Shubham Sabar

‘তুই ডাক্তার হতে চলেছিস’, কাজের ফাঁকে ধুলোবালি মাখা শ্রমিক পেলেন সুখবর! মুহূর্তে বদলে গেল শুভমের জীবন

বেঙ্গালুরুর এক নির্মাণস্থল সংস্থার অধীনে রাজমিস্ত্রির কাজ করছিলেন। হঠাৎই শিক্ষকের ফোন, ‘‘ডাক্তার হতে চলেছিস।’’ এক পলকে বদলে গেল ওড়িশার শুভম শবরের জীবন।

Advertisement
আনন্দবাজার ডট কম ডেস্ক
শেষ আপডেট: ০৩ সেপ্টেম্বর ২০২৫ ১০:৫৬
Share:
০১ ১৭

কাঠফাটা রোদ্দুরে তখন নাজেহাল অবস্থা! জলতেষ্টায় গলা শুকিয়ে আসছে তাঁর। জামায় কালির দাগ, গা-হাত-পা ধুলোয় ভরে গিয়েছে। তা-ও যত দ্রুত হোক বাকি কাজ শেষ করার তাগিদে পরিশ্রম করে চলেছিলেন শুভম শবর। এমন সময় হঠাৎ এক ফোন বদলে দিল তাঁর রোজনামচা।

০২ ১৭

বেঙ্গালুরুর এক নির্মাণস্থলে কাজ করছিলেন শুভম। কাজের সময় শেষ হতে আর কিছু ক্ষণই বাকি ছিল। সময়ের মধ্যে কাজ শেষ করতে তখন ব্যস্ত তিনি। এমন সময় হঠাৎই স্কুলের শিক্ষক বাসুদেব মহারানার ফোন— ‘‘ডাক্তার হতে চলেছিস তুই!’’ ওই একটা ফোনেই যেন মুহূর্তে সমস্ত ক্লান্তি মুছে গেল আনন্দে। হবে নাই বা কেন! এ বার যে স্বপ্নপূরণের পথে পাড়ি দেবেন ওড়িশার শুভম শবর।

Advertisement
০৩ ১৭

শুভমের তুখোড় ফলাফল বরাবরই স্কুলে নজর কাড়ত সকলের। বাড়ির অর্থনৈতিক পরিস্থিতি যে ভাল নয়, তা তিনি ছোটবেলাতেই বুঝে গিয়েছিলেন। তাই বরাবরই বলতেন ‘‘আমি ঠিক কিছু করব।’’ পুলিশ হওয়ার স্বপ্ন ছিল তাঁর। কিন্তু এখন আর সে সবে মন নেই, কারণ তাঁকে ডাক্তার হতে হবে।

০৪ ১৭

চলতি বছর স্নাতক স্তরে ভর্তির জন্য ডাক্তারি পড়ার প্রবেশিকা পরীক্ষা (ন্যাশনাল এলিজিবিলিটি কাম এন্ট্রান্স টেস্ট) দিয়েছিলেন। কিন্তু ফলপ্রকাশের আশায় বাড়িতে বসে থাকার সুযোগ ছিল না। পরীক্ষার পর পরই টাকা উপার্জনের জন্য বেঙ্গালুরু পাড়ি দিয়েছিলেন শুভম।

০৫ ১৭

সেখানকার এক নির্মাণ সংস্থার রাজমিস্ত্রি ছিলেন শুভম। যেটুকু বেতন পেতেন তার কিছু অংশ নিজের থাকা এবং খাওয়ার জন্য ব্যয় করতেন। বাকি টাকা জমিয়ে রাখতেন পড়াশোনার স্বার্থে।

০৬ ১৭

অত্যন্ত সাধারণ ভাবে জীবনযাপন করতেন বেঙ্গালুরুতে। চাকরি করতে করতে বেশ কিছু টাকা জমিয়েও ছিলেন শুভম। যদি চিকিৎসাবিদ্যা নিয়ে পড়ার সুযোগ পেয়ে যান তা হলে যাতে প্রাথমিক স্তরের টাকার জোগান দিতে পারেন— সে কারণে টাকা জমাতে শুরু করেছিলেন এই মেধাবী ছাত্র।

০৭ ১৭

এক সাক্ষাৎকারে শুভম জানিয়েছিলেন, রাজমিস্ত্রির কাজ করে প্রায় ৪৫ হাজার টাকা উপার্জন করেন। তার মধ্যে থেকে জমাতে পারেন প্রায় ২৫ হাজার টাকা। তিনি চিকিৎসাবিদ্যা নিয়ে পড়বেন বলেই টাকা জমাচ্ছিলেন।

০৮ ১৭

১৪ জুন, অন্যান্য দিনের মতোই নির্মাণস্থলে কাজ করছিলেন। কাজের মাঝেই ফোন এসেছিল স্কুলের শিক্ষকের। হঠাৎই এমন খবর পেয়ে আবেগপ্রবণ হয়ে চোখে জল এসে গিয়েছিল তাঁর। বাবাকে প্রথম ফোন করে খুশির খবর ভাগ করে নিয়েছিলেন শুভম।

০৯ ১৭

ওড়িশার খুরদা জেলার মুদুলিধিয়াহ গ্রামের বাসিন্দা শুভম। নুন আনতে পান্তা ফুরোয় অবস্থা এই আদিবাসী পরিবারের। বাবা একজন ক্ষুদ্র কৃষক। মা গৃহবধূ। পরিবারের চার ভাইবোনের মধ্যে শুভমই সবচেয়ে বড়।

১০ ১৭

শত দরিদ্রতার মধ্যেও শুভমের বাবা কখনও ছেলেমেয়েদের পড়াশোনা থেকে বঞ্চিত করেননি। বাকি ছোট ভাইবোনেরা এখনও স্কুলে পড়ছে। শুভমকেও বরাবর পড়াশোনার জন্য উৎসাহ দিয়ে এসেছেন বাবা সহদেব এবং মা রাঙ্গি শবর।

১১ ১৭

মুদুলিধিয়ার এক সরকারি স্কুলে পড়তেন শুভম। দশম শ্রেণিতে ৮৪ শতাংশ নম্বর পেয়েছিলেন। একাদশ-দ্বাদশ পড়ার জন্য ভর্তি হয়েছিলেন ভুবনেশ্বরের বিজেবি কলেজে। দ্বাদশ শ্রেণিতে ৬৪ শতাংশ নম্বর পেয়ে উত্তীর্ণ হয়েছেন শুভম।

১২ ১৭

দ্বাদশ শ্রেণিতে প্রথম দিকে কোনও গৃহশিক্ষক ছিল না। কিন্তু পরে গণিত ও রসায়নের জন্য গৃহশিক্ষকের সাহায্য নিয়েছিলেন। দ্বাদশ শ্রেণির পড়াশোনার পাশাপাশি নিট পরীক্ষার প্রস্তুতিও নিতেন শুভম। নিটের জন্য আলাদা ভাবে প্রশিক্ষণ নিয়েছিলেন।

১৩ ১৭

জোরকদমে ডাক্তারির প্রবেশিকা পরীক্ষার প্রস্তুতি শুরু করে দিয়েছিলেন। কারণ শুভম জানতেন, বাবার বয়স হচ্ছে! পরিবারের হাল তাঁকে ধরতেই হবে। এক সাক্ষাৎকারে তিনি বলেছিলেন, ‘‘আমি ছোট থেকেই জানতাম আমাদের অর্থনৈতিক অবস্থা ভাল নয়। বাবা-মায়ের সম্বল বলতে একটুকরো জমি। তাঁরা অকান্ত পরিশ্রম করেন। আমিও ঠিক করেই নিয়েছিলাম, হাল ছাড়ব না। যাই হয়ে যাক, পড়াশোনা করে যাব।’’

১৪ ১৭

চলতি বছর নিট ইউজির তফসিলি উপজাতি বিভাগে পরীক্ষা দিয়েছিলেন শুভম। ওই বিভাগেই ১৮,২১২ র‍্যাঙ্ক করেন শুভম। নিজের ফলাফল জানতে পেরে শুভম বলেছিলেন, ‘‘আমি কেঁদে ফেলেছিলাম প্রথমে। বাবা-মাকে বলেছি আমি ডাক্তার হতে যাচ্ছি। তার পর কাজের মালিকের সঙ্গেও কথা বলি, যাতে এই ক’মাসের টাকাটা তিনি আমায় দিয়ে দেন।’’

১৫ ১৭

ফলপ্রকাশের পর সেই টাকা নিয়েই ভর্তি হন ওড়িশার বেরহামপুর মেডিক্যাল কলেজ ও হাসাপাতালে। সরকারের তরফেও অর্থনৈতিক সাহায্য মিলবে বলেই আশাবাদী শুভমের পরিবার।

১৬ ১৭

নিজের গ্রামে প্রথম ডাক্তার হতে চলেছেন শুভম। চার বছরের এমবিবিএস ডিগ্রির পর চিকিৎসক হিসাবে নিজের চেম্বার খুলতে চান গ্রামেই। সেখানে খুব অল্প টাকায় গ্রামের মানুষের চিকিৎসা করার ইচ্ছা তাঁর।

১৭ ১৭

মেডিক্যালের স্নাতকে ভর্তির এই প্রবেশিকা পরীক্ষার আয়োজন করা হয়েছিল চলতি বছরের মে মাসে। পরীক্ষা শেষের এক মাস ১০ দিনের মাথায় ফল ঘোষণা করে ন্যাশনাল টেস্টিং এজেন্সি (এনটিএ)। প্রথম ২০-এর মেধাতালিকায় পশ্চিমবঙ্গ থেকে দু’জনের নাম ছিল।

সব ছবি: সংগৃহীত।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
Follow us on:
আরও গ্যালারি
Advertisement