনীর হাতে আছে সম্পূর্ণ দেশীয় প্রযুক্তিতে তৈরি তেজস লড়াকু জেট। এগুলির প্রতিটিই মাঝ-আকাশে তেল ভরতে সক্ষম। ফলে দূরপাল্লার আক্রমণের সিদ্ধান্ত নিতে কোনও সমস্যা হবে না নয়াদিল্লির।

০৫ ১৮

‘মিড এয়ার রিফুয়েলিং’-এর ক্ষেত্রে সবচেয়ে বড় খরচ হল ট্যাঙ্কার বিমান পরিচালনা এবং তার রক্ষণাবেক্ষণ। সংশ্লিষ্ট উড়ানগুলি কিনতেই সংশ্লিষ্ট বিমানবাহিনীকে ব্যয় করতে হবে কয়েক লক্ষ ডলার। প্রশিক্ষণ এবং রক্ষণাবেক্ষণ বাদ দিলে একটি ট্যাঙ্কার বিমানের পিছনে ৫০ থেকে ৭০ লক্ষ ডলার পর্যন্ত খরচ হতে পারে। তবে অভিযান ভেদে মাঝ-আকাশে জ্বালানি ভরার প্রক্রিয়ায় ব্যয়ের হিসাব কম বা বেশি হতে পারে।

০৬ ১৮

চলতি বছরের ৯ সেপ্টেম্বর কাতারের রাজধানী দোহায় প্যালেস্টাইনপন্থী সশস্ত্র গোষ্ঠী হামাসের শীর্ষ নেতৃত্বের গোপন আস্তানা লক্ষ্য করে বোমাবর্ষণ করে ইজ়রায়েলি বিমানবাহিনী। সংশ্লিষ্ট অভিযানটির পোশাকি নাম ছিল ‘অপারেশন সামিট অফ ফায়ার’ (আগুনের শীর্ষ সম্মেলন)। এতে যুক্তরাষ্ট্রের তৈরি পঞ্চম প্রজন্মের ‘স্টেল্‌থ’ শ্রেণির ‘এফ-৩৫ লাইটনিং টু’ লড়াকু জেট থেকে ক্ষেপণাস্ত্র ছোড়ে ইহুদি বায়ুসেনা। তার জন্য যুদ্ধবিমান নিয়ে প্রায় ২,২০০ কিলোমিটারের বেশি রাস্তা পাড়ি দিতে হয়েছিল তাঁদের।

০৭ ১৮

একই কথা মার্কিন বিমানবাহিনীর ‘অপারেশন মিডনাইট হ্যামার’-এর ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য। গত জুনে এই অভিযানের মাধ্যমে ইরানের তিনটি পরমাণুকেন্দ্রকে একরকম উড়িয়ে দেয় তারা। সংশ্লিষ্ট অভিযানে বাঙ্কার বাস্টার বোমা ব্যবহার করেছিল আমেরিকা। এর জন্য কৌশলগত বোমারু বিমান বি-২ স্পিরিটকে যুদ্ধের ময়দানে নামায় ওয়াশিংটন। প্রায় আড়াই হাজার কিলোমিটার উড়ে এসে সুনির্দিষ্ট লক্ষ্যে হামলা চালিয়েছিল তারা।

০৮ ১৮

প্রতিরক্ষা বিশ্লেষকদের দাবি, এই ধরনের অভিযানে অন্তত দু’বার সংশ্লিষ্ট লড়াকু জেট বা কৌশলগত বোমারু বিমানে তেল ভরার প্রয়োজন হতে পারে। সেইমতো হিসাব কষে যোদ্ধা পাইলটদের সঙ্গে ট্যাঙ্কার বিমান পাঠানো হয়েছিল। সূত্রের খবর, জর্ডনের আকাশে লড়াকু জেটে জ্বালানি ভরে ইহুদি বিমানবাহিনী। অন্য দিকে যুক্তরাষ্ট্রের বায়ুসেনা এর জন্য আরব সাগরের উপরের আকাশকে বেছে নিয়েছিল বলে জানা গিয়েছে।

০৯ ১৮

সাবেক সেনাকর্তাদের কথায়, সংশ্লিষ্ট অভিযানগুলিতে মাঝ-আকাশে এক বার জ্বালানি ভরতে আট থেকে ২৮ হাজার ডলার পর্যন্ত খরচ করেছে ইজ়রায়েল এবং যুক্তরাষ্ট্রের বিমানবাহিনী। তাঁদের অনুমান, দু’টি ক্ষেত্রেই অন্তত দু’বার ‘মিড এয়ার রিফুয়েলিং’ করেছে এফ-৩৫ এবং বি-২ স্পিরিট যুদ্ধবিমান। অর্থাৎ শুধুমাত্র জ্বালানি ভরতে ১৬ থেকে ৫৬ হাজার ডলার ব্যয় করছে ইজ়রায়েল এবং আমেরিকা।

১০ ১৮

বর্তমানে লড়াকু জেটের স্বল্পতায় ভুগছে ভারতীয় বিমানবাহিনী। ঘরের মাটিতে যুদ্ধবিমান তৈরির ক্ষেত্রে দিল্লির সবচেয়ে বড় বাধা হল ইঞ্জিন। এটি নির্মাণের ক্ষেত্রে এখনও সাফল্য পাননি এ দেশের প্রতিরক্ষা গবেষকেরা। এর জন্য যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে প্রতিরক্ষা চুক্তি করতে হয়েছে কেন্দ্রের নরেন্দ্র মোদী সরকারকে। সেখানকার বহুজাতিক সংস্থা জেনারেল ইলেকট্রিক অ্যারোস্পেসের ‘এফ৪০৪’ ইঞ্জিন সরবরাহ করার কথা রয়েছে, যা তেজস যুদ্ধবিমানে ব্যবহার করবে নির্মাণকারী রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থা ‘হিন্দুস্তান অ্যারোনটিক্স লিমিটেড’ বা হ্যাল।

১১ ১৮

কিন্তু সমস্যার বিষয় হল, নির্ধারিত সময়ের মধ্যে ‘এফ-৪০৪’ ইঞ্জিন ভারতকে সরবরাহ করেনি যুক্তরাষ্ট্র। ফলে এখনও পর্যন্ত ভারতীয় বায়ুসেনাকে মাত্র দু’টি তেজস মার্ক-১এ লড়াকু জেট সরবরাহ করতে পেরেছে হ্যাল। কিছু দিন আগে বিষয়টি নিয়ে উষ্মা প্রকাশ করেন ভারতের বায়ুসেনা প্রধান এয়ার চিফ মার্শাল অমরপ্রীত সিংহ। এই পরিস্থিতিতে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর ‘আত্মনির্ভর ভারত’ এবং ‘মেক ইন ইন্ডিয়া’ স্লোগানে ভর করে এগোনোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে প্রতিরক্ষা মন্ত্রক।

১২ ১৮

সূত্রের খবর, ঘরের মাটিতে জেট ইঞ্জিন তৈরি করতে কোমর বেঁধে লেগে পড়েছেন এ দেশের প্রতিরক্ষা গবেষণা এবং উন্নয়ন সংস্থা বা ডিআরডিও-র (ডিফেন্স রিসার্চ ডেভেলপমেন্ট অর্গানাইজ়েশন) বিজ্ঞানীরা। সংশ্লিষ্ট প্রকল্পটির আনুমানিক খরচ ৬৫ হাজার ৪০০ কোটি ডলার বলে জানা গিয়েছে। ২০৩৫ সালের মধ্যে পঞ্চম প্রজন্মের লড়াকু জেটের উপযোগী ইঞ্জিনের বাণিজ্যিক উৎপাদন করতে চাইছে তারা।

১৩ ১৮

বিষয়টি নিয়ে ইতিমধ্যেই গণমাধ্যমের কাছে মুখ খুলেছেন ডিআরডিওর আওতাধীন ‘গ্যাস টারবাইন গবেষণা প্রতিষ্ঠান’ (গ্যাস টারবাইন রিসার্চ ইনস্টিটিউট বা জিটিআরই) প্রধান এসভি রমনা মূর্তি। তিনি জানিয়েছেন, দেশে বর্তমানে গবেষণা ও নির্মাণের বিভিন্ন পর্যায়ে থাকা বিভিন্ন মডেলের যুদ্ধবিমান নির্মাণ প্রকল্পের জন্য প্রায় ১১০০ ইঞ্জিনের প্রয়োজন হবে। আগামী এক দশকের মধ্যে চাহিদা পূরণের জন্য উৎপাদন শুরু করাই তাঁদের লক্ষ্য।

১৪ ১৮

গত ১৫ অগস্ট লালকেল্লায় স্বাধীনতা দিবসের বক্তৃতায় দেশীয় প্রযুক্তিতে জেট ইঞ্জিন নির্মাণের কথা ঘোষণা করেছিলেন প্রধানমন্ত্রী। তার পরেই প্রতিরক্ষা মন্ত্রক এবং ডিআরডিও-র তরফে বিষয়টি নিয়ে তৎপরতা শুরু হয়। কয়েকটি সংবাদমাধ্যমের দাবি, জাপানের ‘মিৎসুবিশি হেভি ইন্ডাস্ট্রিজ়’ বা ব্রিটিশ সংস্থা ‘রোল্‌স রয়েস’-এর সঙ্গে যৌথ ভাবে যুদ্ধবিমানের ইঞ্জিন নির্মাণে উদ্যোগী হতে পারে ভারত। যদিও সরকারি ভাবে এখনও এ ব্যাপারে কিছু জানা যায়নি।

১৫ ১৮

অন্য দিকে তেজসের পাশাপাশি সাড়ে পাঁচ প্রজন্সের স্টেল্‌থ যুদ্ধবিমান তৈরিতে হাত লাগিয়েছে নয়াদিল্লি। সংশ্লিষ্ট লড়াকু জেটটির পোশাকি নাম ‘অ্যাডভান্সড মিডিয়াম কমব্যাট এয়ারক্রাফ্‌ট’ বা অ্যামকা। এর নির্মাণকাজ পুরোপুরি ভাবে রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থা হ্যালকে দিতে নারাজ প্রতিরক্ষা মন্ত্রক। সরকারি-বেসরকারি সহযোগী সংস্থা সংশ্লিষ্ট যুদ্ধবিমানটির জন্ম দেবে বলে গত বছরই ইঙ্গিত দিয়েছিল কেন্দ্র।

১৬ ১৮

সেই লক্ষ্যে সরকারি এবং বেসরকারি সংস্থা বাছাইয়ের কাজে ইতিমধ্যেই নেমে পড়েছে প্রতিরক্ষা মন্ত্রক। সূত্রের খবর, প্রাথমিক ভাবে সাতটি সংস্থার উপর নজর রয়েছে কেন্দ্রের। ডিআরডিওর সহযোগী হিসেবে প্রাথমিক বাছাই তালিকায় অবশ্য ঠাঁই পেয়েছে হ্যাল। দু’টি ছোট সংস্থার সঙ্গে যৌথ ভাবে বরাতের আবেদন জানিয়েছে তারা।

১৭ ১৮

এ ছাড়া দৌড়ে আছে টাটা অ্যাডভান্সড লিমিটেড এবং আদানি ডিফেন্স অ্যান্ড অ্যারোস্পেস। যৌথ ভাবে আবেদন জানিয়েছে, লার্সেন অ্যান্ড টুব্রো ও ভারত ইলেকট্রিক লিমিটেড এবং গুডলাক ইন্ডিয়া ব্রহ্মস অ্যারোস্পেস তিরুঅনন্তপুরম লিমিটেড এবং অ্যাক্সিসকেডস টেকনোলজিস। পঞ্চম প্রজন্মের লড়াকু জেট নির্মাণের বরাত পেতে একসঙ্গে দরপত্র দেওয়ার আর্জি জানিয়েছে ভারত ফোর্জ লিমিটেড, ভারত আর্থ মুভার্স লিমিটেড (বিইএমএল) এবং ডেটা প্যাটার্নস।

১৮ ১৮

ডিআর়ডিও-র অধীনস্থ সংস্থা ‘অ্যারোনটিক্যাল ডেভেলপমেন্ট এজেন্সি (এডিএ)’-কে দেশীয় প্রযুক্তিতে প্রথম স্টেল্‌থ যুদ্ধবিমান নির্মাণের মূল দায়িত্ব দিয়েছে কেন্দ্র। রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থা হ্যাল ইতিমধ্যেই দু’ইঞ্জিন বিশিষ্ট ২৫ হাজার কেজির ওই যুদ্ধবিমানের কাঠামো তৈরির কাজ করছে। অ্যামকা-১ যুদ্ধবিমানে থাকবে ৯০ কিলোনিউটন শ্রেণির আমেরিকার জিই৪১৪ ইঞ্জিন। অন্য দিকে, আরও উন্নত অ্যামকা-২ যুদ্ধবিমান উড়বে ১১০ কিলোনিউটন ইঞ্জিনে।

সব ছবি: সংগৃহীত।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
Follow us on:
আরও গ্যালারি
Advertisement